ডায়েরির শেষ পাতাগুলো…পর্ব ১

3

Visits: 138

ডায়েরির শেষ পাতাগুলো:

ধুর বাবা ! আজ হলো সেই অসহ্যকর রাত্রি। আমার কাল অঙ্ক পরীক্ষা। পরীক্ষার আগের রাত্রে কি আর পুরো বই এর অঙ্ক রিভাইস দেওয়া যায়!! এদিকে আবার হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আর কারেন্ট ও চলে গেছে। বোধহয় ঝড় বৃষ্টির জন্যই বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে কোথাও!! মোমবাতির আলোতে আমার অঙ্ক করতে একদমই ভালো লাগে না, আর আজকে তো আরোই তো ভালো লাগছেনা। তাই অগত্যা ডায়েরি লিখছি।

এই ডায়েরিটার আর কয়েকটা মাত্র পাতা বাকি আছে…. মা বলেছে নতুন একটা ডায়েরি কিনে দেবে। মা এখন খালি কাঁদে…. কেন যে এতো কাঁদে কে জানে??

কতবার মা কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, “মা তুমি কাঁদছো কেন ??” মা কিছুই উত্তর দেয় না, শুধু কাঁদে। আমার খুব কষ্ট হয় মায়ের জন্য।

কখন থেকে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হচ্ছে, কেউ দরজা খুলছে না। বৃষ্টির শব্দতে মনে হয় কেউ শুনতে পাচ্ছে না। ওইতো পিসিমনি দরজা খুলে দিয়েছে।

মা আর বাবা এসেছে, মায়ের হাতে রজনীগন্ধার স্টিক। আমার খুব ভালো লাগে রজনীগন্ধার স্টিক।

সবাই ভিতরের ঘরে গিয়ে বসলো। আমার অঙ্ক পরীক্ষা বলে কেউ আমাকে ডিসটার্ব করছে না,নইলে আমিও যেতাম ওই ঘরে। কিন্তু মা এসেছে তাই মা এর কাছে যাবো আর ওই ঘর এ বসেই ডায়েরি লিখবো। অন্ধকারে একা একা বসে থাকতে ভয় করে আমার।

আমি এখন মা এর পশে বসে ডায়েরি লিখছি। মা আমার সাথে কথা বলছেনা কেন কে জানে? খালি চুপ করে বসে আছে। বাবা আর পিসিমনিও চুপ করে বসে আছে। মা আমার সাথে কথা না বললে আমার মোটেও ভালো লাগে না। মা মনে হয় আমার পরীক্ষার জন্য চিন্তা করছে? মা কে যে চিন্তা করতে বারণ করবো, সেটাও বলা যাবে না। কারণ মা যখন চুপ করে বসে থাকে তখন মা কে ডাকলে মা রেগে যায়, মা তো লেখে, লেখার  সময় অনেক ভাবতে হয়। তাই এখন মা কে ডাকবো না। আমারও লিখতে খুব ভালো লাগে, তাই জন্যই তো মা আমাকে এই ডায়েরিটা কিনে দিয়েছে। রজনীগন্ধার স্টিকটাও মা ফুলদানিতে রাখেনি। কারেন্ট এলে রাখবে হয়তো?? তারপর আমিও আমার পড়ার ঘরে গিয়ে দুটো ফুলের স্টিক রেখে আসব।

এই তো, কারেন্ট এসে গেছে। মা উঠে পড়েছে, আমিও এবার যাই, ডায়েরি লেখা শেষ করি।

পরের দিন সকালে স্নিগ্ধার হটাৎ-ই চোখ পরে মিমির ডায়েরিটার ওপর। স্নিগ্ধা হলো মিমির মা। কিন্তু ডায়েরিটা তো এখানে থাকার কথা নয়?? স্নিগ্ধা তো ডায়েরিটা গুছিয়ে রেখে এসেছিল মিমির ঘরে। আনমনা হয়ে ভাবতে ভাবতে স্নিগ্ধা ডায়রির পাতা উল্টে পাল্টে দেখতে গিয়ে শেষ কয়েকটা পাতাতে চোখ পরে এবং ডায়েরিটা পড়ে স্নিগ্ধা অবাক হয়ে যায়। স্নিগ্ধা আর ভাবতে পারছে না। হটাৎ করে স্নিগ্ধার মনে পরে যে মিমির স্কুলের ফোন নাম্বার তার মোবাইল এ সেভ করা আছে। সঙ্গে সঙ্গে স্নিগ্ধা মোবাইলে নম্বর টা ডায়াল করে। কিছুক্ষন ফোনটা বেজে যাওয়ার পর ফোনের  ওপার থেকে উত্তর আসে,

-“হ্যালো? কে বলছেন?”
-“আমি স্নিগ্ধা চ্যাটার্জী কথা বলছিলাম, আমার একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল?”
-“হ্যাঁ বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?”
-“আজ কি ক্লাস ফোর এর অঙ্ক পরীক্ষা ছিল?”
-“হ্যাঁ ম্যাম।”

স্নিগ্ধা আর কিছু উত্তর দিতে পারলো না, ফোন টা রেখে দিলো। আজ এক সপ্তাহ হলো মিমি সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে এ চলে গেছে,মিমিকে স্নিগ্ধা বাঁচাতে পারেনি কিন্তু মিমির ডায়েরি তে লেখা  কথাগুলো  পরে তো স্নিগ্ধা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সত্যিই কি মিমি এসেছিলো?

মিমির ডায়েরি টা স্নিগ্ধার কোলের ওপর খুলে রাখা, ডায়েরির শেষ পাতাগুলো পাখার হাওয়াতে উড়ছে। আজ আর অত জোরে বৃষ্টি পড়ছে না। স্নিগ্ধা মিমির ডায়েরি টা বন্ধ করে মিমির ছবির পাশে রেখে দেয় আর ছবির সামনে আরো কয়েকটা রজনীগন্ধার স্টিক ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখে। মিমির ছবির দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধা অচিরেই একটু হাসে।       

………

……… পড়ুন পর্ব ২

https://www.facebook.com/srijoni

What’s your Reaction?
+1
0
+1
1
+1
3
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

3 thoughts on “ডায়েরির শেষ পাতাগুলো…পর্ব ১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *