মরনের পরে
Views: 4
মরনের পরে:
আজ আমি যে গল্প বলবো, তা প্রায় সত্য ঘটনা। তবে আমি স্থান কাল পাত্রপাত্রীর নাম কাল্পনিক দিলাম।
পশ্চিম দিনাজপুরে রায়গঞ্জ গ্রামে এক পরিবার ছিল। বেশ স্বচ্ছল অবস্থা। দুই ছেলে দীনেশ যাদব, দীপক যাদব। দুজনাই বড় সেভেন, এইট-এ পড়ে। দুই মেয়ে কমলাও বিমলা। ফোর-ফাইভ এ পরে| এ হেন সংসারে আবার এক নতুন সদস্য এল। দীনেশ দীপকের ছোট ভাই, সুরেশ। অনেক দিন পর বাড়িতে কচি বাচ্চা আসতে সবাই খুশী। আনন্দিত।
কিন্তু সুরেশ দু’বছরের হতেই তার কথা ফুটতে ও বলতে লাগলো।
-‘তুমি আমার মা না- তুমি আমার বাবা না।’
প্রথম প্রথম কেউ কেয়ার করতো না, ভাবতো বাচ্চা বয়সের খেয়াল |কিন্তু না যত বড় হয়, যত কথা বলে অন্য অন্য কথা বলতে আরাম্ভ করলো। যেমন,- আমার আছে। আমার দুই ছেলে আছে। আমার বাবা মা বৃদ্ধ, কিন্তু তাঁরা বেঁচে আছেন। আমি আমার ছেলেদের খুব ভালোবাসি, বড় ছেলের নাম কিসান সিং আর ছোট ছেলের নাম রোহন সিং। আমার বৌ-এর নাম লছমী। আমার নাম সুরেশ না, আমার নাম বিনোদ সিং। আমার বাড়ি বীরভূম, তারাপীঠের স্টেশনের কাছে আমার দোকান আছে। রেডিওর দোকান। দোকানের নাম বিনোদ রেডিও। খুব বড় দোকান। আমার একটা বাইক ছিল।
এই সব কথা সুরেশর বাবা মা দাদা দিদি, সবাই শুনতো কখনো মনে হয়নি ও এসব বানিয়ে বলছে। বা কারুর কাছে শুনে বলছে। সুরেশ গম্ভীর, সব সময় কি যেন ভাবে। আর বলে।
একদিন দীনেশ, দীপকের মামা এল। তিনি কলকাতা শহরে থাকেন, শিক্ষিত ব্যক্তি, ভাল চাকরী করেন। দীনেশ দীপকের বাবা যোগেশ চিঠিতে লিখে সব জানিয়ে ছিল, মামা গোবিন্দকে।
মামা গোবিন্দ সব শুনে দেখে বুঝে বলে,
-“চলো যাই একদিন বীরভূমের তারাপীঠ। কথার সত্যি, মিথ্যা যাচাই করে আসি, এত ছোট বাচ্চা বানিয়ে বলতে পারে না, কিছু পাড়েও বলতে পারে না। তাহলে? মনে হচ্ছে ও ‘জাতিস্মর।”
“ঠিক আছে। একটা দিন নয়- চলো কালই রওনা হই”- বললো সুরেশের বাবা যোগেশ যাদব|
গোবিন্দ বলে,
-“তুমি আমি আর দীনেশ যাই”|
যোগেশ বলে,
-“বাবা হয়ে এই শুনে আমার মন বড় খারাপ হয়ে যায়। ওর মা’তো সব সময় কাঁদে। যাই হোক চলো যাই।”
পরের দিন সকালেই তিন জনে বেরিয়ে পরে। বাসে করে গিয়ে তবে ট্রেন ধরবে। ওরা সন্ধ্যে বেলায় পৌঁছোয়। সেদিন একটা হোটেলে থাকে। পরের দিন একটা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে বিনোদ রেডিও-র দোকান খোঁজ করে। এদিক সেদিক ঘুরে একে তাকে জিজ্ঞাসা করে পোঁছোয় বিনোদ রেডিও-র দোকানে। সত্যিই রেডিও-র দোকান। আর নামও ‘বিনোদ-রেডিও’। ওরা ঢোকেদোকানে। দেখে একজন প্রৌঢ়াভদ্রমহিলা বয়স ৫০/৫৫; হবে তিনি বাস কি লিখছেন। আর একটি ৩০/৩১ বয়সের ছেলে একটা রেডিও-র ভিতরে তার দিয়ে কি টেস্ট করছে। গোবিন্দদের দেখে দুজনাই উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।
ছেলেটি বলে,
-” আসুন আসুন কি দেবো?”
যোগেশ, দীনেশ আমতা আমতা করে; ইতঃস্তুত কাটিয়ে গোবিন্দ বলে,
-” নমস্কার। আমরা কিছু কিনতে আসিনি, কটা কথা জিজ্ঞাসা করতে আর কিছু কথা বলতে এসেছি।
খুব নম্র ও বিনয়ের সঙ্গে ছেলেটি বলে,
-” আমার নাম কিসান সিং। বলুন কি জানতে চান। তার আগে…।”
টেবিলের ওদিক থেকে এদিকএসে-কিসান তিনটি টুল এগিয়ে দিয়ে বলল,
– “বসুন। বলুন”
টুলের ওপর বসে গোবিন্দ বলে,
-” আপনার বাড়িতে কে-কে আছেন?
কিসান একটু চুপ কার থেকে বলে,
-” আমি,আমার মা। বাড়িতে ঠাকুমা ঠাকুরদা আর আমার স্ত্রী ও আমার ছোট ভাই থাকে। কিন্তু কেন বলুন তো ?”
গোবিন্দ হাত দেখিয়ে চুপ করতে বলে, কিসানকে। একটু কি ভেবে, নিজেই বলে,
-” আপনার বাবা নেই? বাবার নামেই এই দোকান? মাথা নাড়ে কিসান ।
গোবিন্দ বলে,
-” আপনার মায়ের নাম লছমী দেবী? আপনার ভাই-এর নাম রাহন? আপনার বাবা কত দিন হল মারা গেছেন?”
কিসান বলে,
– “ ৮ বছর। কিন্তু আপনি আমার মায়ের ভাই নাম জানলেন কি করে?”
গোবিন্দ বলে,
-“আর একটা প্রশ্ন, আপনার বাবা কি করে মারা যান সেটাই জানি না, মানে বলে নি?”
কিসান বলে,
-”আমার বাবা খুন হয়ে মারা যান, কে বা কারা সামনা সামনি মাথায় গুলি করে খুন করে। আজ পর্যন্ত খুনি ধরা পরে নি। আমাদের এত কথা কে বলল আপনাদের? আর আপনাদের তো চিনিও না। আপনারা কোথা থেকে আসছেন?”
উত্তেজিত ভাবে বলে কিসান এতক্ষন ভদ্রমহিলা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এবার বললেন,
-” আমাদের মানে কিসানের বাবার খবর নিশ্চয় কাগজে পড়েছেন? আপনারা কি খুনির সন্ধান পেয়েছেন?”
গোবিন্দ বলে,
-”না আমরা কাগজ পড়ি নি আমরা অনেক দূরে থাকি পশ্চিম দিনাজপুরের রায়গঞ্জ গ্রাম থেকে আসছি|আমরাও আপনাদের চিনি না জানেন না|”
একটু চুপ করে থেকে আবার বলে,
– ” আমার নাম গোবিন্দ। ইনি যোগেশ যাদব আর দীনেশ যাদব এনার বড় ছেলে|এই যোগেশ-দার ছোট ছেলে সুরেশ, এই ৬/৭ বছর বয়স। সেই ২ বছর বয়স থেকে প্রায় বলতো, এখনোও বলে। ‘ওর নাম- বিনোদ সিং বৌ আছে তার নাম লছমী, বড় ছেলে কিসান ,ছোট ছেলে রোহন, রেডিও’র দোকান আছে। আরো – আরো অনেক কথা বলে।”
থামে গোবিন্দ তারপর ব্যাগ থেকে জলের বোতল বার করে ভাল খায়। হটাৎ লছমী দেবী হেসে ওঠেন। বলেন,
-“ও-মা একটা ঐটুকু বাচ্চার কথা শুনে আপনারা …”
ওনার কথা থামিয়ে দিয়ে, দীনেশ বলে,
-” দেখুন আন্টি, ও কি করে জানলো আপনাদের পরিচয়। তাছাড়া ও-তো বলছে-ওই বিনোদ সিং মানে আপনার স্বামী।
লছমী দেবী আবার বলেন,
-” হয়তো কারুর কাছে শুনেছে। নাহলে খবরের কাগজ পরেছে।”
তখন যোগেশ বলে,
-” কাগজ নিয়ে পড়ার মতন কেউ বিলাসিতা করে না আমার বাড়িতে। আর ওর বয়স মাত্র ৬ । এখন ক্লাস টু তে পড়ছে । কাগজ পর পড়ার মতন শিক্ষা হয় নি।
গোবিন্দ এতক্ষন কিছু বলেনি। এবার বলল,
-” এমনও তো হতে পারে ওকে কে খুন করেছে। তাও বলে দিতে পারে।”
কিষান-কি ভেবে বলে,
– “দাদা আপনি একটা কাজ করুন, সামনের বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ। আপনি সেদিন ঐ বাচ্চাটিকে নিয়ে আসুন| আমাদের বাড়িতে দেখি আমাদের চিনতে পারে কিনা। তাহলে ওর কাছ থেকে জানা যাবে আমার বাবার খুনি কে বা কারা?”
গোবিন্দ একুট রসিকতা করে বলে,
-”ওই তো তোমার বাবা ছিলেন পূর্ব জন্মে এ জন্মে …।”
কথা শেষ না করেই গোবিন্দ উঠে দাঁড়ায় বলে,
-“আচ্ছা তা হলে আসি। আজ সোমবার আমরা সুরেশকে নিয়ে বৃহস্পতিবার আসব| ও আসার জন্য খুব উদগ্রীব।” চলে আসে সবাই।
বৃহস্পতিবার দিন বাজারের মধ্যে দিয়েই অটো যাচ্ছে। যোগেশ, দীনেশ গোবিন্দ আর সুরেশ যাচ্ছে |ইচ্ছা করেই গোবিন্দ বিনোদ রেডিও দোকান আড়াল করে সুরেশকে ভুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে|সঙ্গে সঙ্গে সুরেশ বলে,
-“আরে আমার দোকান তো চলে যাচ্ছে। “
গোবিন্দ বলে,
-” কি দোকান?”
-“কেন ‘বিনোদ রেডিও।”
পরক্ষনেই বলে,
-“ও আজ তো বৃহস্পতি বার। দোকান তো বন্ধ। আচ্ছা চলো এবার বাড়ি যাই।”
খুব আনন্দ সুরেশের মনে;অন্য সময় মুখ ভার করে ভাবে। কত কি ভাবে।
আগেই দাঁড়িয়ে ছিল কিষান|যোগেশ দের অটো আসতে দেখে এগিয়ে আসে। সুরেশ গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে কিসানের হাত চেপে ধরে বলে,
-“কেমন আছো কিসান?
বাড়ির সবাই ভালতো, কিষান অবাক হয়ে চুপ করে থাকে ভাবে কি বলবে। তারপর দেখে সুরেশ নিজেই বাড়ি ঢোকে,
-“রোহন- রোহন” বলে ডাকতে ডাকতে ।
রোহন বাড়িতেই ছিল, সেও একটা আলাদা ব্যবসাকরে। দাদার কথা শুনে সেও কম অবাক হয়নি। তাই কৌতূহল বসে-সেও বাড়িতে আছে। রোহন নিজের নাম একটা বাচ্চার মুখে শুনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সুরেশ ছুট্টে গিয়ে ওর-ও হাত চেপে ধরে বলে,
-“কত-বড় হয়ে গেছো |এখন কি করছো?”
সে কত দিনে চেনা মানুষ। লছমী বাইরে আসতে, সুরেশ বলে,
-” লছমী তোমার শরীর ভাল আছে তো? বাবা মা কোথায় ডাকও তাদের।
কিসানের বউকে দেখে বলে,
-” এঁকে তো চিনতে পারলাম না তবে ;আন্দাজ করতে পারি যে উনিকিসানের স্ত্রী। তাই না?”
সবাই হতবাক, কারুর মুখে কথা নেই। সবাই ভাবছে এ কে? কে বলবে যে ৭ বছরের একটা ছেলে এই ভাবে বড়দের মতন কথা বলছে। কিষানের মুখ দিয়ে বেরোয় আপনা-আপনি একটা কথা
“ঠিক বাবার মতন কথা।”
সুরেশ ছুটে চলে যায় ঘরের ভেতর বাবা মায়ের সাথে দেখ করতে। কিছুক্ষণ বাদে ও ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসে একটা চেয়ারে বসে |রোহন কাছে যায়, পাশের চেয়ারে বসে বলে,
-” ঠিক বাবার মতন দেখতে হয়েছে।”
ভেতর থেকে ঠাকুমা বেড়িয়ে এসে, সুরেশের পাশে দাঁড়িয়ে সুরেশের মাথায় হাত রেখে বলে,-
” আমার বিনোদ তো ছোট বেলায় দেখতে ঠিক এই রকম ছিল।”
সুরেশ ঠাকুমার হাত ধরে বলে,
-“মাগো – আমি তো তোমারী ছেলে।”
ঠাকুমা চোখের জল মুছতে মুছতে বলে,
-” হ্যাঁ-হ্যাঁ তাইতো-তাইতো।”
কিসানের বৌ-এসে ‘চা-কিছু-খাবার দিয়ে গেল। কিসান একটা চেয়ার টেনে বসে ওদের সবাইকে বলে,
-“আসুন কি চা জলখাবার খেয়ে নিন।
যোগেশ দীনেশ গোবিন্দ সুরেশও খেতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরে কিসান সুরেশে হাত ধরে বলে,
-” এবার বলতো সেদিনের কথা”
-“কোন দিন-এর কথা ?” সুরেশ বলে।
-“তুমি কি ভাবে মারা গিয়ে ছিলে?” প্রশ্ন করে কিসান ।
-“ও-ও, তোমরা আমার মৃত্যু ভুলে যাও নি?” বলে সুরেশ
-“কি-আশ্চর্য, তুমি-ই কি করে ভাবলে আমরা ভুলে যাবো?” বলে রোহন।
একটু কি ভেবে সুরেশ বলে,-
” আমায় তো ওরা গুলি করে খুন করেছিল| বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করে সুরেশ,
-“কেন পুলিশ ধরতে পারে নি খুনিকে?”
কিসান বলে,
-” না পারে নি এখনো খুঁজে যাচ্ছে। খুনি কে বাবা? তুমিই বলো।”
বিজ্ঞের মতন হাসে সুরেশ। বলে,
-” পাবে কি করে ওরা যে সময়, যে জায়গা বেছে নিয়ে ছিল, কাক- পক্ষিতেও টের পাবার যো ছিল না।”
“কোথায়- কোথায়, আর কখন?” আগ্রহ ভরে প্রশ্ন করে কিসান
সুরেশ বলে,
-” ঐ জেরে তারাপীঠ জঙ্গলের ঢোকার মুখে। একটা পুকুর আছে পুকুরের ওপরেই একা গাব ভেরেন্ডা গাছ আছে। রাস্তাটা ওখানে সরু হয়ে গেছে।”
থামে আবার বলে,
-“সেদিন বিকাশকে দোকানে রেখে তাগাদায় বেরিয়েছিলাম ফেরার পথে ভীষণ বৃষ্টি বর্ষাতি পরে বাইকে আসছিলাম, তখন ঐ বৃষ্টিতে ঐখানে পানু পান্ডা আর ছোটেলাল আমার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি গাড়ি থামিয়ে দি। তখন ছোটেলাল কিছু বোঝার আগেই গুলি করে মাথা লক্ষ্য করে। গুলি করে ওরা পুকুরে বন্দুকটা ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়|”
একটু থামে সুরেশ। ঐ স্মৃতি ওর মনে পড়তে কেমন হয়ে যায়। হাঁপাতে থাকে। সারা মুখে যেন জমে যায়। কিসান মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। অনেকক্ষন পর সুরেশ আবার বলে,
-” আমার বর্ষীতিতে দেখিা গুলির দাগ আছে। আর গুলিটাও ২হাত দূরে একটা গাব ভেরেন্ডা গাছে ঢুকে যায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পরে যাই। কিছু মনে করতে পাচ্ছি না।”
যোগেশ উঠে সুরেশকে বুকে চেপে ধরে বলে,
-” আর কিছু বলতে হবে না। তুই বিশ্রাম কর!”
কিসানের বৌ দাঁড়িয়ে সব শুনছিল, সে তাড়াতাড়ি গিয়ে একগ্লাসদুধ এনে দেয়। গোবিন্দ দুধটা নিয়ে মুরেশ কে বলে,
-“নে এটা খেয়ে নে।”
খেয়ে নেয় সুরেশ। ততক্ষনে রোহন যে আলমারিতে বাবার জামা কাপড় থাকত, সেখান থেকে ওই বর্ষাতিটা বার করে এনে সবাইকে দেখায়| সবাইকে কে সত্যি বর্ষাতির টুপিতে এপাশ-ওপাশ দুটো গর্ত।
কিসান বলে,
-“আমি এখুনি গিয়ে থানার ওসি, মিস্টার চৌবে আমার পরিচিত। ঐ বাবার কেসটা নিয়েছিল, তাকেই গিয়ে আমি বলবো সব কথা।”
গোবিন্দ একটু হেসে বলে,
-” অত ব্যাস্ত হয়ো না। ব্যাপারটা সব ধামাচাপা পরে গেছে। এখুনি বললে, এখুনি কিছু হবে না। কেসটা রি-ওপেন করতে গেলে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে |অনেক প্রমাণ জোগাড় করতে হবে| তাছাড়া এখন বললে বলবে একটা ৭ বছরের বাচ্চার কথার কি দাম আছে? তার চেয়ে বরং তুমি ও.সি কে গিয়ে এই সুরেশের কথা বলো| তিনি এসে আগে জেনে যান সুরেশ এক জাতিস্মর। গত জন্মের কথা ওর সব মনে আছে|”
রোহন মাথা নাড়ে-
“হ্যা ঠিক বলেছেন”
পরের দিন সকালে সবাই চা খেতে খাচ্ছে। গোবিন্দ কিসানকে প্রশ্ন করে,
-” যারা তোমার বাবাকে খুন করেছে তারা কে আর তোমার বাবার সাথে শত্রুতা কেন?”
কিসান বলে,
-”পানু পান্ডারও একটা রেডিওর দোকান আছে। বেশ বড় দোকান কিন্তু আমার বাবার দোকানেই ভীড় বেশি। কাস্টোমার বেশী। এটাই হিংসা। পানু একবার বাবার কাছ থেকে একটা দামি রেডিও নিয়ে ছিলো তার কোন আত্মীয়ের জন্য |ঐ মডেল ওর দোকানে নেই। পরের দিনই টাকা দেবে বলে, নিয়ে আর দেয় নি। প্রথম প্রথম চাইতে আজ নয় কাল এই করছিলো | তারপর সুর পালটে গেল, বলে,”
-” তোর দোকান থেকে রেডিও নিয়েছি প্রমাণ আছে?”
বাবা বলতো,
-” আমার বিল করা আছে।”
পানু বলতো,
-”ও তোর নকল বানানো বিল।’
এই নিয়ে ঝগড়া, সেই থেকে বাবার ওপর রাগ, তবে ছোটেলাল, খুব সাংঘাতিক লোক। ওকে সাবাই ভয় করে চলে। গুণ্ডা একটা।”
হঠাৎ সুরেশ আসে|একদম তৈরী হয়ে, বলে,
-” আমি আজই বাড়ী যাবো |এখানে থাকবো না।”
কিসন বলে,
-“কেন? কি হল? আর একদিন থাকো।”
সুরেশ বলে,
-” না আর থাকবো না। আমি বাড়ি যাবো। মায়ের জন্য মন কেমন করছে।”
-“কিন্তু আমি যে আবার পুলিশকে বলে খুনিদের ধরবো তখন তো তোমায় চাই।” বলে কিসান।
সুরেশ বলে,
-” তখন না হয় আবার আসব।”
সুরেশের বায়নায় সত্যি গোবিন্দাদের চলে যেতে হল। গাড়িতে সুরেশ বেশ গম্ভীর। যেন কি ভাবছে। গোবিন্দ তাকিয়ে থাকে যোগেশ সুরেশের দিকে চেয়ে ভাবে, ছেলে ওদের হয়েও কত পর মনে হচ্ছে। সুরেশ বাবার দিকে চেয়ে যোগেশের হাত ধরে বলে,
-“বাবা, একটা কথা বলবো?”
-“হ্যাঁ বলো। কি বলবে?” যোগেশের মালা ধরাধরা চোখ ছলছল করছে।
সুরেশ বলে,
-” ওরা আমার পর, তাই না বাবা? তুমি, মামা বড়দা ছোড়দা, দিদিরা সাবাই আমার আপন তাই না?”
যোগেশ-এর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। গোবিন্দ বলে,
-” হ্যাঁ- তাই তো। রাধিকা-আমার বোন তোমার কে হয়?”।
হেসে সুরেশ বলে,
-” মা-তো- আমার নিজের”
বলে হাসাতে থাকে। ওর হাসি দেখে সবাই হাসে। এর পরের ঘটনা সামান্য, কিষান আবার কেশ করে কোর্টে কেশ-ওঠে। তদন্ত করে পুকুর থেকে পিস্তল পায়, গাছেও গুলি আটকে ছিল। কোর্টে সুরেশ এসে আদ্যপ্রান্ত সব বলে। খুনীদের চাপ দিয়ে জেরা করে সব কবুল করে। শেষে গুলি কোথায় মেরে ছিল সেটার প্রমান কোথায়?
তখন সুরেশের মনে পড়ে, তার রগেড় দু পাশে দুটো ক্ষতচিহ্ন আছে। তাই কোর্টে জজ সাহেবকে দেখায়। তখন সব প্রমান হয়ে গেলো, যে সুরেশ জাতিস্মর, আর ও নতুন জন্ম নিয়েছে শুধু খুনীদের ধরার জন্য।
তারপর সুরেশ আস্তে আস্তে বড় হয় মাঝে মধ্যে তারাপীঠ যায়। ওরাও আসে রায়গঞ্জে।
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
Kathak | Sourodip Roy |
Characters | Name |
---|---|
Suresh | Suman Sadhukhan |
Jogesh | Debanshu Ghosh |
Gobinda | Joydeep Lahiri |
Kisan | Surojit Mukherjee |
Lokkhi devi | Priyanka Dutta |
Rohan | Soumik Banerjee |
Thakuma | Kaberi Ghosh |
Panu Panda | Joydeep Lahiri |
Binod | Suman Sadhukhan |
Dinesh | Joydeep Lahiri |
Find us on Facebook – click here