Project ECHO

Views: 0

Project ECHO:

আমি জানি আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। কিন্তু এই কথা গুলো আমাকে বলতেই হবে। হয়তো এটাই আমার শেষ সুযোগ।

গত তিন মাস ধরে আমি একটা অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার ঘরের জিনিসপত্রের অবস্থান পাল্টে গেছে। প্রথমদিকে ভেবেছিলাম, হয়তো আমি নিজেই রাতে ঘুমের ঘোরে এগুলো করছি। কিন্তু তারপর থেকে শুরু হলো আরও অদ্ভুত ঘটনার পরম্পরা।

আমি একা থাকি। বাবা-মা দুজনেই মারা গেছেন দুই বছর আগে একটা দুর্ঘটনায়। সেই থেকে এই ফ্ল্যাটটা আমার একার। প্রথম কয়েকমাস খুব কষ্ট হয়েছিল একা থাকতে। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। আমার চাকরি করি একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে। সকাল নটায় অফিস, রাত আটটায় ফিরি। এই ছিল আমার নিত্যদিনের রুটিন।

কিন্তু সেদিন থেকে সব বদলে গেল। 

সেদিন রাতে অফিস থেকে ফিরে দেখি আমার ল্যাপটপ খোলা অবস্থায় টেবিলে রাখা। অথচ আমি সকালে অফিস যাওয়ার আগে ল্যাপটপটা বন্ধ করে রেখেছিলাম। শুধু তাই নয়, স্ক্রিনে একটা ওয়ার্ড ফাইল খোলা। ফাইলে লেখা – “তুমি একা নও।”

প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ প্র্যাংক করছে। কিন্তু আমার ফ্ল্যাটের চাবি শুধু আমার কাছেই আছে। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, দিনের বেলায় কেউ আসেনি। সিসি টিভি ফুটেজ চেক করে দেখলাম, কেউ ঢোকেনি।

তারপর থেকে প্রতিদিন কিছু না কিছু ঘটতে লাগলো। কখনো আমার বইয়ের আলমারির বই উল্টোপাল্টা করা থাকে। কখনো রান্নাঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো। আর প্রতিদিন রাতে ল্যাপটপে নতুন নতুন মেসেজ। “আমি তোমাকে দেখতে পাই।” “তুমি যখন ঘুমাও, আমি জেগে থাকি।” “আমি সবসময় তোমার সাথে আছি।”

আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। রাতে ঘুম আসতো না। অফিসে মন বসতো না। সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে গেলাম। উনি বললেন এটা ট্রমার প্রভাব। বাবা-মার মৃত্যুর শক থেকে এই ধরনের হ্যালুসিনেশন হতে পারে। ওষুধ দিলেন।

কিন্তু ওষুধ খাওয়ার পরও কিছু বদলালও না। বরং আরও খারাপ হতে লাগলো। এবার শুধু মেসেজ নয়, আমার ল্যাপটপে প্রতিদিন নতুন নতুন ছবি আসতে লাগলো। আমি যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখন তোলা ছবি। আমি যখন রান্না করি, তখন তোলা ছবি।

আমি ভয়ে অস্থির হয়ে পড়লাম। পুলিশে গেলাম। ওরা এসে ফ্ল্যাট চেক করলো। কিছু পেলো না। বললো,
হয়তো কেউ আমার ল্যাপটপ হ্যাক করেছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিটে রিপোর্ট করতে বললো।

কিন্তু আমি জানি এটা হ্যাকিং নয়। কারণ এখন আমি তাকে দেখতে পাই। প্রথমে শুধু চোখের কোণে ছায়ার মতো দেখতাম। এখন স্পষ্ট দেখি। সে ঠিক আমার মতোই দেখতে। একই চেহারা, একই চুল, একই পোশাক। শুধু তার চোখ দুটো কালো। সম্পূর্ণ কালো।

সে আমার পাশে বসে থাকে। আমার সাথে কথা বলে। বলে, ও আমার অতীত। বলে, ও আমার ভবিষ্যৎ। বলে, ও আমি নিজেই।

আমি জানি না এটা সত্যি কি না। আমি জানি না আমি পাগল হয়ে গেছি কি না। কিন্তু আমি জানি, এই মুহূর্তে সে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ল্যাপটপে যা লিখছি, তা পড়ছে। আর হাসছে।

কাল রাতে সে আমাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছে। বলেছে, আমরা যদি একসাথে থাকতে চাই, তাহলে আমাকে ওর সাথে যেতে হবে। কোথায় যেতে হবে, তা বলেনি। শুধু বলেছে, সেখানে আর কোনো একাকীত্ব থাকবে না।

আমি জানি না আমি কি করবো। আমি জানি না এই গল্প কেউ পড়বে কি না। আমি শুধু জানি, আজ রাতে আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হয় আমি একা থাকবো, নয়তো…

আচ্ছা, ও ডাকছে। যাই।”

এরপরের দিন ফ্ল্যাটের বাকি বাসিন্দারা বিখ্যাত গোয়েন্দা শুভ্র ব্যানার্জীকে খবর দেয়। শুভ্র এসে ল্যাপটপ এর মধ্যে ওয়ার্ড ফাইলটা খোলা অবস্থাতেই দেখে ফ্ল্যাটের বাকি সবার থেকে জানতে পারেন, ওই ফ্ল্যাটের মালিক গত তিন মাস ধরে নিখোঁজ। পুলিশ তদন্ত করে কিছু পায়নি। শুধু তার ল্যাপটপে এই ফাইলটা পাওয়া গেছে। আর ফ্ল্যাটের দেয়ালে একটা লেখা – “এখন আমরা আর একা নই।”

“এটা অসম্ভব,” শুভ্র ব্যানার্জী ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রেখে বললেন। সামনে খোলা ফাইলটা বারবার পড়ছিলেন তিনি। বিগত পনেরো বছরের গোয়েন্দাগিরিতে এমন কেস তিনি কখনো দেখেননি।

“স্যার, আমরা সব চেক করেছি,” পাশে দাঁড়ানো ইন্সপেক্টর রায় বললেন। “ফ্ল্যাটের দরজায় কোনো ভাঙ্গচুরের চিহ্ন নেই। সিসি টিভি ফুটেজে কাউকে ঢুকতে দেখা যায়নি। অথচ লোকটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।”

শুভ্র উঠে দাঁড়ালেন। ফ্ল্যাটটার চারদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। সব কিছু এখনো ঠিক তেমনি আছে যেমনটা ছিল। টেবিলে খোলা ল্যাপটপ, পাশে একটা অর্ধেক খাওয়া স্যান্ডউইচ, কফির কাপে এখনো কিছুটা কফি।

“ইন্সপেক্টর, লোকটার পরিবার-টরিবার কেউ…?”

“না স্যার। বাবা-মা দুজনেই মারা গেছেন দুই বছর আগে। ও একাই থাকত। চাকরি করত একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে।”

শুভ্র আবার ল্যাপটপের দিকে তাকালেন। স্ক্রিনে খোলা ফাইলটা এখনো ঝকঝক করছে। “তুমি একা নও – এই বার্তাটা কি তাহলে সত্যিই কেউ পাঠিয়েছিল? নাকি…” 

হঠাৎ তাঁর চোখ গেল ল্যাপটপের ক্যামেরার দিকে। একটু ঝুঁকে দেখলেন। তারপর মুচকি হেসে বললেন, “ইন্টারেস্টিং।”

“কী হল স্যার?”

“ক্যামেরাটা দেখছ? এর উপরে একটা ছোট্ট টেপ লাগানো। অনেকেই প্রাইভেসির জন্য এমন করে। কিন্তু এই টেপটা… একটু অন্যরকম।”

শুভ্র টেপটা খুলে ফেললেন। তারপর একটা ছোট্ট ম্যাগনিফাইং গ্লাস বের করে দেখলেন।

“জাস্ট যা ভেবেছিলাম। এটা সাধারণ টেপ নয়। এর মধ্যে একটা মাইক্রো ট্রান্সমিটার লাগানো।”

ইন্সপেক্টর রায়ের চোখ বড় হয়ে গেল। “মানে কেউ ওকে স্পাই করছিল?”

“শুধু স্পাই নয়,” শুভ্র ল্যাপটপটা খুলে দেখতে লাগলেন। “এই ল্যাপটপ হ্যাক করা হয়েছিল। কেউ রিমোটলি এর কন্ট্রোল নিয়েছিল। ক্যামেরা, মাইক সব অ্যাক্সেস করেছিল।”

“কিন্তু কে করবে এমন? আর কেন?”

শুভ্র এবার ফ্ল্যাটের দেয়ালের দিকে এগিয়ে গেলেন। যেখানে লেখা ছিল “এখন আমরা আর একা নই।” লেখাটার কাছে গিয়ে তিনি একটা ছোট্ট ব্ল্যাক লাইট টর্চ জ্বাললেন।

“দেখুন,” তিনি ইন্সপেক্টরকে ডাকলেন।

টর্চের আলোয় দেয়ালে আরও কিছু লেখা ফুটে উঠল। অদৃশ্য কালিতে লেখা – “Project Echo – Subject 23 – Test Successful।”

“প্রজেক্ট ইকো?” ইন্সপেক্টর অবাক।

“হ্যাঁ,” শুভ্র গম্ভীর হলেন। “আমি এই প্রজেক্ট সম্পর্কে আগে শুনেছি। এটা একটা সিক্রেট সাইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট। মানুষের মনে কৃত্রিম ভয় ও বিভ্রম সৃষ্টি করে তাদের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেওয়া।”

“কিন্তু কারা করে এসব?”

“একটা গোপন সংগঠন। তারা বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে। বিশেষ করে যারা একা থাকে, যাদের কেউ নেই। প্রথমে তাদের ল্যাপটপ হ্যাক করে। তারপর ধীরে ধীরে নানা ভাবে ভয় দেখায়। শেষে তাদের নিয়ে যায়…”

“নিয়ে যায়? কোথায়?”

“সেটাই তো আসল রহস্য,” শুভ্র জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। “এখন পর্যন্ত তেইশজন লোক এভাবে নিখোঁজ হয়েছে। কেউ আর ফেরেনি।”

ইন্সপেক্টর রায় চুপ করে রইলেন। শুভ্র আবার বললেন, “কিন্তু এবার তারা ভুল করেছে। প্রথমবার ভুল করেছে।”

“কী ভুল?”

“ওই দেয়ালের লেখাটা। ওটা ওদের সিগনেচার। এর আগে কখনো ওটা রেখে যায়নি। এবার রেখে গেছে। আর এই ভুল থেকেই আমরা ওদের খুঁজে বের করব।”

শুভ্র ল্যাপটপটা নিয়ে বসলেন। “এই ট্রান্সমিটারের সিগন্যাল ট্রেস করা যাবে। আর ল্যাপটপের লগ থেকে হ্যাকারের আইপি অ্যাড্রেস পাওয়া যাবে। ইন্সপেক্টর, আপনি সাইবার সেলকে খবর দিন।”

পরের দুই সপ্তাহ ধরে শুভ্র দিনরাত এই কেসে কাজ করলেন। ট্রান্সমিটারের সিগন্যাল তাকে নিয়ে গেল শহরের প্রান্তে একটা পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরির দিকে। সেখানে গিয়ে তিনি আরও অনেক প্রমাণ পেলেন। পুরনো কম্পিউটার, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট, আর অনেক ফাইল। 

কিন্তু সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার ছিল বেসমেন্টে। সেখানে ছিল একটা গোপন ল্যাবরেটরি। আর সেখানেই মিলল সব হারিয়ে যাওয়া লোকেদের হদিস।

প্রজেক্ট ইকো ছিল একটা মানবিক পরীক্ষার প্রজেক্ট। একা থাকা মানুষদের উপর মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা চালানো হত। তাদের মস্তিষ্কে নানা ধরনের কৃত্রিম সিগন্যাল পাঠিয়ে বিভ্রম সৃষ্টি করা হত। তারপর তাদের অজ্ঞান করে এই ল্যাবে নিয়ে আসা হত।

সবাইকে উদ্ধার করা গেল। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রজেক্টের পিছনে যারা ছিল, তাদের বেশিরভাগই ধরা পড়ল। কিন্তু মূল মাস্টারমাইন্ড পালিয়ে গেল।

শুভ্র জানতেন, এটা শেষ নয়। প্রজেক্ট ইকো হয়তো বন্ধ হয়ে গেল, কিন্তু এর মতো আরও অনেক প্রজেক্ট চলছে। আর সেগুলো খুঁজে বের করাই তার পরবর্তী লক্ষ্য।

ফ্ল্যাটের দেয়ালে লেখা সেই বার্তাটা এখনো আছে – “এখন আমরা আর একা নই।” কিন্তু এখন এর অর্থ অনেক গভীর। এটা শুধু একজন একা মানুষের ভয় নয়, এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত। একটা এমন ষড়যন্ত্র, যা এখনো শেষ হয়নি।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterOlivia Das
Intro & EndingDebanshu Ghosh
KathakDebanshu Ghosh
CharactersName
SubhroJoydeep Lahiri
InspectorSumit Bari

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *