নির্ভয়া

Views: 1

নির্ভয়া:

রাত গভীর। পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে তার আলো ছড়াচ্ছে, তবুও একটা শূন্যতা যেন আকাশটা ঢেকে রেখেছে। শহরের অলিগলিতে ভিড়ের কোলাহল নেই, সবকিছুই নিস্তব্ধ। কেবল হালকা বাতাসের ঝাপটা গায়ে লাগছে। সেই রাতেই বাড়ি ফিরছিলো ঐশী। ২৫ বছরের এক তরুণী, যিনি সদ্য তার অফিসের কাজ শেষ করে ফিরে আসছিলেন।

ঐশী ছিলো আত্মবিশ্বাসী একজন মেয়ে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে এসেছে সে। কিন্তু, সেই রাতে শহরের কোন এক অন্ধকার গলিতে ঘটে যায় এক নির্মম ঘটনা, যা বদলে দেয় ঐশীর পুরো জীবন।

ঐশীর গন্তব্য ছিলো তার বাড়ি, যেখানে তার মা অপেক্ষা করছিলো তার ফেরার। কিন্তু সেই গলিপথেই তার সাথে মুখোমুখি হয় একদল নরপিশাচের । তারা প্রথমে তার পথ আটকায়, তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। ঐশী ভয় পেলেও দৃঢ়তার সাথে তাদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, তাদের লোলুপ দৃষ্টি আর হিংস্র হাত তাকে আটকে ফেলে। ঐশী চিৎকার করে, সাহায্য চায়, কিন্তু সেই অন্ধকার গলিতে কেউ ছিলো না যে তার গলা শুনতে পাবে।

ঐশীকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হয়। তার আত্মা ভেঙে যায়, শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। সেই নরপিশাচেরা তার মানবিকতা, তার অস্তিত্ব ছিনিয়ে নেয় এবং ধীরে ধীরে সে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরে। এ যেন সাধারণ মৃত্যু নয়; কিছু নরপিশাচের হাতে এক নারী শক্তির মৃত্যু। তার নিথর দেহকে ছুড়ে ফেলে দেয় এক খোলা মাঠের কোনায়। ঐশী সেই রাতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়, কিন্তু তার উপর নির্যাতনের ইতিহাস থেকে যায় সমাজের বিবেকের উপর।

ঐশীর মা, মায়া দেবী, খবরটি পাওয়ার পর ভেঙে পড়েন। মেয়েটা তার জীবনের সবটুকু দিয়ে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য লড়েছিল, কিন্তু সমাজের কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষ তার জীবন কেড়ে নিলো। মায়া দেবী  যখন হাসপাতালে যায়, ঐশীর নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তার মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরছিল—আমরা কি আসলেই নিরাপদ? নারীরা কি এই সমাজে নিজেদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে?

প্রতিদিন আমরা মা দুর্গার পূজা করি, নারীশক্তির বন্দনা করি। কিন্তু আমাদের চারপাশে যখন একের পর এক নারী, নির্যাতনের স্বীকার হয়, তখন আমাদের সেই পূজা কি আদৌ কোন মূল্য রাখে? আমরা কি সত্যিই নারীদের সম্মান করতে শিখেছি? নাকি এই পূজা শুধুই আড়ম্বরের আর এক ধরনের প্রহসন?

ঐশীর মৃত্যু শহরের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদের ঢেউ তোলে। সংবাদমাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ একত্রিত হয়ে শোক প্রকাশ করে এবং বিচার দাবি করে। কিন্তু শুধু প্রতিবাদ করলেই কি সমাধান হবে? সমাজের মনস্তত্ত্বকে বদলানো কি এতটাই সহজ?

মেয়েরা যদি প্রতিদিন ঘর থেকে বেরিয়ে ভয়ে ভয়ে বাঁচতে বাধ্য হয়, তাহলে কীভাবে তারা নিজেদের শক্তি এবং সম্ভাবনা প্রকাশ করবে? কেন আমরা প্রতিদিন একটা নতুন ‘ঐশী’-র গল্প শুনতে বাধ্য হচ্ছি?

ঐশীর বন্ধু, নীলা, যে তার সাথে একই অফিসে কাজ করত, তার মৃত্যুতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। তিনি জানতেন ঐশী কতটা সাহসী ছিলো। নীলা বলেন, “ঐশী কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। সে সবসময় তার নিজের অধিকার নিয়ে গর্ববোধ করতো। কিন্তু আজ সেই সমাজই তাকে বাঁচতে দিল না, যেখানে আমরা নারীশক্তিকে পূজা করি।”

এই ঘটনাটি নীলার মনেও এক ধরনের ক্রোধ এবং বেদনাকে জন্ম দেয়। তিনি ঠিক করেন যে, শুধু প্রতিবাদ নয়, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু করতে হবে। কারণ ঐশীর মৃত্যু শুধু একটা ঘটনা নয়, এটা এক সামাজিক রোগের প্রতিফলন।

প্রতিবাদের মিছিল শুরু হয়েছিলো ছোট পরিসরে, কিন্তু ক্রমশ তা বড় আকার ধারণ করে। মানুষজন রাস্তায় নেমে আসে, নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন গঠিত হয়। কিন্তু মায়া দেবী, ঐশীর মা, সবকিছুর মাঝেই এক শূন্যতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। মেয়ের হত্যার বিচার কি আদৌ হবে? এই সমাজে কি কোনদিন নারীরা নিরাপদ বোধ করবে?

দুর্গাপূজার সময় সামনে এগিয়ে আসছে, শহরজুড়ে পূজার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু মায়া দেবী ভাবতে পারেন না—যে সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার, সেই সমাজে মা দুর্গার পূজা কি সত্যিই কোন অর্থ বহন করে? মা দুর্গাকে আমরা দেবী হিসেবে সম্মান করি, অথচ আমাদের জীবনের নারীদের প্রতি সেই সম্মান কেন নেই?

ঐশীর মৃত্যু শুধুমাত্র একটি কাহিনী নয়, এটি সমাজের প্রতি একটি কঠিন প্রশ্ন। পূজার আড়ম্বরের মাঝে আমরা কি সত্যিই বুঝতে পারি, নারীর প্রকৃত মর্যাদা কী হওয়া উচিত?

মায়া দেবী একদিন ঐশীর পুরানো ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বসে পড়েন। ডায়েরিটা ছিলো ঐশীর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী। ঐশী নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী কী স্বপ্ন দেখেছিল, কীভাবে সে সমাজের জন্য কিছু করতে চেয়েছিল, সবই সেখানে লেখা ছিলো। সেই ডায়েরির পাতা ওলটাতে ওলটাতে মায়া দেবী পড়লেন:

“আমি চাই, একদিন এমন একটা পৃথিবী হবে যেখানে মেয়েরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াবে, তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে কোন বাধা থাকবে না। যেখানে নারীর প্রতি কোন অবমাননা হবে না, কেউ তাদের পণ্য হিসেবে দেখবে না।”

ঐশীর এই লেখা পড়ে মায়া দেবী ভেঙে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে, ঐশী শুধু নিজের জন্য নয়, পুরো নারী সমাজের জন্যই লড়াই করতে চেয়েছিল। কিন্তু সমাজ কি তাকে সেই সুযোগ দিয়েছে? ঐশীর স্বপ্নকে পূরণ করতে তার মা কি কোন ভূমিকা রাখতে পারবে?

প্রতিবাদ আর আন্দোলন চলতেই থাকে। শহরের বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের উপর ধীরে ধীরে চাপ সৃষ্টি করে। তারা দাবি করে, এমন শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করতে হবে, যাতে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় এবং ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করার আগে কেউ হাজারবার ভাববে। নীলা সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। তিনি জানতেন যে, ঐশীর মৃত্যুর পিছনে একটা গভীর সামাজিক ব্যাধি লুকিয়ে আছে, যা শুধু আইন দিয়ে নির্মূল করা যাবে না।

এদিকে, দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। শহরের বিভিন্ন প্যান্ডেলে মায়ের প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায়  শেষের দিকে। কিন্তু এই বছর পূজা আয়োজনে এক অদ্ভুত বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। মেয়েদের উপর একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে থাকলেও, সেই একই সমাজ মা দুর্গাকে আহ্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নীলা এবং অন্যান্য প্রতিবাদকারীরা ঠিক করেন, তারা এই পূজার সময়ে একটি নতুন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, প্যান্ডেলে মা দুর্গার সামনে সঙ্গে আরও একটি প্রতীক স্থাপন করবেন—একটি শূন্য চেয়ার। এই চেয়ারটি হবে তাদের প্রতিবাদের প্রতীক। শূন্য চেয়ারটি এই বার্তা বহন করবে যে, যতদিন পর্যন্ত নারীরা সমাজে প্রকৃত সম্মান ও নিরাপত্তা না পাবে, ততদিন মা দুর্গার পূজা সম্পূর্ণ হবে না। কারণ মা দুর্গা শুধুমাত্র এক দেবী নয়, তিনি প্রতিটি নারীর প্রতীক।

পূজার দিন ঘনিয়ে আসে। শহরের বিভিন্ন প্যান্ডেলে ভিড় জমতে শুরু করে, লোকেরা মায়ের পুজোয় মেতে ওঠে। তবে এইবার মায়ের মূর্তির সামনে সেই শূন্য চেয়ার সকলের নজর কাড়ে। সংবাদমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষ সবাই এই প্রতীকের দিকে তাকিয়ে থাকে, প্রশ্ন করতে থাকে এর অর্থ কী? নীলা সংবাদমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেন,

“মা দুর্গা শুধুমাত্র একটি মূর্তি নয়, তিনি নারীর শক্তির প্রতীক। কিন্তু আমরা যদি নারীদের এই সমাজে নিরাপত্তা দিতে না পারি, যদি আমরা তাদের যথাযথ সম্মান না দিতে পারি, তাহলে মায়ের পূজোও পূর্ণ হবে না।”

এই বক্তব্য শহরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এই প্রতীকের প্রতি সমর্থন জানাতে থাকে। তবে, কিছু মানুষ এমনও ছিলো যারা নীলা এবং সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে  এই প্রতিবাদের সমালোচনা করে। তারা বলে, পূজোর সময়ে এমন রাজনীতি করা উচিত নয়। কিন্তু নীলা এবং সাধারণ মানুষ জানতো, এটা রাজনীতি নয়, এটা মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার একটি প্রচেষ্টা।

ঐশীর স্মৃতিতে গঠিত ” নারী সুরক্ষা মঞ্চ” নামে এক নতুন সংগঠন সমাজের নানা স্তরে কাজ করতে শুরু করে। নীলা ও তার দল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে পর্যন্ত নারীদের অধিকার ও আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। এই সংগঠনটি প্রতিটি নারীর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, যাতে তারা নিজেদের ক্ষমতায়িত করতে পারে এবং যে কোনো ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে।

সরকারও শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনের চাপে নতুন আইন প্রণয়ন করে। নারীদের ওপর শারিরীক নির্যাতন এবং নারীদের উপর হিংসার ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এই পরিবর্তনগুলো সমাজে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, এবং অনেকেই আশা করে যে, নারীদের প্রতি সহিংসতা ধীরে ধীরে কমবে।

নীলা এবং আপামর সাধারণ মানুষ অব্যাহতভাবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। তারা নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা, শিক্ষামূলক প্রচারাভিযান এবং আইনি সহায়তা প্রদান শুরু করে। তারা নারীদের শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দেয়, কারণ তারা বিশ্বাস করতেন, একজন শিক্ষিত নারীই নিজের জন্য এবং সমাজের জন্য লড়াই করতে সক্ষম হবে। আর সেই শূন্য চেয়ারটি সময়ের সাথে সাথে এক প্রতীকে পরিণত হয়।

কিন্তু শুধু আইন করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়? নীলা জানতেন, আসল পরিবর্তন আসবে তখনই, যখন সমাজের মনস্তত্ত্ব পাল্টাবে। শুধু শাস্তির ভয় নয়, নারীদের প্রতি সম্মান, সহানুভূতি এবং সমানাধিকারের বোধও সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্যই তিনি এবং আপামর সাধারণ মানুষ আরও জোর দিয়ে নারীদের শিক্ষা, আর্থিক স্বাধীনতা, এবং পরিবার ও সমাজের ভিতর থেকে তাদের প্রতি মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর কাজ করতে থাকেন। নীলা এবং আপামর সাধারণ মানুষের আন্দোলন জোরালো হতে থাকে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাদের সাথে যুক্ত হয় নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করার জন্য। শুধু দেশে নয় বিদেশেও এই আন্দোলনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে।

ঐশীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ ধীরে ধীরে দোষীদের আটক করতে সক্ষম হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি ওঠে। এই ঘটনা আদালতে পৌঁছে, এবং দীর্ঘ বিচারের প্রক্রিয়ার পরে ঐশীর জন্য বিচার পাওয়া যায়। অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যা সমাজে একটা শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেয়।

কিন্তু মায়া দেবী  জানতেন, এটা শুধুমাত্র একটি পদক্ষেপ। ঐশীর মৃত্যু যে ক্ষত রেখে গেছে, তা কখনও পূরণ হবে না। তিনি আরও জানতেন, এই সমাজে হাজার হাজার মেয়ে এখনো প্রতিদিন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এবং তাদের কণ্ঠ কেউ শুনতে পাচ্ছে না।

কিন্তু মায়াদেবী , ঐশীর মা, সেই শূন্যতাটাকে আর পূরণ করতে পারেননি। তিনি প্রতিদিন তার মেয়ের স্মৃতিতে ডুবে থাকতেন। তবে, তিনি একটি কথা বিশ্বাস করতেন—ঐশী হয়তো শারীরিকভাবে আর নেই, কিন্তু তার লড়াই বেঁচে আছে। সমাজের প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি নারীর মাঝে ঐশীর আত্মা বাস করে, এবং সেই আত্মা তাদের নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করবে। একদিন সমাজে নারীরা সত্যিই নিরাপদ হবে, সেদিন পূজোর প্রতিটি প্রদীপ সত্যিকারের আলো ছড়াবে।

মায়াদেবী  প্রতিদিন সকালে ঐশীর ছবির সামনে বসে aপ্রার্থনা করতেন। তার মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতো—কেন এমন হলো? সমাজ কেন মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ? যেই একই সমাজে প্রতিদিন মা দুর্গার পূজা হয়, যেখানে নারীদের সম্মান দেওয়া হয় বলে আমরা গর্ববোধ করি। কিন্তু বাস্তবে সেই নারীরাই প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্বীকার হয়, তারা কতটা নিরাপদ?

মায়া দেবী মেয়ের জন্য বিচার পাওয়ার পরও যেন সেই শান্তিটা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একদিকে, তিনি গর্বিত ছিলেন যে, ঐশীর মৃত্যুর পর সমাজে এত বড় পরিবর্তন আসছে, কিন্তু অন্যদিকে মায়ের হৃদয়ে তার মেয়ের শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ হচ্ছিল না।

কয়েক বছর পর, শহরে দুর্গাপূজার আয়োজন আরও বড় হয়। তবে এবার পরিস্থিতি বদলে গেছে। নারীদের সুরক্ষার জন্য সরকার এবং প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া ব্যবস্থা সফল হচ্ছে। সারা শহরে অনেক জায়গায় নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেয়েরা আগের চেয়ে সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে, তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে।

মায়াদেবীর কাছে জীবনের অর্থ যেন একটু একটু করে ফিরে আসছে। তিনি বুঝতে পারেন, তার মেয়ের মৃত্যু নিছকই একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ছিল না, বরং তা সমাজের চেতনার পরিবর্তনের জন্য একটি সেতু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মায়া দেবী  একদিন মায়ের প্রতিমার সামনে বসে ঐশীর ছবি হাতে নিয়ে মৃদু হেসে বলেন,

“তুই তো জানিস নির্ভয়া, তোর মৃত্যুসমাজকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। তোর মতো মেয়েরা কখনো মরে না, তারা তাদের লড়াইয়ে বেঁচে থাকে। তুই আজ এই সমাজের প্রতিটি মেয়ের মধ্যে বেঁচে আছিস। আর তুই যেদিন বলেছিলি, নারীরা একদিন ভয় ছাড়াই বাঁচবে, আমি জানি, সেই দিনটা আসবেই।”

ঐশীর স্মৃতির সাথে মায়াদেবীর এই কথোপকথন যেন সমাজের প্রতি তার এক চূড়ান্ত বার্তা—নারীর ক্ষমতায়ন, সম্মান এবং সুরক্ষা শুধু প্রয়োজন নয়, এটা সমাজের ভিত্তি।

মা দুর্গার পূজো তখনই সার্থক হবে, যেদিন প্রতিটি নারী নিজের অধিকার নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে। সেই নতুন ভোরের প্রতীক্ষায়, মায়া, নীলা, এবং হাজার হাজার নারী, সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।   

আমরা নারীদের পূজা করি, কিন্তু তাদের জীবনে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হই। এই গল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, পূজার আড়ম্বর নয়, প্রকৃত নারীর সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠাই সমাজের আসল পূজো। পূজা তখনই পূর্ণ হবে, যখন আমরা নারীদের প্রকৃত মর্যাদা দিতে শিখব।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterJoydeep Lahiri
Intro & EndingOlivia Das
NarratorSouradip Roy
CharactersName
NilaSusmita Ghosh Das
oishiOlivia Das
Maya DeviOlivia Das

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *