যখের ধন

Views: 0
যখের ধন:
পৌষ পার্বনের পরের দিন রবিবার ছিল। পঞ্চবান বা পঞ্চপান্ডব যাই বলো। পাঁচ বন্ধুতে সূর্যোদের ছাদে রোদে বসে পিঠে খাচ্ছিল। সজল ওদের বাড়ির থেকে আবার গোরাদের বাড়ি থেকেও চেয়ে এনে একজায়গায় জোড়ো করে বসে খাচ্ছিল। তাপস বলে, – ‘‘হ্যাঁ রে সজল, এত খাওয়া কোথা থেকে শিখলি রে? কোনও স্কুলে নাকি? সবাই হেসে ওঠে। সজল খেতে খেতে বলে, – ‘‘না না কোন স্কুল নয়। এ হচ্ছে ঈশ্বর দত্ত¡ বাড়তি গুণ। ঈশ্বরের এটা বাড়তি আশীর্বাদ বুঝলি।
সেই সময় ছাদে আসে সূর্যের খুড়তুত বোন চুমকী ডাকে সূর্যকে, – ‘‘এই দাদা ভাই তোকে বাবা ডাকছেন, চল্।’’ সজল বলে ওঠে, – ‘‘কেন ডাকছে রে বোনটি আরো কটা পিঠে দেবে?’’
গোরা সজলের মাথায় একটা চাঁটা মেরে বলে, – ‘‘আরেগাধা পিঠে দেয় কাকীমা। কাকা নয়। কাকা ডাকছে চল্। নীচে গিয়ে আরো গিল্বি। এখন চল্।’’
সবাই চলে গেল। চুমকী বাসন, মাদুর গুছিয়ে ওদের পিছন পিছন নামতে নামতে বলে, – ‘‘বাবার কাছে ঐ দিকে। সেই মাঠের ধারের বাড়ি যাদের। তারা দুজন এসেছে।’’ নামতে নামতে সূর্য বলে, – ‘‘মাঠের ধারে বাড়ির হারান কবিরাজ? যাচ্ছা, যাই তো। কি বলে।’’ পাঁচজনে একসাথে বসার ঘরে ঢোকে। সূর্যের ছোট কাকা মনোময় বাবু বলেন, – ‘‘হ্যাঁ সূর্য, ঐ পশ্চিম পাড়ার শেষে মাঠের ধারে যে কবিরাজ মশাই থাকেন তিনি তোদের খোঁজ করছেন।’’
ওরা পাঁচজনে বসে। দেখে হারান কবিরাজের ছেলে অনিল ও তার দুই বন্ধু এসে বসে আছে। সূর্য বলে।
– তুমি অনিল তো কবিরাজ মশায়ের ছেলে? আর এরা?’’
অনিল বি.কম. পাশ করে বসে। চাকরী বাকরী পায়নি ঘরে বসে ছেলে পড়ায়। একদিন সূর্যকে বলেছিল।
– ‘‘সূর্যদা যদি কিছু কাজ কর্মের সন্ধান পাও তো আমায় বলো’’ সেই থেকেই ওকে সূর্য চেনে।
অনিল বলে, – ‘‘হ্যাঁ সূর্যদা। একটা বিশেষ দরকারে তোমার কাছে এসেছি।’’
– ‘‘কি ব্যাপার বলো।’’ কাজল উঠে ঘরের একটা আলমারি খুলে একটা খাতা পেন বার করে খুলে বসে। অনিল কি বলতে গিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে। গোরা উঠে অনিলের পিঠে হাত রেখে বলে,
– ‘‘কেঁদো না। কাঁদলে কি করে বলবে কথা। শান্ত হও। বলো আস্তে আস্তে কী হয়েছে। চোখ মুখ পুঁছে অনিল বলে, – ‘‘গতকাল, শনিবার অমাবস্যা ছিল। মা আমার মেজো বোন সন্ধ্যা কে নিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে যাবার সময় ছোট বোন রাখী বায়না করতে মা ওকেও সঙ্গে নিয়ে যায় মন্দিরে। মন্দিরে থেকে বেরিয়ে যায়। পুজোর পরও মা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে বোনের জন্য। কিন্তু ও আসে না। মা ভাবলো বোন হয় তো বাড়িতে চলে এসেছে। মাও বাড়ি চলে আসে। কিন্তু বোন আর আসেনি। বাড়ির সবাই কান্না কাটি করছে। এখন এতো বেলা হল। ওর কোন সন্ধান পাইনি। চারিদিকে, চেনা জানা সবার বাড়ি, সেখানে ও যায় সব জায়গা খুঁজেছি। নাঃ কোথাও নেই। তাই তেমাদের কাছে এসেছি।’’
গোরা প্রশ্ন করে, – তোমার বোনের নাম কী?’’
অনিল – ‘‘রাখী’’
গোরা – ‘‘বয়স কত?’’
অনিল – ‘‘১০/১১ হবে।’’
তাপস – ‘‘পুলিশে তো একটা এফ.আই.আর করতে হবে।’’
সূর্য বলে, – ‘‘আচ্ছা চলো। তোমাদের বাড়ি যাই। তারপর পুলিশে যাবো।’’ সবাই বেড়িয়ে পড়ল অনিলদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। দশ মিনিট হাঁটার পর অনিলদের চারাবাগান পাড়ায় বাড়িতে ঢুকলো। অনিলের মা রকে বসে কাঁদছে। পাড়ার দু একজন বৌ এসে কথা বলছে। মেজো মেয়ে সন্ধ্যা মায়ের কাছে বসে আছে। রকের একদিকে একটা ছোটো বসার ঘর সেখানে হারান কবিরাজ দু’একজন রোগী দেখচ্ছে। বড় মেয়ে জ্যোৎস্না ঘরের কী কাজ কর্ম করছে।
অনিল বাড়িতে ঢুকতে, সূর্যদের নিয়ে যে যার মতো সরে গেল। রকের ওপর মাদুর বিছিয়ে দিলো ওদের বসতে। সূর্যকে দেখে হারান কবিরাজ উঠে ওদের কাছে এল। বলল, – ‘‘কি করি বলতো বাবা? কিছু ভেবে পাচ্ছি না। জলজ্যান্ত মেয়েটা কোথায় গেল। কে নিয়ে গেল?’’
সূর্য বলল, – ‘‘চিন্তা করো না। আমরা দেখছি। পুলিশে তো খবর দিতে হবে। তার আগে আমরা কটা প্রশ্ন করি তোমাদের।’’
হারান কবিরাজ বলে, – ‘‘হ্যাঁ-হ্যাঁ কি জানতে চাও বলো।’’
সূর্য এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে, – ‘‘আশে পাশে কোন্ বাড়িতে বেশী যাতায়াত করতো রাখী?’’ হারান কবিরাজ বলে, – ‘অন্য কারুর বাড়ি বেশী যেত না। ঐ আলি চাচার বাড়ি যেত বেশী। বেশীর ভাগ সময় ঐ চাচার বাড়ীতে থাকতো।’’
– ‘‘কে আলি চাচা। কোথায় বাড়ি?’’ প্রশ্ন করে গোরা হারান কবিরাজ বলে, – ‘‘এই পাশেই, একজন ৫০ বছরের বুড়ো। বাড়িতে একাই থাকে, কেউ নেই ঐ চাচার। তবে প্রচুর পয়সা ওয়ানো লোক। দেশে অগাধ সম্পত্তি। রাখীকে খুব ভালো বাসে। দিদিমনি – দিদিমনি বলে, রাখীও চাচাকে খুব ভালোবাসে।’’
হঠাৎ তাপস, মেজোমেয়ে সন্ধ্যাকে জিজ্ঞাসা করে, – ‘‘আচ্ছা সন্ধ্যা, সকালে আলি চাচা এ বাড়িতে এসেছে? না এসে থাকলে আমাদেরকে একটু নিয়ে যাবে ওঁনার বাড়িতে।’’ হারান কবিরাজের বউ-ই বলল, – ‘‘না চাচা আমজ সকাল থেকে আসেন নি। কাল রাত্রে যখন খোঁজ করতে গেলাম। তখন উনি কাঁদছিলেন।’’
তাপস বলল, – ‘‘কাঁদছিলেন? কেন?’’
কবিরাজের বউ বলল, – ‘‘কার কাছ থেকে নাকি শুনেছেন রাখীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাই।’’
সূর্য বলে, – ‘‘সন্ধ্যা – চলো।’’
সন্ধ্যা বলে, – ‘‘কাল মন্দিরের বাইরে মানে আমরা বাবার সময় দেখেছিলাম, চাচা একটা কোদাল হাতে কোথা থেকে আসছিল।’’
– ‘‘তোমাদের মন্দিরে ঢুকতে দেখে ছিল?’’ গোরা প্রশ্ন করে।
সন্ধ্যা বলে, – ‘‘জানি না, দেখি নি।’’
তারপর ওরা সবাই চাচার বাড়ির দিকে এগোলো। হারান কবিরাজের বাড়ির পাশে একটা পুকুর। পুকুরের ওপারে আলিচাচার বাড়ি। বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে পাশে একটা মাঠ। মাঠে ছোট্ট ছোট্ট শিলের মতন কি যেন পোঁতা আছে।
সূর্য জিজ্ঞাসা করে, – ‘‘ঐ মাঠে এগুলো উঁচু উঁচু কি পোঁতা আছে?’’
কবিরাজ বলে, – ‘‘ওটা একটা গোরোস্থান। ছোট ছোট বাচ্চা মারা গেলে ওখানে পুঁতে দেওয়া হয়। তারপর মরার মাথার কাছে এক শিল দাঁড় করিয়ে পুঁতে দেওয়া হয়। শুধু মুসলমানদের। সবাই মিলে আলি চাচার বাড়িতে ঢোকে। কবিরাজ ডাকে, – ‘‘ও চাচা-চাচা বাড়ি আছো?’’
ভেতর থেকে চাচা বেরিয়ে আসে, ৬০/৬৫ বছর বয়স হবে। কিন্তু দেখলে বোঝা যায় না। শক্ত পোক্ত চেহারা। চেহারহা বেশ ভালো। মাথায় চুল সব পেকে গেছে। পরনে একটা লুঙ্গি। গায়ে ফতুয়া কাঁধে গামছা দেখে মনে হয় একটু আগেও কাঁদছিল। বাড়ির চারপাশটা পাঁচিল দেওয়া তবে উঁচু নয়। রাস্তা ঘাট। মাঠ সব দেখা যায় দাঁড়ালে। পাঁচিলের পাশে বেশ ছড়ানো জায়গা। বাগান করেছে। দুখানা ঘর, একটা ছোট ঘর। নিশ্চই রান্না ঘর। দরজা দিয়ে ঢোকার মুখে একটা টিউওয়েল আর বাথরুম। ঘরে ঢুকতে দুটো সিঁড়ি দিয়ে উঠে তবে রক তারপর ঘর। বেশ ছিমছাম। সজল কাজল গোরা তিনজনে বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখতে দেখতে সজল বলল, – ‘‘বাঃ সুন্দর। চাচা আপনার বাড়ি। চারপাশে বাগান আর মাঝখানে ঘর। সব ফুলের গাছ ফলের গাছ লাগান নি?’’ হঠাৎ গোরা দেখে ঘরের পিছনে গোরোস্থানের দিকে ভিতরে পঁািচলের গায়ে অনেক খানি মাটি খোঁড়া উঁচু হয়ে মাটি জমা হয়ে আছে। আর পাশে একটা কোদাল পড়ে আছে।
সূর্য বলে, – ‘‘চাচা এসেছিলেন আপনার সাথে দুটো কথা বলতে।’’
চাচা ধরা গলায় ভয়ার্ত্ত সুরে বলে, – ‘‘আপনারা কি পুলিশের লোক?’’
– ‘‘না না চাচা আমরা পুলিশের লোক নই। আমরা পূব পাড়ার ছেলে। আমাদের বাড়ি এখানেই। খবরটা শুনে একটু খোঁজ খবর নিতে এসে একটু এদিক ওদিক খুঁজে দেখছি। জিজ্ঞাসা করছি কেউ জানে কিনা, দেখেছে কিনা এই। ভয় পাবেন না।’’ বলে সূর্য।
গোরা সজল কাজল কাছে এসে দাঁড়ায়।
চাচা বলে, – ‘‘তা বেশ তো ঘরে চলেন। বসে কথা কই। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা হয়।’’
এইটুকু কথা বলতে চাচা দুবার পিছনে তাকাল। গোরা বলে, – ‘‘না না ঘরে যাবার দরকার নেই। আপনি কাল শেষ বারের মতন রাখীকে কটার সময় দেখে ছিলেন? আর কারুর সঙ্গে দেখেছিলেন।
– ‘‘অ্যাঁ – না – মানে দেখি নি। দেখিনি। আমতা আমতা করে বলেন আলি চাচা।
– ‘‘শেষ কখন দেখেছিলেন?’’ আবার প্রশ্ন করে গোরা। আলি চাচা একটু যেন বিরক্ত হয়েই বলেন,
– ‘‘তোমারা এত জিজ্ঞাসা করছো কেন। রাখীদিদিমনিকে আমি দেখিনি। বলে আমার মেজাজ ভাল নেই।’’
সূর্য তাড়াতাড়ি বলে, – ‘‘না না কিছু মনে করবেন না। আমরা থানায় যাবো তো। ওখানে সব বলতে হবে। তারা এসে তদন্ত করবে। সেই জন্য আমি চলি।’’
সবাই চলে আসার জন্য দরজার দিকে পা বাড়াতে যাবে সেই সময় আলি চাচা বলেন, – ‘‘শোনো। আমার বাড়ি পুলিশ আসবে কেন?’’
তাপস বলে, – ‘‘রাখীর সাথে যাদেরই পরিচয় আছে। তাদের সবাইকে পুলিশ জিজ্ঞাসা বাদ করবে।’’ চলে যায সবাই। পঞ্চবান বা পঞ্চপান্ডবরা থানা ঘুরে বাড়ি ফিরলো। বেলা হয়েছে। যে যার বাড়ি সবাই চলে যায়। ঠিক বিকেল ৪টের সময় সবাই আবার জড়ো হয় সূর্য দের ছাদে। সবাই বসে নানান কথা আলোচনা করতে থাকে। হঠাৎ কাজল বলল, – ‘‘আমার যেন আলি চাচাকে ঠিক ভাল লাগল না ঠিক যেন সুস্থ নয়।’’
তাপস বলে, – ‘‘ঠিক তাই। আমরাও তাই মনে হলো।’’ তারপর সন্ধ্যো বেলার জলখাবার চলে এল খেতে খেতে সজল বলল, – ‘‘কিন্তু সত্যি ঐ টুকু মেয়েকে কে চুরি করবে। তাহলে এতক্ষন তো টাকার কথা আসতো। কত দিতে হবে, কোথায় দিতে হবে। সে সবতো কিছু বলল না হারান কবিরাজ কাকা।’’
খেতে খেতে কথা বলতে বলতে রাত ৯টা বেজে গেল। হঠাৎ সূর্য ওঠে দাঁড়িয়ে বলে, – ‘‘চল্ এই রাতে একবার ওখান থেকে ঘুরে আসি।’’ সবাই উঠে পড়ে।
আলি চাচার বাড়ির কাছে আসতে দেখে দরজা খোলা সামনে একটা কাঠের বেড়া দেওয়া। সকালেও তাই ছিল। রাখীর মেজো বোন সন্ধ্যা বলেছিল, – ‘‘সবসময় দরজা খোলা থাকে বুড়ো মানুষ একা থাকে। শুধু ঘরের দরজা বন্ধ থাকে। এবেলাও তাই আছে কিন্তু ঘরের আলো নেভা। ঘরের দরজায় তালা সূর্যরা বাড়ির দরজায় দাঁড়াতে দেখে রকের আবছায়ায় আলোয় বাগানের কোনে যেখানে মাটি খোঁড়া ছিল। সেখানে একটা বাচ্চ মতন মেয়ে বসে আছে। পরনে লাল জামা। কাল রাত্রে ঐ লাল জামা পরে রাখী মন্দিরে গিয়েছিল।
‘‘ঐ তো রাখী।’’ বলে সবাই এগিয়ে যায়। চার/পাঁচ পা যেতেই দেখে রাখী কাঁদছে স্পষ্ট বলছে, ‘‘আমায় ছেড়ে দাও।’’ আর একটু এগোতে রাখী হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। থমকে যায় সবাই। কাজল বলে ওঠে, – ‘‘মানে ভ‚ত!’’ সজল ওকে চেপে ধরে বলে, – ‘‘মানে র্ক।’’ মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে থেকে। আবার ওরা পিছোন ঘুরে চলে আসার জন্য পা বাড়ায়। আবার শুনতে পায় কান্নার শব্দ আবার ঘুরে পিছনে তাকিয়ে দেখে, হ্যাঁ ঠিক আবার ঐ জায়গায় বসে কাঁদছে।
আর ওরা এগোয় না। সূর্য বলে, – ‘‘আর থাকার দরকার নেই চল্। হারান কবিরাজের বাড়ি।’’ সবাই তাড়া তাড়ি হারান কবিরাজের বাড়ি এলো। এত রাত্রে ওদের আসতে দেখে সবাই অবাক। হারান কবিরাজ বলেন, – ‘‘কি ব্যাপার এত রাত্রে কোন খবর আছে।’’
তাপস বলে, – ‘‘আচ্ছা কবিরাজ কাকা, আলি চাচা কোথায় বলেন, – ‘‘চাচা ঐ বাজারে মাঝে মাঝে হোটেলে খেতে যায়। যেদিন রান্না করে না বা আমাদের বাড়ি থেকে যদি না দেওয়া হয়। সেদিন যান। আজ আমাদের রান্না হয়নি, আর উনিও কিছু করেন নি।’’
সূর্য বলে, – ‘‘ওঁনার ঘরের চাবি কি আপনাদের দিয়ে গেছেন।’’
– ‘‘হ্যাঁ – মানে কেন?’’ বলেন কবিরাজ, ‘‘অনেকক্ষন গেছেন, এবার এসে যাবেন।’’
সূর্য কিছু ভেবে অনিলকে বলে, – ‘‘অনিল, থানায় একটা ফোন করতো তোমাদের বাড়ি আসার জন্য।’’
গোরা বলে, – ‘‘আমি করছি ও থাক।’’ সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সূর্যদের দিকে।’’ বাইরে গিয়ে গোরা পুলিশকে ফোন করে। তারপর অপেক্ষা করে আলি চাচার জন্য আর পুলিশের জন্য। অবাক হয়ে যান হারান কবিরাজ। তাড়াতাড়ি বলেন, – ‘‘কি হয়েছে – কি হয়েছে। পুলিশ এসে কি করবে? আমায় বলো তোমরা।’’
তাপস তাড়াতাড়ি কবিরাজ কাকাকে বলে, – ‘‘কিছু হয়নি কাকা, অত ব্যস্ত হবেন না পুলিশকে আসতে দিন। একটু খোঁজ খবর করবে।’’
রাখীর মা বোনেরা কাঁদতে লাগলো। অনিল ধরা গলায় বলে, – ‘‘আমার ছোট্ট বোনকে পাওয়া যাবে তো সূর্য দা?’’ সবাই চুপ। আধ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ এল। বাইরে বেরিয়ে সূর্যরা কি যেন বলল পুলিশ ইন্সপেক্টরকে। সূর্যরা আর পুলিশেরা আলিচাচার বাড়ির দিকে এগোলো সঙ্গে সঙ্গে হারান কবিরাজ আর অনিলও গেল আলিচাচার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সূর্যরা পুলিশ ইন্সপেক্টর কি বলা বলি করতেই আলি চাচা সাইকেল করে ওদের সামনে এসে বলল, – ‘‘কি ব্যাপার – কি হয়েছে?’’
পুলিশ ইন্সপেক্টর – ‘‘আপনার বাড়িটা একটু সার্চ করবো।’’
আলিচাচা ভয়ার্ত্ত গলায় বলে, – ‘‘কেন? কি আছে আমার বাড়িতে?’’
ইন্সপেক্টর – ‘‘না, কিছু না তবুও একটু আমরা দেখতে চাই।’’ সবাই মিলে বাড়িতে ঢোকে। সোজা সবাই বাগানের কোনে চলে যায়। সেখানে মাটি খোঁড়া ছিল সেখানে আঙুল দেখিয়ে সূর্য বলে, – ‘‘এই খানে খুঁড়তে বলুন।’’ দুটো পুলিশকে ইন্সপেক্টর বলে, ওখানকার মাটি খুঁড়তে লাগল। আলিচাচা ছুটে আসে, – ‘‘একি একি এখানে মাটি খুঁড়ছেন কেন।’’
– ‘‘এখানে কি আছে দেখবো।’’ বলে গোরা। মাটি খোঁড়া কেন?’’চোখের ইসারা করতে দুজন পুলিশ আলি চাচার পাশে দাঁড়ায়। বেশ হাত চারেক মাটি খোঁড়ার পর একটা কফিন বেরিয়ে এল। পুলিশরা ঐ কফিন বাক্সটাকে ওপরে তোলে। হঠাৎ আলি চাচা হুঙ্কার ছাড়ে – ‘‘এই খবরদার। কেউ খুলবে না বাক্স।’’ খবর পেয়ে আশেপাশের লোকজন এসে জড়ো হয়েছে। ইন্সপেক্টার নিজে গিয়ে কফিনের বাক্সটা খুলে ফেলল। সবাই দেখল, আর হতবাক হয়ে গেল। ডুকরে কেঁদে উঠল, রাখীর মা বোনেরা। ছোট্ট রাখী, লাল জামা পড়ে ওতে শুয়ে আছে। নিথর দেহ। আর তার চারপাশে টাকা পয়সা। গহনা, ভর্ত্তি। সূর্যগোরা ওরা আলি চাচাকে জিজ্ঞাসা করে – ‘‘এটা কি করেছেন? কেন করেছেন? এতটুকু বাচ্চার সাথে?’’
আলি চাচা হা হা করে হাসে আর বলে, – ‘‘কেন রাখী দিদিমনিকে ভালোবাসি। তাই আমার যত টাকা পয়সা গহনা সোনা রূপা দিয়ে ওপরে পাঠাইছি। যখ দিয়েছি। আমার সম্পত্তি, টাকা গহনা সব যখ হয়ে ও পাহারা দেবে। হারান কবিরাজ মাথায় হাত দিয়ে বসে বলে, – ‘‘হা ঈশ্বর বিশ্বাসের মূল্য এই।’’ অনিল ছুটে গিয়ে আলি চাচার গলা টিপে ধরে বলে, – ‘‘শয়তান তুই নিজে যখ হলি না কেন। আজ তোকেও কবরে পাঠাবো।’’
তাপস সজল কাজল দুজন পুলিশ ছুটে গিয়ে অনিলকে চাচার কাজ থেকে সরিয়ে আনে। ইন্সপেক্টর আলি চাচার হাত কড়া পরিয়ে দেয়। বডিটাকে পোষ্ট মর্টেমে পাঠায়। দুদিন পর পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট পাওয়া যায় রাখী আগে বিষ খাইয়ে অচৈতন্য করে কফিনে পুরি মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
Kathak | Debanshu Ghosh |
Characters | Name |
---|---|
Surjo | Debanshu Ghosh |
Gora | Soumik Banerjee |
Taposh | Suman Sadhukhan |
Kajol | Surojit Mukherjee |
Sajol | Joydeep Lahiri |
Kobiraj | Joydeep Lahiri |
Kobiraj Wife | Priyanka Dutta |
Rakhi | Tanisha Ghosh |
Others | Susmita Ghosh Das, Debanshu Ghosh, Joydeep Lahiri, Suman Sadhukhan, Surojit Mukherjee |
Find us on Facebook – click here