কঙ্কাল

Views: 4

কঙ্কাল:

পঞ্চপান্ডবকে মনে আছে তো?সেই পঞ্চপান্ডব ১৫ই আগট, ছুটির দিন। পাঁচ বন্ধুতে বসে গল্প করছে বিকেলে। আজ তাপসদের বাড়িতে আড্ডা বসেছে। হঠাৎ তাপসের মা এসে হাজির।

-“হ্যাঁ রে তাপু বড় বিপদ।”

-“কি বিপদ?” একসাথে পাঁচজনেই বলে। 

তাপসের মা বসে বলেন, – “আমার এক মামাতো দিদি থকে বর্ধমানে। তার বড় ছেলের বিয়েতে গতবার গিয়েছিলাম, তোরা যাসনি কেউ, আমি বলেছিলাম তাপুকে। ও কাজ ছিল বলে গেল না। “

-“হ্যাঁ হ্যাঁ কি হয়েছে। ” সবাই বললে।

তাপসের মা বলেন,

-” আরে সেই দিদির ছেলের বৌ  আজ  ৫ দিন হলো নিখোঁজ। কেউ কিছু হদিশ করতে পারছে না। এমন কি  পুলিশ ও নয়। তাই আমি তোদের কথা বলতে, দিদি কেঁদে কেটে একসা; বলে,

-“ওদের পাঠিয়ে দে। ওরা যদি আমাদের একটু সাহায্য করতে পারে। ‘

একটু থেমে তাপসের মা বললো,

-” তাই বলছিলাম;কাল তোরা যা। দেখ না কিছু করতে পারিস কিনা। গাঁয়ের মানুষ তো বেশি কেউ নেই সাহায্য করবার।”

গোরা-সূর্য বললো,

-” আমাদের অতো  কাজের চাপ নেই। “

তাপস শুধু বললো,

-“আমায় শুধু চিঠি দিয়ে অফিসে ছুটি নিতে হবে।”

তাপসের মা বলে,

তাহলে শোন্ ওখানকার আর ওদের সব বিবরণ। 

বর্ধমান জেলায় মুচুকুন্দোপুর গ্রাম। খুব বর্ধিষ্ণু গ্রাম তাও নয়,আবার খুব অজ গ্রামও নয়, মাঝামাঝি বলতে পারা যায়।এই রকম গ্রামে দু বন্ধুর বাড়ি। তারাচাঁদ আর গোরাচাঁদ । তারা, অল্প শিক্ষিত।  গ্রামের বাজারে একটা স্টেশনারী দোকান আছে; সাথে মুদিখানা মেশানো। আর গোরা শিক্ষিত, পেশায়  হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। বর্ধমান স্টেশনের কাছে ডিসপেনসারি।

মুচুকুন্দেরপুর গ্রামে দুজনার বাড়ির মাঝে একটা মাঠ, আছে। তারাচাঁদের বাড়ি আগে, তার বাড়িতে মা বাবা ভাই বোন আছে। আর ছোট মাঠ পেরোলেই গোরাচাঁদের বাড়ি, ওর  বাড়িতে বাবা মা কেউ নেই, একটা বোন ছিল, তারও বিয়ে হয়ে গেছে। একটা দাদা, সেও বিয়ে-থা  করে বাইরে থাকে অর্থাৎ কর্মসূত্রে দিল্লী থাকে। বাড়িতে থাকার মধ্যে থাকে চাকর-বাকর, আর একটা বুড়ো মতন রাঁধুনী। শনিবার গোরাচাঁদ গ্রামের বাড়ী আসে  আবার সোমবার সকালে চলে যায়। বর্ধমানে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। গ্রামে ভালো পসার নেই বলে সাপ্তাহে সপ্তাহে এসে গ্রামের বাড়িতে ঐ দুদিন ডাক্তারি করে।

একদিন হয়েছে কি- তারাচাঁদের সেদিন দোকান বন্ধ ছিল। বাজারের কে একজন বড় ব্যবসায়ী মারা গেছেন তার জন্য।আর এদিকে রবিবারও ছিল গোরাচাঁদ বাড়িতেই আছে। তারাচাঁদ এক ঘটককে নিয়ে গোরাচাঁদের বাড়িতে হাজির। গোরা ডিসপেনসারিতেই ছিল, তারা সেখানে গিয়ে হাজির হয়ে বললো,

– ” এই গোরা, গোরা দেখ কাকে এনেছি।”

গোরা সাড়া দিয়ে বলে,

– “আয় ভিতরে আয়? কাকে এনেছিস?”

-” আরে তোর এর জন্য মেয়ে দেখছি, তোকে এবার বিয়ে দেবো। এসো – ঘটক বাবু ; 

বলে তারা ঘরে ঢুকে চেয়ার টেনে বসে বলে,

-” এ্যাই দ্যাখ, তোর জন্য মেয়ে দেখেছি কি সুন্দর।”

ছবি দেখে গোরা বলে,

-“হ্যাঁ রে, ভারি সুন্দর; ঠিক আছে  অন্য একটা দেখে তুই পছন্দ কর। তোর আগে বিয়ে হোক, তারপর আমি বিয়ে করবো।”

-” কেন? দুজনা একসাথে করলে কি হবে?” বলে তারা।

গোরা অন্য একটা সুন্দর মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলে,

– “এই দেখ। এই মেয়েটাও সুন্দর একে তুই বিয়ে কর। আমি পছন্দ করে দিলাম।” -“আরে তুই আগে বিয়ে করলে, বৌদি আসবে। এসে আমার বৌকে বরণ করে ঘরে তুলবে; অনেক কাজ আছে না|”

-“হ্যাঁ রে ঠিক বলেছিল। আমি-ই আগে বিয়ে করব। সামনের মাসেই ব্যবস্থা করি। কি বল?”

তারা বলে,

-” তুই বরঞ্চ তোর দাদা বৌদির সঙ্গে কথা বলে আয় । তারপর তোর আমার বিয়ের  তারিখ ঠিক করবো। ঠিক আছে। পাকা কথা রইল।”

কথা অনুযায়ী গোরা সামনের সপ্তাহেই দিল্লী যায়। দাদা,বৌদির সাথে কথা বলতে। গোরার ট্রেন দিল্লীতে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেলো । ঘড়িতে তখন প্রায় রাত ২টো বাজে। এত  রাত্রে  কোথায় থাকবে?
দাদাকে ফোন করতে দাদা বলল, -“একট। অটোরিক্সা ধরে চলে আয়। এখন একটু রাস্তা ফাঁকা পাবি। ভয় নেই।”
তাই করলো গোরা, কিন্তু বিপরীত কান্ড হলো। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে, 8 জন প্যাসেঞ্জের নিয়ে অটোড্রাইভার যেন উড়ে চলল,গান গাইতে গাইতে, দেখার ভুলে একটা গচ্ছায় পরে গাড়ীটা গেলো উল্টে। পাঁচজনই গেল হাসপাতালে। দাদাকে ফোনে গোরা জানায় তার বিপদের কথা। মাথা ফেটে চৌচির। একটা পা-ও জখম হয়েছে। পাঁচদিন পর হাসাপাতাল থেকে, দাদার বাড়ী দিন পনেরো পর সুস্থ হয়ে যেদিন গ্রামে ফিরলো। দেখে তারাচাঁদের বিয়ে। বৌ দেখে গোরাচাঁদের মাথায় হাত। তার জন্য যে সুন্দরী মেয়ে কমলাকে পছন্দ করেছিল, তার সাথেই তারাচাঁদের বিয়ে। গোরা- অনেক আশা করেছিল কমলার সাথে তারই বিয়ে হবে। কিন্তু তারার সাথে কমলার বিয়ে হচ্ছে দেখে ওর মনটা দুমড়ে মুচড়ে গেল। একি করলো তারা এতটা বেইমানি করলো। সুযোগ বুঝে তারাচাঁদকে জিজ্ঞাসা করতে, তারা বললো যে,

-” কমলাদের তাড়া ছিল, ওর সৎ মা অপেক্ষা করতে পারছিলো না।”
তাছাড়া তারাচাঁদ বিনা পণে কমলাকে বিয়ে করেছে। একথা তো ফোনে গোরাকে জনিয়েছে তারা। গোরাচাঁদ ‘বিনা বাক্যে সব হজম করে নিল। পরে দেখা যাবে এই ভেবে। 

গোরাচাঁদ মনের মধ্যে ক্ষোভ চেপে রেখে তারাচাঁদের বাড়ি যায়।  হাসে,গল্প করে, খায়-দায়, কমলাকে বৌদি বলে। খুব ভাব হয়েছে গোরার সাথে। কমলা ওকে ঠাকুরপো বলে ডাকে। সেও খুব স্নেহ করে। এইভাবে এক বছর গড়িয়ে গেল। আগস্ট মাস কখনো বৃষ্টি কখনো পরিষ্কার। এই বর্ষায় চারিদিকে যেন আগাছার জঙ্গল বেড়ে গেছে, চারিদিকে কাদায় ভর্তি।তারাচাদদের বাড়ি এবং গোরাচাঁদদের বাড়ি যেতে গেলে একটা ক্ষেতের পাশে মাটির রাস্তা দিয়ে গেলে, খুব তাড়াতাড়ি হয়। দু মিনিটে ওদের বাড়ি যাওয়া যায় কিন্তু ভালো রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে একটু ঘুর হয় । ৫ মিনিটের বেশি সময় লেগে যায়।

আজ দুদিন ধরে কমলার শরীরটা খুব খারাপ করছে। যা খাচ্ছে সব বমি হয়ে যাচ্ছে।  আজ রবিবার।  কমলা ভাবল গোরাচাঁদ ঠাকুরপো বাড়িতেই আছে।  একটু ওষুধ আনলে ভালো হতো। দেওর ননদ কেউ বাড়িতে নেই। শাশুড়ির পায়ে বাতের ব্যথা খুব বেড়েছে; বড় একটা হাঁটতে পারছেন না। কি করা যায়।



কমলা ভাবল আমি নিজেই যাই।  এই তো দু মিনিটের রাস্তা। এখন বেলা তিনটে বাজে; যাব আর আসবো। শ্বশুরমশাই খেয়ে দেয়ে  দিবানিদ্রা দিচ্ছেন।  শাশুড়ি বসে বসে পায়ে মালিশ করছেন। কাজের বউটা দুপুরের খাবার বাসন নিয়ে পুকুরে গেছে মাজতে। সঙ্গে কেউ যাবার নেই। কোনদিন দরকারও পড়েনি,গোরাচাঁদের বাড়িতে যেতে। গেলে খুব খুশিই হবে।

সাত পাঁচ ভেবে শাশুড়ির অনুমতি নিয়ে বাড়ির বাইরে পা দিল। সেই সময় টকটক করে টিকটিকি পড়ল। এইসব খুব মানে কমলা। কিন্তু এখন গ্রাহ্য করল না। গোরাদের বাড়ি যেতে গোরা অবাক হয়ে গেল। দুপুরবেলা খেয়ে দেয়ে যে যার সব কাজে ব্যস্ত।  গোরা কমলাকে দেখে বলল,

-“কি ব্যাপার বৌদি তুমি? আমি তো ভাবতেই পারছি না। কি হয়েছে?”

কমলা একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,

 -“দেখোনা ঠাকুরপো দুদিন ধরে শরীরটা খুব খারাপ হয়েছে। যা খাচ্ছি সব বমি হয়ে যাচ্ছে। শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে।” 

গোরা বললো,

-“বেশ তো তুমি না এসে আমায় ডেকে পাঠাতে পারতে।”

-” না ওষুধ নিয়ে যাবার জন্য কেউ নেই। আর তোমার বাড়িও দেখা হবে। তাই চলে এলাম।


-”বেশ করেছো। ঠিক আছে। তুমি ঐ রোগী দেখার বেডে শুয়ে পড়ো।” বলে গোরাচাঁদ।

কমলা বলে,

-“শুতে হবে কেন? শুনেই তো ওষুধ দাও।”

-” কেন তোমার যে বমি হচ্ছে। সেটা দেখতে হবে না, পেতে কিছু হয়েছে কিনা। যায় শুয়ে পড়ো।” বলে গোরাচাঁদ।  

কানে স্টেথো লাগাতে লাগাতে কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিয়ে কমলা গিয়ে বেডে শুয়ে পরে। স্টেথো বুকে লাগিয়ে আর হাতের পালস দেখতে দেখতে গোড়া পেটের কাপড় সরিয়ে বলে,

-“পেটটা দেখি।”

কমলা গোরার হাতটা চেপে ধরে। গোরা আবার বলে,

-“দেখতে দাও বৌদি। “

দেখতে দেখতে গোরা হেসে বলে,

-“সুখবর আছে বৌদি। তুমি মা হতে চলেছো। এই সবে দু-মাস।”

কমলা তাড়াতড়ি উঠতে যায়। গোরা ঠিক তখনি কমলাকে জাপটে ধরে।

কমলা বলে,

-“একি করছো ঠাকুরপো। ছাড়ো ওষুধ দাও। আমি বাড়ি যাই।

-” না তোমাকে যখন একবার কাছে পেয়েছি, আর ছারছীনা। তোমার বর আমার সাথে বেইমানি করেছে। আজ তুমি আমার বউ হতে।”

-“আঃ- বাজে কথা রাখো ঠাকুরপো। ছাড়ো আমি বাড়ি যাবো।”কমলা বলে,

বেড থেকে নামার চেষ্টা করতে করতে। গোরা তখন একটানে কমলার বুকের কাপড় টেনে নামিয়ে দেয়। কমলা তখন চেঁচিয়ে ওঠে,

-“একি করছো। ছাড়ো আমায়। “

গোরা তখন মরিয়া হয়ে বলে ওঠে,

-“চেঁচালে এখানে কেউ আসবে না।”

টান মেরে কমলার কাপড় খুলে ফেলে। কমলা চেঁচাতে গেলে গোরা ওর মুখ চেপে ধরে। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা নিকোপ্লাস্টার নিয়ে মুখে আটকে দেয়। কমলা হাত দিয়ে গোরাকে ঠেলে সরাবার চেষ্টা করে। গোরার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। তারপর করলো কি ব্যান্ডেজের কাপড় নিয়ে দুহাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে শুইয়ে দিলো, কমলাকে। কমলা তখন অসহায় অবস্থায় পা দুটো ছুড়তে লাগলো। নামার চেষ্টা করতে লাগলো। গোরার গায়ে তখন অসুরের মতন শক্তি। গোরা এরপর নিজের গায়ের জামা খুলে ফেললো। জাপ্টে ধরলো কমলাকে। কমলা ক্রমশ মাথা নেড়ে যাচ্ছে  আর পা দুটো ছুড়ে যাচ্ছে। তখন গোড়া বিরক্ত হয়ে, পা দিয়ে ওঠার জন্য ছোট টুল তুলে,কমলার মাথায় সজোরে আঘাত করে গোরা। কামলা জ্ঞান হারায়। কমলার ওপর আবার ঝুঁকতে গিয়ে দরজার কড়া নড়ে ওঠে।

যদু খুড়োর গলা,

-“এই ডাক্তার, এই গোরা দরজা বন্ধ করে রেখেছিস কেন? দরজা খোল, বড়ো পেটের যন্ত্রনা হচ্ছে।”

চমকে ওঠে গোরা। গাঁয়ের মোড়ল। খুব সাংঘাতিক মানুষ। পান থেকে চুন খসলেই কেস করে দে কোর্টে। কি করবে গোরা বুঝতে না পেরে তাড়াতাড়ি করে গায়ের জামাটা পরে নেয়। তারপর কমলার শরীরটা চ্যাংদোলা করে নেয়। তার আগে কমলার গলায় মুখে জড়িয়ে দে, তারপর একটা বড়ো আলমারির মধ্যে দুমড়ে-মুছড়ে শরীরটাকে চেপে চুপে ঢুকিয়ে চাবি দিয়ে দেয়। তারপর নিজের চোখ মুখ মুছে চুল আঁচড়ে দরজা খোলে। খুড়ো ঢুকে বলে,

-“এতক্ষন কি করছিলি? দরজা খুলছিলি না কেন?”

-” না- মানে- একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যাক বলো খুড়ো কি হয়েছে?”

খুড়োর পর আরো তিন চারজন রোগীকে দেখতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সবাই চলে যেতে দরজা বন্ধ করে দিলো। তাড়াতাড়ি আলমারির দরজা খুলতেই কমলার দেহটা ধপ করে পরে গেলো। টর্চ জ্বেলো ভালো করে পরীক্ষা করতেই গোড়া বুঝতে পারে, কামলা নেই মারা গেছে। মাথা থেকে রক্ত বেরিয়ে সারা মুখময় হয়েছে। নাকে মুখে কাপড় জড়ানোর জন্য দম  বন্ধ হয়ে মারা গেছে। ভয়ে গোরার মুখ

ফ্যাকাসে হয়ে যায়। কি করবেএবার সে?কি বলবে সবাইকে? কোথায় লুকোবে মৃত দেহটাকে? একটার পর একটা প্রশ্ন আসে মনে। এ কি করলাম আমি? কমলাকে মেরে ফেললাম। মাথার চুল ধরে টানতে থাকে। হটাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। চমকে ওঠে গোরা, এবার কি হবে? কোনো সারা শব্দ দে না। দুবার, তিনবার কড়া নেড়ে থেমে যায়। আস্বস্থ হয় গোরা। কিন্তু এই লাশ নিয়ে কি করবে? হটাৎ মনে পরে গোরাদের বাড়ির পর আর বাড়ি নেই। জঙ্গলে ভর্তি অনতিদূরে একটা ভাঙা মন্দির আছে। কেউ ওখানে যায় না। ঝোপঝাড় আর জঙ্গলে ভর্তি। যেই মনে পড়া, তখুনি দরজা খুলে, ঘরের আলো নিভিয়ে দেখ, না কেউ কোত্থাও নেই। চারিদিকে অন্ধকার। দেখে নিয়ে ওই অন্ধকারেই কমলার দেহটা পাঁজাকোলা করে ভাঙা মন্দিরে গেলো।

মন্দিরের পিছনে একটা ছোট ঘর আছে। তাতে আবার মৌমাছির চাক বেঁধেছে একদিকে। সেখানে কটা বাঁশ দাঁড় করানো আছে। সেখানে কমলার শরীরটা দাঁড় করিয়ে বাঁশের সাথে ওর কাপড়টা দিয়ে বেঁধে রাখে। কিন্তু শরীরটা বাঁধতে গিয়ে গোরাকে অনেক ঝামেলা পোয়াতে হয়। কারণ মৌমাছিতে ওকে ছেঁকে ধরে;তাই  কোনো রকমে বেঁধে পালিয়ে আসে। নিজের ডাক্তার খানায় ঢুকে চোখে মুখে ওষুধ লাগায়। হটাৎ ঘড়িতে চোখ পড়ে রাত ৮টা বাজে। এতো রাত হয়ে গেছে। অসহ্য জ্বালা করছে। আর এখানে বসে লাভ নেই। দরজা বন্ধ করে বাড়ির দিকে পা বাড়াতে গিয়ে থমকে যায়।  দেখে তারাচাঁদ আসছে। 

তারাচাঁদ এসে বলে,

-” হ্যা রে গোরা তুই এখানে কতক্ষন আছিস?”

গোরা কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দেয়,

-“কে-কেন আমি তো দুপুর থেকেই আছি।”

-” দুপুরে তোর বৌদি এসেছিলো?” চিন্তিত গলায় তারা বলে।

তারপর হটাৎই গোড়ার মুখের দিকে চোখ যায় তারাচাঁদের। সে বলে,

-” আরে তোর কি অবস্থা?”

কি হয়েছে মুখে চোখে?”

-“মৌমাছি কামড়েছে। ” কোনো রকমে বলে গোরা।

-” কি করে?” তারাচাঁদ বলে।

-“ওই ছাদে মৌমাছির চাক হয়েছে ভাঙতে গিয়ে।”যন্ত্রনাকাতর গলায় বলে গোরা।

তারাচাঁদ বলে,

-” দেখনা; তোর বৌদিকে দুপুর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেলো? কার বাড়ি গেলো? কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমি এই দোকান থেকে এলাম। তাই ভাবলাম তোকে নিয়ে থানায় যাবো। ফোন তো কমলা ব্যবহার করে না।”

চমকে উঠে গোরা বলে,

-” থানা? থানায় গিয়ে কি করবি? আগে চারিদিকে খোঁজ। আত্মীয়র বাড়িতেও যেতে পারে। আমি এই অবস্থায় যেতে পারবো না রে। তুই যা, আমি ঘরে গিয়ে শোবো। “

কথাটা বলেই গোরাচাঁদ বাড়ির দিকে চলে যায়। কি করবে এবার তারাচাঁদ। মনটা খুবই খারাপ। বাড়ি চলে যায়। কোনো রকমে রাতটা কাটিয়ে সকালে তারাচাঁদ, ওর বাবা ভাই সবাই মাইল থানায় গিয়ে কমলার ছবি দিয়ে F.I .R করে।

দুদিন পরে পঞ্চপান্ডবরা দুপুরে তারাচাঁদের বাড়ি আসে। কুশল বিনিময় সেরে দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই মিলে মিটিং করতে বসে, এইটুকুই সাব্যস্ত হয় যে কমলাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে। কিন্তু কে? এই গ্রামে? তার স্বার্থ কি?

                                                    একটু বিশ্রাম নিয়ে পঞ্চপান্ডবরা বেরিয়ে পরে গ্রাম দেখতে। গোরাচাঁদের কথা আগেই শুনেছে ওরা। তাই প্রথমে গেলো গোরাচাঁদের বাড়ি; সঙ্গে তারাচাঁদও ছিল। বাড়িতে গিয়ে শোনে; সে নেই। বর্ধমানের বাড়িতে গেছে।  অবাক হয় সবাই। এতো তারাচাঁদের সাথে বন্ধুত্ব। বাড়ীর সাথে এতো মেলামেশা। সে কিনা বন্ধুর দুর্দিনে মুখ ফিরিয়ে আছে? সন্দেহ হতেই সূর্য গোরা আর তাপসদের বলে কথাটা। যাইহোক বাড়ির চাকরদের জিজ্ঞাসা করে,

-” গোরাদার ডিসপেনসারি কোথায়?”

বাড়ির কেয়ারটেকার বলে,

-“দাদাবাবুর ডিসপেনসারি বসত বাড়ি থেকে হাত পাঁচেক দূরে।”

সঙ্গে নিয়ে যেতে যেতে কেয়ারটেকার আবার বলে,

-” সাবেক বাড়ি তো, তাই এটা ছিল বাইরের লোকেদের বসার ঘর। দাদাবাবু সেটাকেই ডিসপেনসারি করেছেন। “

ডিস্পেন্সারির ঘরের দরজা খুলে ভেতরে সবাই প্রবেশ করলো। তারাচাঁদ বাইরে রইলো।




ঘরে ঢুকে বেসিক ওদিক তাকাতে গোরা সূর্যের চোখে পরে বেডের তলায় একটা নুপুরের বল। বলটাকে কুড়িয়ে নিয়ে পকেটে রাখে। হেঁট হয়ে বলতে কুড়োতে গিয়ে সূর্যের চোখে পড়ে ছোট টুলটার ধারে রক্তের দাগ। টুলটা তুলে চোখের সামনে নিয়ে দেখে হ্যাঁ সত্যিই বেশ খানিকটা জায়গায় রক্ত লেগে আছে। ভালো করে দেখতে দেখতে তাপসের চোখে পরে হটাৎ আলমারিটার দিকে। আলমারির দরজার গায়েও রক্তের দাগ। সবাইকে ইশারায় দেখায় সে। এদিক ওদিক বেরিয়ে আসে সবাই। তারাচাঁদ বলে,

-“আমায় দোকান যেতে হবে; দেরি হয়ে গেলো। তোমরা এদিক ওদিক ঘুরে এস আমি যাই।”

গোরা বলে,

-” হ্যাঁ হ্যাঁ দাদা আপনি যান। আমরা যাচ্ছি।”

তারাচাঁদ চলে যায়। তখন সূর্য কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসা করে,

-” আপনাদের বাড়ির পাশে কোনো বাড়ি দেখতে পাচ্ছি না। আপনাদের বাড়িই কি শেষ বাড়ি? তা ঐ দিকটায় কি আছে”

কেয়ারটেকার সঙ্গে সঙ্গে বলে,

-” ঐদিকে কিছু নেই দাদাবাবু। শুধুই জঙ্গল। ওই জঙ্গলের মধ্যেই একটা ভাঙা মন্দির আছে। এই দাদাবাবুদেরই জায়গা। “

গোরা বলে,

-” ওখানে যাওয়া যায়?” 



-” না দাদাবাবু যাওয়া যায় না। শুধু জঙ্গল আর কাটা ঝোপ। মাঝে মাঝে শেয়াল কুকুরও ডাকে।” বলে কেয়ারটেকার।

আর কথা না বাড়িয়ে পঞ্চপান্ডবরা বেরিয়ে আসে ওখান থেকে, তারপর এদিক ওদিক একটা মজা নদী আছে, সেখানেও যায়। ঘুরে সন্ধ্যের পর মাসির বাড়ি আসে। সন্ধ্যের পর মাসি ওদের ঘরে ওদের জন্য মুড়ি তেলেভাজা নিয়ে আসে খেতে দিতে। তখন তাপস জিজ্ঞাসা করে,

-” একটু বসো মাসিমা। তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?”

মাসি মলিন মুখে বসে। সূর্য বলে,

-” মাসিমা, বৌদিকে ঠিক পাওয়া যাবে। আপনি অতো ভেঙে পড়বেন না।”

একটু থেমে সূর্য আবার বলে,

-“আচ্ছা; মাসিমা! বৌদি কি খুব গয়নাগাটি পরে থাকতেন?”

মাসিমা বলেন,

-” না বাবা। বৌমা আমাদের খুব ভালো ছিল। বেশি গয়না পড়তে ভালোবাসত না।”

-” গায়ে কি কি গয়না ছিল?” প্রশ্ন করে সজল।

মাসিমা বলেন

-“এই তো কানে দুটো দুল, গলায় হার; তাও সরু চেন। হাতে শাঁখা পোলা আর চওরা একটা নোয়া সোনার। তাতে কমলা নাম লেখা। আমিই দিয়ে ছিলাম। আর পায়ে নুপুর। আর কিছু নয়। কেন বাবা?”

গায়ের গয়নার লোভে চুরি করে নিয়ে গেছে?কিন্তু……..

তাড়াতাড়ি সূর্য বলে,

-“না না ওইটুকু গয়নার লোভে কেউ মানুষ চুরি করবে না। যাক সে কথা। আচ্ছা মাসিমা ঘটনা ঘটেছিল রবিবার আর আজ শুক্রবার।  তারাদার বন্ধু ওই গোরাচাঁদ দা কবে আর কখন আসে বাড়িতে?”

সেই সময় তারাচাঁদের ছোট ভাই মোহন আসে মাকে ডাকতে,

-” মা; বোন ডাকছে তোমায় রান্নাঘরে। “

মাসিমা বলেন,

-“একেই জিজ্ঞাসা করো, মোহন বলতে পারবে ঠিক ঠিক, আমি যাই।”  কথাটা বলেই চলে যান মাসিমা। 

আবার সূর্য প্রশ্ন করে মোহনকে; মোহন উত্তরে বলে,

-“শনিবার সন্ধ্যেবেলায় আসে আবার সোমবার খেয়েদেয়ে বিকালে যায়। “

একটু চুপ থেকে আবার মোহন বলে,

-” যেন সূর্য দা, আশ্চর্যের ব্যাপার গোরাচাঁদ দা যখনই আসতো, আমাদের বাড়ি জল ভাত ছিল সেই ব্যাপারটা; ফোনের পর ফোন আসতো আমাদের বাড়িতে। কিন্তু আমাদের এই বিপদের দিনে না আসলো আমাদের বাড়ি আর না করলো বৌদির কোনো খোঁজ। সেই সোমবার গেছে কিন্তু একটা ফোন করে খোঁজ নেয় নি। ” বলে মোহন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। 

তাপস বলে,

-” কাল সকালে থানায় গিয়ে খোঁজ নেবো। কাল শনিবার। “

সকালে থানায় গিয়ে খোঁজ নেয় সূর্যরা। কিন্তু কোনো খোঁজ নেই। থানার ফোন নম্বর নেয়।

গোরা বলে,

-“আমরা যদি কিছু  জানতে পারি। তো আপনাদের জানাবো।”

এরপর সবাই বেরিয়ে আসে থানা থেকে। থানা থেকে বাড়ি ফিরতেই দেখে মাসিমা পুজোর থালায় ফুল,ফল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে। তাপস জিজ্ঞাসা করে,

-“কোথায় যাচ্ছ মাসিমা।”

-” আজ শনিবার, অমাবস্যা। তাই মায়ের থানে পুজো দিতে যাচ্ছি।”

বলে চলে যায় মাসিমা। পঞ্চপান্ডবরা ঘরে ঢুকে বসে পরে সব গোল করে। আলমারির গায়ে রক্তের দাগ, টুলে রক্তের দাগ, নুপুরের বল; সব মিলিয়ে চিন্তা করে সূর্য বলে,

-“গোরাচাঁদদার ডিসপেনসারিতে কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। কাউকে না কাউকে মারধর করা হয়েছে। সে জন হচ্ছে একজন মহিলা।”

গোরা বলে,

-“আজ সন্ধ্যেবেলা গোরাচাঁদদার সাথে দেখা করতে যাবো। “

সজল বলে,

-“তার আগে আজ দুপুরে চল ওই ভাঙা মন্দিরটা দেখে আসি। “

তাপস বলে,

-” ঠিক বলেছিস। ভাঙা মন্দিরটা দেখতে যেতেই হবে। “

কাজল ভয়ে বলে,

-” তাই না, আমি যাচ্ছি না। ওখানে কি বৌদিকে বেঁধে রেখেছে নাকি। যত্তসব।”

দুপুরে ঝেপে বৃষ্টি এলো। যেন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হচ্ছে। ওদের আর বেরোনো হলো না। ঠিক হলো সন্ধ্যের সময় ভাঙা মন্দির ঘুরে এসে গোরাচাঁদদার সঙ্গে দেখা করবে। জঙ্গলের পথটা গোরাচাঁদের ডিসপেনসারির সামনে দিয়ে যেতে হবে। যেতে গিয়ে দেখে ডিসপেনসারিতে আলো জ্বলছে। কিন্তু দরজা বন্ধ। বৃষ্টির জন্য কোনো রুগী আসেনি। তাপস বললো,

-“চল আগে গোরাচাঁদদার সাথেই দেখা করে যাই।” 

বলে ও রা দরজার কাছে এসে শুনতে পেলো গোরাচাঁদদার ভয়ার্ত গলা,

-“কে? আম- আমায় ছেড়ে দাও। ক্ষমা করো, আমায় মেরো না।” 

সূর্যরা দরজার কাছে এসে কান পটে। ভেতরে চাপা এক অশরীরী গলার এক নারী কণ্ঠ। সে রেগে রেগে বলছে,

-” আমায় তুই ছেড়ে দিয়েছিলি? আমার মাথায় টুলের বাড়ি মারতে, আলমারিতে আমার শরীরটাকে দুমড়ে মুচড়ে ঢোকাতে মনে কষ্ট লেগেছিলো তোর? আমি দুমাসের অন্তঃসত্ত্বা জেনেও নাকে মুখে কাপড় চাপা দিতে একবারের জন্য মনে হয়নি যে আমার ডোম আটকে যাবে?আর এতো কিছুর পর আমি তোকে ছেড়ে দেব শয়তান। “

আবার গোরাচাঁদের গলা শোনা যায়,

-“তোমায় ওই ভাঙা মন্দিরে বেঁধে এসেছিলাম; তুমি কি করে এলে?” 

এবার সূর্যরা জানলার ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পায় একটা কঙ্কালের হাত গোরাচাঁদের গলা টিপে ধরে আছে। গোরাচাঁদ প্রানপন চেষ্টা করেও সেই বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারছে না। কোনো রকমে শুধু বললো,

-” আমায় ক্ষমা করে দাও। আমায় বাঁচতে দাও। উঃ মাগো!বাঁচাও!বাঁ-চা-ও। “

দরজায় আঘাত করে সূর্যরা,

-“গোরাচাঁদদা দরজা খোলো। দরজা খোলো। ” 

চেঁচামেচিতে বাড়ির ভিতর থেকে চাকর বাকররা ছুটে  আসে। সবাই মাইল দরজা ভেঙে ফেলে। দেখে সবাই গোরাচাঁদের দেহ মেঝেতে পড়ে আছে। ঘাড়ে গলায় রক্তের ফোঁটা। যেন কে দশ আঙুলে গলা টিপে নখ বসিয়ে দিয়েছে। গোরা থানায় ফোন করে। দশ মিনিটের মধ্যে থানা থেকে পুলিশ অফিসার এবং কয়েকজন কনস্টেবল এসে উপস্থিত হয়। অফিসারকে সূর্য বলে,

-” চলুন আমাদের সঙ্গে ওই ভাঙা মন্দিরে। ওখানেই সমস্যার সমাধান হবে।”

সবাই টর্চ জ্বেলে ছুটলো জঙ্গলের ভিতর ভাঙা মন্দিরে। মন্দিরের কাঁচালকচি আসতেই পচা দুর্গন্ধে সবাই বমি হয়ে যাওয়ার জোগাড়। সবাই নাকে চাপা দিয়ে মন্দিরের পিছনে ভাঙা ঘরে গিয়ে আঁতকে ওঠে। কাজল তো ভয়ে,

-“মাগো” বলে ওঠে।

 সজল কাজলকে চেপে ধরে বলে,

-উফফ কি বিভৎস্য!চোখে দেখা যায়না। ” পুলিশের সঙ্গে দুজন পুলিশ এসেছিলো, তারা রুমাল দিয়ে নাক-মুখ বেঁধে, হাতে গ্লাভস পড়ে, বাসের সাথে বাধা কমলার দেহটা খুলতেই, বডিটা পরে গেলো মাটিতে। গায়ের মাংস অর্ধেক গোলে,পচে, খসে পড়েছে। কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। মুখ-চোখ কিছু বোঝা যাচ্ছে না। অফিসার বললেন,

-” ইনি যে কামলাদেবী তার কি প্রমান আছে?”

সূর্য বললো,

-” ওই কঙ্কালের বাঁ হাতটায় চওড়া নোয়া আছে দেখুন, তাতে লেখা আছে কমলা।”

সত্যি লেখা আছে। গোরাচাঁদের দেহ আর কমলার পচাগলা দেহ পোস্টমর্টেমে পাঠিয়ে দিয়ে সবাই ফায়ার এলো বাড়িতে। বাড়িতে কান্নার রোল পড়েছে। তারাচাঁদ কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-“এ কি হলো? একদিকে বন্ধু আর একদিকে বৌ। কেন এসব হলো?”

গোরা,সূর্য এবং বাকি সবাই তারাচাঁদকে সান্তনা দিতে দিতে বললো,

-“বেইমান বন্ধুর জন্য চোখের জlল ফেলো না।  যে কিনা তোমার বৌকে অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন অবস্থাতে অত্যাচার করে মেরেছে। তাইতো বৌদি প্রতিশোধ নিয়েছে। উচিত শাস্তি হয়েছে শয়তানটার।”

এরপরের দিন সকালে পঞ্চপান্ডবও বাড়ি ফিরে আসে।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterKaberi Ghosh
Intro & EndingDebanshu Ghosh
KathakSourodip Roy


CharactersName
সূর্যDebanshu Ghosh
গোরাSoumik Banerjee
তাপসSuman Sadhukhan
কাজলSurojit Mukherjee
সজলJoydeep Lahiri
গোরাচাঁদJoydeep Lahiri
তারাচাঁদDebanshu Ghosh
কমলাPriyanka Dutta
তাপসের মাOlivia Das
কমলার শাশুড়িSusmita Das Ghosh
মোহনJoydeep Lahiri
Other VoiceSourodip Roy, Debanshu Ghosh, Suman Sadhukhan, Surojit Mukherjee

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *