অন্ধ প্রেম

Views: 0

অন্ধ প্রেম:

(এই ঘটনা সত্য। তবে স্থান কাল পাত্রপাত্রীর নাম প্রকাশ কাল্পনিক। সে কারণে ক্ষমাপ্রার্থী)

নদীয়ার হরিষপুর গ্রাম। মোটামুটি বড় গ্রাম। এই গ্রামে পাকা বাড়ি বলতে একটাই বাড়ি। শ্রীযুক্ত মহীতোষ দত্ত কলেজের প্রফেসর, ওঁনার স্ত্রী শ্রীমতি কামিনী দেবী স্কুল টিচার। বড় ছেলে সুভাষ দত্ত, ইঞ্জিনিয়ার। ছেলের বৌ কুন্তলা দেবীও স্কুল টিচার। বড় মেয়ে নমিতা ডাবল এম.এ. ছোট মেয়ে সবিতা এম.এ পড়ছে। আর ছোট ছেলে বিভাস বি.এ. পড়ছে। আর একজন সদস্য বড় ছেলের শিশুপুত্র দশ মাস বয়স মাত্র, সুদর্শন। সবাই শিক্ষিত। সবাই বেশ সজ্জন   ব্যক্তি। বাড়িতে বড় শিব মন্দির আছে। সবাই পূজা পার্ব্বন করে। ঝি চাকর, ড্রাইভারও থাকে, সবাই বেশ ভাল ভাবেই থাকে।

এ হেন বাড়িতে একদিন মধ্য রাত্রে হঠাৎ বিকট চিৎকার। মর্ম ভেদী চিৎকার। নিঃশব্দ মধ্য রাত্রে এই চিৎকারে আসে পাশের বাড়ি বাকি লোকের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ধড়মড় করে উঠে সবাই বাড়ির বাইরে আসে। শোনে মর্মভেদী কান্নার শব্দ। কে কাঁদে এমন করে। সবাই ছুটল মহীতোষ বাবুর বাড়ীর দিকে। হই হই করে এসে বাড়ী ভর্ত্তি হয়ে গেল। দেখে বাড়ি উঠানে বসে কাঁদছে নমিতা। কী হল? কেন কাঁদছো? বাড়ীর সবাই কোথায়? মাথা নাড়ে নমিতা, কান্নায় যেন গুড়িয়ে যাচ্ছে। বয়ষ্ক কয়েক জন ওকে চেপে ধরে। মুখে কিছু বলতে পারে না শুধু ঘরের দিকে হাত দেখায়।

কয়েক জন ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। দেখে সব ঘরের বিছানা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সবার গলা কাটা। উঃ কি বিভৎস্য। কেউ কেউ মুখে হাত চাপা দেয়। এমন কি দশ মাসের সুর্দশনও মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কে যেন গলা টিপে মেরেছে।

সবাই চেপে ধরে নমিতাকে, কি ভাবে হল এ সব? ইতিমধ্যে পুলিশও এসে যায়। তারা প্রশ্ন করে কি ভাবে হল। আর উনিবা বেঁচে গেলেন কি ভাবে? উনি কোথায় ছিলেন?

নমিতা কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলে, – ‘‘বোধ হয় ডাকাত এসেছিল। সিন্দুক থেকে কিছু টাকা গহনা, বাসন কোসনও উধাও। আমি ছিলাম ছাদের ঘরে শুয়ে। কিছুই জানি না। কোন শব্দ পাইনি।’’

অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে নমিতা। বেশী কথা বলতে পারে না। কয়েক জনের নমিতার অবস্থা দেখে বড় মায়া হয় চুপ করে থাকতে নির্দেশ দেয়। পুলিশ এদিক ওদিক দেখে ছবি তুলে বডি গুলোকে পোস্টমোটেম-এ পাঠিয়ে আবার আসবে বলে চলে যায়।

পুলিশ রোজ আসে, একে তাকে জিজ্ঞাসা করে নমিতাকেও জিজ্ঞাসা করে। সবাই ঘিরে থাকে নমিতাকে। পুলিশ নিজেদের হেপাজাতে নিয়ে যে নমিতাকে জিজ্ঞাসা বাদ করবে তা পারছে না। গাঁয়ের মোড়লের আদেশে নমিতাকে বিরক্ত করা বা অনেকক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা বারন। কারণ নমিতার শরীর ভাল না, মন খুব খারাপ। এদিকে এত বড় কেসের কোন সূত্র খুঁজে পাচ্ছেনা। শেষে কেসটা খালবাজার হেড কোয়ার্টস-এর ইন্টালিজেন্টস ডির্পামেন্টে চলে যায়।

সাত দিন পর ঐ ডির্পামেন্ট থেকে অফিসার দুজন আসেন। নাম জয়ন্ত আর যাদব সিং। বাড়ির ভেতরের প্রত্যেকটা ঘর ভাল করে চেক করে। ছাদে উঠে চারিদিকে পরীক্ষা করে। কোথা দিয়ে কিভাবে ডাকাত আসতে পারে। বাড়ির পিছন দিকে একটা পুকুর, ব্যবহার বড় একটা হয় বলে মনে হয় না। পুকুরের ওপারে বড় পিচের রাস্তা। রাস্তা ওধারে একটা সূতো কল। খুব একটা ছোট নয় আবার খুব একটা বড় নয়। বাড়ির কোল ঘেঁসে। পুকুরের পাশ দিয়ে একটা পায়ে চলা সরু রাস্তা একেবারে বড় রাস্তায় উঠেছে।

নিচে এসে এখান কার পুলিশ অফিসার পোষ্টমটেম-এ যাবার আগে যে ছবিগুলো তুলে ছিল। বাড়ির পজিশন্, বাড়ির বিছানা। বাড়ির ঘর ইত্যাদি। জয়ন্ত যাদব দুজনাই দেখ। বাড়ির বিছানা, পজিশান্ দেখে ভ্র“ কুচকে ওঠে।

সব দেখে জয়ন্ত বলে, – ‘‘এ বাড়িতে যিনি জীবিত আছেন তার নাম কি? তাঁর সাথে কথা বলতে চাই।’’ পুলিশ অফিসার বলে, – ‘‘আপনি নিচে আসুন স্যার, নিজেই শুনবেন।”

– ‘‘মানে? তিনি আসবেন না।’’ বলে জয়ন্ত।

পুলিশ বলে, – ‘‘আপনি আসুন না স্যার। নীচের ঘরেই উনি থাকেন’’

অগত্যা জয়ন্ত ও যাদব পুলিশ অফিসারের সঙ্গে নীচে আসে। দেখে একটা ঘরে নমিতাকে চার পাঁচ নানা বয়সী গ্রামের বৌ’রা ঘিরে বসে আছে।

যাদব বলে, – ‘‘আপনারা ওঁনাকে একা ছেড়ে দিন। আমরা কিছু কথা ওঁনাকে জিজ্ঞাসা করবো।’’

গ্রামের বৌ’রা বলল, – ‘‘করুন না, আমরা বসে আছি তো কি হবে?’’

জয়ন্ত বলে, খুব আস্তে ও মোলায়েম ভাবে, – ‘‘না, তা নয়, আমাদের ও ওঁনার গোপন কথা পাঁচজনের সামনে জিজ্ঞাসা করা যায় না।

গ্রামের বৌ’রা বলে, – ‘‘নমিদির খুব শরীর খারাপ, কান্না ককরলেই জ্ঞান হারাচ্ছে। বাবা মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলেই কাঁদছে। তাই ওকে ছেড়ে আমরা কোথায় যাচ্ছি না।’’

জয়ন্ত যাদবকে বলে কানে কানে। সে চলে যায় বাইরে জয়ন্ত গ্রামের বৌ’দের বলে, – ‘‘ঠিক্ আছে। আমি দরজা বন্ধ করে জিজ্ঞাসা করবো, আর আপনারা দরজার ঠিক বাইরে থাকবেন। জ্ঞান হারালেই আপনাদের ডাকবো।’’

আস্তে আস্তে গ্রামের বৌ’রা ঘরের বাইরে এল। জয়ন্ত আর যাদব ফিরে এসে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।

জয়ন্ত ভাল করে নমিতাকে দেখে। শ্যাম বর্ণ, দোহারা চেহারা, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে, মুখটা মলিন। মোটামুটি দেখতে, হাতে ফোনটা ধরে আছে। জয়ন্ত ভাবে, এত শরীর খারাপ যাঁর, বাবা মার বাড়ীর লোকে কথায় জ্ঞান হারাচ্ছেন, খাওয়া দাওয়া করছেন না। কিন্তু ফোন কেন সর্বক্ষন হাতে আছে?

প্রথমে প্রশ্ন করে যাদব – ‘‘আপনার নাম?’’

উত্তর এল খুব আস্তে করে – নমিতা দত্ত’’।

প্রশ্ন – ‘‘এই ডাকাতির ব্যাপারে কি জানেন?’’

নমিতা – ‘‘আমি পুলিশকে বলেছি সব।’’

প্রশ্ন – ‘‘আমাদের আর এক বার বলুন।’’

নমিতা – ‘‘আমি রাত্রে ছাদে শুয়ে ছিলাম। ডাকাতির ব্যাপারে কিছুই জানি না। রাত্রে ঘুম ভাঙতে, জল টেস্টা পায়। তাই নীচে এসে ঘর থেকে জল খেতে গিয়ে দেখি…..।’’ কাঁদতে থাকে নমিতা ।

প্রশ্ন – ‘‘টাকা গহনা ইত্যাদি চুরি গেছে কখন দেখলেন?’’

নমিতা – ‘‘পরের দিন সকালে।’’

প্রশ্ন – ‘‘আপনি নিজে থেকে দেখলেন না কেউ বলেছিল?’’

নমিতা – ‘‘আমি নিজে থেকে দেখলাম।’’

ভ্র“ কুচকে ওঠে জয়ন্তর।

প্রশ্ন – ‘‘সবাই ঘরে শুয়ে ছিল, আপনি ছাদে শুয়ে ছিলেন কেন?’’

নমিতা – ‘‘গরমে গিয়েছিলাম।’’

প্রশ্ন – ‘‘এখন তো আগষ্ট মাস। যখন তখন তো বৃষ্টি হতে পারে।’’

নমিতা চুপ করে থাকে। যাদব প্রশ্ন করে, – ‘‘আপনি জানলেন কিকরে ডাকাত এসেছিল। ডাকাত তো চুপচাপ কাজ করে না?’’ নমিতা চুপ করে থাকে।

প্রশ্ন – ‘‘দরজা ভাঙ্গা নেই। পাঁচিল ভাঙ্গা নেই। তাহলে কিভাবে এল ডাকাত?’’ নমিতা চুপ।

প্রশ্ন করে এবার জয়ন্ত – ‘‘আপনাদের চাকর। ড্রাইভার বাড়িতেই থাকে তো?’’

নমিতা – ‘‘না তারা থাকে না। সকালে আসে রাত্রে চলে যায়।’’

জয়ন্ত উঠে দাঁড়িয়ে বলে, – ‘‘দেখুন নমিতা দেবী। আমার মন বলছে কোন ডাকাত এ কাজ করে নি।’’

নমিতা চমকে ওঠে। ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। লক্ষ্য করে জয়ন্ত। তারপর বলে, – ‘‘ঠিক আছে আপনাকে আর বিরক্ত করবো না। কিন্তু বারবার আপনাকে বিরক্ত করবার জন্য আসতে না হয়। সে জন্য আপনার ফোন নং টা চাই। যদি, যদি কেন আপনাকে আবার দরকার পড়বেই তাই না এসে ফোন-এ জেনে নেবো।’’

নমিতা একটু ইতঃস্তত করে ফোন নং টা জানায়। সবাই চলে যায়।

দিন সাতেক পরে আবার একদিন পুলিশ এসে হাজির নমিতার বাড়িতে। এখন ও একটু স্বাভাবিক হয়েছে। বাড়িতে তখনও কয়েকজন গ্রামের বৌরা আছে। পুলিশ দেখে সবাই সরে যায়। জয়ন্ত ও যাদব সঙ্গে আরো কয়েকজন পুলিশ আছে। দুজন মহিলা পুলিশ আছে।

জয়ন্ত ও যাদবকে বসার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসায় নমিতা। বলে, – ‘‘আপনারা বলে ছিলেন আসবেন না ফোনে যোগাযোগ করবেন। তা কি এমন দরকার পড়ল যে বাড়িতে আসতে হল?’’

জয়ন্ত বলে, – ‘‘হ্যাঁ কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করার আছে। তার সত্যতা যাচাই করার আছে।’ – হ্যাঁ, আপনি দাঁড়িয়ে রইলেন কেন? বসুন।’’

ঠিক এমন সময় গাঁয়ের মোড়ল এসে হাজির। বলে, – ‘‘স্যার। আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন?’’ এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে নমিতার মুখোমুখি হয়ে সোজা প্রশ্ন করে। – ‘‘আপনি সেলিমকে চেনেন?’’

নমিতা চমকে ওঠে। বলে, – ‘‘না ও নামে কাউকে চিনি না।’’

জয়ন্ত – আপনার ফোন ট্র্যাপ করা হয়েছিল। আপনার ফোন কল চেক্ করে ধরা পড়েছে। যে দিন বাড়িতে সবাই-এর মৃত দেহ দেখতে পান সেদিন আপনি সেলিমকে ৫২ বার ফোন করেছিলেন। ও-ও আপনাকে প্রায় ৮-১০ বার ফোন করেছিল। কেন?

চুপ করে থাকে নমিতা। জয়ন্ত বলে, – ‘‘সেলিম কে চেনন না। আপনার বাড়ি পিছন দিকে পুকুরের ওপারে সুতো কলে কাজ করে। আপনি চেনন না?’’

নমিতা চুল। জয়ন্ত বলে চলে, – ‘‘আপনি দু বার সুতো কলে গিয়ে সেলিমের সাথে দেখা করেছেন। তার সাক্ষী আছে ঐ সুতো কলেরই কর্মী।’’ নমিতা চুপ।

জয়ন্ত এবার চড়া গলায় বলে, – ‘‘এখনও বলবেন না, সেদিন রাত্রে কি হয়েছিল?’’ নমিতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। 

মোড়লকে যাদব সিং বলে, – ‘‘পোষ্টমর্টেমের রিপোট তো আপনাদের জানানো হয়নি। শুনুন তাহলে, দশ মাসের বাচ্চাকে বাদ দিয়ে সবাইকে আগে বিষ খাওয়ানো হয়ে ছিল। ঠিক রাত্রে খাবার সময়। শরীর খারাপ হতেই তাই তারা বিছনায় শুয়ে পড়ে। মারা যাবার পর কুড়ুল বা ধারালো ছুরি গলায় চোপ মারা হয়। দশ মাসের বাচ্চাকে গলা টিপে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে।’’ 

মোড়ল মশাই চোখ বন্ধ করে দু কানে হাত চাপা দিয়ে বলে ওঠে, – ‘‘উঃ কি সাংঘাতিক, কি ভয়ানক ব্যাপার এসব কারা করলো স্যার?’’

জয়ন্ত বলে, – ‘‘কারা নয় বলুক কে। বলুন নমিতা দেবী সেলিমকে আপনি চেনন না? আপনাতে আর সেলিমেতে পরামর্শ করে এই খুন গুলো আপনি করিয়েছেন। তাই না?’’

 নমিতা অঝোর ধারায় কাঁদে।

মোড়ল থেকে গাঁয়ের লোকের মুখ দিয়ে একটা কথাই বেরোয় ‘‘নমিতা’’।

জয়ন্ত বলে, – ‘‘হ্যাঁ, নমিতা দত্ত। আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল মৃত ব্যক্তিদের গায়ে চাপা দেওয়া চাদর এর ওপর। পরিষ্কার নিভাঁজ চাদর। যেন মনে হচ্ছে মারা যাবার পর কেউ পরিষ্কার ভাবে চাপা দিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় সন্দেহ যার বাবা মা দাদা ভাই বোন এমন কি অত কচি বাচ্চা মৃত্যু হয়েছে, তাদের মেয়ে শোকে পাথর হয়ে গেলেও হাতে ফোনটা ঠিক ধরা আছে। তারপর পোষ্টমোর্টেম রিপোটই সব সন্দেহ দুর হল।’’ 

একটু চুপ করে থেকে জয়ন্ত ধমকের স্বরে বলে, – ‘‘ বলুন চুপ করে থাকবেন না। সেলিম সব স্বীকার করেছে। ও এখন আমাদের হেপাজতে।’’

চোখ মুছে নমিতা দৃঢ় গলায় বলে, – ‘‘হ্যাঁ আমিই খুন করিয়েছি। আমি বলেছি, সেলিম করেছে।’’ 

একটু চুপ করে থেকে নমিতা বলে, – ‘‘সুতো কলে অল্প মাইনের কাজ করা অশিক্ষিত কর্মচারীকে ভালবেসেছে ডবল এম.এ পাশ করা একটা মেয়ে। সেলিম মুসলমান আমি হিন্দু। এতে কি দিন রাত পাল্টে গেছে? না আকাশ থেকে বজ্রপাত পড়েছে? এটা কেন বাবা মা বুঝতে চায়নি। দাদা বৌদি ভাই বোনেরা পর্যন্ত্য বেঁকে বসে ছিল। কেন? আমার কাকুতি মিনিত অনুরোধ চোখের জল কিছুই ওদের মন ভেজাতে পারেনি।’’ চুপ করে যায় নমিতা।

লেডিস্ পুলিশ হাতে হাত করা পড়িয়ে দেয়। নিয়ে চলে যায়। দুদিন পরে কোটে কেস ওঠে।

সেলিম স্বীকারোক্তিতে বলে, – ‘‘আমাদের প্রেম প্রায় দু বছর। প্রথম প্রথম বাড়িতে জানতো না। তারপর জাননো হলো। কিন্তু কিছুতেই ওর বাড়ির লোকেরা মানতে চায়নি। ‘‘

একটু চুপ করে থেমে সেলিম বলে, – ‘‘প্রথম, জাত নিয়ে কথা ওঠে, তারপর অবস্থা আর শিক্ষা। আমি আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু নমিতা শোনে নি। কিন্তু শেষে মরিয়া হয়ে নমিতা তার প্ল্যান আমায় বলে। আমি রাজি হই। নমিতার দাদা চাকরীর সুবাদে বাইরে থাকে। সেই দিনই ছুটিতে এসেছিল। তাই প্ল্যান মাফিক সেই দিন রাত্রে নমিতা নিজে রান্না করে খাবারের মধ্যে বিষ দিয়ে আগে মারবে, তারপর আমি ওর কথা মত গভীর রাত্রে গিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে দিই। আর বাচ্চাটা কাঁদছিল বলে গলা টিপে ধরি।’’ 

একটু থেমে আবার বলে সেলিম, – ‘‘নমিতার টাকাতেই আমি দুদিন আগে ছুরিটা কিনি। কাজ হয়ে যেতে ঐ ছুরিটা ওদের বাড়ির পিছনের পুকুরটায় ছুঁড়ে ফেলেছি।’ 

ওদের দুজনার স্বীকারোক্তি শুনে, ও সব প্রমান পেয়ে ৩০২ ধারায় ওদের ফাঁসির হুকুম দেওয়া হলো। দুজনকে জেলে নিয়ে যাওয়া হলো। নমিতাকে সেন্ট্রাল জেলে আর সেলিমকে আলিপুর জেলে।

কিন্তু না ওদের ফাঁসি হলো না। নমিতা জেলে অসুস্থ হওয়ায় তাকে জেল হস্পিটালে যেতে হল, সেখানে পরীক্ষা করার পর জানা গেল নমিতা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ফাঁসি স্থগিত হয়ে গেল।

এই ভাবে ৫ মাস পর নমিতার একটা পুত্র সন্তান হয়। সন্তান হওয়ার বছর খানেক পর সেন্ট্রাল জেলে একজন আসে নমিতার সাথে দেখা করতে। নমিতার সন্তানের নাম রাখা হয়েছে রাহুল। সেই ব্যক্তি আসে অনুরোধ জানাতে যে তিনি রাহুলকে দত্তক নিয়ে নিজের ছেলের মতন মানুষ করতে চান। নমিতাকে জিজ্ঞাসা করা হয় ঐ ব্যক্তিকে সে চেনে কিনা আর তার প্রস্তাবে রাজি কিনা? ঐ ব্যক্তি পরিচয় দেয় সে নমিতার কলেজের বন্ধু। নমিতা, তার একবার বড় উপকার করেছিল। সেই কৃতজ্ঞতায় তার ছেলের সব দায়িত্ব নিতে চায়। নমিতাও জানায় হ্যাঁ, সত্যি কথা এবং সে রাজি হয় তার ছেলের দায়িত্ব বন্ধুর হাতে সঁপে দিতে।

নমিতা রাষ্ট্রপতির কাছে দরখাস্ত দিয়ে মিনতি জানায় তার ছেলের জন্য। তাকে যেন প্রাণ ভিক্ষা দেওয়া হয়।

আজ নমিতার ছেলের বয়স দশ বছর। সেও রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানিয়েছে, তার মায়ের প্রাণ ভিক্ষার জন্য। সে কারণে ওদের ফাঁসি এখনো হয়নি। এখানো কেস চলছে। দু-দুবার, ২ জন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চায়। কিন্তু না দুজন রাষ্ট্রপতিই সে আবেদন খারিজ করে দেন। এখনো নমিতার আর সেলিমের ফাঁসি বহাল আছে। এই প্রথণ কোনো মহিলার ফাঁসি হবে স্বাধীন ভারতে।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
Writer Kaberi Ghosh
Intro & Ending Debanshu Ghosh
Kathok Debanshu Ghosh
CharactersName
Nomita Olivia Das
Jayanta Joydeep Lahiri
Police OfficerSurojit Das
Others CharactersDebanshu Ghosh, Joydeep Lahiri, Olivia Das, Surojit Das

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *