অভাগী

Views: 0

অভাগী:

হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে মহেশ মাইতি ও তাঁর স্ত্রী যশোধা মাইতির বাড়ী। বাড়ী না বলে ঘর বললেই ভাল। ছোট ছোট দুটো ঘর। রকের একপাশে একটু ঘিরে রান্নার ব্যবস্থা। একটু উঠোন। ঘরের চারি দিকে রাংচিতে গাছের বেড়া। বিবাহ হয়েছে অনেক দিন। প্রায় দশ/এগারো বছর হয়ে গেল। কোনো সন্তানাদি হয়নি। উপোষ, বারব্রত, মাদুলি-কবজ,অনেক এ মন্দির সে মন্দিরে মানত করেছে। এখনো করছে। 

মহেশ বাবু হুগলী মিলে কাজ করেন। আর যশোধা দেবীর একটা হাত সেলাই মেশিন আছে। তাতেই ছোট ছোট বাচ্চাদের জামা, প্যান্ট, ইজের তৈরী করে সংসার চালান। মোটামুটি সংসার চলে যায়।

হঠাৎ এইবার ঈশ্বর দয়া করলেন। যশোধা দেবীর কোল আলো করে এক পুত্র সন্তান এল। আনন্দ-এ ভরে গেলেন স্বামী স্ত্রী।
কিন্তু পাড়াপড়সীরা এসে দুঃখ প্রকাশ করে বলে – হ্যাঁ, খুব সুন্দর ছেলে হয়েছে কিন্তু একটা চোখ নেই তো বোজা। তার মানে ছেলে কানা।

অনেক দুঃখ ক্ষোভে সন্তানকে বুকে চেপে ধরেন যশোধা। হোক কানা তবুও আমার সন্তান। মহেশবাবুও আড়লে চোখের জল ফেলেন। এই ভাবে কিছু দিন যায়। যশোধা দেবী ভাবেন কি করা যায়। ভাবতে ভাবতে একদিন স্বামী স্ত্রীতে ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন। 

ডাক্তার দেখে পরীক্ষা করে বললেন, – “এখন খুব ছোট তো কিছু করা যাবে না। দশ বছরের হলে, একটা অপারেশন করতে হবে। আর একটা চোখ চাই। কেউ যদি দেয় তো ভাল নইলে কিনতে হবে। সে অনেক খরচ।”

চলে আসেন স্বামী স্ত্রী। তাই তো কি হবে? অনেক ভেবে চিনতে, দুজনাই টাকা জমাতে লাগলেন। খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্ট করে টাকা জমাতে লাগলেন। এই ভাবে দশ বছরের হল ছেলে। স্কুলে যায়। খেলতে যায় মাঠে, অন্য ছেলেরা কানা বলে রাগায়। বাড়িতে এসে ছেলে কাঁদে, বলে বাবা মাকে। শেষে যশোধা দেবী আর মহেশ বাবু আবার গেলেন ডাক্তারের কাছে। 

ডাক্তারকে বললেন, যশোধা দেবী – ‘‘ডাক্তার বাবু আমার বয়স হয়েছে। একটা চোখই যথেষ্ট। আমার একটা চোখ আমার খোকাকে দিন। ওর এখনো সারা জীবন পড়ে আছে।‘‘

ডাক্তার বাবু তাই করলেন। মায়ের একটা চোখ তাঁর খোকাকে দিলেন। খোকা চোখ পেলো আর মা কানা হয়ে গেল। মা নিজেই ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আহা কি সুন্দর লাগছে ছেলে, যেন রাজপুত্তুর। নিজেই আবার তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেন। পাছে নজর লেগে যায়। যাই হোক ভালভাবেই দুবছর কেটে গেল। যশোধাদেবীর একটু অসুবিধা হত প্রথম প্রথম এখন অভ্যোস হয়ে গেছে। হঠাৎ একদিন মহেশ বাবু খুব জ্বর নিয়ে মিল থেকে ফিরলেন। সঙ্গে সঙ্গে শয্যা নিলেন। এক সপ্তাহ ডাক্তার দেখিয়েও সে জ্বর আর সারলো না। মারা গেলেন। আকাশ ভেঙ্গে পড়ে যশোধা দেবীর মাথায়। একি হল? ঈশ্বর একি পরীক্ষা নিচ্ছেন তার? অতি দুঃখেও ভেঙ্গে পড়লেন না তিনি। ছেলের মুখের দিকে চেয়ে সব দুঃখ কষ্ট সহ্য করলেন। 

পরের বাড়ি বাসন মেজে, রান্না করে। সারাদিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটে আবার অনেক রাত পর্যন্ত্য সেলাই করে ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ক্রমে ক্রমে ছেলে স্কুল ছেড়ে কলেজ-এ গেল। কলেজ শেষ করে কলকাতায় মেডিকেল কলেজে গেল ডাক্তারী পড়ার জন্য।গাঁয়ে মা একা রইল। কলকাতা থেকে ছেলে চিঠি দেয়। মা তাই নিয়ে সবাইকে দেখায়, পাড়ায়। আর ভাবেন ছেলে আমার বড় ডাক্তার হবে। বাড়ি কিনবে। আমায় নিয়ে যাবে। তারপর আমার চোখটা ভাল করে দেবে। নতুন চোখ বসাবো আবার আমি দুচোখ ভরে আমার খোকাকে দেখবো।

তারপর একদিন ছেলের চিঠি এল, সে ডাক্তারী পাস করেছে। এবার অল্প অল্প রোজগার করছে। মা আনন্দে আত্মহারা। মা আর পরের বাড়ি বাসন মাজে না। রান্নাও করে না। শুধু সেলাই করে। 

সবাই বলে – “তোমার রোজগার কমালে কেন? শুধু সেলাই করে সংসার চলে?”

 যশোধা দেবী বলেন – ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ অত রোজগার করে কি হবে? আমার খোকা ডাক্তার হয়েছে। এবার তোমরা দেখ, ছেলে আমায় নিয়ে যাবে ওর কাছে। আর আমায় কাজ করতেই দেবে না। বলবে মা, তোমায় কাজ করতে হবে না। আমি তো আছি। তুমি এবার বিশ্রাম নাও।”

ক্রমশ দিন যায়। মা ভাবে এবার ছেলে একবার আসবে। দেখা করে বলবে, “মা তুমি ভাল আছো?”

নাঃ ছেলে আসে না। অনেক দিন পর একটা চিঠি এল মা, আমি হাসপাতালে চাকরী পেয়েছি। এবার টাকা জমিয়ে বাড়ি করবো। মা আনন্দে ডগমগ হয়ে যায়। এই তো ছেলে এবার ভাল রোজগার করছে। বাড়ি করবে। তারপর আমায় নিয়ে যাবে। এখন তো খুব ব্যস্ত।। তাই আসতে পারছে না।

দিন যায়, দিন যায়, বছর ঘুরে গেল। হঠাৎ একদিন চিঠি আসে। মা, আমি বিয়ে করেছি। খুব বড়লোকের মেয়ে। আমায় একটা বাড়ি যৌতুক দিয়েছে। আমরা সেখানে আছি।

মার, আনন্দে দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আমার ছেলে বিয়ে করেছে। বৌমা এনেছে। এবার নিশ্চই একদিন বৌমাকে নিয়ে আসবে। বৌমা এসে আমায় প্রণাম করবে। কি দেবো! অনেক কষ্টে পয়সা জমিয়ে ছেলের জন্য একটা আংটি করিয়ে রেখে ছিল। সেটাই দেবো। আমার বৌমা নিশ্চই খুব সুন্দর হবে। এখানে আসলে সবাই অবাক হয়ে যাবে।

আবার দেড় বছর পর চিঠি এল। মা, আমার ছেলে হয়েছে। তোমার নাতি। খুব সুন্দর হয়েছে। ছেলের নাম লেটার প্যাড-এ  লেখা। মা হাউ হাই করে কাঁদে। ছেলে হয়েছে। আমার খোকার। আমার নাতি হয়েছে। কত সাধ ছিল আমি দেখে শুনে ছেলের বিয়ে দেবো। নাতিকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো। নাতিকে জড়িয়ে আদর করবো। কবে আমার ছেলে, বৌমা নাতিকে নিয়ে আসবে। কয়েক মাস গড়িয়ে যায়। বৌ, ছেলে, নাতি কেউ এল না। তখন যশোধা দেবী ভাবেন আমিই যাবো কলকাতায়। আমি নিজে গিয়ে নাতিকে দেখবো। যে আংটিটা বৌমাকে দেবো ভেবে ছিলাম। সেই আংটিটা নাতিকে দেবো। যা জমানো পয়সা করি ছিল সব নিয়ে যশোধা দেবী বেরোন বাড়ি থেকে।
সবাই বলে, ‘‘তোমার বয়স হয়েছে। ভাল করে চলতে ফিরতে পারো না। একটা চোখ, তাও ঝাপসা দেখ। যেতে পারবে?

– ‘‘খুব পারবো, আমাকে তো যেতেই হবে। না হলে নাতিকে দেখবো কি করে।’’

চিঠি দিতো ছেলে ওর নিজের নামে লেটার প্যাডে। যশোধা দেবী একটা চিঠি নিয়ে একদিন রওনা হলেন, কলকাতার উদ্দেশ্যে। লোকজনদের ধরে জিজ্ঞাসা করে ট্রেনে চেপে হাওড়া এলেন। সেখানেও চিঠি দেখিয়ে বাসে চেপে টালিগঞ্জ এলেন।
একটা টোটোয় চেপে ড্রাইভারকে বললেন, – ‘‘আমায় এই ঠিকানায় নিয়ে চলো না বাবা।’’ যথা  সময়ে টোটো ড্রাইভার ঠিক ঠিকানায় নিয়ে গিয়ে বলে, – ‘‘ঠাকুমা, এই ডাক্তার বাবুর বাড়ি। তুমি ডাক্তার দেখাবে?
যশোধা দেবী বলেন, – ‘‘না না বাবা। আমার ছেলেই ডাক্তার। তাকে দেখতে এসেছি। নাতি হয়েছে কিনা, তাই দেখতে এসেছি।’’
ড্রাইভার দেখে যশোধাদেবী পরনের কাপড় জামা। তালি দেওয়া জামা তালি দেওয়া কাপড়। মাথায় চুল রুক্ষ হাওয়ায় উড়ছে। কতদিন তেল পড়ে নি।

ড্রাইভারকে টোটোর ভাড়া দিয়ে বাড়ির গেটে গিয়ে দাঁড়ান। দুজন সিকিউরিটি গার্ড সামনে আসে। দেখে একটা মলিন বালা পরা বুড়ি। বগলে একটা পুঁটুলী।
ডিজ্ঞাসা করে, – ‘‘কি বুড়িমা ডাক্তার দেখাতে এসেছো। এ ডাক্তার বাবুর অনেক ভিজিট। টাকা আছে?’’

যশোধা দেবী হেসে বলেন, – ‘‘না বাবারা, ডাক্তার দেখাতে আসিনি।’’

– ‘‘তবে? ভিক্ষা করতে এসেছো? এখানে ভিক্ষা মিলবে না।’’

– ‘‘না না বাবারা এই দেখো। আমার ছেলের চিঠি তোমাদের ডাক্তারী আমার ছেলে। দেখা করতে এসেছি। আমার নাতি হয়েছে না, তাই।’’

সিকিউরিটি গার্ডরা দেখে চিঠি। বলে – ‘‘হ্যাঁ সত্যি তো ডাক্তার বাবুর চিঠি। ঠিক আছে ঠাকুমা আপনি ভিতরে যান।’’
ছেড়ে দেয় গেট। যশোধা দেবী আস্তে আস্তে ভিতরে প্রবেশ করেন।

সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে দেখেন। একটা বড় দালানের সামনে, একটা দোলনায় একটা শিশু শুয়ে খেলছে। যশোধা দেবী বুঝতে পারেন। ঐ তাঁর নাতি। পুঁটলি খুলে আংটিটা বার করে ছুটে গিয়ে হাতে দেন। শিশুটি হাতে কিছু পেয়ে মুঠো করে নেয়। যশোধাদেবীর মুখের দিকে চেয়ে হাসে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নাতিকে কোলে তুলে নেন। 

বুকে চেপে ধরে আদর করেন। – ‘‘আমার সোনা। আমার গোপাল।”

 তাঁর গলার আওয়াজে এক মহিলা ছুটে আসে, – ‘‘কে, কে’’ ছোঁ মেরে যশোধা দেবীর কাছ থেকে শিশুপুত্রকে ছিনিয়ে নেন। 

– ‘‘কে তুমি, কোথা থেকে এলে’’। তারপর একটু চেঁচিয়ে ডাকে, – ‘কি গো শুনছো, দেখো কোথা থেকে এক ভিক্ষারী এসে বাবুকে জড়িয়ে ধরেছে।’’ সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে এক ভদ্রলোক ছুটে এসে দাঁড়ায়। 

– ‘‘বার করে দাও।’’ হঠাৎ চোখ পড়তেই যশোধা দেবীর ওপর থতমত খেয়ে যায়। 

মহিলা বলে, -‘‘দেখো দেখো, গার্ড রেখেছো, তাদের কাজ দেখো।’’

 যশোধা দেবী‌ বলেন, – ‘‘না গা বৌমা আমি ভিক্ষারী নই। তোমার স্বামীর মা, তোমার শাশুড়ী।’’

– ‘‘চুপ করুন।” চেঁচিয়ে ওঠে মহিলা। ‘‘আমার স্বামীর মা নেই। উনি বলেছেন, অনেক দিন আগে মারা গেছেন। কি গো তুমি কিছু বলছো না কেন?’’

যশোধা দেবী কাতর স্বরে বলেন, – ‘‘কি রে খোকা, আমি তোর মা, আমায চিনতে পারছিস না।’’

খোকাও চেঁচিয়ে বলে, – ‘‘না না চিনতে পারছি না। যাও তো তুমি… যাও ।’’

ধক্ করে ওঠে বুকের ভেতর, মাথাটা ঘুরে যায় যশোধা দেবীর। বুকের মধ্যে টন্ টন্ করেছে। বুকটা চেপে ধরে আস্তে আস্তে নীচে নেবে আসেন।খুব আস্তে আস্তে হেঁটে গেটের দিকে এগোতে এগোতে ধপ্ করে রাস্তার ওপর বসে পরেন। 

একটা গার্ড ছুটে আসে। বলে – ‘‘কি হলো ঠাকুমা?’’

যশোধা দেবী আস্তে আস্তে বলেন, – ‘‘আমায় একটু জল দিতে পারো?’’

– ‘‘আচ্ছা আচ্ছা আনছি।’’ বলে সিকিউরিটি গার্ডটা ছুটে যায় জল আনতে। 

যশোধা দেবী বিড়্ বিড়্ করে বলেন, – ‘‘হে ঈশ্বর এত আঘাত দিয়েছো এ জীবনে। এতটা কষ্ট হয়নি। আজ এই আঘাতে কেন বুকটা ফেটে গেল। বলতে পারো ?

অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। অনেক দুঃখ সহ্য করেছি কিন্তু এই দুঃখটা এই কষ্টটা কেন সহ্য করতে পারছি না। তুমি যেন ওদের পাপ দিও না। কষ্ট দিও না। ওরা কিছু জনে না। ওদের ক্ষমা করে দিও।”

এমন সময় গার্ডটা জল এনে দিল। হাতে ধরতে গিয়েও পারলেন না যশোধা দেবী। বললেন, – ‘‘আমায় খাইয়ে দাও তো বাবা।’’ 

গার্ড জলটা খাইয়ে দিল। অর্ধেক খেয়ে যশোধা দেবী বললেন, ‘‘তোমার কল্যান হোক। তোমার মা আছেন?’’

গার্ড বলেন, – ‘‘হ্যাঁ, দেশে আছে।’’

– ‘‘তাঁকে দেখো।” বলেই যশোধা দেবী রাস্তাতেই শুয়ে পড়লেন।
সিকিউরিটি গার্ডটা ভয়পেয়ে ছুটল ডাক্তারের কাছে। বলল, – ‘‘ডাক্তার বাবু আপনার মা ওখানে রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন। আপনি শিগগিরি আসুন।’’

ঠিক সময়ে মহিলার চোখ পড়ে ছেলে মুটির মধ্যে কি যেন আছে | দোলায় একটা ডাক্তারের লেখা চিঠি পরে। তাড়াতাড়ি মুটি খুলে দেখে সোনার আংটি। চিঠিটা পড়ে দেখে বলে – ‘‘এ কি সোনা। স্বামীর/তোমার চিঠি নিশ্চই ভিক্ষারী বুড়ি দিয়েছে।’’

ডাক্তার গার্ডের কথায় ছুটে নেমে আসে। যেখানে যশোধা দেবী পড়ে ছিলেন সেখানে গিয়ে দেখে হাত ধরে না সব শেষ। ডুগরে কেঁদে ওঠে ডাক্তার।

পিছনে ছেলে কোলে নিয়ে স্ত্রী এসে দাঁড়িছে। বলে, – ‘‘তোমার মাকে তুমি এ রকম ভাবে অবহেলা করেছো। নিজের মাকে চিনতে চাও নি। ছিঃ ছিঃ” কেঁদে ওঠে মহিলা।
কাঁদতে কাঁদতে বলে, – ‘‘আমার ছেলেও যদি তোমার ছায়া পায় আমি আগেই সুইসাইড্ করবো।’’ডাক্তার বসে যশোধা দেবীর হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, – ‘‘আমায় তুমি ক্ষমা করো মা। আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করো – ক্ষমা করো।”

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterKaberi Ghosh
Intro & EndingOlivia Das
KathakDebanshu Ghosh
CharactersName
ডাক্তারJoydeep Lahiri
যশোধা দেবীKaberi Ghosh
Othre’s CharactersSusumita Ghosh Das, Soumik Bannerjee, Joydeep Lahiri

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *