“রাধারানী”
Views: 99
রাধারানী:
শ্রী কৃষ্ণের গল্প তো অনেক শুনেছো। রাধারাণীর গল্প কি শুনেছ? তাহলে বলি আজ—-
শ্রী রাধিকার আসল পিতৃভূমি “বাসনা।” সেই বাসনাতে এক শেঠ বাস করতো। তার বিরাট অবস্থা। বিরাট বাড়ি। বাড়িতে থাকে তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে। ছেলেরা খুব ভালো। তাদের বিয়ে দিয়ে দুই বৌমা এসেছে বাড়িতে। তারাও খুব সুন্দর ও ভালো। শেঠের ব্যাবসাও খুব ভালো চলে। শেঠ নিজেও খুব সজ্জন ব্যক্তি কিন্তু ভদ্রলোকের মনে শান্তি নেই,সবসময় মনমরা হয়ে থাকে। প্রয়োজনের কথা বলে নইলে কথা বলতে চায় না। সব সময় কি যেন ভাবে। শেঠের খুব মেয়ের শখ। তার এতো আছে কিন্তু একটা মেয়ে নেই। মেয়ের জন্য শেঠের মন হাহাকার করে। এইভাবে দিন যায়।
একদিন শেঠ নদীতে স্নান করতে গেছে, স্নান সেরে বাইরে এসে দেখে, এক সন্ন্যাসী দাঁড়িয়ে। তাকে দেখে শেঠের মনে শ্রদ্ধা জাগলো। তাড়াতাড়ি করে সন্ন্যাসীকে প্রণাম করে। কিন্তু মনের হাহাকার মনের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। কেঁদে ফেলে। সন্নাসী খুব মমতার সঙ্গে বললেন,
-” কাঁদিস না বেটা। তোর মনের ব্যাথা আমি বুঝতে পেরেছি।”
শেঠ চোখ মুছে বললো,
-” বাবা আমার মনের হাহাকার দূর করো। কি করলে, কোথায় গেলে আমার মনে শান্তি আসবে।”
মুচকি হেসে সন্ন্যাসী বললেন,
-” হ্যা রে ! তোর হাতের কাছেই তো আছে। তোর মনের রোগের ঔষধ।”
-” কোথায় বাবা?”
-” কেন রাধারানী মন্দিরে। শ্ৰীমতী রাধারাণীকে তোর মেয়ে ভেবে নে। “
শেঠের শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো।
-‘ তাইতো রাধারানিই তো আমার মেয়ে হতে পারে। আমি কেন চারিদিকে খুঁজে মরি।”
এই না ভেবে পড়ি মরি করে বাড়ি ফিরে গেলো। নিজের মনের মতন একটি শ্রীরাধারানীর মন্দিরে গিয়ে পুরোহিতকে বললো,
-” ঠাকুর মশাই আমার এই রাধা মায়ের মূর্তিকে, আসল রাধারানীর মূর্তির সঙ্গে ঠেকিয়ে দিন। আমার মূর্তিটিকে আমি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করবো। “
পুরোহিত ঠাকুর তাই করলেন। শেঠ শ্রীরাধিকার মূর্তি বাড়িতে এনে তার নিজের ঘরে প্রতিষ্ঠা করলেন।
এইভাবে দিন যায়। শেঠ মূর্তির সামনে বসে কথা বলে হাসে মূর্তির গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় , আদর করে, ঠিক যেন মেয়ের মতন। একদিন হয়েছে কি—-
শেঠ নিজের রাস্তার ধারের বসার ঘরে বসে ব্যবসার হিসাব নিকাশ করছে। এমন সময় এক কাঁচের চুড়িওয়ালী এসে শেঠকে বলে,-” ও বাবু আপনার বাড়ির বৌ মেয়েরা চুড়ি পড়বে? আমার কাছে ভালো ভালো সুন্দর সুন্দর চুড়ি আছে। “
সামনেই রাসপূর্ণিমা। এই রাসে প্রতি বাড়ির মেয়ে বউরা ভালো ভালো রেশমি চুড়ি পড়ে।
তাই শুনে শেঠ বলেন,
-” ঠিক আছে বাড়ির ভিতর যাও। আমার বৌ নেই, কিন্তু ছেলেদের বৌরা আছে। দুজনায় দেখো পড়ে কিনা ! আমি কাল তোমার বাড়ি গিয়ে পয়সা দিয়ে আসবো।”
-” ঠিক আছে বাবু। “
চুড়িওয়ালী বাড়িরই ভিতর গেলো। পরের দিন শেঠ চুড়িওয়ালীর বাড়ি গিয়ে বললো,
-” বোলো তোমার চুরির দাম কত? দুজন তো পড়েছে?”
চুড়িওয়ালী বললো,
-” না বাবু দুজন তো না তিনজন।”
শেঠ বিরক্ত হয়ে বললো,
-” তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে, আমার ছেলের বৌরা তো দুজন; তুমি তিনজন দেখলে কোথায়? কি ভেবেছো আমায় ঠকিয়ে পয়সা নেবে? চিটিংবাজি করছো? এমন তো তুমি আগে ছিলে না।”
-” না বাবু আমি চিটিংবাজি করছি না। আমি সত্যি বলছি। তিনজন চুড়ি পড়েছে। আপনার ছেলেদের বৌ চুড়ি পড়ে চলে যাবার পর এক অপূর্ব সুন্দরী লাবণ্যময়ী মেয়ে এসে আমার কাছে থেকে চুড়ি পরে বললো বাবাকে বোলো তার মেয়ে চুরি পড়েছে।”
একটু চুপ থেকে চুড়িওয়ালী বললো,
-” বাবু আপনার তো মেয়ে আছে?”
শুনে শেঠের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেলো, ছুটে গেলো বাড়িতে তারপর রাজবাড়ীর রাধারানী মন্দিরে। দেখে দুজনার হাতে একই চুড়ি। শেঠ রাধামায়ের মুখের দিকের তাকিয়ে দেখে রাধামা যেন হাসছে; আর যেন বলছে,
-” আমি তো তোমার মেয়ে আমায় চিনতে পারলে না।”
ছুটে আসে শেঠ চুড়িয়ালীর কাছে, তাকে বসতে বলে; আর চুড়ির দ্বিগুন দাম দেয়। কাঁদতে কাঁদতে শেঠ বললো,
-” তুমি বড়ো ভাগ্যবতী তুমি আমার রাধারানীর হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিয়েছো। “
চুড়িওয়ালিও খুব কাঁদল আর বললো,
-” হায় হায় আমি এমনি পোড়াকপালী। স্বয়ং রাধারানী আমার কাছে চুরি পড়লেন আর আমি চিনতে পারলাম না।
তারপরের গল্প একটুখানি। সেদিনের পর শেঠ আর চুড়িওয়ালী সব ব্যবসা কাজকর্ম ছেড়ে বাড়িঘর ছেড়ে দীক্ষা নিয়ে রাধারাণীর মন্দিরে গিয়ে নামজপ নিয়েই থাকতে লাগলেন।
https://www.facebook.com/srijoni
Khub valo