ভালোবাসার শহর কলকাতা

Views: 1
ভালোবাসার শহর কলকাতা:
আজ যে গল্পটা বলতে চলেছি। সেটা, এখন গল্প কথা হলেও সত্যি ঘটেছিল। মানুষ একটা শহরকে ভালোবেসে, তার মৃত্যু পরেও, সেখানে থেকে যায়। আর এর সত্যতা আর প্রমান গল্পের শেষ আপনারা পেয়ে যাবেন। এবং চাইলে এখনোও স্বচক্ষে সেই জায়গাটা দেখে আসতেও পারেন।
পাঁচ বছরের শিক্ষক। আর যাতা শিক্ষক নয়, সোস্যাল মিডিয়ার শিক্ষক। তার হাত ধরে বহু ছাত্র-ছাত্রী, চিকিৎসক হয়ে আজকেও প্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছে।
বছরটা ছিল ১৯৯৩ আসানসোলের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জš§ গ্রহন করে এক পুত্র সন্তান। বাবা মার খুব আদরের সন্তান ছিল ছোট ‘সৌভিক’। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ছোট্ট সৌভিক। পুরো পরিবারেই খুবই আদরের ছিল সে। ধীরে ধীরে কথা বলতে সেখে সে। সেই ছোট থেকেই বাবার কাছে কলকাতার গল্প শোনা। শুনতে শুনতে কলকাতাকে না দেখেই ভালোবেসে ফেলে ছোট সৌভিক। সৌভিক অনেক বার বাবাকে বলত কলকাতায় নিয়ে যেতে। কিন্তু বাবার কাজেরচাপে ও অন্য কিছু কারণে ছোট্ট সৌভিকে নিয়ে কলকাতায় আসতে পারেনি তার বাবা। সৌভিক অনেক বায়না করত কিন্তু, কোন ফল হয়নি।
এর কয়েক মাস পর, প্রথম বার কলকাতায় পা দিল সৌভিক। ১৯৯৮, ৩০শে সেপ্টেম্বর, আসানসোল থেকে কলকাতায় আসে ছোট্ট সৌভিক, বাবা মার হাত ধরে। কিন্তু হেঁটে বা কোলে নয়, মায়ের কোলে শুয়ে।
কলকাতায় প্রথম এলে প্রায় সবাই গন্তব্য থাকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, যাদু ঘর, কলকাতা ময়দান ও গড়ের মাঠ, আরো অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায়। কিন্তু সৌভিকের গন্তব্য ছিল এস.এস.কে.এম হসপিটাল। কারণ ঘন ঘন রক্ত প্রতিস্থাপনের জন্য। সৌভিকের যে সঠিক কি রোগ হয়েছিল তা লোকাল কোন ডাক্তারই বলতে পারেনি। সৌভিকের বাবা তাকে নিয়ে চলে আসে কলকাতায়। তখন সৌভিকেকর বয়স মাত্র পাঁচ। কলকাতায় প্রথমে এস.এস.কে.এম হসপিটালে ভর্তি করা হয় রক্ত প্রতিস্থাপনের জন্য। হঠাৎ করে কোথা থেকে এত বড় রোগ সৌভিককে আস্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে ফেললো তা তার বাবা মা কেউই বুঝতে পারেনি। আর এটিও বুঝতে পারেনি এরর কি ঝড় আসতে চলেছে। সৌভিকের বাবা ডাক্তারদের পরামর্শে রক্ত জোগাড় করতে থাকে। কিন্তু চাই অনেক। তখন এখনকার মত এত বøাড ডোনেশান ক্যাম্প হতো না তাই রক্তের জোগান কমই ছিল। ছেলের জন্য বাবা অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোজ জোগার করতে থাকে। যে শহরকে সৌভিক এত ভালোবাসতো, সে যে কত নিষ্ঠুর হতে পারে সেটা কেইবা জানত।
২৯ অক্টোবর, ১৯৯৮ কলকাতা তার ভালোবাসাকে হারাতে অন্যভাবে বলেলে ছোট্ট সৌভিক তার ভালোবাসা শহর ও তার বাবা মাকে ছেড়ে অনন্ত আকাশের দেশে পারি দেয়। হঠাৎ রক্ত সল্পতার কারণে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয় সৌভিকের। ডাক্তাররাও সৌভিকের বাবা মিলে সেই পরিমান রক্ত জোগার করে উঠতে পারেনি। সঠিক সময়ের মধ্যে। তার ফল স্বরূপ একটা মায়ের কোল খালি করে তার সন্তান পরিদেয় অনন্ত আকাশে। অঝর ধারায় কান্নায় ভেঙ্গে পরে পুত্র হারা বাবা-মা। এই দৃশ্য চোখে জল আসে উপস্থিত সকল ডাক্তার, নার্স ও আশেপাশের রুগিদের। ছোট্ট সৌভিক আর কোন দিন ঘুরে দেখতে পারবে না তার প্রিয় শহরটাকে। ছোট্ট সৌভিকের বাবা মা এর পরে যে কাজটি করলো, তাতে তাদের কুরনিস না করে কেউ থাকতে পারেনি। তারা ছোট্ট সৌভিকের নিথর দেহটা দান করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। তাদের এই মহান সিদ্ধান্তের ফলে আজীবন ছোট্ট সৌভিক ছোট্ট হয়েই অমর হয়ে থাকবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ASI (Anatomical Society of India) যথাযথ মর্যাদায় এই মহান দান গ্রহন করেন।
এবার আসি প্রমানে। আজও ছোট্ট সৌভিকের কঙ্কাল কাঁচের কফিনে করে রাখা আছে। কলকাতা NRS (Nil Ratan Sarkar) Medical College হাসপাতালে তার কঙ্কাল, হাড় ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহনে অনেক সাহায্য করেছে। সাহায্য করেছে একটি মৃতদেহের বয়স সনাক্ত করন অধ্যায়নে এবং শিশুর হাড়ের বৃদ্ধি বোঝার জন্য।
প্রতি বছর ২৯শে অক্টোবর দিনটিতে আজও সৌভিকের মা-বাবা আসেন এবং ডিপাটমেন্টের ডাক্তার পড়ুয়া সবাই শ্রদ্ধার্ঘ্য জানায় ছোট্ট সৌভিককে। কাঁচে কফিন এর উপর ছোট্ট সৌভিকের ছবিও আছে। এই ভাবেই ছোট্ট সৌভিক অমর হয়ে অনেক ডাক্তারি পড়ুয়াদের শিক্ষা দিয়ে চলেছে আজও।
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Debanshu Ghosh |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
Kothak | Debanshu Ghosh |
Find us on Facebook – click here