অনুভূতি

Views: 42
অনুভূতি:
চরিত্র : টোটোওয়ালা, অনুভব সরকার, ভূজিয়াওয়ালা।
[সময় বিকেল, এক ভদ্রলোক মোবাইলে কথা বলতে বলতে আসছে]
অ: স:- মা কে পৌঁছে দিয়ে এলাম, বুঝলে। ভালই থাকবে আর বেশ কিছু বুড়োবুড়ির সাথে। আমাদের
আর বিরক্ত করবে না। আর আমরাও স্বাধীন ভাবে থাকতে পাড়বো। তবে শালা বেকার অনেকগুলো টাকা
খরচ… এই টোটো, যাবে?
–
টোটোওয়ালা – হ্যাঁ স্যার, যাবো তো, কোথায় যাবেন?
অ: স:- (ফোনে) আরে না না, রাখার দরকার নেই, কিছু বুঝবে না। Let’s talk in English.
টোটোওয়ালা – কেন বুঝব না স্যার? I am graduate, English (hons).
অ: স:- ((ফানে) এই শোনো, আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি। তুমি ইংলিশ এ অনার্স করে টোটো
চালাচ্ছ !! কেন?
টোটোওয়ালা – কি করবো বলুন স্যার? আগে টিউশন পড়াতাম, তারপর চাকরির পরীক্ষা দিলাম। পাশ ও
করে গেলাম, কিন্তু চাকরী পেলাম না। আমার মতন অনেক ভাই বোন দের সাথে বহুদিন ধরে রাস্তায়
বসে। কাজেই টিউশন গুলো সব চলে গেলো, ইনকাম ও চলে গেলো। আর ওদিকে চাকরির ও কোনও খবর নেই।
অঃ স:- কিন্তু তাই বলে টোটো ? !
টোটোওয়াল। – কি করবো স্যার? বাবা বেশ কয়েকবছর হোল গত হয়েছেন। মা এর অসুখ ও অনেকদিন।
ওষুধ সব শেষ। এতদিন তো এমনিতেই রাস্তায় ছিলাম, এবার না হয় মা এর জন্য অন্য ভাবে রাস্তায়
নামলাম, টোটো নিয়ে।
স:- তুমি মা এর জন্য এত কষ্ট করছ, আর……
টোটোওয়ালা – কি করি বলুন স্যার? মা ও তো আমার জন্য প্রচুর কষ্ট করেছেন জীবনে। আমি যতই চেষ্টা
করিনা কেন, সে ঋণ তো কোনোদিন শোধ করতে পারব না, তবু চেষ্টা করছি স্যার, যতটুকু করতে পারি৷
অ: স:- তোমার নাম কি ভাই?
টোটোওয়ালা – অনুভব স্যার , অনুভব রায়।
অঃ সঃ- অনুভব?? কি আশ্চর্য !! আমার নামও তো অনুভব, অনুভব সরকার। কিন্তু দেখো, আমাদের মধ্যে কতো তফাৎ। তুমি মা এর জন্য কি না করছ, আর আমি… (চোখে জল)
টোটোওয়ালা – কি হয়েছে স্যার? ইচ্ছ। হলে বলতে পারেন, মন হাল্কা হবে।
অ: স:- বলব, তোমাকে সব বলবো। আমি কোথা থেকে ফিরছি জানো?
টোটোওয়ালা – কোথা থেকে স্যার?
অ: স:- বৃদ্ধাশ্রম।
টোটোওয়ালা – বৃদ্ধাশ্রম !!
অ: স:- হ্যাঁ, মা কে নিয়ে বিরক্ত লাগছিলো, তাই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করে ফিরছি আমি। কিন্তু এখন….
এখন তোমাকে দেখে নিজেকে পাপী মনে হচ্ছে, নিজের ওপর নিজেরই ঘেন্না লাগছে।
টোটোওয়ালা – স্যার, নাম অনুভব, অথচ মা এর কষ্ট টা অনুভব করতে পারলেন না?। ছোটবেলায়
আপনি, আমি, আমরা সবাই মা কে কম বিরক্ত করেছি বলুন? তার জন্য মা কি আমাদের ফেলে
দিয়েছেন? না দূরে সরিয়ে দিয়েছেন? শত কষ্ট হলেও তো মা আমাদের বুকে আগলে রেখেছেন, আমাদের
মানুষ করেছেন। নিজের কষ্ট হলেও যাতে সন্তান এর কোনও কষ্ট না হয় সেটাই খেয়াল করেছেন সারা
জীবন। সেই সন্তান হয়ে সামান্য অসুবিধার জন্য মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলেন স্যার? বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে দেখুন স্যার, ওখানেও উনি আপনার মঙ্গল কামনাই করছেন।
অ: স:- ঠিক বলেছ ভাই। খুব অন্যায় করে ফেলেছি। আসলে নাম অনুভব হলেও পদবী সরকার তো, তাই
এই অনুভব এর অনুভূতি কমে গেছিলো। এখানেই পশুর সাথে মানুষের ভফৎ জানো তো। কুকুরের বাচ্ছা
সবসময় কুকুর ই হয়, বাঘের বাচ্ছা বাঘ। কিন্তু মানুষের বাচ্ছা সবসময় মানুষ হয় না।
[ ভুজিয়াওলার প্রবেশ
ভুজিয়াওয়ালা- ভাজা খাবেন… ভাজা… ভাল ভাজা হবে।
অ: স: – অ ভাজা, কি কি আছে গো?
ভুজিয়াওয়াল- পাঁপড়, চানাচুর, বাদাম, নিমকি ভুজিয়া সব আছে বাবু। কি নেবেন?
অ: স:- দিন দুটো বাদাম এর প্যাকেট ই দিন। কি? বাদাম ই খাবে তো?
টোটোওয়াল – না না, ঠিক আছে।
অ: স:- আরে নাও নাও।
টোটোওয়ালা – তাহলে বাদাম ই দিন। কাটবেন না হ্যাঁ, বোনটা কদিন ধরে বাদাম খাবে বলছিল।
অ: স:- তোমার বোন আছে?
টোটোওয়ালা- হ্যাঁ স্যার, বি এ ফার্স্ট ইয়ার পরছে।
ভুডিয়াওয়ালা- বি এ ফার্স্ট ইয়র? আমার মেয়েটাও বি এ ফার্স্ট ইয়ার জানো। মেয়েটা লেখাপড়াতে খুব
ভাল ছিল জানো, কিন্তু এখন আর পড়তে চাইছে না।
টোটোওয়ালা – এ মা, কেন গো?
ভুজিয়াওয়ালা- বলছে, লেখাপড়া করে কি হবে? চাকরী তো হবে না। শুধুশুধু পরার পেছনে খরচ। তার
চেয়ে আমাকে ব্যাবসা তে সাহায্য করলে দুটো পয়সা হবে।
অ: স:- আরে পড়াশোনাটা মন দিয়ে করতে বলুন, সব হবে, সুদিন আসবে।
ভুজিয়াওয়ালা- আর সুদিনের কথা বলবেন না কর্তা। বহুদিন ধরে শুনছি সুদিন আসছে, আর সুদিন পেটে
লাথি মারছে। বাস ভাড়া বেড়ে গেছে, পেট্রোল এর দাম এর জন্য। ভাজার দাম বেড়ে গেছে তেল এর
দাম এর জন্য। আমরা কি করে খাই বলুন তো? সব দাম বেড়ে গেল, তেল থেকে গ্যাস, আমরা বসে পেট
চিপে, বেচে আছি ব্যাস।
টোটোওয়ালা – দারুন বললে তো কাকা।
ভুজিয়াওয়ালা- ওই কথা নিয়েই তো বেঁচে আছি ভাই, কথার তো আর দাম বাড়েনি, বরং এর দাম ই দিন
দিন কমছে। যাই হক, চলি ভাই। কথা বলে তো আর পেট ভরবে না।
[প্রস্থান]
অ: স:- চলো আমরাও যাই। তবে বাড়ীর দিকে নয়, বৃধাশ্রম এর দিকে । মাকে সাথে নিয়েই বাড়ী
ফিরব। প্রার্থনা করি, তুমি যেমন এই অনুভব সরকারের চোখ খুলে দিলে, মানুষ বানালে, শিক্ষক হয়ে
সেরকম ই তোমরা ছাত্র যুবকদের চোখ খুলে দাও। তাদের মানুষ কর। সেই সাথে তুমিও তোমাদের
পরিবারের পাশে দাঁড়াও। ছাত্রদের ও শেথাও মানুষ এর পাশে দাড়াতে। শিক্ষকরাই তো মানুষ গড়ার কারিগর।
টোটোওয়ালা – – Thank you sir. আমরা তো লড়ছি। দাঁতে দাঁত চেপে, হাতে হাত ধরে,মুঠো শক্ত
করে। তবে স্যার একটা কথা জানি, We shall overcome some day. চলুন স্যার, টোটো ওই দিকে।
অ: স:- দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। সব ঝড় থেমে যাবে।
[ গান একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে ]
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaushik Majumdar |
Intro & Ending | Olivia Das |
Characters | Name |
---|---|
Janoiko Bekti | Debansh Ghosh |
Totowala | Joydeep Lahiri |
Bhujiyawala | Surojit Mukherjee |
Find us on Facebook – click here
Khub valo golpo ta