মিস্ ঠাকুমা

Views: 0
মিস্ ঠাকুমা:
মিমি আর মিলি দুই বন্ধু। দুজনার বাড়ি পাশাপাশি। দুজনাই শরীর চর্চার দিকে মন। দুজনাই ক্যারাটে শেখে। সেদিন ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে দুজনা একটা চায়ের দোকানের বসে কথা বলছিল। দোকান সবে খুলেছে। জল গরম হচ্ছে।
এমন সময় মিলি চেঁচিয়ে ডাকে – ‘‘মিস্ ঠাকুমা – এদিকে। আমরা এখানে।’’
মিমি বলে, – ‘‘মিস্ ঠাকুমা কিরে। উনি কে?’’
ঠাকুমা একটু দূরে ছিল। কার সাথে যেন কথা বলছিলেন।
মিলি বলে, – ‘‘আরে আমার মামার বাড়ির পাশে ভাড়া থাকতো। দিন দশেক হলো চৌধুরী পাড়ায় ফ্ল্যাট কিনে এসেছেন। হঠাৎ দিন সাতেক আগে দেখা। ভোরে উঠে হাঁটার অভ্যেস আছে ওঁনার। আমায় জিজ্ঞাসা করতে আমি বলে দিলাম আমাদের এই পার্কের কথা।’’
– ‘‘কিন্তু মিস্ ঠাকুমা কেন?’’ মিমি আবার প্রশ্ন করে।
মিলি বলে, – ‘‘ওঁনার বয়স হয়েছে। কিন্তু অবিবাহিতা। বোনেদের বিয়ে দিতে গিয়ে নিজের আর বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। দু’বোন থাকে দিল্লি। আর ছোট বোন ভগ্নিপতি অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। তাদের ছেলেকে মানুষ করে বিয়ে থা দিয়ে, তাঁদেরই সংসারে থাকেন। স্কুল টিচার ছিলেন। বছর পাঁচেক রির্টায়ার করেছেন। তাই জন্য সবাই মিস্ ঠাকুমা বলে। উনিও কিছু মনে করেন না।’’
মিস্ ঠাকুমা কাছে আসতে মিলি বলে – ‘‘ঠাকুমা চা খাবেন?’’
মিস্ ঠাকুমা বলেন, – ‘‘তা মন্দ হয় না তবে এক শর্তে।’’
মিলি বলে, – ‘‘শর্ত? চা খাবার আবার কি শর্ত?’’
– ‘‘চায়ের দাম আমি দেবো।’’ বলেন ঠাকুমা
– ‘‘সে আবার কি, আমি করলাম অফার।’’ বলে মিলি
ঠাকুমা বলেন, – ‘‘আমি নতুন ফ্ল্যাট কিনে তোমাদের পাড়ায় এলাম। আর এত সুন্দর একটা পার্কের সন্ধান দিলে তুমি, তাই…..।’’
মিলি তিনটে চায়ের অর্ডার দিয়ে মিমির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় মিস্ ঠাকুমার। চা খাওয়া হলে মিস্ ঠাকুমা মিমিকে আর মিলিকে অবশ্যই তাঁর ফ্ল্যাটে যেতে বললেন। তারপর যে যার রাস্তা ধরলো।
সপ্তাহ পার হবার আগেই আবার ওদের সাথে দেখা হয়ে গেল মিস্ ঠাকুমার। প্রায় জোর করেই ঠাকুমা মিমি আর মিলি কে ধরে নিয়ে গেলেন ফ্ল্যাটে। সন্ধ্যো প্রায় হয় হয়।
ঠাকুমা জিজ্ঞাসা করলেন। – ‘‘কোথায় গিয়ে ছিলে? খুব ক্লান্ত লাগছে।’’
মিলি বলল, – ‘‘ঠাকুমা আগে এক গ্লাস ঠান্ডা জল।’’
– হ্যাঁ – হ্যাঁ দিচ্ছি, – ‘‘বলে ঠাকুমা উঠে গিয়ে ভিতর থেকে দু গ্লাস ঠান্ডা জল এনে দিলেন।
জল খেয়ে মিলি বলে, – ‘‘ঐ আর জি কর তিলোত্তমা হত্যার বিচার চাই মিছিলে।’’ কথাটা শুনে ঠাকুমার মুখটা ভার হয়ে গেল।
মিমির নজর এরায় না। বলে, – ‘‘কি হল ঠাকুমা, মুখটা হঠাৎ ভার হয়ে গেল?’’
ঠাকুমা বলেন, – ‘‘না রে ভাই। কিছু না।’’
মিমি জোর করে – ‘‘না নিশ্চই কিছু হয়েছে। বলো না ঠাকুমা।’’
একটু চুপ করে থেকে ঠাকুমা বলেন, – ‘‘তোমরা আজ কাল কার মেয়ে। রামায়ণ মহাভারত পড়োনি। পড়লে, বুঝতে পারতে যুগ যুগ ধরে মেয়েদের ওপর নারীদের লাঞ্ছনা অপমান নির্যাতন হয়েই যাচ্ছে। কে প্রতিকার করবে? পুরুষ প্রধান সমাজে নারীদের সম্মান নেই। কেউ দেয় না, সম্মান। কোনো বিচার নেই। বিচারের নামে প্রহোসন শুধু হয়।’’
ঠাকুমাকে থামতে দেখে, মিলি বলে, – ‘‘যুগ যুগ ধরে নারীদের ওপর অত্যাচার, অবিচার, অপমান হয়ে আসছে? বলনা ঠাকুমা, তাঁরা তো ভগবান, দেবী, তাঁদের কারা অপমান করতেন।’’
মিমি বলে, – ‘‘সেকি গো ঠাকুমা, দেবীদের অপমান দেবতারা ও করতো?’’
কথার মাঝে ঠাকুমার নাতবৌ। এক থালা মুড়ি তেলে ভাজা পিঁয়াজ লঙ্কা তেল মাখিয়ে দিয়ে গেল।
ঠাকুমা বলেন, – ‘‘নারীদের সম্মান, নিজেদেরই অর্জন করে নিতে হয়। কেউ দেবে না। দেবতাই বলো, আর মানুষই বলো। কেউ যেচে সম্মান দেয় না। আদায় করে নিতে হয়। আজ ওরা সম্মান দেবে, কালই স্বার্থ ফুরালে অপমান করতে, এতটুকু দেরী করবে না। রামায়ণ মহাভারতের যুগেও নারীদেরও লাঞ্ছনা অপমান করেছে যেমন আবার দরকার পড়লে সম্মান দিয়ে পূজো করেছে।’’ থেমে ঠাকুমা মিলি আর মিমি কে বলে, – ‘‘খাও-খাও, নিশ্চই খিদে পেয়েছে?’’
– ‘‘তাই নাকি ঠাকুমা? নারী অপমান যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে?’’ অবাক হয়ে বলে মিমি।
মিলি বলে, – ‘‘বলো না ঠাকুমা, আমার শুনতে খুব ভাল লাগে রামায়ণ মহাভারতের কথা, বলো ঠাকুমা।’’
দু’চার গাল মুড়ি খেয়ে মিস ঠাকুমা বলেন, – ‘‘দ্যাখো রাবনের মত কংসের মতো দুরাচার রাক্ষস দৈত্য সে যুগেও যেমন ছিল এ যুগেও তেমন আছে। তবে ওই যুগে অভিশাপের ভয় পেত একটু, এ যুগে পুলিশকেও ভয় পায় না।’’
মিমি বলে, – ‘‘তার মানে?’’
ঠাকুমা বলেন, – ‘‘সতীলক্ষী নারীর অপমান হলে তাঁরা রাগে ক্ষোভে যা অভিশাপ দিত তাই ফলতো। যেমন একটা গল্প বলি, সত্য যুগের ঘটনা। এই যুগে বেশী ভক্ত বলো বেশী পূজা বলো করি বেশী নারায়ণের। প্রতি পূর্ণিমাত বেশীর ভাগ লোক নারায়ণের পূজা করত, সিন্নি দিত। আর পুরোহিত মশাই পূজো করতে আসেন। একটা কালো রং-এর পাথর নিয়ে আসেন। তাকে বলে শালগ্রাম শিলা। উনিই আসল নারায়ণ। শালোগ্রাম শিলা হলো কি ভাবে উৎপত্তি তাই বলি। জলন্ধর বলে এক বীর ছিল। দেবতা অংশে জন্ম হলেও সে দেবতাদের ঘৃণা করত। তাই রাক্ষস দৈত্যদের সঙ্গে থাকতো বা মিশতো। ওদের লিডার হয়ে যুদ্ধ করতো, দেবতাদের বিরুদ্ধে। সবাই ওকে ভয় করতো। দেবতাদের স্বর্গচ্যুত করার জন্য দৈত্যদের গুরু শুক্রাচ্যার্য একদিন জলন্ধরকে বলল যে, জলন্ধর যদি সতী তুলসী দেবীকে বিবাহ করে তবে তার মৃত্যু নেই। অজেয় অমর হয়ে যাবে। কারণ দেবী, তুলসী পরম নারায়ণ ভক্ত। পরম শ্রীহরির আশীর্বাদ আছে তুলসীর ওপর। বিবাহ হয়ে গেল জলন্ধরের সাথে দেবীতুলসীর। স্বার্গরাজ্যে চিন্তার বান ডাকল। তাই তো, জলন্ধরকে না মারলে তো সত্যি দেবতারা স্বর্গচ্যুাত হবে। কি হবে? অনেক ভেবে চিন্তে ব্রহ্মদেব বলেন যে দেবী তুলসীর চরিত্র হরণ হলেই জলন্ধরের মৃত্যু হবে। তাই করতে হবে। দায়িত্ব পড়লো নারায়ণের ওপর কারণ, দেবীর তুলসীর তেজ অন্য কোনো দেবতারা সহ্য করতে পারবে না। দেবী তুলসী একমাত্র নারায়ণের ভক্ত।
একদিন হয়েছে কি জলন্ধর যুদ্ধে গেছে। দেবী তুলসী একা। এক মনে নারায়ণের পূজো করছে। এমন সময় জলন্ধর রূপী নারায়ণ এসে হাজির। অবাক হয়ে তুলসী। জিজ্ঞাসা করে জলন্ধর তুমি তো যুদ্ধে গিয়েছিল। তবে হঠাৎ অসময়-এ কেন এলো। তখন জলন্ধর হেসে বলে যে, কেন জানি না তার এই সময় স্ত্রীর কাছে আসতে ইচ্ছা হলো। বিবাহের পর থেকে জলন্ধর স্ত্রীকে স্পর্শ করেনি। আজ স্বামীকে কাছে পেয়ে দেবী তুলসী আনন্দে আপ্লুতো হয়ে পরে কোন কিছু চিন্তা না করে, স্বামীর কাছে নিজেকে মেলে ধরে।
বেশ কিছুক্ষণ পর বাইরে যুদ্ধ জয়ের দামামা বাজতে ও হর্ষধ্বনী শুনে চেতনা ফেরে দেবী তুলসীর। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দেখে বাইরে জলন্ধরের জয়ের হর্ষধ্বনি। শুনে বোঝে বা দেখে জলন্ধর বেশে যে তার চরিত্র হনন করলেন তিনি আর কেউ নন স্বয়ং তার আরাধ্য দেবতা নারায়ণ। ক্ষোভে দুঃখে নারায়ণকেক জিজ্ঞাসা করায়, নারায়ণ উত্তর দেয় যে জলন্ধরের মৃত্যুর জন্য এই ছলনা। তখন, দেবী তুলসী নারায়ণকে অভিশাপ দেন সেদিন থেকে নারায়ণ শালগ্রাম শীলায় রূপান্তরীত হয়। আর নারায়ণ তুলসী দেবীকে আর্শীবাদ করেন তুলসী ছাড়া নারায়ণ পুজো বা শালগ্রাম শীলার পূজো হবে না।’’
এবার মিস্ ঠাকুমা একটানা কথা বলে, একটু থামেন। একগ্লাস জল খেয়ে কি যেন ভাবেন।
মিমি বলে, – সত্যি ঠাকুমা সত্যযুগ থেকে এই নারীদের অপমান করা হচ্ছে। ভাবা যায়। আর এটা হল কলি যুগ।
মিমি বলে, – ‘‘তারপর ঠাকুমা। কি হল?’’
ঠাকুমা-”অপমানে দেহ ত্যাগ করে। তারপর এল ত্রেতা যুগ। ত্রেতা যুগেও এই একই ঘটনা। মহর্ষি গৌতম মুনি স্ত্রী অহল্যার প্রতি। দেবরাজ ইন্দ্র অহল্যার স্বামী গৌতম মুনির ছদ্মবেশে এসে অহল্যার চরিত্র নষ্ট করে। গৌতম মুনি ধ্যানে জানতে পেরে ইন্দ্রকেও অভিশাপ দেন। আর নিজের স্ত্রীকেও অভিশাপ দেন পাথর হয়ে যাবার জন্য। নারায়ণ রাম অবতার হয়ে তবে অহল্যা মুক্তি পায় রামের স্পর্শে। অহল্যার দোষ কোথায়? কিন্তু বিনা দোষে এত বছর অপমান সহ্য করেছে। একি কম যন্ত্রণা। তাই বলি নারীদের সম্মান কেউ দেয় না। সম্মন আদায় করে নিতে হয়। অর্জন করতে হয় পুরুষদের কে ছোট করে।’’
একটু ভেবে ঠাকুমা আবার বলে, – ‘‘যেমন এই ত্রেতা যুগেই একনারী ছিল। যেমন তেজস্বী তেমন বুদ্ধিমতী। নিজের সম্মান কেমন করে রাখতে হয় জানতো।’’
মিমি মিলি দুজনে একসাথে বলে, – ‘‘কে কে ঠাকুমা?’’
ঠাকুমা বলে, – ‘‘রামায়নের প্রধান নারী – সীতা। সীতার চরিত্র অপূর্ব। যখন সীতাকে রাবন ধরে নিয়ে গেল। নিজের উদ্যান-এ রেখে ছিল। তারপর ১৪ বছর বনবাস শেষ হতে অযোধ্যায় ফিরল। তখন সীতার পরীক্ষা নিয়ে ছিল রাম। অগ্নি শুদ্ধ করে। তারপর অযোধ্যার ফিরে বেশ কয়েক মাস পর যখন সীতা অন্তঃসত্বা তখন প্রজাদের কথায় রাম রাজা হয়ে সীতাকে কলঙ্কিনী বলে বনবাসে পাঠায়। সে অপমানও সীতা সহ্য করে নিজের সন্তানের জন্য। সেই সন্তান লব ও কুশ যখন বড় হলো যুদ্ধে পারদর্শি হল, নিজের বাবাকে চিনল যে তারা রাজা রামের সন্তান। তখন তাদের বয়স কত আর ১০/১১ বছর, এই দশ বছর সীতা বাল্মিকীর আশ্রমে ছিল। তারপর রাম ছেলেদের নিজের রাজ্যে ফেরত নিয়ে যাবে তখন প্রজাদের কথায় সমস্ত রাজ বাড়ীর কথায়, কুলগুরু বশিষ্ঠের কথায় সীতাকে রাম গ্রহন করতে গিয়ে, রাম (সীতার স্বামী) বলে, সীতাকে আবার চরম পরীক্ষা দিতে হবে। শুদ্ধত্বার সবার সামনে। তখন দেবী সীতার চোখে জল এল। রামও সীতাকে প্রগাঢ় ভালোবাসে। তবে কেন আবার পরীক্ষা। তখন সীতা লজ্জায় অপমানে, দুঃখে অভিমানে, নিজের সম্মান রক্ষায় শেষে পাতাল প্রবেশ করে। অর্থাৎ দেহত্যাগ করে। রাম তখন বুঝতে পারে কি ভুলটাই না সে করেছে – তাই বলছিলাম রে মেয়েদের সম্মান কেউ দেয় না। মেয়েদের অপমান লাঞ্ছনা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।’’
মিলি বলে, – ‘‘তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো।’’
ঠাকুমা বলে, – ‘‘সে তো হতেই হবে। তবে কি জানিস এই দ্বাপর যুগে দ্যাখ্ – শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে ভালোবেসে ছিল। অত প্রেম। প্রেমের পরকাষ্ট দেখিয়ে বিখ্যাত হয়েছিল। একবার ভাব্ রাধাকে এতই যখন ছোট থেকে ভালোবেসে ছিলে তবে বিয়ে করলে না কেন? আবার যখন রাধা বিবাহিত হল তখনও কেন পরস্ত্রী জেনেও প্রেম চালিয়ে গেলো। তারপর যখন কংসকে মেরে মথুরার রাজা হলো তখন রাধাকে ভুলে গেল। অত সখীদের সঙ্গে প্রেম করলো। সব ভুলে গেল। এটা বেইমানি নয়? এটা অপমান নয়? রাধাকে সারা জীবন প্রেমিকা বলে গেল। স্ত্রীর সম্মান আর প্রেমিকার সম্মান এক হলো?’’
একটু থেমে ঠাকুমা বলে, – ‘‘এই দ্বাপর যুগ থেকেই যেন প্রচলন হল ছেলেরা মেয়েদের সাথে প্রেম করবে আর বিয়ে করবে অন্য জনকে। তখন জাত কুল পাওনা এই সব দেখবে। এখন তো আরো বেশী। মেয়েদের অপমান লাঞ্ছনা করার সুযোগ এল।’’ চুপ করে যায় ঠাকুমা। যেন মনে হয় রাগে ভেতরে ভেতরে কাঁপছে।
মিমি বলে, – ‘‘তাহলে ঠাকুমা। আমাদের এই লড়াই কি ব্যর্থ হবে?’’
ঠাকুমা বলে, – ‘‘এই ভাবে নরম হয়ে আমাদের দাবি বলে চেঁচালে হবে না।’’
মিলি বলে, – ‘‘তবে?’’
ঠাকুমা – ‘‘মন থেকে দয়া, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, স্নেহকে সব বির্সজন দিতে হবে। সেখানে স্বামী সন্তান ভাই বলে কিছু মানা হবে না। নির্মম ভাবে তাদের প্রতি আঘাত হানতে হবে। নিজের অধিকার নিজের সম্মান জোর করে ছিনিয়ে নিতে হবে। দেবী তুলসী, দেবী সীতার মতন চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিজেকে ত্যাগ করলে হবে না। হতে হবে দেবী চন্ডীর মতন। দেবী কালির মতন। যে কেউ সামনে এসে চোখ তুলে কথা বলবে তাকেই ভেঙ্গে দুমড়ে ভূমিসাৎ করে দাও। যাতে নারীদের দেখে ভোগের চোখে না দেখে ভয়ের চোখে দেখে।’’
মিলি উত্তেজিত ভাবে বলে, – ‘‘কি কি ভাবে ঠাকুমা?’’
– নিজেদের তৈরী করতে হবে। সাহসে, শক্তিতে, বুদ্ধিতে।’’ আমার তো মনে হয়, সব মেয়েদের স্কুলে স্কুলে, কুঙফু, ক্যারাটে, কুস্তীতে পারদর্শী করে তোলা। নানা রকম অস্ত্র বিদ্যা। যেমন ছুরি খেলা, লাঠি খেলা, পিস্তল, ছোঁড়া, তীর ছোঁড়া ইত্যাদি যা সব আন্তর্জাতিক খেলা শুধু হয় তা স্কুলে শেখানো উচিৎ। নাচ, গান, আঁকা ইত্যাদি যেমন শেখে তার সাথে এই সবও শিখতে হবে। এখানকার সমাজে পুরুষ মানুষ কয় জন আছে। আছে সব জন্তু জানোয়ার প্রতি পদে বিপদ। তাই নিজেদের রক্ষা নিজেদেরই করতে হবে।’’
মিলি বলে, – ‘‘ঠিক কথা – তবে এই সব জানতে শিখতে গেলে তো আর্থিক সংগতিত প্রয়োজন।”
ঠাকুমা বলে, – ‘‘সেই জন্য তো বলছি স্কুল থেকে অর্থাৎ সরকার ব্যবস্থা করবেন। তবে সবার আগে মগজাস্ত্র দরকার অর্থাৎ মগজের বুদ্ধি। তার জন্য নানান বই পড়াশোনা করতে হবে। তা না করে বয়সের ফুল ফুটতে না ফুটতে যাকেই দেখলাম অমনি প্রেমে পড়ে গেলাম। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেললাম। আর এখন কার প্রেম মানেই সেক্স। যার জন্যই সমাজের এত অধঃপতন।’’
মিমি বলে, – ‘‘তবে – কাকে তুমি দোষ দেবে? পুরুষ দের না সমাজ কে?’’
– ‘‘দোষ হচ্ছে বড় বাবা-মায়ের,ছোট থেকে বাচ্চাদের অত্যধিক আদরে মানুষ করা। যা চাইছে তাই অবদার মেটানো। মেয়েদের ছোট থেকেই অশ্লীল পোষাক পারানো।’’ বলে ঠাকুমা।
মিলি বলে, – ‘‘তাহলে কি করার উপায়?’’
ঠাকুমা বলে, – ‘‘বাচ্চা বয়স থেকে তাদের গরীবের মতন মানুষ করতে হবে। শেখাতে হবে অভাব কাকে বলে, কি সেটা। তাদের শক্ত হয়ে মানুষ করতে হবে তাদেরই ভালোর জন্য। পয়সা থাকলেই চলবে। আর না থাকলেই কাঁদবো, তা নয়।’’
হেসে ঠাকুমা বলে, – “হ্যাঁ ঠিক আছে। বেশ বন্ধ্যা বেলা ভালোই আড্ডা দেওয়া গেল। এবার উঠতে হবে তো।”
মিমি মিলির টনক নড়ে – ‘‘এ্যাঁ মা, সত্যিই কত দেরী হয়ে গেল। আরে বাবা তোমার কাছে আসলেই বড় দেরী হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ অনেক কিছু জানতে পারলাম। এটাই লাভ।’’মিলি বলে, – “আচ্ছা চলি ঠাকুমা। আবার অন্যদিন এসে বাকিটা শুনবো। আর জানবো শক্তি বাড়ানো কিভাবে যায় কেমন, চলি আজ।’’ বলে মিলি আর মিমি চলে গেল।
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
Kathak | Debanshu Ghosh |
Characters | Name |
---|---|
Miss Takuma | Olivia Das |
Mili | Priyanka Dutta |
Mimi | Susmita Ghosh Das |
Others | Debanshu Ghosh, Joydip Lahiri |
Find us on Facebook – click here