সদানন্দের পুরুৎগিরী

Views: 1
সদানন্দের পুরুৎগিরী:
একদিন রকে বসে আড্ডা দিচ্ছি। বিকেল তখন হয় হয়। হঠাৎ দেখি সদানন্দ দা ওর বাড়ির দিকে যাচ্ছে। হাঁক পাড়লাম।
– ‘‘ও-ও সদা-দা, কোথায় গিয়েছিলে? দুদিন দেখতে পাইনি।”
সদানন্দ – ‘‘কে-ও পটা। দুইদিন ছিলাম না ভাই। যজমান এর বাসায় যাইয়াছিলাম।’’
পটা এগিয়ে সদানন্দ-এর কাছে যায়, – ‘‘যজমান মানে, তুমি এখন কি করছো গো?’’
‘‘ক্যান পুরুৎগিরি।’’ হাসতে হাসতে বলে সদানন্দ।
পটা – ‘‘তুমি ঘটকগিরী ছেড়ে দিয়েছো?’’
সদানন্দ – ‘‘হ, ওতে লাভ নাই। পুরুৎগিরীতে লাভ আসে।’’
পটা – ‘‘তাই নাকি।’’
সদানন্দ – ‘‘হ, যাই গিয়া বাসায় কাম আছে।’’
দুটো হাতে দুটো ব্যাগ ভর্ত্তি জিনিস নিয়ে সদানন্দ চলে গেল। পরের দিন সকালে, পাড়ার মেয়ে পদ্মামনি রাস্তা থেকে সদানন্দকে ডাকা ডাকি করে, – ‘‘অ-পুরুৎমশাই। পুরুৎ মশাই। বাড়িতে আছো? তোমার কথা চিন্তা করতে করতে আসছি।’’
সদানন্দ – ‘‘কে – অ পদ্মমনি – পদু আয়-আয়। আমিও তোর লগে চিন্তা করতাছিলাম।’’
পদু – ‘‘কেন? আমার কথা চিন্তা করছো কেন?’’
সদানন্দ – ‘‘ঐ যে তুই আমার লগে ছিন্তা করতাছিস্।’’
পদু – ‘‘মরন, শোন-শোন কাজের কথা। (কাঁদতে কাঁদতে) তুমি যখন ছিলে না। আমার ঠাকুমা মারা গেল। তোমায় তো দুচক্ষে দেখতে পারতো না।’’
সদানন্দ – ‘‘আঃ – বাঁচা গেল। গ্যাসে ভালই হইসে।’’
পদু – ‘‘কি বললে ! আমার একমাত্র ঠাকুমা গেছে ভালই হয়েছে।’’
সদানন্দ – ‘‘আরে – আরে চট্স ক্যানে? বুড়া মানুষ। স্বর্গে গেসে ভালই হয়সে না? কত্ত কত্ত কি কাম আসে।’’
পদু – ‘‘ঠাকুমার ছ্যাদ্দ করতে হবে।স্বর্গে গিয়ে বুড়ো মানুষ জল পাচ্ছে কিনা।’’
সদানন্দ – ‘‘পাপ করলে কি আর জল পাইবো।’’
পদু – ‘‘কি – আমার ঠাকুমা পাপ করছে?’’
সদানন্দ – ‘‘দেখস্ নাই আমায় তোর ঠাকুমা,দু’চক্ষে দ্যাখতে পারতো না। আমি বামুন না। পুরুৎরা’তো বামুন হয়।’’
পদু – ‘‘তুমি ঠাকুমার পিছনে লাগবে। সে তোমায় ছেড়ে দেবে? এখন বলছো পাপ করেছে।’’
সদানন্দ – ‘‘না-রে না পদু। ঠাট্টা করতেছিলাম। রাগ করস্ ক্যান। তোর ঠাকুমা স্বর্গে যাইয়া কলে মুখ দিয়া বইসা আছে। আমি যাই মন্ত্র বলবা আর তুই কাল পাম্প করবা আর তোর ঠাকুমা কৎ-কৎ কইয়া জল খাইবে। বল্-বল্ কি কইতো ছিলি।”
পদু – ‘‘একটা ভাল করে ফর্দ করে দাও। যাতে ছাদ্দ করলে ঠাকুমা স্বর্গে গিয়ে ভালো থাকে।’’
সদানন্দ – আ – ফর্দ আমার মুখস্ত। লেখ্ – দশ কেজি চাল লাগবে।
পদু – ‘‘দ-শ-কে-জি চাল। অত কি হবে?’’
সদানন্দ – ‘‘(রেগে) তবে যাউক গা যা এক মুঠা চাউল দিবি ছিটাইয়া ছিটাইয়া দিবো। পোলাও, বিরিয়ানী তোর ঠাকুমার খাওনের দরকার নাই। স্বর্গে গিয়া হাওয়া খাউক।’’
পদু – ‘‘আহা – পুরুৎমশাই রাগ করছো কেন? আমি তো এমনি জিজ্ঞাসা করলাম। আচ্ছা বেশ বলো তারপর?”
সদানন্দ – ‘‘কম্বল লাইকবো।’’
পদু – ‘‘কম্বল – কম্বল কি হবে?’’
সদানন্দ – ‘‘ওমা তুই তো জানোস্ না| তোর ঠাকুমা স্বর্গে যায় নাই হোথায় যায়গা নাই এখন আছে চাঁদে।’’ মইরা স্বর্গে গিয়া তো জায়গা পায় নাই। তখন যমরাজ চাঁদে পাঠায় দিয়াছিল। বইলা ছিল তোমারে এই জমি দান কইলাম। তুমি বিক্রয় কইরা ব্যাবসা কর। আর তোর ঠাকুমা তো চাঁদে যাইচ্ছে। ফাঁকা জায়গায় থাইকা সর্দি লাগাস্ছে।’’
পদু-চাঁদে আছে সেখানে তো ফাঁকা
সদা – হ
পদু – ‘‘তুমি কি করে জানলে?’’
সদা – ‘‘আরে আমার ঠাকুরদা যখন গিয়াছিল না তখন তো রাশিয়া থিক| সেই দুটা কুকুর লাকি আর মিতা যায়য়া ছিল না চাঁদ দ্যাকতে আমার ঠাকুর দা লাকিরে দেইখা কি কান্না ‘‘বুলু বুল কইরা কাঁদতেছিলো সেই সঙ্গে সাহেব কৈলো চিঠি দাও হাসি দ্যাশে দিয়া দিমু|তখন একটা চিঠি লেইখ্যা লাকির গলায় বাঁইধা দিছে। সেই কুকুর দ্যাশে আইরা সাহেবদের দেয় আর সাহেবরা আমারে পাইঠাইয়া দেয়।”
পদু – ‘‘তাহলে আমার ঠাকুমা কম্বল গায়ে ফাঁকা জায়গায় থাকবে’’
সদানন্দ – ‘‘ তা ক্যান হইবো। কম্বলের সাথে কিছু টাকা পাঠায়ে দিস্। আমি পাঠায় দিমু আমার ঠাকুর দা তো ৫০ টাকায় ১ কাঠা জায়গা বিক্রি করসে। তাই কিইনা তোর ঠাকুমা থাকবোক্ষন।’’
পদু – ‘‘ও আচ্ছা। আর কি?’’
সদানন্দ – ‘‘আর এক জুড়া জুতা লাগবো।’’
পদু – ‘‘জুতো – জুতো কেন। আমার ঠাকুমা তো মেয়েছেলে। চটি লাগবে তো।’’
সদানন্দ – ‘‘দূর কলা, বড্ড ব্যাকরা বারস্। জায়গা কিইনা। থাকবার লেগে আমার ঠাকুরদারেক ট্যাকসো দিতে হইবে তো।’’ চটিও দিবা জুতাও দিবা, তোর ঠাকুমা চটি পরবা, আর ঠাকুরদা কি খালি পায় থাকবে?”
পদু – ‘‘ও আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি এখন চললাম। সব কিনে আনি।’’
একটু পরে কাসতে কাসতে পরান খুড়া এসে হাজির।
– ও – সদু – সদু আছিস্ বাবা?’’
সদানন্দ – ‘‘আইজ্ঞা পরান খুড়া পদু তো চইলা গেল।’’
পরান – ‘‘না না তোমারে বলছি।’’
সদানন্দ – ‘‘আমি তো সদানন্দ।’’
পরান – ‘‘ঐ হলো। আদর করে ডাকলাম।’’ তা ঐ পদু কেন এসেছিল?’’
সদানন্দ – ‘‘ও – হো পদু আইছিল। ওর ঠাকুমা তো স্বর্গে গেসে। যাতে ঘর কইরা ভালো ভাবে থাকে সেই লিগা জিজ্ঞাসাবাদ করতে ছিল, আর কি।’’
পরান – ‘‘মানে স্বর্গে জায়গা পেলো কি করে। কোথায়?’’
সদানন্দ – ‘‘চাঁদে, আমার ঠাকুরদা তো জায়গা বেসে। ৫০ টাকা কাঠা।
পরান – ‘‘অ্যাঁ, সেকি বলো বাবা।’’
সদানন্দ – ‘‘কি হইলো খুড়া। মাথা ঘুরতাসে? বয় – বয়।’’
পরান খুড়া – ‘‘হ্যাঁ বাবা। ৫০ টাকা কাঠা জমি। বাবা কেন?’ ঠাকুরদার বাবার জন্মে শুনি নি।’’
সদা – ‘‘আরে খুড়া তখন কি তুমি জন্মাইসো।’’
পরান – ‘‘তুমি এক কাজ করো, আমার কাছে এই ১৫০০ টাকা আছে তুমি নাও, আর তোমার ঠাকুরদাকে তার করে বলে দাও আমার নামে ১০ বিঘা যেন জমি রেখে দেয়।’’
সদানন্দ – ‘‘কিন্তু খুড়া আর কি জমি আসে, চাঁদে এত ভীড় কি বলুম। সেই লাইগা এখানে হতে চাঁদেরে কেমন কালো কালো দ্যাখায় না।’’
পরান – ‘‘বুঝেছি বাবা। তবু – তোমার ঠাকুরদাকে বলে একটু ব্যবস্থা করো। এখন কাছে টাকা নেই। ওবেলা আরো কিছু দিয়ে যাবো।’’
সদানন্দ – ‘‘আইচ্ছা – আইচ্ছা ঠিক আসে। তবে খুড়া এ কথা আর পাঁস কান কইরো না। তোমায় বইলা বললাম। ঠিকই আসে।’’
পরান – ‘‘আচ্ছা – আচ্ছা। তবে সদু আমি চাঁদে যাবো। কি করে।’’
সদানন্দ – ‘‘অ-মা, ডবল ডেকার চালু হইলো বইলা। আমি ঠাকুরদারে জিগাই। তারপর তোমারে কমু।’’
পরান – ‘‘কিন্তু বাবা সদু। ডবল ডেকারে যাবো কি ভাবে?’’
সদানন্দ – ‘‘ক্যান্ ডবল ডেকার বাস একদম তোমার বাসায় যাইবে। আর তুমিও বাসে চাইপা হরিবোল দিয়া চইলা যাইবা।’’
পরান – ‘‘ওটা হর্ন হরি বোল কেন?’’
সদানন্দ – ‘‘এখানে এত মারামারি কাটাকাটি তাই চাঁদের সরকার ঠিক করছে, হরিবোল হর্ণ বাজাইয়া গাড়ি যাইব।”
পরান – ‘‘ও তা বাসের ভাড়া বোধ হয় একটু বেশী?’’
সদানন্দ – ‘‘না – না খুড়া এই ঘাট খরচ নিয়া ২/৩ হাজার পরবা। আমি ঠিকই বলতে পারসি না।’’
পরান – ‘‘ঘাট খরচা কেন?’’ সেটা কি?’’
সদানন্দ – ‘‘না – না ভাবনা কইরো না। ঐ আর কি ঘাট হইতে গঙ্গা পার হইতে হইবো কিনা সেই লিগা। ঐ পদু আইয়া পড়ল।’’
পদু – ‘‘এ ঘাটের মরা এখানে কেন। জমি জন্য এসেছে?’’
পরান – ‘‘তোর কি রে। তোর কি বাপের জমি শুধু তুই নিবি।’’
পদু – ‘‘না তোমার বাপের।’’
সদা – ‘‘আরে আরে কারুর বাপের জমি না। চল্ চল্ পদু সব জিনিস লইয়া আমরা চাঁদে যাই। ওখানেই তোর ঠাকুমার ছেরাদ্দ হইবো।”
পদু – ‘‘ হ্যাঁ-হ্যাঁ তাই চল। ঐখানে যাই।’’
পরান – ‘‘ও বাবা। সদা আমার কথা মনে থাকবে তো।’’
সদানন্দ – ‘‘হ – হ খুড়া তোমার টাকাটা আমি সঙ্গে লইয়া যাইতাছি। চাঁদে যাইয়া আগে কুবের ব্যাংকে জমা কইরা দিমু।’’
পরান – ‘‘ও মা পদু। তুই তো সঙ্গে রইলি। সদাকে একটু মনে করিয়ে দিস্। পাঁচ কাজের ব্যস্ত মানুষ মনে থাকবে কিনা।’’সদানন্দ – ‘‘না – না খুড়া। আমার অত ভুল হইবো না। আমি আগে গিয়া তোমারে ডবল ডেকার পাঠায় দিমু তারপর তোমার জমির কাজ। তারপর তোমার অন্য কাজ। চলি গো খুড়া।’’
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
Kathak | Olivia Das |
Characters | Name |
---|---|
Abhijit | Joyedeep Lahiri |
Annaya | Susmita Ghosh Das |
Find us on Facebook – click here