ভূতের মুক্তি

Views: 1

ভূতের মুক্তি:

অনেকেই ভাবেন বা বলেন, ভূত নেই, ভূত বলে কিছু হয় না।

হয়- হয়। যদি না হতো তাহলে, ইহকাল বা পরকাল বলে কিছু হতো না। পরকালে গিয়ে, পাপী আত্মা, অতৃপ্ত আত্মাই বা কোথায় যায়? তারা এই হইকালে এসে জীবন্ত মানুষকে দেখা দেয়। আকারে ইঙ্গিতে জানায় তাদের আত্মার শান্তি পায় নি। তাদের আত্মাকে শান্তির ব্যবস্থা করতে জানায়। আর তাদের এই দেখা দেওয়া, আকার ইঙ্গিত করা আমরা যারা ধরতে পারি না, তারাই ভয় পাই। আর যারা দেখতে পায় না তারাই বলে ভূত নেই। বড় বড় মুনি-ঋষিরা তাদের অস্তিত্ব নিয়ে অস্বীকার করেন না। স্বয়ং মহাদেবের আর এক নাম ভূতনাথ। আমাদের জ্যোতিষীরাও মানেন ভূত বলে কিছু আছে, তাই তিথি নক্ষত্র বিচার-এর সময় বছরে বছরে কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যার আগের দিনকে “ভূত চতুর্দশী” বলে; সেইদিন ভূতেদের উদ্দেশ্যে বাতি জ্বালা হয়। জ্যোতিষীরা বলে মানুষ মারা গেলে দেহ পুড়ে যায় কিন্তু আত্মা; আত্মা তো অবিনশ্বর। সে তো পোড়ে না, জলে ডোবে না। সেতো ইহলোকের মায়া ত্যাগ করতে পারে না; তাই তারা বার বার ফিরে আসে। বড়ো বড়ো মনিষীগণ তারাও স্বীকার করেন ভূত আছে। সেই রকম এক মনিষী, স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর জীবনের এক ঘটনা থেকে বলি, অবশ্যই কিছু কাল্পনিক ব্যাপার আছে গল্পের খাতিরে। তাহলে বলি শোনো—–

স্বামী বিবেকানন্দ যখন পরিব্রাজক হয়ে ঘুরছিলেন, তখনকার ঘটনা। একদিন ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যার পর এসে দাঁড়ালেন এক সরাইখানার কাছে। তখনকার দিনে তো হোটেল ছিল না। ঐ সরাইখনায় সবাই রাত্রিযাপন করতো দরকার পড়লে। স্বামীজী সরাইখানার সামনে দাঁড়াতেই; সন্ন্যাসীমানুষ দেখে সরাই খানার-মালিক হাত জোড় করে এসে দাঁড়াতে স্বামীজি বললেন,

– ” রাত্রে থাকার মতন কোন ঘর আছে?” 

সরাইখনার মালিক বলল,

-“আছে ঠাকুর কিন্তু একটু অসুবিধা…..”

বলেই থেমে যায় সরাই খানার মালিক।

স্বামীজি বলেন,

– ” ও! আমি হলাম কালীমায়ের সন্তান আমার কোন অসুবিধা হবে না।”

সরাইখানার মালিক আগে আগে গিয়ে দেখিয়ে দেয় ঘরটি। সরাইখনার পিছনে ঘরটি। ঘরে শুধু একটা চৌকী। ঘরের পিছনে একটা জানালা। চৌকীতে একটা কিছু পাতা আছে। সরাইখানার মালিক একঘটি জল ও একটা লণ্ঠন দিয়ে গেল। স্বামীজি হাত পা ধুয়ে এক ঘটি জল খেয়ে শুয়ে পড়লেন। পথশ্রমে খুবই ক্লান্ত।

রাত্রি কয় প্রহর ঠিক বোধ হচ্ছে না, হঠাৎ স্বামীজির ঘরের দরজা খুলে যায়। ঘুম ভেঙে যায়। স্বামীজি ভাবেন, ঘরের দরজা বন্ধ করেই শুয়েছিলাম। তবে?নিশ্চই, হাওয়ায় খুলে গেছে। আবার উনি ঘুমিয়ে পড়েন। একটু পড়েই সশব্দে দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেলো দরজা। স্বামীজী শুয়েই আছেন ,আবার কিছুক্ষন পর তিনি অনুভব করলেন, চৌকিটা যেন অল্প দুলছে। উঠে বসলেন ,চারিদিকে দেখলেন; না তেমন কিছুই নেই। আবার শুয়ে পড়লেন। আবার কিছুক্ষন পর চৌকিটা জোরে জোরে দুলছে। আবার উঠে বসেন স্বামীজি। দেখলেন, জানালার কাছে দু-তিনটে ছায়ামূর্তি সরে গেলো। 

কিছুক্ষন বসে থেকে স্বামীজি শুয়ে পড়লেন। তারপর শুনলেন, কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে। শনিবার চেষ্টা করলেন স্বামীজি। কিন্তু না শোনা যাচ্ছে না। অগত্যা আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু বেশ কিছুক্ষন পর উনি দেখলেন,একটা আগুনের ঘর দাউ দাউ করে জ্বলছে। এটা স্বপ্ন না সত্যি? সেই আগুনের ভিতর থেকে তিন চারটে হাত,দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর আর্তস্বরে চিৎকার করছে কারা?—– -“বাঁচাও—–বাঁচাও।”

আবার কিছুক্ষন পরে আগুন নিভে গেলো।

বিছানায় উঠে বসলেন স্বামীজি। শান্ত চোখে চেয়ে থাকলেন বেশ কিছুক্ষন। তারপর দেখেন তার সামনে চারটে ছায়ামূর্তি। তারা তাদের ভাষায় কি যেন বলছে।

 তবে আকারে ইঙ্গিতে যা বলছে তাতে বোঝা গেলো; তারা বলছে তাদের বড়ো কষ্ট। তারা মুক্তি চায়। তারা শান্তি চায়। 

স্বামীজির চোখে দয়া। তাদের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে, তাদের দিকে দেন হাত প্রসারিত করে চোখ বুজে মন্ত্র বলতে লাগলেন। ক্রমে ক্রমে সব ছায়ামূর্তি মিলিয়ে গেলো। তারপর স্বামীজি দেখলেন প্রহর ব্রাহ্ম মুহূর্তে পড়েছে। এরপর তিনি আস্তে আস্তে শয্যা ত্যাগ করলেন।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterKaberi Ghosh
Intro & EndingDebanshu Ghosh
NarratorDebanshu Ghosh
CharactersName
Swami JiJoydeep Lahiri
Other VoiceDebanshu Ghosh

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *