ডায়েরির শেষ পাতাগুলো – শেষ পর্ব

3

Visits: 20

ডায়েরির শেষ পাতাগুলো – শেষ পর্ব:

সুরজিতের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ভোর হয়ে গেছে। জ্ঞান ফেরার পর সুরজিৎ দেখলো স্নিগ্ধা তার মাথার কাছে বসে আছে চিন্তিত মুখে!! সুরজিৎ কিছু বলতে চাইলো স্নিগ্ধাকে,পারলো না। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে সুরজিতের,গতকাল রাতে যখন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল,তখনই মনে হয় মাথাতে কোনোভাবে ব্যথা পেয়েছিল। গতকাল রাতের ঘটনাটা এখনো যেন ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না সুরজিতের।

এই ঘটনার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। সারাদিন অর্থাৎ অফিসে যাওয়ার আগে পর্যন্ত স্নিগ্ধার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে নি সুরজিৎ, স্নিগ্ধা বেশ স্বাভাবিক আচরনই করছিলো। সুরজিৎ এরপর অফিসে বেরিয়ে যায়। এখন রিনা সকালে তাদের বাড়িতেই থাকে, কারণ স্নিগ্ধাকে সুরজিৎ একা রাখতে চায় না। সন্ধ্যের পর সুরজিৎ বাড়ি ফিরে এলে রিনা বাড়ি যায়।

এইতো সেই দিনের ঘটনা সুরজিৎ অফিস থেকে সবে মাত্র বাড়ি ফিরেছে, রিনা তখনও বাড়ি যায়নি; সুরজিৎকে দেখেই বললো,
-“দাদাবাবু আমি আর কাল থেকে আসবনা।”
-“কেন? আসবিনা কেন?”
-“দাদাবাবু,দিদিমনি আবার অমন করছে?”
-“অমন করছে মানে?”
-“ওই যে সেই রাতে যেমন করছিলো তেমন,কিন্তু আজকে দিদিমনি মিমি দিদির মতো গলা করে আমার সাথে কথা বললো।”
-” কি উল্টো পাল্টা কথা বলছিস বলতো? দুপুরে খুব ভূতের সিরিয়াল দেখেছিস নাকি?”
-“সত্যি বলছি দাদাবাবু! বিশ্বাস করো আমার কথা।”
-“কি কথা বলেছে স্নিগ্ধা বলতো আমাকে, আমিও শুনি।”

এরপর রিনা দুপুরের ঘটনা বলতে শুরু করে,
-“আমি রান্না করে দিদিমনিকে খেতে ডেকেছি,দিদিমনি খেতেও এলো। তারপর দিদিমনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলো—-“
-“কি রান্না করেছিস আজকে?”
-“আজকে তো কলমি শাক ভাজা আর মাছের ঝোল।”
-“এরপর দিদিমনি মিমি দিদির গলায় আমাকে বললো–“
-“” রিনা দিদি তুমি আবার শাক ভাজা করেছো?তুমি জানোনা আমি শাক ভাজা খাই না। স্কুল থেকে এসে আমি তো টোস্ট আর সূপ খাই, তুমি আমাকে সূপ আর টোস্ট বানিয়ে দাও।””
-“এসব তুমি কি বলছো দিদিমনি? আর তুমি মিমি দিদির মতো করে কথা বলছো কেন?”
-“আমি মিমির মতো করে কথা বলতে যাবো কেন? আমি তো মিমি; তুমি আমাকে চিনতে পারছো না?ও রিনা দিদি তুমি আমাকে চিনতে পারছো না?”
-“এরপর আমি আর কিছু বলতে পারিনি দাদাবাবু; আমি মিমি দিদির মানে দিদিমনির জন্য খাবার বানিয়ে দিয়েছি,দিদিমনি সেটা খেয়ে মিমিদিদির ঘরে বসে খেলছিল। “

এই কথাগুলো শোনার পর সুরজিৎ রিনাকে অবিশ্বাস করতে পারলো না। কারণ কিছুদিন আগের সেই রাতটার কথা মনে পরে গেলো সুরজিতের;সেই রাতেও তো স্নিগ্ধা মিমির ঘর এ বসে খেলছিল আর তাছাড়া মিমির হাসির শব্দ স্পষ্ট  শুনেছিলো সুরজিৎ। কি হচ্ছে এসব কিছুই মাথায় আসছে না। কি করবে এখন সুরজিৎ? এই কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে মিমির ঘরের সামনে চলে এসেছে খেয়াল করেনি সুরজিৎ। স্নিগ্ধা মিমির ঘরে বসে আছে,স্নিগ্ধা সুরজিতকে দেখতে পাচ্ছে না কারণ স্নিগ্ধা সুরজিতের দিকে পিঠ করে বসে আছে। স্নিগ্ধা এখন একমনে ডায়েরি লিখছে। সুরজিৎ বেশ অনেক্ষন ধরে পর্যবেক্ষন করছিল স্নিগ্ধাকে, হটাৎই স্নিগ্ধা মিমির মতো করে বলে ওঠে,


-“বাপি তুমি কি দেখছো অমন করে আমার দিকে? ভিতরে এসে বসো; দেখো বাপি আমি ডায়েরি লিখছি। দেখো বাপি আমার এখন আর বেশি বানান ভুল হয় না কারণ মা তো আমার সব বানান ভুলগুলো ঠিক করে দেয়।”

নিজের চোখ আর কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সুরজিৎ। আর এরপরে কথাটা  শোনার জন্য তো একদমই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না সুরজিৎ। স্নিগ্ধা এবার নিজের গলাতে ভীষণ অনুরোধের সুরে বললো,


-“প্লিজ সুরজিৎ! মিমি থাকুক না আমাদের কাছে, সেই আবার আগের মতো; শুধু আমরা তিনজন, আর কেউ নয়।”
 সুরজিৎ কি বলবে ভেবে পেলো না;ওর গলার স্বর যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। শুধু বললো,
-“বেশতো! থাকুক না মিমি।  কিন্তু তুমি যে এতক্ষন না খেয়ে বসে আছো? এতে তো তোমার আরো শরীর খারাপ করবে বোলো? চলো খেয়ে নেবে চলো।  রিনা তোমার জন্য খাবার রেখে গেছে, চলো খেয়ে নেবে চলো।”


এরপর স্নিগ্ধা সুরজিতের কথা মতো গিয়ে খাবার খেয়ে নিলো আর তারপর শুয়েও পড়লো।              

এরপর কয়েকমাস কেটে গেছে। সুরজিৎ স্নিগ্ধাকে একজন বড়ো psychiatrist কে দিয়ে ট্রিটমেন্ট করিয়েছে। স্নিগ্ধাকে দেখানোর পর তিনি বলেন যে মিমির মৃত্যুটা স্নিগ্ধা মেনে নিতে পারছিলো না তাই স্নিগ্ধা মিমির স্মৃতি গুলোকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছিলো; আর মিমির মতো আচরণ করছিল।মিমির সেই ডায়েরিটা! যার শেষ পাতাগুলো এখনো খালি; তার মধ্যে কোনোদিনই কিছু লেখা ছিল না, স্নিগ্ধা নিজের মনের মতো বানিয়ে বলেছিলো এসব। ডাক্তারি ভাষায় এই অসুখের একটা নাম আছে…কিন্তু থাক সেটা আর নাই বা বললাম। সুরজিৎ স্নিগ্ধাকে বুঝিয়েছে, সে যেন আবার লেখাটা শুরু করে। মিমি তার লেখার মধ্যেই বেঁচে থাকবে।

সুরজিতের বাড়ি এখন আবার আগের মতো স্বাভাবিক,স্নিগ্ধা এখন অনেক সুস্থ।স্নিগ্ধা আবার গল্প লিখতে শুরু করেছে। আর তার সাথে ডায়েরিও লেখে। সুরজিৎ বারণ করে না। স্নিগ্ধা এখন একটা অনাথ আশ্রমে যায় রবিবার করে; সেখানে বাচ্ছাগুলোর সাথে সময় কাটাতে ভালোলাগে ওর। সুরজিতও যায় মাঝে মাঝে স্নিগ্ধার সাথে।  বাচ্চা ছেলেমেয়ে গুলোর মধ্যেই মিমিকে খুঁজে পায় দুজনে।

……… পড়ুন পর্ব ১

……… পড়ুন পর্ব ২

https://www.facebook.com/srijoni

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
4
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

3 thoughts on “ডায়েরির শেষ পাতাগুলো – শেষ পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *