তুমি রবে নীরবে

Views: 18
তুমি রবে নীরবে:
-” ম্যাম খারাপ ওয়েদারের জন্য আজকের বেশিরভাগ ফ্লাইট ক্যান্সেল করা হয়েছে। তার মধ্যে আপনার ফ্লাইটও রয়েছে।”
হোটেল রিসেপসানিস্ট – এর মুখে এই কথা শুনে কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই রিমির মুখের সমস্ত হাসি কর্পূরের মতো মিলিয়ে গিয়ে ; মুখের মধ্যে একরাশ বিরক্তি আর রাগ দেখা দিলো। হোটেল রুমের চাবিটা জমা দিয়ে, সে হাতের ব্যাগটা নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগোলো। দু পা এগোতেই একজনের সাথে মোক্ষম ধাক্কা লাগলো। রিমি বিরক্তিই সঙ্গে বললো,
-” ইডিয়ট।”
উল্টোদিক থেকে অনুনয়ের সুরে উত্তর এলো,
-“sorry….. আসলে আমি……”
রিমি সেই কথায় কর্ণপাত না করে হনহন করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলো। রিমির বিরক্তিটা যে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু এখন রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ করে কিছু লাভ নেই। প্রকৃতি যদি তার বিরুদ্ধে যায় তাহলে কি আর করা যাবে। ঘড়িতে দেখলো ঘড়ির কাঁটা প্রায় দুপুর ১ টা ছুঁই ছুঁই। দুপুরে আর কিছু খেতে ইচ্ছা করলো না। মোবাইলটা বার করে একটা মেসেজ করে; শুয়ে পড়লো। তারপর আস্তে আস্তে ঘুমের চাদরে মুড়ে গেলো।
ঘুম ভাঙলো যখন,তখন দেখলো সূর্য প্রায় অস্ত যায় যায়। পাহাড়ে থেকে এই অপূর্ব দৃশ্য দেখার থেকে বঞ্চিত হওয়ার মতন পাপ রিমি করতে চাইলো না। সিঁড়ি দিয়ে নেমে লম্বা প্যাসেজ পার করে সামনের বাগানে এসে দাঁড়ালো। হোটেলটা একটা ছোট্ট পাহাড়ের ওপরে। শীতটা কাল থেকে বেশ জাকিয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টিও নামছে। পাহাড়ের সৌন্দর্য হাজার গুন বৃদ্ধি করে, সেখানকার আলো-ছায়ার খেলা। অস্তায়মান লাল সূর্যকে বেশির ভাগ সময়ই ঢেকে রাখছে শীতের অতিথি স্বরূপ মেঘেরা। হোটেলটা বেশ সুন্দর ; ছিমছাম, নিরিবিলি। বাগানটায় রংবেরঙের ছোট ছোট আলোয় সাজানো। শীতকাল হওয়ায় পর্যটনের ভিড় খুব একটা জোড়ালো নয়। বাগানের ভিতর নানা-রঙের পাহাড়ি ফুল ফুটে রয়েছে। হাঁটতে শুরু করলো রিমি। পাহাড়ের সৌন্দর্য্যে হারিয়ে যাওয়া রিমির ঘোর কাটলো, গিটারের সুরে। শব্দের অনুসরণ করে বাগানের আরো একটু ভিতরে গিয়ে রিমি দেখলো ; একটা ছেলে সাইড বেঞ্চে এক এক বসে গিটার বাজাচ্ছে। কিছুটা এগোতেই রিমির মনের পড়লো, সকালে যেই ছেলেটার সাথে ধাক্কা লেগেছিলো সে – ই বসে। ছেলেটার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-” hello! সকালের জন্য sorry. আসলে ভুলটা আমারই।
-” থাকে ভাই আর অত formality করার প্রয়োজ নেই। চিনতে তো পারিস নি। তাহলেবুঝেই দেখ idiot -টা কে?”
হঠাৎই চেনা কন্ঠস্বর শুনে চমকে গিয়েছিলো রিমি। চমক ভেঙে বললো,
-” আরে সৌম্য! তুমি? ইশ! চিনতেই পারিনি।অনেক বদলে গেছো আগের থেকে।”
-” আগে বল কি হয়েছে? তখন তো খেয়ালই করলি না। রেগেও ছিলি মনে হলো? Any problem? আর কত দিনই বা এখানে?”
সৌম্যর পাশে বসে রিমি বললো,
-” আর বোলো না। এসেছিলাম অফিসের কাজে। তারপর এক সপ্তাহের ছুটি নিলাম। আজ দিল্লি ফেরার কথা। তা ওয়েদারের জন্য সব ফ্লাইট ক্যান্সেল। তবে ভালোই হলো, চলে গেলে এতো দিনেও হয়তো তোমার দেখা পেতাম না। তা তুমি এখানে?”
-” হুম তা ঠিকই। আমি এসেছি ঘুরতে। আমার আর কি! ঘুরছি ফিরছি বিন্দাস আছি বস। এই শোন আজকে তাহলে ডিনারটা আমার সাথেই করিস। আমি সব Arrenge করে নেবো। তুই ঠিক ৯ টায় চলে আসিস।”
-“ok . এখন উঠি বুঝলে। বাড়িতে চল্ করা হয়নি। “
-“আচ্ছা বেশ। আয়।”
-“রাতে গিটারটা আন্তে ভুল না। “
-” না ভুলবো না। তুই সময় মতো চলে আসিস। “
যে কাজের জন্য রিমি উঠে এলো; সেই কাজটা করতেই বেমালুম ভুলে গেলো। রুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে, কাছের মার্কেটে চলে গেলো। সৌম্যর জন্য কিছু কেনা দরকার। একটা সুন্দর চাবির রিং আর একটা ফুলের তোড়া নিলো, সৌম্যর জন্য। ফিরে আসার সময় ; ওদের দুজনের প্রথম আলাপের কথা মনে পড়লো রিমির।
একটা কালচারাল whatsapp গ্রুপে ছিলওরা। সেখানেই সৌম্যর গান রিমি প্রথম শোনে। ভালো লেগেছিলো রিমির সৌম্যর গান। এরপর বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। হঠাৎ whatasapp -এ একটা ভিডিও কল আসে। রিমি কল লিস্ট খুলে দেখে unknown নাম্বার। নাম্বারটাতে রিমি S.M.S করলো,
-” কে?”
কিছুক্ষন পর একটা রেপ্লি আসে,
-” আসলে আমার ফোনটা পকেটে ছিল তাই, automtically touch হয়ে গেছে। একদম বুঝতে পারিনি। পরে দেখি আপনার কাছে ভিডিও কল চলে গেছে। extreamly sorry.”
-” ok! ok! no problem. তোমার নাম কি? গ্রুপে কমন দেখাচ্ছে।”
-” সৌম্য। তোমার নাম? কোন ক্লাসে পড়ো?”
-” রিমি ,আমি11-এ পড়ি। আর তুমি?”
-” তোকে তুই করেই বলছি তবে! আমার থেকে এক ক্লাস ছোট তুই। “
এরপর আলাপ পরিচিতি সবই বাড়লো। রিমি কিন্তু তখনও জানায়নি যে সে সৌম্যকে আগে থেকেই পছন্দ করতো। এরপর কেটে যায় কয়েকটা বছর….. তার মাঝে বেশ কয়েকবার ওরা দেখাও করেছে। সম্বিৎ ফিরতেই রিমি দেখলো, হোটেলের সামনে এসে গেছে। রুমে গিয়ে তৈরী হয়ে নিলো রিমি।
-” Mera Samay Toh Wahin Pe Hai Thehra Hua
Bataaun Tumhe Kya Mere Sath Kya Kya Hua
Khamoshiyan Ek Saaz Hai
Tum Dhun Koi Laao Zara
Khamoshiyan Alfaaz Hain
Kabhi Aa Gunguna Le Zara…………..”
bornfire – এর রক্তিম আলোয় সৌম্য আর তার গিটারকে এক অচেনা বিভীষিকার মতো দেখাচ্ছিল। পোশাকের রঙও বোঝা যাচ্ছিলো না। রিমি সৌম্যর পাশে গিয়ে বসলো। সৌম্য গান শেষ করে বললো,
-” ওয়েলকাম ম্যাডাম।”
রিমি হাত বাড়িয়ে সৌম্য-র জন্য আনা উপহারটা দিতে দিতে চারপাশটা দেখলো। bornfire – এর একপাশে একটা টেবিল; যেখানে রাতেই খাওয়ারের আয়োজন করা হয়েছে।”
-” আরে বাবা এতশত আয়োজন করলে কি করে গো?”
-” তুই আবার কি এনেছিস? গিফট?বাব্বা! এতো ফরম্যালিটি। .. দে… দে। “
বলেই হাত বাড়িয়ে রিমির দেওয়া উপহারগুলো নিলো সৌম্য।
বেশ কিছুক্ষন ওরা চুপ করে বসে ছিল। শব্দ বলতে কাঠপোড়ার চটচট আওয়াজ আর কিছু বলতে গিয়ে সৌম্যর গলা ঝাড়া। নিস্তব্ধতা ভেঙে রিমি বললো,
-” বললে না তো এতো আয়োজন করলে কিভাবে?”
-” আসলে আমি এখানে প্রতিবছর আসি। এখানকার অফিস স্টাফরা আমার পরিচিত। ওদের বলতেই সব হয়ে গেলো। আচ্ছা তুই এবার বলতো কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলি? গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গেলি, তারপর তো কোনো খোজি পেলাম না। “
-” প্রথমবার গ্রুপে অ্যাড হয় এজটা আশা নিয়ে। আমার লেখা হাজার হাজার লোক পড়বে। হলোও তাই। ঐখান থেকে আমার লেখা প্রকাশিত হয় এক পত্রিকায়, তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। কাজের চাপে ছাড়তে হলো গ্রুপটা। তারপর ট্রেনে ব্যাগ সমেত ব্যাগটা হারিয়ে ফেলি; ব্যাস সব হারিয়ে গেলো। তুমি সহ প্রায় সব বন্ধুই নম্বর হারিয়ে যায়……. হারিয়ে যায় সব যোগাযোগসূত্র। অনেক চেষ্টা করেছিলাম তোমার খোঁজ নেওয়ার। গ্রুপের একজনের নাম্বার পাই, তার কাছে তোমার খোঁজ নিই কিন্তু ততদিনে তুমিও গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গেছো। তারপর আর কি! আজ আমরা এখানে।”
-তুই কি জিনিস গুরু। এখনো একটুও বদলাসনি বল?”
-” তুমি বোলো তোমার কি খবর? ” সদা single ” উপাধি ঘুচলো।”
-” না তবে ভালো লেগেছিলো একজনকে। ওই ভালোলাগাই।”
-” আচ্ছা তাই বোলো না। “
-” হ্যাঁ শোন তাহলে। তখন আমি কলেজের 3rd ইয়ারে পড়ি। ছুটিতে পিসির বাড়ি গিয়েছি। সবাই মিলে গল্প করছি, হঠাৎই বোনের ফোনে একটা নোটিফিকেশন এলো। নামটা দেখি সৃজা। মনে পরে যায় ক্লাস 9 এর একটা ঘটনা। সেবারও পরীক্ষার ছুটিতে পিসির বাড়ি ঘুরতে গেছি। ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। নীচ থেকে একটা মেয়ে হাত নাড়িয়ে ডাকছে। স্বভাবতই আমি তুতলে যাই। বলি,
-” কি……কি…..বল?”
-” মেয়েটা বললো,
-“নিচে আসো।”
আমি নিচে যাই। মেয়েটার চোখে চোখ পড়তেই আমার বুকটা কেমন করে ওঠে। আমি বললাম,
-“বল কি হয়েছে?”
মেয়েটা বললো,
-” তোর বোন বাড়ি আছে?”
আমি বললাম,
-” না। বোন বাড়ি নেই।”
-” আচ্ছা। তাহলে তুই আয়, ঘুরে আসি।”
আমি কি করবো বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়ে থাকি। বিয়েটি আমার পিসিকে ডেকে বলে,
-” Aunty, সৌম্যকে নিয়ে গেলাম।”
আমরা বেড়িয়ে পড়ি, গঙ্গার ধার, তারপর সেখান থেকে চলে যাই ওদের ফ্ল্যাটের ছাদে। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে এসেছিলো, আসলে দিনটা ছিল 31st ডিসেম্বর আর আমরা আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া আতশবাজির, অপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে যাই।”
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | সুমনা দাস |
Intro & Ending | Olivia Das |
Kathak | Priyanka Dutta |
Characters | Name |
---|---|
Soumo | Debanshu Ghosh |
Rimi | Olivia Das |
Srija | Susmita Ghosh Das |
Others | Olivia Das, Priyanka Dutta, Joydeep Lahiri |
Find us on Facebook – click here