প্রথম দেখা

Views: 1
প্রথম দেখা:
কলকাতার সেই বর্ষার সন্ধ্যাটা আজও অনন্যার মনে গাঁথা হয়ে আছে। ট্রাম ডিপোর সামনে দাঁড়িয়ে ছাতা মাথায় বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিল সে। হঠাৎ করেই একটা মোটরসাইকেল এসে থামলো তার সামনে। চালক ছেলেটি নামলো বাইক থেকে।
“আপনি কি যাবেন? আমি নিয়ে যেতে পারি,” ছেলেটি বললো।
অনন্যা প্রথমে ইতস্তত করলো। কিন্তু ছেলেটির চোখে এমন একটা আন্তরিকতা ছিল যে সে রাজি হয়ে গেল।
সেদিন থেকে শুরু। অভিজিৎ আর অনন্যার গল্প। প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার পথে দেখা। কখনো
চা’য়ের দোকানে আড্ডা, কখনো বা পার্কে বসে গল্প। অভিজিৎ ছিল একজন গবেষক, আর অনন্যা ছিল সাহিত্যের ছাত্রী।
দুজনের রুচি, পছন্দ-অপছন্দ সব কিছুই ছিল আলাদা। কিন্তু তবুও কেমন যেন একটা অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়ে গেল দুজনের মন। অভিজিৎ যখন তার গবেষণার গল্প বলতো, অনন্যা মুগ্ধ হয়ে শুনতো। আর অনন্যা যখন রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করতো, অভিজিৎ হারিয়ে যেত সেই শব্দের জাদুতে।
কিন্তু কোনোদিন “ভালোবাসি” শব্দটা উচ্চারণ করেনি কেউ। দুজনেই জানতো, কিন্তু বলার প্রয়োজন মনে করেনি। তাদের নীরব ভালোবাসা ছিল অনেক গভীর, অনেক সুন্দর।
একদিন অভিজিৎ বললো, “জানো অনন্যা, আমার মনে হয় ভালোবাসা হলো ,যখন দুজন মানুষ একসাথে নীরবে বসে থাকতে পারে, কথা না বলেও।”
অনন্যা হেসে বললো, “আর আমার মনে হয় ,ভালোবাসা হলো যখন দুজন মানুষ,একে অপরের ভিতর নিজেকে খুঁজে পায়।”
সেদিন ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। কলকাতার রাস্তায় লাল গোলাপের মেলা। কিন্তু তারা দুজন বসে ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনের ঘাসে। চারপাশে ভালোবাসার উৎসব, আর তারা দুজন নীরবে হাত ধরে বসে।
হঠাৎ অভিজিৎ একটা ছোট্ট প্যাকেট বের করলো। খুলতেই বেরিয়ে এলো একটা পুরনো বই – রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রা’। তার ভিতরে একটি শুকনো পাতা, যেটা সেদিনের সেই বৃষ্টির সন্ধ্যায় কুড়িয়ে পেয়েছিল।
অনন্যার চোখে জল এসে গেল। সে বুঝতে পারলো, এই ভালোবাসা চিরকাল থাকবে, যেমন থাকে একটি শুকনো পাতা বইয়ের পাতার মাঝে।
আজও যখনই বৃষ্টি নামে, অনন্যা আর অভিজিৎ সেই ট্রাম ডিপোর সামনে দাঁড়ায়। আর মনে করে সেই প্রথম দেখার কথা, যেখানে শুরু হয়েছিল তাদের এই অনন্য প্রেমের গল্প।
সময় যেন পাখির ডানায় ভর করে উড়ে যাচ্ছিল। অভিজিৎ তার গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত, আর অনন্যা তার এম.এ শেষ করে কলেজে পড়াতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রতি সন্ধ্যায় তারা দুজন ফোনে কথা বলত। শনিবার-রবিবার দেখা করত প্রিন্সেপ ঘাটে কিংবা কফি হাউসে।
একদিন অভিজিৎ খুব উত্তেজিত হয়ে ফোন করলো। “অনন্যা, আমার গবেষণার জন্য ক্যামব্রিজ থেকে ডাক এসেছে। দু’বছরের জন্য যেতে হবে।”
অনন্যার বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠলো। কিন্তু সে জানত, এটা অভিজিতের জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগ। “তুমি যাবে,” সে বললো, “আমি অপেক্ষা করব।”
বিদায়ের দিন কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অভিজিৎ অনন্যার হাতে একটা চিঠি দিল। “লন্ডনে পৌঁছে ফোন করব,” বলে সে চলে গেল।
চিঠিতে লেখা ছিল: “তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, সেদিন বৃষ্টি ছিল। আজ আবার বৃষ্টি। কিন্তু আজ আমি জানি, এই বৃষ্টি আমাদের আরও কাছে টেনে আনবে। প্রতিটা বৃষ্টির ফোঁটায় আমি তোমাকে খুঁজব। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো।”
দু’বছর কেটে গেল। অভিজিৎ প্রতি সপ্তাহে ভিডিও কল করত। প্রতি মাসে একটা করে চিঠি পাঠাত, যার সাথে থাকত লন্ডনের নানা জায়গার ছবি। অনন্যা সেগুলো সযত্নে সাজিয়ে রাখত তার ডায়েরিতে।
শেষে সেই দিন এলো। অভিজিৎ ফিরে আসার দিন। এবার বসন্তের সকাল। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অনন্যা। তার হাতে একটা লাল গোলাপ আর একটা চিঠি।
অভিজিৎ এসে দাঁড়াল সামনে। দু’বছর পর দেখা। কিন্তু মনে হলো যেন কালই দেখা হয়েছিল।
অনন্যা চিঠিটা দিল অভিজিতের হাতে। তাতে লেখা ছিল: “তুমি যেদিন গেলে, সেদিন বৃষ্টি ছিল। আজ রোদ্দুর। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, এই রোদ্দুরও যেন বৃষ্টির মতোই মিষ্টি। কারণ তুমি ফিরে এসেছ।”
অভিজিৎ চিঠিটা পড়ে অনন্যার দিকে তাকাল। তারপর পকেট থেকে একটা ছোট্ট বাক্স বের করল। খুলতেই দেখা গেল একটা সুন্দর আংটি।
“এই দু’বছর আমি শুধু একটাই জিনিস বুঝেছি,” অভিজিৎ বলল, “যে তুমি ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ। আমার সারা জীবনটা তোমার সাথে কাটাতে চাই। বিয়ে করবে আমাকে?”
অনন্যার চোখে জল। সে মাথা নাড়ল। বিমানবন্দরের ভিড়ের মাঝে দুজনের চোখে জল। কিন্তু সেই জলের ভিতর দিয়েই তারা দেখতে পেল তাদের সামনের সুন্দর জীবনটাকে।
পরের মাসেই তাদের বিয়ে হয়ে গেল। আজ তারা দুজনে যখনই সময় পায়, সেই ট্রাম ডিপোর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মনে করে সেই প্রথম দেখার কথা। আর ভাবে, কীভাবে একটা সাধারণ বৃষ্টির সন্ধ্যা তাদের জীবনকে এত অসাধারণ করে তুলল।
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Olivia Das |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
Kathak | Olivia Das |
Characters | Name |
---|---|
Abhijit | Joyedeep Lahiri |
Annaya | Susmita Ghosh Das |
Find us on Facebook – click here