ক্ষুধিতের পুজো
Views: 37
ক্ষুধিতের পুজো:
ওই যে দূরে বাজছে মাগো তেপান্তরের মাঠ পেড়িয়ে
ওটা কিসের শব্দ? প্রতি বছর এ সময়টা শুনতে পাই।
সরল মায়ের জটিল দৃষ্টি কথা বলে উঠলো,
“দুগ্গা পুজো হবে যে, ঢাক বাজছে।”
“দুগ্গা কে মা?”
স্তব্ধতার ক্ষণকাল পেরিয়ে কন্ঠে মায়ের প্রত্যুত্তর,
“দুর্গতি দূর করে যে, না এবার ঘুমিয়ে পর….।”
কিছু তো খেলাম না দুপুর থেকে…..
বাক্যব্যায়ের অসহায় অপরাধে মা শাসিয়ে ওঠে,
“মরতে প্যারিস তো না খেয়ে, মরিস না কেন?”
মায়ের এই আচরণের সাথে আমি অভ্যস্ত,
কারণটা স্বাভাবিক,
আমি আমার নাম জানিনা, বাবাকে তও জানি না,
শুধু একটা কথায় জানি,
জন্মের পর থেকেই আট বছর বয়স অবধি,
আমার ঠিকানা, ‘রেলওয়ে প্লাটফর্ম…..।’
সকাল হলেই পাশের বস্তির বন্ধুদের সাথে,
বেরিয়ে পড়ি বাতি হাতে,……।
পড়নে শুধু একটা ছেঁড়া হাফ প্যান্ট,শহুরেদের ভাষায় আবার,
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, এটাই আমার ভরসা।
দু-নম্বর প্লাটফর্মের ডাস্টবিনটা আমাদের স্বর্গ।
কতকিছু পাওয়া যায় সেখানে, কিছু আদায় করে নিতে হয়…..
কারণ, সে স্বর্গ টা শুধু আমাদের নয়,
প্লাটফর্মের সারমেয়দেরও সেখানে সমানাধিকার…..।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় আপন খেয়ালে……।
অথচ এ দেহের পৌষ্টিকতন্ত্রের কাতর আর্তনাদ শুনবে কে?
মা চলে যায় সকাল হলেই পাশের বস্তিতে।
শুনেছি ওখানে নাকি পুলিশ আসে মাঝে মাঝে।
অনেক বড়ো বড়ো ছেলেদের নাকি ধরে নিয়ে যায়।
ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে,
চলে যাই ওই প্রান্তে, দেখে আসি কি আছে—
কিন্তু ইচ্ছা আছে, শক্তি নেই…..।
ঢাকের কাঠির ছন্দে মন ব্যাকুলতায় হয় আক্রান্ত–
কিন্তু, হয় এ পড়া কপাল,
দুগ্গা যদি দূর করবে মানুষের দুর্গতি,
তবে আমাদের এ হাল কেন?
নাকি আমরা রক্তে- মাংসে গোড়া মানুষ নই,
প্ল্যাটফর্মে ভিক্ষা করি…..।
জীবনবৃক্ষের ছায়াতলে মাটিতে মিশে থাকা,
আমি এক ঝরাপাতা মাত্র—
দারিদ্র আর বঞ্চনায় জীবন বলে কিচ্ছু নেই,
আসলে, জীবন জীবিত থাকার অভিনয় …..।
একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে এ দেশ মাথাতুলে
বলে কি করে? “আমরা উন্নয়নশীল?”
আমার মতো কত লাখো আট বয়সী পরে আছে,
দেশের এ কোনে ও কোনে….।
দুর্গতিনাশ যদি নাই হবে, এ দেশের,
তবে “দুগ্গাপুজো কিসের জন্য?”
আজ বুঝেছি, ঢাকের আওয়াজ কেন বাজে,
ওই তেপান্তরের ওপারেই।
-সৌরদীপ রায়
https://www.facebook.com/srijoni
Khub valo, kobita ta