মর্তের হাওয়া স্বর্গে
Views: 26
মর্তের হাওয়া স্বর্গে:
[চারিধারে উঁচু উঁচু পর্ব্বত। মাঝে সমতল জায়গা। একটি ইজিচেয়ারে মহাদেব শুয়ে আছেন। হাতে তাঁর ধরা একটি কল্কে। পায়ের তলায় চেলা নন্দী বসে মহাদেবের পা মর্দন করছে। সময় – সকাল ]
মহাদেব – “হ্যাঁ রে, – নন্দে” (কিছুক্ষন পাশের দিকে চেয়ে)
নন্দী – “জো হুকুম প্রভু ?”
মহাদেব – “দেখ শালা ষাঁড়টা কেমন খড় খাচ্ছে মনের সুখে। আর শালা আমরা অমন করে খেতে পাই না। খড়ের কত দর হল রে ?”
নন্দী – “আজ্ঞে হুজুর ১৪ টাকা একপন খড়।”
মহাদেব – “হুঁ, একেবারে গলাকাটা দর নেয় রে।” (জোরে কল্কেতে টান দেন)
(নারদের প্রবেশ)
নারদ – (নেপথ্যে) মামা-মামা আছ নাকি গো। এই যে এখানেই আছো দেখছি।
মহাদেব – আরে ভাগ্নে যে। এস-এস। নন্দী, একটা চেয়ার নিয়ে আয় তো।
নারদ – আ-হা, না না চেয়ার দরকার হবে না। আগে তো আর এ সবের চল ছিল না। আজকালই যা হয়েছে। এখন আমার ততটা রপ্ত হয়নি অ্যাঁ-হ্যাঁ যা বলতে এসেছিলাম। অ্যাঁ নন্দে যে, এ্যাই তুই বেটা আবার সঙের মতন দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যাঃ-পালা।
(নন্দীর প্রস্থান)
মহাদেব – হ্যাঁ কি বলতে এসেছিলে ভাগ্না?
নারদ – এই এবারও মামীকে মর্ত্যে পাঠাবার ব্যবস্থা করছো না?
মহাদেব – হ্যাঁ – প্রতি বছর যখন যায় তখন তো………
নারদ – না-না মামা প্রতি বছরের কথা ছেড়ে দাও। এ বছর আর যেতে দিও না।
মহাদেব – কেন বলতো ভাগ্না?
নারদ – মর্ত্যের খবর তুমি কি কিছুই জানো না?
মহাদেব – জানোই তো বাতের জন্য বিশেষ চলাফেরা করতে পারি না। তা কি ব্যাপার মর্ত্যে?
নারদ – আর তোমায় কি বলবো মামা। এবারে মর্ত্যে গিয়ে কোন রকম প্রাণটা নিয়ে ফিরে বাঁচি।
মহাদেব – সে কি ভাগ্না, কি ব্যাপার বলই না খুলে।
নারদ – উঃ আর কি বলবো মামা। মর্ত্যে গিয়ে দেখি, একভাগ লোক ঠেলাঠেলি, মারামারি করে কোনরকমে বাঁচার চেষ্টা করছে। আর একভাগ লোক টাকার গদির ওপর বসে আছে। তাদের, আমাদের গনেশের চেয়েও ভুঁড়ি হয়ে গেছে।
মহাদেব – তাই নাকি?
নারদ – তবে আর বলছি কি। আরও আছে, শোনো না। বাজারে চালের ডালের এমনকি দেশলাই বিড়ির কি আগুন ছোঁয়া দর।
মহাদেব – য়্যাঁ —–
নারদ – য়্যাঁ নয় হ্যাঁ। আর জিনিস, আমি একটা বিড়ি খাবো বলে একটা দেশলাই কিনতে গেলাম। একটা দেশলাই ২০ পয়সা দাম। কাঠি ঘষতে গিয়ে দেখি বারুদ নেই। যে দিকটা আছে, সেদিকে ঘষতে গিয়ে কাঠির মাথার বারুদই উড়ে গেল।
মহাদেব – তারপর?
নারদ – তারপর রেশনে পচা চাল পচা গম ভিজে চিনি তাও আবার ডিউ স্লিপ দিচ্ছে। বাজার চিনি প্রায় পাওয়াই যাচ্ছে না। আর কত বলবো মামা, বলতে গেলে একদিনে ফুরাবে না। শুধু জেনে রাখো কাঁচকলাটাই যা ওজন হয়নি, আর কথার ওপর শুধু ট্যাক্স বসেনি। তারপর মেয়েরা যদি এক হাত গয়না পরে রাস্তায় বেরোয় সঙ্গে সঙ্গে ছুরি দিয়ে এক কোপ বসিয়ে হাতটা কেটে নিয়ে চলে যাবে।
মহাদেব – য়্যাঁ – ভাগ্না – ।
নারদ – হ্যাঁ মামা, শুনেই তুমি আঁতকে উঠলে, আমি নিজে চোখে দেখে এসেছি। তারপর তো চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই লেগেই আছে। আর খুন অর্থাৎ মানুষ মারা। মামাগো, কচুগাছ কাটতে সময় লাগে কিন্তু মানুষ কাটতে সময় লাগে না। আর এগুলোকে নাকি আজকাল রাজনীতি বলে। লেখা – পড়ার পাঠ উঠে গেছে। মেয়েদের সন্মান নেই। ঞ্জানিগুণীদের সন্মান নেই।
মহাদেব – হুঁ, তাহলে অনেক দূর গেছে, কি বল ভাগ্না?
নারদ – এখনো চুপ করে বসে দেখো মামা, আরও অনেক দূর গড়াবে। এখনো মানুষের চেতনা আসেনি। এখনোও আলেয়ার আলোকে চিনতে পারেনি।
মহাদেব – না ভাগ্না, ওদের জীবন থেকে যখন আনন্দ ফূর্তি চলে গেছে, তখন শীঘ্রই ওরা চিনতে পারবে।
নারদ – ফূর্তি চলে গেছে বল না মামা, পেতে ভাত নেই তবু শখ আছে চোদ্দ আনা।
মহাদেব – কি রকম?
নারদ – সেদিন কলকাতার রাজপথ দিয়ে আসছিলাম, দেখি কোন এক সিনেমা হলের সামনে ভীষন ভীড়। থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। উঃ কি ভীড় মামাগো, কি বলবো। হঠাৎ একটা ছেলে আমার কাছে আসে বলল, – “স্যার আমার এই ঘড়িটা রেখে ২০ টাকা দেবেন? একটা টিকিট কাটবো” আমি অবাক হয়ে বলি, – “কিসের টিকিট দাদা?” ছেলেটি অবাক হয়ে বলে, “সেকি স্যার জানেন না, হলে যে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম এসেছে।” খুশি হয়ে বলি,- “তাই নাকি ! মহাদেবের বই?” ছেলেটি বলল – “দূর মশাই, মহাদেবের কেন জীনাত-জীনাতের বই। দিন – দিন টাকাটা দিন তো বড্ড দেরী হয়ে যাচ্ছে।” আমি বললাম, – “তা ঘড়িটা তোমার? বাবার কাছে টাকা চাইলে না কেন?” ছেলেটি বলল, – “না না ঘড়ি আমার নয়, বাবার। চাকরী বাকরী করি না, বেকার পয়সা নেই। বাবার কাছে চেয়েও পেলাম না। তাই বাবার ঘড়ি টাই নিয়ে এলাম।” আমি বলি শুনে, – “না দাদা আমারও টাকা নেই।”
মহাদেব – আশ্চর্য্য, তারপর?
নারদ – তারপর আর কি? ছেলেটি স্যার থেকে শালায় তুলে চলে গেল। তখন পাশ দিয়ে কতকগুলো মেয়ে বউ যাচ্ছিল। তার ভেতর থেকে একজন ভদ্রমহিলা বয়স ধর গো ৪৫/৫০ হবে। তিনি একজনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, – “ওরে পলি, পর পর তিন দিন ঘুরে গেলাম টিকিট না পেয়ে। আর বাঁচবো না। মরবার সময় ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ বলে মুখে একটু জল দিস।”
মহাদেব – (খুশী হয়ে) তাহলে বলো আমার নাম করে মরবে। আহা আমার একনিষ্ঠ ভক্ত।
নারদ – আঃ নাগো মামা না। তোমার নাম নয়। ঐ সিনেমার নাম তা করে মরবে।
মহাদেব – য়্যাঁ – কি বলছো ভাগ্না?
নারদ – হায় আর কি বলছি। সেই জন্যই তো বারন করতে এসেছি। বলছি, এ বছর থেকে মামীদের আর মর্ত্যে যেতে দিও না।
মহাদেব – ঠিক বলেছো ভাগ্না, তুমি আমার খুবই উপকার করেছো। না না আর ওদের কখনও যেতে দেবো না। এই তোমায় বলে রাখলাম। দেখে নিও।
নারদ – বেশ বেশ। (চাপা গলায়) কিন্তু মামা, আমি যে তোমায় বলেছি এ কথা যেন মামীকে বল না।
মহাদেব – ওরে রমেশচন্দ্র। নিশ্চিন্তে থাকো। নন্দে -নন্দে —
নারদ – হেঁ – হেঁ তবে আমি মামীর সাথে দেখা করে আসি কেমন। (প্রস্থান) [নন্দীর কল্কে হাতে প্রবেশ]
মহাদেব – (দুবার কল্কেতে টান দিয়ে) হুঁ, নারদ যা বলে গেল ঠিকই। উঁ হুঁ এ অবস্থায় ওদের যেতে দেওয়া যায় না।
(দূর্গার প্রবেশ)
দূর্গা – এ কি, তুমি আবার ঐ কল্কে ‘আই মিন’ গাঁজা খাচ্ছো?
মহাদেব – না-মানে- এই —— (লুকোবার চেষ্টা) [নন্দী হাত দিয়ে ধোঁয়া তাড়াবার চেষ্টা]
দূর্গা – তোমায় কতদিন না বারন করেছি, ঐ সব গাঁজাটাজা খাবে না। বর্মা চুরুট খাবে না হয় মার্কোভিচের সিগারেট খাবে। তাতে বেশ ‘স্মার্ট’ লাগে।
মহাদেব – আচ্ছা এবার থেকে খাবো।
দূর্গা – হ্যাঁ, দেখ। এবারে কিন্তু লক্ষ্মী সরস্বতীকে তাঞ্চুরী কিনে দেবে, আমার জন্য একটা ‘সাউথ ইন্ডিয়া’।
মহাদেব – য়্যাঁ, তুমি ‘সাউথ ইন্ডিয়া’ পড়বে?
দূর্গা – কেন কি হয়েছে? কি এমন বুড়ো হয়েছি। তুমি ৪২০, আর আমি ৩০৩। না কিনে দিলে মাথা খুঁড়ে মরবো বলে দিলাম।
মহাদেব – আহা আর কি চাই বল?
দূর্গা – আমাদের জামাই নারায়ন, আর ছেলে দুটো কার্ত্তিক গনেশ এর জন্য ভালো দামী প্যান্টের কাপড় কিনে ‘বেলবটস’ করাতে হবে।
মহাদেব – কেন, কেন সেনগুপ্ত ধুতিই তো বেশ ভাল।
দূর্গা – ছিঃ ধূতি? ও আবার মানুষে পরে। সে সব পরে আগেকার গেঁয়ো ভূতরা। আমরা এখন পাশ্চাত্ত্য দেশের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে যে সভ্যতার আলো ছড়িয়েছি, তাতে ‘বেলবটস’ না হলে চলে না। আমি তো ভাবছি এবার থেকে লক্ষ্মী সরস্বতী কে ‘বেলবটস’ পড়াব।
মহাদেব – য়্যাঁ সেকি না-না লক্ষ্মী সরস্বতী থাক এখন। ওদের আগে হক। দাঁড়াও, একটা খাতা পেনসিল নিয়ে আসি। আর কি লাগবে লিখে নেবো। নন্দী যা খাতা পেন নিয়ে আয়। (নারদের প্রবেশ) (নন্দীর প্রস্থান)
নারদ – আরে মামী তুমি এখানে আর আমি সাড়া পাড়া ঘুড়ে বেড়াচ্ছি।
মহাদেব – এই যে ভাগ্না, তুমি মামীর সাথে একটু কথা বল আমি একটু আসছি। (কাছে সরে এসে) (কানে কানে) এসব দিয়ে যদি যাওয়াটা আটকানো যায়। (প্রস্থান)
দূর্গা – সে কি পাড়ায় খুঁজছো কেন ভাগ্না?
নারদ – বাঃ রে ! তুমি তো সব সময় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াও।
দূর্গা – ঘুরে বেড়াই না। পাড়াপড়শীদের খোঁজ খবর রাখি। সেকি খারাপ নাকি? ভাবছি এবার বাপের বাড়ী থেকে আসার পর, এখানে একটা ‘মহিলা সমিতি’ খুলবো।
নারদ – না না মামী খারাপ নয়। খুব ভাল, খুব ভালো, যাক যা বলতে এসেছিলাম।
দূর্গা – কি কথা ভাগ্না?
নারদ – (চুপি চুপি) মামার কথা কিছু শুনেছো তুমি?
দূর্গা – কই না তো? কি বলেছে?
নারদ – তোমাদের এবারে মর্ত্যে যেতে দেবে না।
দূর্গা – য়্যাঁ – সেকি? কেন?
নারদ – হ্যাঁ গো মামী। আজকাল মর্ত্যে নাকি চুরি ডাকাতি খুন ছিনতাই লেগেই আছে। তোমরা গয়না পড়েগেলে ছিনতাই হবে। সিনেমা হলে হলে সব খারাপ ছবি রিলিজ হয়েছে। তা দেখে কার্তিক গনেশ খারাপ হয়ে যাবে। এই সব, আরও কত কি বলছিল।
দূর্গা – (রেগে) বটে। তারপর?
নারদ – তারপর আর কি? আমি কত বললাম, না মামা অমত করো না, মামী মাত্র বছরে তিনদিনের জন্য বাপের বাড়ী যায়। কোন ক্ষতি কিছুই হবে না, যেতে দাও। নইলে ছেলে পিলেরা মামী মনে বড় ব্যাথা পাবে। কিছুতেই কিছু নয়। শেষে রেগে গিয়ে আমায় শুধু মারতে বাকি রেখেছে।
( চোখ মুছতে মুছতে ) না মামী, আমার কি, শুধু ছেলে মেয়েদের মুখ চেয়ে আর তোমার কথা ভেবেই না না মামা অত করে মত করাতে চেয়েছিলাম। আজ না হক এতখানি অপমান সইতে হল। আর কখনো তোমাদের বাড়ীতে আসবো না।
দূর্গা – না বাবা নারদ। তুমি কেঁদো না। বুড়ো হয়েছেন উনি কি বলতে কি বলেছেন। তুমি কিছু মনে করো না। বাবা, আমি তোমার মামাকে বলবো খন।
নারদ – (লাফিয়ে উঠে) কি বলছো মামী। না – না আমি কিছু মনে করবো না। কিন্তু মামা কে কিছু তুমি বলো না। ছিঃ ছিঃ তাহলে মামা বড় মনে আঘাত পাবেন। বুঝেছো মামী। মামাকে খবদার কিছু বলো না যেন।
দূর্গা – আচ্ছা বেশ বলবো না। কথা দিলাম।
নারদ – পায়ের ধূলো দাও মামী। পায়ের ধূলো দাও। বেশ এবার তাহলে আমি চলি। কেমন, আবার পরে আসবো। (প্রস্থান)
(মহাদেবের প্রস্থান) (পিছনে নন্দী হাওয়া করতে করতে)
মহাদেব – এই যে নারদ চলে গেছে দেখছি। হ্যাঁ , তোমায় একটা কথা বলছিলাম। উঃ কি গরম করছে।
দূর্গা – কি কথা শুনি ?
মহাদেব – না এমন কিছু কথা নয়। বলছিলাম, যে এবারে তোমাদের মর্ত্যে যাওয়া হবে না।
দূর্গা – কেন? ‘হোযাই ‘ বল, বল?
মহাদেব – দেখো দেবী। আজকাল মর্ত্যে বড্ড খারাপ হয়ে গেছে। চারিদিকে চুরি, ডাকাতি হচ্ছে। এমনকি মেয়েরাও ব্যাড যায় না। তার ওপর খুন তো লেগেই আছে। তোমরা যে সোনাদানা পরে যাবে, চেয়ে ওরা না পেলে কান, নাক, হাত কেটে নিয়ে যাবে। তখন তোমায় নিয়ে ঘর করবো কি করে।
দূর্গা – কি বললে ? প্রকাশ্য দিবালোকে, আমাদের হাত পা কেটে নিয়ে যাবে?
মহাদেব – আহা, দিবালোকে চাইবে কেন, – জানোই তো মর্ত্যে কেমন লোডশেডিং চলছে। নৈশ্যলোকে কাটবে।
দূর্গা – ও সব বাজে প্রলাপ তোমার থামাও। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। আমি যাবোই।
মহাদেব – দেখ দেবী, অবুঝ হও কেন। আমার কথা চিন্তা কর।
দূর্গা – না -না। আমার মাথায় একমাত্র চিন্তা আমি যাবোই। তুমি যেতে দেবে কিনা ?
মহাদেব – (গম্ভীর হয়ে) না দেবী। আমি নিরুপায়।
দূর্গা – আচ্ছা, এই আমি ‘ফলিডল’ খেতে চললাম। এ মুখ আর তুমি দেখতে পাবে না। (সক্রন্দনে প্রস্থান)
মহাদেব – হাঃ দেখ দেখি কি বিপদ। উঃ – আঃ (কোমরে হাত দিয়ে) দেবী – দেবী শোন – শোন। (প্রস্থান) (নন্দীরও প্রস্থান হাওয়া করতে করতে)
(কার্ত্তিক ও গনেশের প্রবেশ। গনেশের গলায় একটা মাফলার জড়ান)
কার্ত্তিক – আজ ভালো আছিস তো দাদা ? গলার ব্যাথা কম হয়েছে ?
গনেশ – নারে কাতু। ব্যাথা একটু কমেছে কিন্তু ঘাড়টা নাড়াতে একটু কষ্ট হচ্ছে।
কার্ত্তিক – তা একটু হবে দাদা। যা কেউ আজ পর্যন্ত করতে পারে নি তাই তুমি করেছো। কোথায় স্বর্গের কৈলাশ, আর কোথায় ভিয়েনা। সেখানে গিয়ে তুমি তোমার ওই হাতির মাথা গলা থেকে কেটে উড়িয়ে দিয়ে আবার মানুষের মাথা জোড়া দিয়ে এলে। একি কম কথা।
( সবেগে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর প্রবেশ )
সরস্বতী – কাতু, কাতু, জানিস, বাবা নাকি এবারে মর্ত্যে আমাদের যেতে দেবে না।
গনেশ+কার্ত্তিক – সে কি ? কেন ?
লক্ষ্মী – নারদদা, কি বলল কে জানে, সেই থেকে বাবা গোঁ ধরেছে, যে আমাদের মর্ত্যে এ বছর কেন আর কোনও বছরই যেতে দেবে না।
কার্ত্তিক – তা মা কি বলছে?
সরস্বতী – মা তো বাবাকে অনেক করে বোঝেছে।
কার্ত্তিক – (পায় চারি করতে করতে) না না এ হতে পারে না। আমাকে মর্ত্যে যেতেই হবে।
গনেশ – হুঁ সবারই মর্ত্যে দরকার। তা কাতু তোর কি কাজ আছে মর্ত্যে ?
কার্ত্তিক – মর্ত্যে কয়েকটা বই সুটিং করতে করতে বন্ধ হয়ে আছে। আমারই জন্য। দুটিতে আমিই হিরো। একটা বই পরিচালনা করতে হবে। ওদের কথা দিয়ে এসেছি। তা ছাড়া সরকারের কাছে আবেদন পাঠিয়েছি যে, সিনেমা টিকিটের দাম বাড়াতে হবে। ছেলেদের চুলের কয়েকটা ফ্যাশন বার করতে হবে। ঝুলপি হবে নানান ডিজাইনের। না গেলে এ সব হবে কি করে ?
গনেশ – হুঁ, আমার যাওয়া আরও জরুরী। বড় বাজারে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কথা দিয়ে এসেছি, আমি আসবো। তাদের সাথে জরুরী মিটিং আছে। সরকারের কথা মত কতকগুলো জিনিসের দাম বাড়াতে হবে। কেরোসিন তেল এখন বাজারে ছাড়তে মানা করতে হবে। একটু দামটা বাড়লে তবে ছাড়বো। আর কয়েকটা জিনিসে ভেজাল মেশাতে হবে। কিন্তু বাবা না যেতে দিলে তো মুশকিল হবে।
সরস্বতী – আমারও ভীষণ দরকার মর্ত্যে। কি যে হবে?
লক্ষ্মী – তোর আবার কী দরকার?
সরস্বতী – সে তুমি বুঝবে না দিদি। জামা প্যান্টের কয়েকটা নতুন কাটিং জানাতে হবে। কতকগুলো গানের নতুন সুর দিতে হবে। সে সব গানে কথা কম। শুধু হা-হা লা-লাই থাকবে। তাছাড়া শাড়ী ও ধুতি বাজার থেকে তুলে দেবো ভাবছি। চশমার কাঁচের সাইজটা আর একটু বড় করবো। লেখা পড়ার মান আরও একধাপ নামিয়ে দেবো। (একটু থেমে) তা তোমার কি দরকার বললে না দিদি?
লক্ষ্মী – কি আর বলব? যাওয়া হবেই না যখন।
গনেশ – কে বলেছে হবে না যাওয়া। আমাদের সব অসুবিধা গুলো বাবাকে বললে, বাবা হয়তো মত দেবেন।
কার্ত্তিক – You are right. না হলে ঘেরাও।
লক্ষ্মী – (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আমায় মর্ত্যে যেতে হবে চাষীদের কাছে। তারা ফসল যাতে বাড়াতে পারে সে রকম সারের কথা বলতে হবে। এই যে সরকার থেকে সার দিচ্ছে। তা জমিতে দিলে একবারের জায়গায় তিনবার ফলন পাবে তারা। বৈজ্ঞানিকদের বলতে হবে কয়েকটি কথা। ভারতে খাদ্যের ঘাটতি পড়েছে। সে জন্য কৃত্রিম উপায়ে খাদ্য বাড়াতে হবে। তা সেই খাদ্য ভিটামিন থাকুক আর নাই থাকুক। চাষীদের জমির ওপর ট্যাক্স বাড়াতে হবে। আর বলতে হবে। তারা যেন ফসলের সবটাই মজুতদারদের দিয়ে দেয়। আর কালো বাজারদের একটু সাবধান করে দিতে হবে। চারিদিকে নীচের তলা থেকে ওপর তলা পর্যন্ত তারা যেন ভালভাবে ঘুষ দিয়ে রাখে। সে জন্য আমায় যেতেই হবে। কিন্তু বাবা যে ফ্যাসাদ বাধালো। কি করি তাই ভাবছি।
সরস্বতী – ভেবে আর কি হবে। চল বাবাকে গিয়ে সবাই বুঝিয়ে বলি।
কার্ত্তিক – ঠিক কথা। না মত দিলে তখন অন্য ব্যবস্থা।
গনেশ – হ্যাঁ সেই ভাল। চল সবাই।
[সকলের প্রস্থান] [মহাদেব ও দূর্গার প্রবেশ]
মহাদেব – (হাঁপাতে হাঁপাতে) শোন – দেবী। কেন অবুঝ হচ্ছো। আমি তোমায় ভালর জন্যই বলছি। কার্ত্তিক গনেশ লক্ষ্মী সরস্বতী ওরা আজকাল কার ছেলে মেয়ে। ওখানে গিয়ে ওরা কি করতে কি করবে বলা যায়।
দূর্গা – কেন কি করবে ওরা শুনি। নানা কিছুই করবে না। দুদিন ঘুরে বেড়ান ছাড়া আর কিছু ওদের মনে নেই। তুমি ফালতু কথা বলছো।
মহাদেব – না না দেবী, তা হয়-না। আমি কি ফালতু লোক যে ফালতু কথা বলবো। না যাওয়া হবে না।
দূর্গা – তবে আমি গলায় দড়ি দেবো।
মহাদেব – দিতে পারো। তবু যাওয়া তো বন্ধ হবে।
দূর্গা – কি এত বড় কথা। এই তুমি আমায় ভালোবাসো? (হঠাৎ রেগে) আমি মরবার সময় লিখে যাবো, আমার মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী। তখন পুলিশ এসে তোমায় ‘গৃহবধূ হত্যার’ দায়ে জেলে দেবে। আর আমি, মৃত সঞ্জীবনী সুধা খেয়ে আবার বেঁচে উঠবো। তারপর ছেলে মেয়েদের নিয়ে মর্ত্যে যাবো আর তুমি জেলের ঘানি টানবে।
মহাদেব – ওরে বাবা, মর্ত্যে গিয়ে গিয়ে কি সাংঘাতিক হয়েছ তুমি। তবুও অনুমতি দেবো না।
(সদলবলে নন্দী ও কার্তিকের প্রবেশ)
মহাদেব – আরে নন্দী তুইও ওদের দলে?
নন্দী – আজ্ঞে আপনার জন্য ভাল সিগারেট আনতে হবে মর্ত্য থেকে।
কার্তিক – না বাবা অনুমতি তোমায় দিতেই হবে। না দিলে আমাদের খুব অসুবিধা হবে।
মহাদেব – (গম্ভীর হয়ে) কি অসুবিধা?
সরস্বতী – সে অনেক অসুবিধা বাবা। সে তুমি বুঝবে না। মর্ত্যে আমাদের অনেক কাজ আছে। না গেলে মর্ত্যের লোকেদের সমূহ ক্ষতি হবে।
মহাদেব – কার কতটা ক্ষতি হবে কি লাভ হবে জানি না। তবে আমার এক কথা তোমাদের যাওয়া হবে না।
কার্তিক – বন্ধুগন ! দেশের জনগনের ক্ষতি মানে দেশের ক্ষতি। দেশের ক্ষতি হলেই বিপদ তাহলে আমাদের সামনে। দেবাদি দেবের সে দিকে কোন দৃষ্টি নেই নিজের স্বার্থের দিকে নজর। সে জন্য তিনি দেশের শত্রু অর্থাৎ আমাদের শত্রু। এস তাঁকে আমরা ২৪ ঘন্টা ঘেরাও করি।
(সকলে মিলে মহাদেবকে ঘিরে)
সকলে – আমাদের দাবী মানতে হবে নইলে স্বর্গ ছাড়তে হবে।
মহাদেব – ওরে – নিজের ছেলেমেয়ে বাপকে ঘেরাও করছে। মর্ত্যের হাওয়া স্বর্গেও লাগল। হায় – হায় এ কি হল। না না বাবারা তোরা যাস। তোদের যা খুশি তাই কর। আমি আর বারন করবো না।
(উল্লসিত হয়ে সকলে)
কার্তিক – হুর-রে- থ্রি চেয়ারর্স ফর বাবা
সকলে – হিপ – হিপ হুর রে।
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Narrator | Olivia Das |
Introduction | Priyanka Dutta |
Characters | Name |
---|---|
Mahadeb | Joyeep Lahiri |
Durga | Olivia Das |
Narod | Souradip Roy |
Nandi & Gonesh | Debanshu Ghosh |
Swaraswati & Others Characters | Priyanka Dutta |
Laxmi | Susmita Ghosh |
Kartik | Soumik Banerjee |
Find us on Facebook – click here