অসমাপ্ত শিক্ষা

Views: 156

অসমাপ্ত শিক্ষা:

রোজই স্বেতা সকাল ৯টা ২২ এর ট্রেন তা ধরে অফিস এ যায় , এবং প্রায়শই মেয়েটাকে ট্রেন এ দেখে। আজও সে দেখতে পেলো মেয়েটিকে। মেয়েটির বয়স হবে এই আন্দাজ ১০ থেকে ১১ বছর। মেয়েটিকে দেখতে খুবই সাধারণ।  সাধারণ অর্থে এই যে যেমন ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েগুলো ট্রেন এ বা রাস্তা তে ফেরি করে তাদের যেমন দেখতে হয় ঠিক তেমন দেখতে। এই মেয়েটি ট্রেন এ আমলকি বিক্রি করে।

 কিন্তু স্বেতা দেখেছে যে এই মেয়েটির মধ্যে কেমন যেন একটা কৌতূহলী ভাব। স্বেতার যে কলিগরা ওর সাথে যাতায়াত করে তারাও লক্ষ করেছে মেয়েটির এই রকম ভাব।  বিশেষ করে মেয়েটি যেন শুধু  স্বেতার দিকেই তাকিয়ে থাকে আর তার কথা হাঁ করে শুনতে থাকে।

স্বাগতা দি স্বেতার থেকে অনেক অভিজ্ঞ আর বয়স ও অনেক বড়।

সে বললো “দেখ স্বেতা মেয়েটা হা করে তোর কথা কি এতো শুনছে বলতো ?”

শুনে স্বেতা বললো “হ্যাঁ ঠিক বলেছো স্বাগতা দি আমিও লক্ষ করেছি।”

এবার স্বেতা বাচ্ছা মেয়েটিকে ডাকলো, “এই শোন্ এইদিকে? তোর নাম কী?”

মেয়েটিও তাড়াতাড়ি স্বেতার কাছে এসে বললো, “আমার নাম রিমলি।”

মেয়েটির কথা বলার ধরন বেশ ভালো লাগে স্বেতার, বিশেষ করে মেয়েটির চোখ দুটো দেখলে মনে হয় যেন অনেক কথা বলতে চাইছে। এরপরের কথাটা স্বেতা আর জিজ্ঞাসা করতে পারলো না রিমলিকে। কারণ একটাই আজও আমরা শুধু শিক্ষিত সমাজ কে আরও  শিক্ষিত করে তুলছি কিন্তু রিমলির মতো যেই বাচ্ছা ছেলেমেয়েগুলো আজও শুধু মাত্র দুটো ভাতের জোগাড় করতে করতে এই ছোট্ট বয়স থেকে নিজেদের শৈশব কে নষ্ট করে, ভবিষ্যৎ নষ্ট করে আজ রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে বেড়াচ্ছে।  

কিন্তু তাও স্বেতা জিজ্ঞাসা করেই ফেললো কথাটা, ” রিমলি? তুই কি স্কুলে পড়িস?” এরপরের উত্তরটা শোনার জন্য স্বেতা একদমই প্রস্তুত ছিল না।

রিমলি বললো, “হ্যাঁ দিদি আমি স্কুল এ পড়ি তো, ওই যে আমাদের পাড়াতে একটা নৈশ্য বিদ্যালয় আছে, সেখানেই আমি যাই রোজ। আজও যাবো,বিকালের পর আমি আর ফেরি করি না। কিন্তু সকালে ফেরি করতে বেরোতেই হয়; যেন দিদি নাহলে রাতে আমাদের রান্না হবে না,আসলে আমার বাবার খুব শরীর খারাপ,বাবা কাজ করতে পারে না তো,তাই আমাকে আর মাকে কাজ এ বেরোতে হয়।আমার একটা ছোট বোনও আছে ও আমার সাথে ও রাতে স্কুল এ যায়।” এই অবধি বলে রিমলি থামলো।

স্বেতা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো, “খুব ভালো কথা তো এটা। শোন্ রিমলি এই নে আমার ফোন নাম্বার, কোনো যদি দরকার হয় সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন করবি কেমন। এখন আমাকে দুটো আমলকির প্যাকেট দে। “আর এই বলে স্বেতা রিমলিকে ৫০ টাকার একটা নোট বার করে হাতে দিলো। রিমলি এরপর বললো, “দিদি আমার কাছে তো খুচরো নেই, তুমি কাল কে আমাকে ১০ টাকা দিও।”

স্বেতা এরপর বললো, “খুচরো তোকে দিতে হবে না আমি তোকে এমনি দিলাম, তুই এটা দিয়ে তোর যা পছন্দ তুই কিনিস কেমন।” এই কথাটা  বলার পর স্বেতা ওই সরল মেয়েটার মুখ এ যে হাসি টা  দেখতে পেলো তাতেই যেন স্বেতার সারাদিন এর অনেক টা  কাজের শক্তি সঞ্চয় করে নিলো। এরপর স্বেতা নিজের স্টেশনে নেমে গেলো। মেয়েটিকে বড় ভালো লেগেছে স্বেতার। ফেরার সময় স্বেতা আর রিমলিকে দেখতে পেলো না।পরের দিন  আবার স্বেতা একই ট্রেন এ উঠলো কিন্তু রিমলিকে আর দেখতে পেলো না।

ফেরার পথ এ রিমলির সাথেই থাকে রিমলির বয়সী একজনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো স্বেতা, “এই  শোন্ রিমলি কোথায়?ও কি আজকে আসেনি?

এই কথা তা শুনেই মেয়েটা কেঁদে কেঁদে বলে উঠলো, “দিদি তুমি জানো না !! রিমলি কাল কে  বিকালে বাড়ি ফেরার পথ এ ট্রেনে কাটা পড়েছে।”

কথাটা সোনার পর স্বেতার যেন পা এর তলা  থেকে মাটি সরে গেলো। মনে মনে  ভাবলো প্রকৃত যারা শিক্ষার আলোতে আলোকিত হতে চায় ভগবান বোধহয় এমন ভাবেই  তাদের নিজের কাছে টেনে নেয়।….সবার অলক্ষে স্বেতার  চোখেও  জল চলে এলো। 

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterOlivia Das
NarratorOlivia Das
IntroductionPriyanka Dutta
CharactersName
Sweta,SwagataShreya Lahiri
RimliTanisha Ghosh
Rimlir BondhuAnkita Mukherjee

https://www.facebook.com/srijoni

আরো পড়ুন

 

 

What’s your Reaction?
+1
5
+1
3
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

3 thoughts on “অসমাপ্ত শিক্ষা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *