হানা বাড়ি
Views: 7
হানা বাড়ি:
ক্লাবে এসে তাপস বলল সূর্য গোরাকে,
– ‘‘সজল, আর কাজলের ৫ দিন ছুটি। আমার তিনদিন ২দিন ম্যাানেজ করে নেবো। তাহলে হলো মোট ৫ দিন। তোরাও ৫ দিন ম্যানেজ করতে পারিব?”
সূর্য বাদাম খেতে খেতে বলে,
– ‘‘কেন? কি হবে? এই ৫দিনে।’’
গোরাও বলে,
– ‘‘কেন Brother ৫দিনে কি রাজ্যজয় করবে?’’
সজল বলে,
– ‘‘না, অনেক দিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। কোথাও যাবি?’’
– ‘‘ দি আইডিয়া’’ চেঁচিয়ে উঠল সূর্য, – ‘‘এই দুদিন আগে বাবা বলছিল।’’ তোদের সময় হবে বড় পিসির একটা খোঁজ নিয়ে আয় না। অনেক দিন কোন খবর পাইনি। কেউ আসেও না আর আমাদের যাওয়া হয় না।’’ চল্ তাহলে আমার বড় পিসির বাড়ি যাই।’’
তাপস বলে,
– ‘‘কোথায়?’’
কাজল বলে,
– ‘‘কোন গাঁয়ে টাঁয়ে যাবো না।’’
সূর্য বলে,
– ‘‘বাঁকুড়ার, ভাদুলপুর গ্রামে, এক কালে বড় পিসিদের জমিদারি ছিল।’’
ব্যাজার মুখে কাজল বলে,
– ‘‘সেই গাঁয়ে আর যত ভুতের ভয়।’’
সূর্য বলে,
– ‘‘ না রে, ভাদুলপুর গ্রাম ঠিক গ্রাম নয়। একটু শহর টাইপের।
সজল বলে,
– ‘‘খাওয়া দাওয়া মন্দ হবে না কি বল্?’’
গোরা বলে,
– ‘‘হ্যাঁ, – যার যা চিন্তা, তুমি পেটুক রাম যেখানে যাবে সেখানে আগে খাবার চিন্তা।’’
– ‘‘আরে জমিদার বাড়িতে যাবো, সেটা না চিন্তা করলে হয়।’’ হাসতে হাসতে বলে সজল।
সূর্য বলে,
– ‘‘ঠিক আছে ঐ কথাই রইল। তাহলে আমরা ভাদুলপুর গ্রাম যাচ্ছি।’’
দুদিন পরে, পিসিকে খবর দিয়ে ট্রেনে চেপে বসল পাঁচ জনে, সজলের অনুরোধে বেশ কিছু খাবার দাবার বগল দাবা করে নেওয়া হয়েছে। ট্রেনে যদি বেশী ক্ষিদে পায় – যদি কিছু কিনতে না পাওয়া যায় ইত্যাদি ইত্যাদি ভেবে।
প্রথম দিন সকালে ১১টার মধ্যে ট্রেনে চাপল। দ্বিতীয় দিন ট্রেনে রইল, তৃতীয় দিন বেলা ১টার সময় ট্রেন থেকে নামল। ট্রেন তিন ঘন্টা লেট। পিসি বলেছিল, ষ্টেশন থেকে ১০ মিনিটের রাস্তা। হেঁটে আসা যায় আবার টোটো করেও আসা যায়। ডিসেম্বর মাস। এখানে বেশ ঠান্ডা। বেলা ১টার সময় মনে হচ্ছে যেন বিকেল বেলা। ষ্টেশনে নেবে পাঁচ জনে এগরোল আর চা খেয়ে নিল। বেশ ক্ষিদে পেয়ে ছিল সবার। সজল আপত্তি কর ছিল।
তাপস বলল,
– ‘‘ভুতের মুখে রাম নাম।’’
– ‘‘আরে তা নয়, এতক্ষণ তো কেটে গেল, আর ১০ মি. পরে পিসির বাড়ি পৌঁছে একেবারে মাংসর ঝোল ভাত খেলে হতো না?’’
সূর্য বলে,
– ‘‘চ্ তাহলে হেঁটেই যাই। ক্ষিদেও হবে। পয়সাও বাঁচবে। আর টো টো করতে হবে না।’’
সবাই বলে,
– ‘‘ঠিক আছে, বেশ তাই চল্।’’
সামনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা আসছে। সেই খেলার গল্প করতে করতে সোজা হেঁটে চলে। ৫ জনে খেয়াল করে না ডান দিকে একটা রাস্তা নেমে গেছে। সেই রাস্তায় সব লোকজন সাইকেল রিক্সা টোটো সব যাচ্ছে। খেলার কথা বলার ঝোঁকে সোজা চলে, বেশ কিছুক্ষণ যাবার পর ওদের খেয়াল হয় যে এই রাস্তা দিয়ে কোন মানুষজন গাড়ি টারি চলছে না। রাস্তা ফাঁকা। সময় দেখে প্রায় ২০/২৫ মি হাঁটা হয়েছে। থমকে দাঁড়ায় সব ‘কি হলো।’ রাস্তা ভুল করলো? দেখে দূরে একটি লোক সাইকেল চালিয়ে সাঁই সাঁই করে আসছে। যেন কে তাড়া করেছে। লোকটি কাছে আসতে গোরা তাপস দাঁড় করায় লোকটিকে বলে,
– ‘‘ভাদুলপুর গ্রাম কোথায় দাদা?
লোকটা বলে,
– ‘‘ভাদুলপুর কোথায় যাবেন?’’
সূর্য বলে ,
– ‘‘জমিদার বাড়ি।’’
– ‘‘ও এত দূর এসে আবার পিছু হাঁটবেন এটা মুচুকুন্দু পুর। এটা দিয়েও যাওয়া যায় ভাদুলপুর জমিদার বাড়ি। এই সামনেই একটা মাঠ পড়বে, মাঠ পেরিয়ে কিছুদূর গিয়ে একটা মাঠ পড়বে। মাঠ পেরিয়ে কিছুদূর গিয়ে একটা মজা নদীর সাঁকো পড়বে। সাঁকো পেরিয়ে গিয়েই টোটো স্ট্যান্ড পাবেন। সেখান থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা জমিদার বাড়ি।’’
বলেই লোকটি,
– ‘‘সরুন, সরুন, অন্ধকার হয়ে এলো আমার তাড়া আছে।’’
বলেই লোকটি সাইকেল নিয়ে দে ছুট্। সূর্যরা কি করবে অগত্যা সামনের দিকেই এগোতে লাগলো। বেলা পড়ে আসে নি, হঠাৎ মেঘ করে এসেছে। ওরা খেয়াল করে নি। জোরে জোরে পা ফেলে চলল। কিন্তু মাঠ পেরুনো হল না মাঝ খানেই তড়্ বড়্ করে বৃষ্টি এসে গেল। এই শীতে বৃষ্টিতে ভেজা – উঃ সাংঘাতিক। এদিক ওদিক তাকাতে হঠাৎ চোখে পড়ে একটা পোড়ো বাড়ি। ছুটতে ছুটতে ওরা ঐ বাড়ির গেট খুলে ভেতরে ঢোকে। দেখে বাড়ির দরজাও আধভেজানো। ঢেলা দিতেই খুলে গেল। ওরা পাঁচ জনে ভেতরে ঢোকে। দেখে লম্বা বারান্দা। তার নীচে উঠান। বারান্দার একদিকে একটা লম্বা ঘর। ঘরে ঢোকার দুটি দরজা। একটা ওদের সামনে আর একটা দুটি জানালার পর। যাইহোক ওরা প্রথম দরজা দিয়ে ঘরে ঢোকে। দেখে সামনেই একটা সতরঞ্চি না চাটাই না অন্য কিছু নোংরা ধূলো ও ইঁদুরের কর্মে সেটা শতছিন্ন অবস্থায় পাতা আছে। একটু দূরে একটা টেবিল পায়া ভাঙ্গা অবস্থায় পরে আছে। তার সামনে একটা দোলনা চেয়ার। সেটাও ভাঙ্গা তার পাশে একটা ইজি চেয়ার সেটারও অবস্থা খারাপ। মাথার ওপরে আগেকার ঝালর পাখা। বাইরে থেকে দড়ি ধরে টানতে হয়। তারও অবস্থা একই আধখানা ছিঁড়ে ঝুলছে। এই সব দেখে কাজল বলল,
– ‘‘দূর, আমি ঐ জন্য বলে ছিলাম এখানে এসে কাজ নেই। সব ভূতেদের আড্ডা।’’
তাপস বলে,
– ‘‘ভূত আছে কিকরে বুঝলি? চোর ছেঁচড়ও তো হতে পারে। এখানে এসে আছে।’’ সবাই হেসে উঠল।
শীতের বেলা তাড়াতাড়ি সন্ধ্যো নেবে এলো চারিদিক অন্ধকার। জানালা গুলো খোলা তাই দিয়ে বাইরে টা দেখা যাচ্ছে। চারিদিকে ঝোপ ঝাড় জঙ্গল। সময় দেখলো সবে সাড়ে ৫টা। সূর্য বলে,
– ‘‘চল্ এই চাটার ওপর বসে কিছু খেয়ে নিই ।’’
কাজল বলল,
– ‘‘এই নোংরার মধ্যে। অসম্ভব।’’
গোরা বলে,
– ‘‘উপায় কি বল্। ফোনের আলোয় দেখি বসার উপায় কি করা যায় তোর।’’
ফোনের আলোয় দেখলো ঘরে কোনে একটা ভাঙ্গা ঝাড়ু পরে। সেইটা নিয়ে এসে ঝাঁট দিতে শুরু করে। দেখলো চাটাই না, পুরোনো ছেঁড়া কার্পেট। গোরা বলল,
– ‘‘এ ঘরে যে ছিল, সে বেশ সৌখিন, মেঝেতে কার্পেট পাতা ইজি চেয়ার, দোলনা চেয়ার।’’
কিছুটা জায়গা পরিষ্কার করে ওর পাঁচ জনে বসে খেতে। যার-যার ব্যাগ থেকে খাবার বার করে। মা ও দিদি আসার সময় ওদের পছন্দ মত খাবার করে দিয়েছে। খাওয়ারটা অর্ধেকের বেশী খাওয়া হয়ে গেছে। হঠাৎ তখন ওরা শুনতে পায় গ্রান্ড ফাদার ক্লকের আওয়াজ, ঢং ঢং ঢং সন্ধ্যো ৬টা বাজল। চারিদিকে বেশ অন্ধকার। শুধু ওদের ফোনের টর্চ জ্বলছে। ঘড়ির আওয়াজ শুনে সবাই অবাক হয়ে চারিদিকে দেখছে ঠিক সেই সময় হঠাৎ ওরা যে ঘরে বসে ছিল সেই ঘরটায় আলো জ্বলে উঠল। না ইলেকট্রিকের আলো নয় ঝাড়বাতির মোমের নরম আলো। পঞ্চপান্ডবরা বড় বড় চোখ করে দেখছে, খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। মাথার ওপর চামরের মতন পাখা দুলছে। বেশ হাওয়া লাগছে ওদের। হঠাৎ দোলনা চেয়ার নতুনের মতন হয়ে গিয়ে কে যেন দোল খাচ্ছে। একটা নাদুশ নুদুশ মার্কা কালো কুকুর দোলনা চেয়ারের তলায় বসল। এদিকে ইজি চেয়ারটাও নতুন হয়ে গেল। আর কে যেন এসে বসল ক্যাচ্ ক্যাচ্ আওয়াজ হলো আর একটা কালো বিড়াল ইজি চেয়ারের ওপর বসল। ঘরের মধ্যে মিষ্টি পিয়ানোর আওয়াজ আসছে। মনে হয় কোনো ওয়েস্টান মিউজিক বাজছে। বিস্ময়ে বিস্ফরিত চোখে ওরা দেখছ। হঠাৎ বন্দুকে শব্দ গুড়ুম-গুড়ুম-গুড়ুম তিনটে শব্দ, আর একটা আর্ত চিৎকার আ-আ, তারপর সব অন্ধকার হয়ে গেল। কোন শব্দ নেই। কাজল সজলকে চেপে ধরে বলে,
– ‘‘চল্ তাড়াতাড়ি পালাই, ওরে-বাবারে গেলাম।’’
বলে ওরা ব্যাগ গুলোকে কাঁধে নিয়ে যে যার দুড়-দাড় করে একে বারে গেটের বাইরে। তারপর ছুট তখনও বৃষ্টি পড়ছে র্ঝির র্ঝির করে। ঠান্ডা বৃষ্টির তয়াক্কা না করে ওরা পাঁচজনে প্রাণপনে ছুটতে লাগল। ছুটতে ছুটতে একে বারে একটা নদীর সাঁকোর কাছে এসে থামলো। ছোটো সাঁকো। তাড়াতাড়ি পেরিয়ে ওরা নদীর ওপারে কিছুটা গিয়ে দেখলো রাস্তায় আলো জ্বলছে। রাস্তায় টোটো তিন/চারটে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা একটা টোটোয় উঠে বসে বলল,
– ‘‘জমিদার বাড়ি।”
পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওরা পৌঁছিয়ে গেল। সামনেই গেট। খুলে বাড়ির দরজার কাছে এসে বেল বাজালো।
দরজা খুলতেই। ওর হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল। সামনেই পিসি মা দাঁড়িয়ে বলে,
-‘‘ ওমা তোরা। তোদের তো দুপুরে আসার কথা। এখন কোথাথেকে আসছিস্,এমন কাক ভেজা হয়ে।’’
-‘‘পরে বলছি আগে পোষাক পালটাই।”
বলে সামনে সিঁড়ি দেখে দুরদাড় করে ওপরে উঠলো। পিসিমা নিচে থেকে বলেছিল,
– ‘‘সামনের ঘরটা তোদের।”
সেই ঘরে ঢুকে ওরা দরজা বন্ধ করে দিলো। পোষাক বদলে, খাওয়া দাওয়া সেরে সূর্য গোরারা বসল পিসির কাছে। পিসিমা বললে,
– ‘‘হ্যাঁ রে, এবার বল বাড়ীর খবর। সবাই কেমন আছিস?’’
সূর্য বলে,
– ‘‘সবাই ভালো আছে।”
হঠাৎ কাজল বলে ওঠে,
– ‘‘আরি পিসিমা, আজ যা ভূতের পাল্লায় পড়ে ছিলাম।’’
সূর্য বলে,
– ‘‘আচ্ছা পিসিমা, ঐ মুচুকুন্দপুরে পোড়ো বাড়িটায় কি সত্যি ভূত থাকে?’’
পিসিমা বলে,
– ‘‘ও তোরা কি ঐদিকে গিয়েছিলি?’’
তখন সূর্য আদ্যপ্রান্ত সব বলে। তাপস মাঝখান থেকে বলে,
– ‘‘বলো না পিসিমা ঘটনাটা কি?’’
পিসিমা বলে,
– ‘‘তোর পিসেমশাই-এর ঠাকুরদার আমলে ওখানে এক সাহেব আসে। ওদের দেশ থেকে, জায়গাটা পছন্দ হতে, এখানে বাড়ি করে। সাহেব আর মেম। সাহেবের প্রচুর ধন সম্পত্তি ছিল। প্রচুর টাকা পয়সা নিয়ে এদেশে আসে। বেশ ভাল ভাবে বছর পাঁচেক কাটে। খুব সৌখিন ছিল সাহেব। তবে কিছু দান টানও করতো। সন্ধ্যো ঠিক ৬টার সময় ওদের বসার ঘরে চা খেতে নামতো সাহেব। সাহেব একটা পোষা কালো কুকুর ছিল আর মেম-এর একটা কালো বিড়াল ছিল। আর চা খাবার সময় রোজ কিছু না কিছু লোক আসতো। কার ছেলের অসুখ চিকিৎসা করাবে, কার মেয়ের বিয়ের জন্য সাহায্য চাই এই রকম। হঠাৎ একদিন একদল ডাকাত পড়লো। সাহেব ভয় দেখানোর জন্য ডাকতদের ওপর গুলি চালাল। ডাকাত রাও গুলি করে সাহেব মেম কে মেরেই ফেলল। সব টাকা পয়সা গয়না লুট তরজা করে নিয়ে পালাল। তার পরের দিন পুলিশ এসে মরা দেহটা নিয়ে চলে গেল সেই থেকেই বাড়িটা পড়ে রইল। ঐ রাস্তায় কেউ যদি ভুলেও যায় দেখতে পায় বাড়িতে আলো জ্বলছে। পিয়ানোর আওয়াজ আসছে। সেই থেকে ওটা হানা বাড়ি নামে সবাই জানে।’’
সূর্য বলে,
– ‘‘ওটা তোমাদেরই তো জায়গা তাই না পিসিমা?’’
পিসিমা বলে,
– ‘‘হ্যাঁ, তাইতো শুনেছি, সবাই ঐ জায়গার মায়া ত্যাগ করেছে।’’
গোরা বলে,
– ‘‘কেন পিসিমা, ঐ হানা বাড়ি ভেঙ্গে ওখানে তিনটে জিনিস করো। তাতে সাহেব আর মেমের আত্মা শান্তিপাবে। আর মানুষ জনও সবাই যেতে আসতে পারবে।’’
পিসিমা বলে,
-‘‘কি করে?’’
গোরা বলে,
– ‘‘একটি মন্দির, একটা গির্জা, একটা মসজিদ। দেখবে সব ধর্মের লোক যাওয়া আসা করবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। ভূতেরাও মুক্তি পাবে।’’
পিসিমা হেসে বললে,
– ‘‘ঠিক বলেছিস্।’’
সবাই হাসতে থাকে।
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Intro & Ending | Olivia Das |
Kathak | Sourodip Roy |
Characters | Name |
---|---|
Surjo | Debanshu Ghosh |
Gora | Soumik Banerjee |
Taposh | Suman Sadhukhan |
Kajol | Surojit Mukherjee |
Sajol | Joydeep Lahiri |
Pisi | Olivia Das |
Find us on Facebook – click here