ভিলেন নেই
Views: 15
ভিলেন নেই:
হাজরা বেড়ে একই পাড়ায় পাশাপাশি দুই বাড়ি। বোস অর্থাৎ বসু বাড়ি আর ঘোষ বাড়ি। বোস বাড়ির কর্তার নাম বেণীমাধব বসু। আর ঘোষ বাড়ির কর্তার নাম সর্বানন্দ ঘোষ।
সর্বানন্দ বাবু সত্যি অমায়িক লোক। আর বেণীমাধব বাবু বেশ রাশভারী লোক। তবে দুজনের মধ্যে ভারী ভাব ,দুজনে যাই কাজ করুক না কেন দুজনের মতামত একই থাকে। দুজনেই ছোটবেলা কার বন্ধু। দুই বাড়ির মধ্যে ভারী ভাব, মেলামেশা ,খাওয়াদাওয়া, ঘোরা বেড়ানো সবই একসাথে। বেনীমাধব বাবু ও সর্বানন্দ বাবু দুজনেরই ব্যবসা। দুজনের ব্যবসার অবস্থাই বেশ ভালো। বেণীমাধব বাবুর দুই ছেলেমেয়ে ,ছেলে বড় শুভজিৎ আর মেয়ে ছোট নাম মিতা। সর্বানন্দ বাবুরও দুই ছেলেমেয়ে ,মেয়ে বড় নাম রিমা আর ছেলে ছোট নাম দেবজিৎ।
বেণীমাধব বাবুর বড়ছেলে শুভজিৎ ,তাকে সবাই শুভ বলে ডাকে। সে এম কম পাশ করে বাবার সাথে ব্যবসা দেখাশোনা করে কিন্তু বড়ো খরুচে স্বভাব মানে যেমন রোজগার করে তেমন ওড়ায় ,প্রচন্ড হুল্লোড় প্রকৃতির। কিন্তু ছোটমেয়ে মিতা খুব শান্ত স্বভাবের; নিজের পড়াশোনা নিয়ে থাকে ,খুব সুন্দর আঁকার হাত, উচ্চমাধ্যমিক পড়ছে।
সর্বানন্দ বাবুর মেয়ে বিএস সি পাশ করে বি এড পড়ছে ;ওর ইচ্ছা স্কুল টিচার হবে। এখন একটা প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়ামে অস্থায়ী টিচারের কাজ করে। শুভজিৎ আর রিমার বয়সের ফারাক মাত্র তিন বছর। ছোট ভাই দেবজিৎ বি কম পড়ছে ,পড়াশোনায় মা স্বরস্বতী। বাবা সর্বানন্দ বাবু চায় ছেলে ওনার ব্যবসায়ে যোগ দিক। ছেলে বলেছে পড়াশোনা শেষ হলেই যোগ দেবে।
এ তো গেল ওদের বাড়ির পরিচয়। একটা দুঃখের বিষয় হলো সর্বানন্দবাবু স্ত্রী নেই। ছোট ছেলে হবার সময় তিনি মারা যায়, বড় মেয়ে রিমা একা হাতে এই সংসার সামলেছে।ছোট ভাইকে মায়ের মতন আগলে মানুষ করেছে, মায়ের অভাব কোনদিনও বুঝতে দেয়নি দেবুকে, শুধু দেবু নয় ও বাড়ির অর্থাৎ বেণীমাধব বাবুর ছোট মেয়ে মিতাকেও দেখভাল করেছে কারণ বেণীমাধব বাবুর স্ত্রী চিররুগ্ন। তারও সেবা করে রিমা, দুবাড়ির দেখাশুনার কৃতিত্ব রিমার। বেণীমাধব বাবুর স্ত্রী রিমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। তার মনের ইচ্ছা বলুন আর আশাই বলুন তা চাপাই থাকে। প্রকাশ করতে পারেন না। আবার দেবজিৎ ওরফে দেবু ওর একটু দুর্বলতা আছে মিতাকে ঘিরে। মিতাও চায় দেবুকে।
বেনীমাধব বাবুর এক শালা অর্থাৎ ওনার স্ত্রী সুপ্রিয়া দেবীর ভাই থাকেন বর্ধমানে। উনি অর্থাৎ সুপ্রিয়া দেবীর ভাই মনোহর বাবু প্রতিমাসের প্রথম দিন আসেন বেণীমাধব বাবুর বাড়ি বোনকে দেখতে, বিরাট অবস্থা তার। চাষাভুষো মানুষ। নিজের চালের ফ্যাক্টরি আছে দু-দুটো। মনোহর বাবুর একটি মেয়ে তুলি, দেখতে বেশ সুন্দরী, কিন্তু একটু শরীর স্বাস্থ্য মোটা, তুলি আবার দেবুকে পছন্দ করে , কিন্তু দেবু সেটা চায় না। তুলিকে মাঝে মাঝে তুলোর বস্তা বলে ডাকে। আর তুলি খুব রেগে যায়। বেনীমাধব বাবুর স্ত্রী সুপ্রিয়া দেবী বাপের বাড়ির সম্পত্তির ভাগ নেননি। কিন্তু মনোহর বাবু সাচ্চা ব্যক্তি, তিনি প্রতি মাসে মাসে এসে বোনকে জমির কিছু ফসল, কিছু টাকা দিয়ে যান। মনোহর বাবুর ঐ একটিই বোন। মনোহর বাবুর স্ত্রী মীরা দেবীর বুদ্ধিতে এই ব্যবস্থা। তুলি কোন রকমে মাধ্যমিক পাস করেছে। আর পড়তে চায় না। বয়স ওই ১৮ বছর মিতার বয়সি, প্রতি মাসে বাবার সাথে আসে পিসির বাড়িতে।মনোহর বাবু মাসে এসে একদিন থেকে পরের দিন চলে যান, সেই রকম এবারে এই মাসে একলা মনোহর বাবু এসেছেন তুলিকে নিয়ে। সেদিন ছিল শুভজিৎ এর জন্মদিন।
বিকেলে চায়ের আসরে সবাই আছে, একদম জমজমাট। কথায় কথায় বিয়ের কথা ওঠে, সুপ্রিয়া দেবী বলেন
-“আমার শরীর দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এবার ভাবছি শুভর বিয়ে দেব।”
শুভ লাফিয়ে উঠলো।
-“মাথা খারাপ হয়েছে তোমার কারোর দেখায় আমি বিয়ে করবো না, আমি আমার পাত্রী নিজে দেখে বিয়ে করবো।”
মনোহর বাবু বললেন,
-“তাই নাকি ভাগ্না। তা পাত্রী দেখা আছে নাকি?”
সপ্রতিভ ভাবে শুভ বলে,
-“না না দেখা নেই,ভাবছি এবার থেকে দেখতে আরম্ভ করব।”
মনোহর বাবু হাসতে হাসতে বললেন,
-“নিজের যখন দেখবে দেখো, আগে আমার তুলি রানীর জন্য দেখো দেখি, গাঁয়েঘরে আবার বেশি ফেলে রাখতে নেই।”
দেবু বলে,
– “হ্যাঁ হ্যাঁ মামা বাবু তুলির বিয়ে দিন, আমারা কয়েকদিন একটু আনন্দ করি।”
তুলি লজ্জায় লাল হয়ে বলে
-“ধ্যাত।”
ছুটে অন্য ঘরে যেতে গিয়ে রিমার সাথে ধাক্কা খায়, রিমার হাতে চায়ের ট্রে ছিল। সামলে নিয়ে রিমা বলে,
-“এই তুলি সাবধানে।”
ঘরের একদিকে সর্বানন্দ বাবু আর বেনীমাধব বাবু কিছু কাগজপত্র নিয়ে কথা বলছিলেন। রিমার গলা পেয়ে সর্বানন্দ বাবু বলেন,
-“এই যে মা চা এনেছিস, আহ! বাঁচালি।”
রিমা চা দিতে দিতে দেবুর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কিরে কি বলছিস যে তুলি ছুটে পালাচ্ছিল?”
উত্তরটা শুভ দেয়,
– “না রে মামা বাবু তুলির জন্য পাত্র দেখতে বলেছে তাই তুলি লজ্জায় পালালো।”
বেণীমাধব বাবু ঘরের কোন থেকে বলে উঠলেন,
-“নাগো মনোদা আগে শুভর বিয়ে দিই তুলি একটু দাদার বিয়েতে আনন্দ করবে না, বাড়িতে বড় বৌদি না থাকলে ননদের বিয়ের দেখাশোনা করবে কে?” বলে হাসতে লাগলেন।
মিতা এতক্ষণ বসে বসে ছবি আঁকছিল। এবার মিতা বলে ওঠে,
-” কি যে বলো বাবা …. বৌদির ভরসায় থাকতে হলে তুলির আর বিয়ে হবে না।”
“কেন? কেন?”
বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে আসেন চায়ের কাপ হাতে সর্বানন্দ বাবু।
হাসতে হাসতে দেবু বলে,
-“শুভ দার স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ফেল মেরে গেল। ……..এখন শুভ দা নিজে দেখে বিয়ে করবে? সে তোমার আর জেঠিমার কপালে হবে না।”
“তবে রে শয়তান” বলে শুভ চেয়ার ঠেলে লাফিয়ে উঠে দেবুর কাছে তেড়ে আসলে, দেবুও লাফিয়ে উঠে বেনীমাধব বাবুর পেছনে গিয়ে লুকোয়;কারণ শুভ বেণীমাধব বাবুকে একটু ভয় পায়। এই সময় রিমা ভেতরে গিয়েছিল সুপ্রিয়া দেবীর জন্য ওষুধ আনতে, ঘরে ঢুকে শুভ ও দেবুর ছুটোছুটি দেখে ধমক দেয় দেবুকে,
– “কি হচ্ছে কি দেবু! আর শুভ দা তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? বাবা,জেঠাবাবুর সামনে তোমরা ছেলেমানুষী করছো?” শুভ চুপচাপ নিজের জায়গায় বসে।
রিমা সুপ্রিয়া দেবীকে ওষুধ দিতে দিতে বলে,
-” আচ্ছা মামা বাবু তুমিও কি! ওরা ছেলেমানুষী করছে তুমি কিছু বলছো না হাসছো”
মনোহর বাবু চা খেতে খেতে বলেন,
-“কি বলবো মা ছেলে মেয়েরা বড় হলে বন্ধু হয়ে যায় তুমি কিছু ভেবো না”
ভাগ্নার দিকে তাকিয়ে মনোহর বাবু আবার বললেন,
-” তা ভাগ্না তোমার কি রকম মেয়ে পছন্দ?”
শুভ কোন কিছু না ভেবেই কোন দিকে না তাকিয়ে বলে ফেলে,
-“কেন এই রিমার মতন লেখাপড়াও শিখবে, গান ও গাইবে, চাকরিও করবে,আমার মায়েরও সেবা করবে… ব্যাস।”……. বলে হাসতে থাকে শুভ।
সর্বানন্দ বাবু তাড়াতাড়ি বেণীমাধব বাবুকে বলে,
– “চলুন দাদা আমরা পাশের ঘরে গিয়ে বসি, এখানে বড় আড্ডা চলছে।”
বেনীমাধব বাবু মাথা নেড়ে উঠে পা বাড়ালেন। শুভর কথা শুনে রিমা চমকে ওঠে সলজ্জে সে না শোনার ভান করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এ তো তার অতি গোপন কথা;মনের মনিকোঠায় সে লুকিয়ে রেখেছে, কাউকে জানতে দেবে না। এমনকি শুভদাকেও না। যখন সে ফ্রক ছেড়ে শাড়ি পরা শুরু করেছিল, প্রথম শাড়ি পরার দিন শুভদা ওকে চিবুক ধরে বলেছিল,
-“বাহ কি সুন্দর লাগছে তোমায়।”
ব্যাস সেই দিন থেকে মনের মধ্যে একটা ছবি আঁকা হয়েছিল, কিন্তু না এই কথা কাউকে বলা যাবে না হয়তো কেউ বলবে বেইমান, সুবিধাবাদী, স্বার্থপর। নানা মরে গেলেও রিমা এ কথা কাউকে বলবে না। শুভর কথা শুনে রিমা যে চমকে উঠে লজ্জা পেয়েছিল,তা সুপ্রিয়া দেবীর চোখ এড়াইনি। তিনিও মনের মধ্যে যে এই আশা সযত্নে লালিত করেছেন। তা সায় পেয়ে একটু শুধু মুচকি হাসলেন। মনোহর বাবু শুনে আরো জোরে।…” হা হা হা হা…. করে হেসে উঠে
বললেন,
-“দেখ কোন ডুপ্লিকেট পাস কিনা”
দেবু হাসতে হাসতে এক ঝলক মিতার দিকে তাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। সুপ্রিয়া দেবী দাদাকে বললেন,
– “হ্যাঁ গো দাদা এখনই তুলির বিয়ে দেবে?..এইতো সবে ১৮ বছর বয়স।”
মনোহর বাবু চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন-
-“আমাদের গায়ে ঘরে অনেক, তার ওপর ঢলসা চেহারা। চেষ্টা তো করতেই হবে।” বলে ভেতরে চলে গেলেন।
সুপ্রিয়াদেবী দেখে মিতা আঁকছিল, ওকে বলেন,
-“মিতু আমায় একটু ধর মা আমিও ভেতরে যাব।”
মিতা উঠে মাকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। রান্নার ঠাকুরকেও এবেলা অন্য কিছু রাঁধতে বলতে হবে। শুভ জন্মদিন বলে কথা সকাল থেকে একটু ভালো ভালোই খাওয়া দাওয়া হচ্ছে। না কোনরকম আরম্বর নেই সবই দুই বাড়ি মিলে।শুভ এতক্ষণ বসে বসে ভাবছিল,
-“ভীষণ বোকার মত কথা বলা হলো। কি জানি কে কি ভাবল ধুত!” উঠে পায়ে পায়ে বাইরে চলে গেল।
পরের দিন সকালে মনোহর বাবু তুলিকে নিয়ে চলে গেলেন। শুভ সঙ্গে গেল হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত মামা ও বোনকে ট্রেনে তুলে দিতে। দেবু বসার ঘরে নিজের বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে।দেবুর ফাইনাল পরীক্ষার বেশি দেরি নেই, ঠিক করেছে আজ আর কলেজ যাবে না। শরীরটাও ঠিক নেই। এমন সময় ভজা দা এসে বলে,
-“ছোড়দা বাবু বাইরের গেটে তোমায় কে ডাকছেন সিকিউরিটি দাদা বললেন” বলে চলে যায় ভজা।
দেবু অবাক হয়ে ছুটে যায় কে ডাকছে দেখতে। বাইরের গেটে, গিয়ে দেখে তার স্কুলে পড়ার বন্ধু প্রবাল দাঁড়িয়ে, প্রায় স্কুল ছাড়ার দীর্ঘ ৩ বছর পর দেখা। চেহারাটা একটু মোটা সোটা হয়েছে। তাছাড়া আর কিছু বদলায়নি। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো দেবু,
-“আরে প্রবাল যে.. কি খবর? কবে এই রাজ্যে এলি ভাই?”
প্রবালও ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“চল চল ভেতরে চল বলছি।”
ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসালো দেবু প্রবালকে।
দেবু বলে,
-“কবে এলি’?”
-“কাল রাত্রে এসেছি। এখানে এসে তোর কথাই আগে মনে পড়ল। তাই সকাল হতেই চলে এলাম”
দেবু প্রবালের হাতটা চেপে ধরে বলে,
-“কি খাবি বল?.. কেমন আছিস?”
-“বেশ ভালো আছি। আমি তো মুম্বাই থেকে চলে এলাম, এবার এই কলকাতাতেই থাকবো।”
প্রবাল বেশ ভালোভাবেই বলে। ভজা দা এক গ্লাস জল এনে রাখে। দেবু বলে,
-“সেই উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে কাকার সুপারিশে রেলের চাকরি পেয়ে মুম্বাই চলে গেলি আর মাঝে মধ্যে ফোনও করিসনা আর কোন কথাই হয় না।বল কি খাবি বল ?”
প্রবাল বলে,
-“না ভাই বাড়ি থেকে খেয়েই বেরিয়েছি, একটু চা ছাড়া আর কিছু না।”
প্রবাল একটা সিগারেট ধরায়, দেবু একটু উঁচু গলায় হাঁক দেয়,
-“ভাজাদা দু কাপ চা।”
ঠিক সেই সময় মিতা ঢোকে ঘরে, আস্তে আস্তে বলে,
“দেবুদা দিদিভাই স্কুলে বেরোবে। তুমি খেতে যাও। কলেজ বেরোবে তো?ডাকছেন জেঠিমা। আর আসার সময় আমার একটা রঙের শিশি কিনে আনতে হবে। পয়সা আছে না দেবো…?
দেবু শুনছিল মিতার কথাগুলো হঠাৎ চোখ পড়ে প্রবালের ওপর, প্রবাল হাঁ করে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। দেবু প্রবালকে না বলে মিতাকে বলে, -“না শরীরটা ঠিক নেই। কলেজ যাব না। তাছাড়া অনেকদিন পরে এক পুরোনো বন্ধু এসেছে তাই কথা বলছি”
মিতার এতক্ষণ পর প্রবালের দিকে চোখ গেল প্রবাল হাঁ করে মিতার দিকে চেয়ে আছে থতোমতো খেয়ে মিতা ছুটে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। দেবু দেখে প্রবাল একরকম ভাবে রয়েছে দেবু বড় বড় চোখ করে বলে,
-“এই কি দেখছিস?”
-“কি সুন্দর রে মেয়েটা? ও কে রে? ওকে আমি বিয়ে করবো।” গদগদ ভাবে বলে প্রবাল।
দেবু চোখ কপালে তুলে বলে
-“একেবারে বিয়ে?সে কি রে ? তুই কি কোনদিন মেয়ে দেখিস নি? না মিশিস নি ? ও এনগেজড।”
লজ্জা পেয়ে যায় প্রবাল। বলে,
“সরি ভাই। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। কিছু মনে করিস না।”
দেবু হাসতে হাসতে বলে,
-“কেন বিয়ে করতে ইচ্ছা করছে? বাড়িতে বলবো নাকি?”
সলজ্জ ভাবে প্রবাল বলে,
– “না মানে বাড়িতেও বলছে… বিয়ের তোরজোরও শুরু করেছে।
দেবু অবাক হয়ে বলে,
” তাই নাকি। পাত্রী দেখবো?”
মাথা নাড়ে প্রবাল।এই সময় ভজা দা দু প্লেট খাবার নিয়ে আসে। টেবিলে রেখে বলে,
-“বড়দিদিমণি খাবার দিয়ে ইস্কুলে গেল; তুমি তো সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি তাই মা বললেন, জলখাবার খেয়ে তবে চা খাবে। আমি একটু পরে চা দিয়ে যাচ্ছি।” বলে চলে যায় ভজা দা।
দেবু বন্ধুর দিকে প্লেট ধরে বলে,
-“খেয়ে নে ভাই। তারপর তোকে একটা দারুন খবর দেবো তোর মাথা ঘুরে যাবে।”
খাবারের প্লেটটা হাতে নিতে নিতে প্রবাল বলে,
-“তাই নাকি কি খবর রে?”
দেবু একটু রহস্য করে বলে,
– “আরে এত ব্যস্ত কেন খা খা আগে।”
একটু থেমে দেবু বলে-
-“বললে কি করবি আমার জন্য?”
-“কেন পেট ভরে মিষ্টি খাওয়াবো” খেতে খেতে বলে প্রবাল।
-“ধুর পেটে রোজ খাই, মিষ্টি খেলে অপকার হবে এমন একটা কিছু করবি যাতে আমার উপকার হয়।”বলে দেবু গম্ভীর মুখে বসে রইলো।
প্রবাল আরো কাছে সরে এসে বলে,
-“আরে রাগ করলি নাকি ওটা কথার কথা,তুই যা চাস তাই দেব।”
-“ঠিক প্রমিস কর আগে”, বলে দেবু।
হা হা করে হাসতে হাসতে প্রবাল বলে,
– “ও আগে একবার ফোনে বলেছিলি বটে তোর একটা চাকরি চাই, তোর ব্যবসা ভালো লাগে না।ঠিক আছে তোর কথার বিষয় চাকরি চাই। তাইতো?”
“হ্যাঁ ভাই কিছু ব্যবস্থা করেছিস?” দেবু চুপিচুপি বলে।
প্রবাল হাসতে হাসতে বলে,
– “তবে তোর বাড়িতে আজ এমনি এমনি এসেছি?” ,
পকেট থেকে একটা রেলের ফর্ম বের করে দেবুর হাতে দিয়ে বলে,
-” সই করে দে।
দেবু ফর্মটা নিয়ে বলে,
– “কি কাজ?কোন পোস্ট?”
-” আরে বোকা আগে টেম্পারারি থাকতে হবে। পরীক্ষা দিতে হবে ছমাস পর, তারপর ট্রেনিং, তবে তো পোস্ট।”তুই শুধু এই কাগজে সই করে দে। আমি জমা দেবো, তারপর তোর বাড়ি চিঠি আসবে কবে কোথায় কখন যেতে হবে।”বলে প্রবাল।
“মানে! আমাকে কোথায় যেতে হবে?” দেবু বলে।
-“সে যখন তোর ইন্টারভিউ হবে তখন বলবে।”
দেবু ফর্মটায় সই করে দেয়। প্রবাল বলে,
“ফর্মে তোর ঠিকানাটা লেখ আমি তো জানি না, আর একটা পাসপোর্ট ছবি দে।”
ঘরে বেনীমাধব বাবু আর সর্বানন্দ বাবু কে ঢুকতে দেখে দেবু ফর্মটা লুকিয়ে ফেলে।সর্বানন্দ বাবু দেবু কে বলেন,
-“কি ব্যাপার কলেজ যাওনি কেন?”
দেবু বলে,
-” শরীরটা ভালো না। তাছাড়া আমার একটা বন্ধু মুম্বাই থেকে এসেছে অনেকদিন পর, তাই আর কি।”
প্রবালকে দেবু বলে,
– “প্রবাল এই আমার বাবা আর জ্যেঠামশাই।”
প্রবাল তাড়াতাড়ি প্রণাম করে দুজনকে। বেনীমাধব বাবু বলেন,
-“থাক থাক বাবা। কি করো? পড়াশোনা?”
-“আজ্ঞে না আমি রেলে চাকরি করি।”
সর্বানন্দ বাবু বলেন,
– ‘‘বাঃ বাঃ। বসো বাবা। আমাদের একটু তাড়া আছে। পরে কথা বলবো।”
বেনীমাধব বাবু বলেন,
– ‘‘দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে যেও।’’ বলে দুজনাই বেরিয়ে গেলেন।
ওনারা বেরিয়ে যেতেই প্রবাল চেপে ধরে দেবুকে,
– ‘‘এই এবার আমার খবরটা বল?’’
দেবু হাসতে হাসতে বলে,
– ‘‘দাঁড়া আমার ব্যাপার সারি। তবে তো। পাসপোর্ট ফোটোটা তোকে আগে দিই ,তুই একটু বস্। আসছি।’’
বলে দেবু বাইরে গেল। একটু পরেই দেবু এল সুপ্রিয়া দেবীকে সঙ্গে নিয়ে এসে সুপ্রিয়া দেবীকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলে,
– ‘‘প্রবাল এই আমার জেঠীমা।’’
প্রবাল প্রণাম করে বলে,
– ‘‘ভাল আছেন জেঠীমা?’’
সুপ্রিয়া দেবী বলেন,
– ‘‘হ্যাঁ বাবা ভাল আছি। তোমরা ভাল আছো?
– ‘‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’’ প্রবাল বলে।
‘‘তোমার বাড়ী কোথায়?’’ সুপ্রিয়া দেবী বলেন
– ‘‘আমার বাড়ী হাওড়ায়।’’
– ‘‘তোমার বাড়ীতে কে কে আছেন।’’
– ‘‘ একটু চুপ করে থেকে প্রবাল বলে,
– ‘‘আমার মা ছাড়া কেউ নেই। অনেক ছোট বেলায় আমার বাবা মারা যান। তারপর থেকেই আমরা কাকার বাড়ীতে থাকি।’’
সুপ্রিয়া দেবী আস্তে আস্তে বলেন,
– ‘‘ওমা তাই নাকি?: দেবু তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দিতে নিয়ে এল।’’
– দেবু হঠাৎ বলে,
– ‘‘জানো জেঠীমা প্রবাল উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে রেলের চাকরীতে ঢোকে। প্রথমেই মুম্বাই পোষ্ট ৩ বছর পর কাল সেখান থেকে বদলী হয়ে এই কলকাতায় এসেছে।’’
সুপ্রিয়া দেবী আনন্দের সঙ্গে বলেন,
– ‘‘ওমা তাই নাকি তুমি চাকরী কর! বাঃ বেশ ভাল।’’
হঠাৎ প্রবাল উঠে পরে বলে,
– ‘‘দেবু আজ চলি অনেক বেলা হল। জেঠিমা আজ যাই। অন্যদিন আবার আসবো।’’
দেবু বলে
– ‘‘এই বাবা তোকে বললেন না দুপুরে খেয়ে যেতে।’’
– ‘‘এই না রে, বাড়িতে রান্না বান্না করছে মা এতদিন পরে এলাম। আজ থাক। অন্য কোনদিন হবে।’’
বলে চলে যায় প্রবাল। এমন সময় শুভ ঢোকে ঘরে। দেবুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– ‘‘হ্যা রে দেবু। ওই ছেলেটা তোর বন্ধু না। সেই স্কুলে পড়তো; তোর সাথে দেখেছিলাম কয়েকবার।”
– দেবু বলে,
– ‘‘হ্যাঁ প্রবাল। ও রেলে চাকরী করে বেশ ভালো পোষ্টে।’’
– ‘‘তাই নাকি বাঃ বেশ ভাল।’’
তারপর ঘুরে মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ‘‘মা ভেতরে যাচ্ছি খেতে, খেয়ে বেরোবো একটু অফিসে যাবো।’’
‘‘খাসনি তা এতক্ষণ কোথায় ছিলি?’’ সুপ্রিয়া দেবী চিন্তিত ভাবে বলেন।
শুভ হঠাৎ মায়ের কাছে বসে বলে,
– ‘‘তোমার ছেলের কত কাজ জানো না। কয়েকটা বাচ্চা ছেলে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসি। খুব গরীবের ছেলে মেয়ে। রাস্তা পাড় হতে পারে না এতো ছোট। বাবা মায়েরা আসে না ওদের। তাই আমি…।’’
– ‘‘এই শুভদা শোন না।’’ শুভর কথা শেষ হবার আগেই দেবু বলে ওঠে।,
– ‘‘আচ্ছা জেঠিমা। এই প্রবালকে কেমন লাগলো?’’
সুপ্রিয়া দেবী হেসে বলেন,
– ‘‘মানে ভালই লাগল।’’
দেবুও বেশ রহস্য করে বলে,
– ‘‘আমাদের মামা বাবুর মেয়ে তুলির সাথে কেমন মানাবে?’’
শুভ লাফিয়ে ওঠে।
– ‘‘আরে বাস্ দেবু তুই আজ কাল ঘটকালি শুরু করলি?”
সুপ্রিয়া দেবীও স্মিত হাস্যে বলেন,
– ‘‘বাঃ বেশ বলেছিস তো? তুই আগে প্রবালের সঙ্গে কথা বল্। ওর মতামতও জানতে হবে। ও সাথে কথা বলে, আমায় বলবি। তখন আমি দাদার সাথে কথা বলবো।’’
সুপ্রিয়া দেবী উঠে পড়েন।
শুভকে বলেন,
– ‘‘ আমায় নিয়ে চ।’’
শুভ সুপ্রিয়া দেবীকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলেন।
বিকেলে দেবু প্রবালের বাড়ীতে গেল। গেট খুলে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রবাল দরজা খুলে দাঁড়ালো। দেবুকে দেখে হেসে বলে,
– ‘‘কি রে তোর যে তর সইছে না। এখুনি চাকরী পেয়ে যাবি? আয় আয়।’’
– ‘‘আমার গেট খুলে ঢুকতে না ঢুকতে তুই দরজা খুললি?” বলে দেবু।
প্রবাল দেবুকে নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
– ‘‘আমি জানলায় ছিলাম। তোকে আসতে দেখলাম। তাই…..’’
প্রবালদের সাধারণ সেকেলে বাড়ীর মতন বাড়ী । প্রবাল ভেতরে যায় মাকে ডাকতে। ফিরে আসে মাকে নিয়ে। বলে,
– ‘‘মা, এই আমার ছোট বেলাকার বন্ধু দেবজিৎ;একদম ফাইভ থেকে। আমি পাশ করে চলে গেলাম। আর ও কলেজে ভর্ত্তি হল।’’
দেবু ওর মাকে প্রণাম করে বলে,
– ‘‘ভাল আছেন মাসিমা?’’
প্রবালের মা বলে,
– ‘‘আছি একরকম বাবা। তুমি বোসো আমি একটু চা করে আনি।’’ বলে চলে গেলেন প্রবালের মা। দেবু সারা ঘরটা দেখছে। সেকেলে একটা পাখা ঘরুছে। তাতে হাওয়া হয় না। ঘরে একটা দেওয়াল আলমারি তাতে কিছু বই খাতা থাকথাক করা আছে। দুটো চেয়ার আর একটা তকতোবোস্ আর কিছু না।
দেবুর দিকে চেয়ে প্রবাল বলল,
– ‘‘ কি দেখছিস তোদের মতো বড়োলোক নই। আমরা অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত। বুঝলি।’’
দেবু হা হা করে হেসে বলল,
– ‘‘আরে আমি যা দেখছি তোকে বলা যাবে না।’’
মনে মনে বলে,
-“তুলি এসে থাকতে পারবে তো?’’
মুখে বলে,
– ‘‘আরে তোকে ওবেলা একটা খবর দেবো বলেছিলাম না?’’
– ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ। ঠিক কথা। এমন দরকারী কথা বলেই তুই এসেছিল। বল্ বল্ তাড়াতাড়ি বল্ আর তর সইছে না।”
দেবু একটু ভাবলো, কি ভাবে কি কথা দিয়ে আরাম্ভ করা যায়; তারপর বলে,
– ‘‘তুই এত ভাল চাকরী করিস্ এবার একটা বিয়ে কর।’’
– ‘‘এই কথা তুই বলতে এসেছিস্…’’
প্রবালের মা সুধাময়ী দেবী চা হাতে ঘরে ঢুকলেন।
– ‘‘দেখ তো তোমরা একটু ওকে বোঝাও তো আমি বললেই বলে দূর ঘর নেই দোড় নেই”
সুযোগ পেলো দেবু , বলে,
– ‘‘ও মাসিমা আপনি একটু বসুন।’’
সুধামুয়ী দেবী বসলেন। দেবু বলে,
– ‘‘আপনি যদি রাজি থাকেন তো একটা মেয়ের কথা বলি?’’
গুছিয়ে বসতে বসতে সুধামুয়ী দেবী বলেন,
– ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা তুমি বল। আমি ওর বিয়ে না দিয়ে শান্তিতে মরতেও পারবো না।’’
দেবু বলে,
– ‘‘মেয়েটি সম্পর্কে আমার মামাতো বোন। প্রবালের মতনই চেহারা তবে সুন্দরী। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। থাকে বর্ধমানে।’’এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সুধাময়ী দেবী বলেন,
– ‘‘আমাদের মতন মধ্যবিত্ত ঘরে কি থাকতে পারবে ওমেয়ে।’’
দেবু এবার বিজ্ঞের মতন বলে,
– ‘‘না মাসিমা, মেয়ে একদম ঘরোয়া মেয়ে বেশী দূর লেখাপড়া করে নি। মাধ্যমিক পাশ। গাঁয়ের মেয়ে।’’
সুধাময়ী দেবী বলেন,
– ‘‘বর্ধমানে কোথায়, আমারো মামার বাড়ি ছিল বর্ধমানে দেবীপুর গ্রামে। ছোটবেলা বেশীর ভাগই কেটেছে মামার বাড়ীতে।
কাচুমাচু ভাবে দেবু বলে,
– ‘‘আমি অতো জানি না মাসিমা। আপনি বরঞ্চ একদিন আমাদের বাড়িতে আসুন। জেঠিমা সব বলতে পারবে। আমার জেঠিমার বাপের বাড়ি বর্ধমানে।’’
– ‘‘ওমা তাই নাকি? বেশ যাবো ২/১ দিনের মধ্যে।’’ বলেন সুধাময়ী দেবী।
উঠে পরে দেবু। প্রবাল বলে,
– ‘‘আরে এখুনি উঠলে কি করে হবে!’’
দেবু বলে,
– ‘‘চল্ একটু বাইরে যাই।’’
প্রবাল বলে,
– ‘‘দাঁড়া জামা গায় দিয়ে আসি।’’ বলে প্রবাল ভেতরে যায়।
সুধাময়ী দেবী চায়ের কাপ ডিস্ তুলে বাইরে যাবার উপক্রম করতেই দেবু আর একবার মনে করিয়ে দেয়,
– ‘‘মাসিমা। জেঠিমাকে বলে রাখবো। আপনি অবশ্যই যাবেন।’’
সুধাময়ী ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেন,
– ‘‘বেশ যাবো। ফোন করেই যাব।’’
প্রবাল ভেতর থেকে চলে আসতে দেবু আর প্রবাল বেরিয়ে পড়ে।
এবার দিন দুয়েক পরের কথা। এরি মধ্যে সুপ্রিয়া দেবী ফোনে মনোহর বাবুকে বলেছেন। প্রবালের কথা। প্রবাল সকালে দেবুকে ফোন করে,
– হ্যারে কোন চিঠি পেয়েছিস্?”
-“তোর ঐ রেলের ফর্ম ছাড়ার পর যে চিঠি আসবে, সেই চিঠিই?”
দেবু হাসতে হাসতে বলে।
প্রবাল বলে,
– “হাসছিস কেন?”
দেবু বলে,
-“আসল কথাটা কি সেটাই বল। এই দু’ এক দিনেই রেলের চিঠি আসবে ?”
এবার প্রবালও হাসতে হাসতে বলে,
–“জানিস তো বাবা মারা যাবার পর আমরা কাকার বাড়িতে থাকি। সেই জন্য আমি মা আর কাকা,কাকিমা যাব তোদের বাড়ি।”
–“ঠিক আছে তাতে এত আমতা আমতা করার কি আছে। তুই এখন ফোন রাখ আমায় বর্ধমানে ফোন করতে হবে।’ বলে দেবু ফেন কেটে দেয় ।
সেই সময় রিমা এসে ঘরে ঢোকে। দেবুকে দেখে বলে,
–“হ্যাঁরে, দেবু আজ কাল তোর পাত্তাই পাওয়া যায় না কেন রে। কি কাজে এত ব্যাস্ত থাকিস্?”
বলে রিমা দেওয়াল আলমারিটা গোছাতে লাগলো। মিতা সকালে গিয়েছিল পড়তে ফিরে ঘরে ঢুকতেই দেবুর চোখাচুখি হয়। দেবু হাসি হাসি মুখে বলে,
-“দারুন কাজে ব্যাস্ত তাই……”।
তার কথা মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে শুভ বলে ওঠে,
–“তাই তাহলে বাড়িতে বিয়ে লাগছে দেবুর ঘটকালিতে।”
রিমা, মিতা দুজনই এক সাথে বলে,
–“বিয়ে ? কার ?”
শুভ চেঁচায় –
“ও ভজা দা চা দিয়ে যাও।”
শুভ কখন ঘরে ঢুকে একটা সোফা দখল করে বসে পড়েছে।
রিমা বলে,
“দেখো শুভদা আজ রবিবার এ ঘরটা গোছাতে হবে বাইরে যাও।”
মিতা এতক্ষণ চুপ করে থাকে তারপর বলে,
-“এই শুভদা বলো না কার বিয়ে? তোমার ?”
দেবু কখন ভিতরে গিয়ে জেঠিমাকে সঙ্গে নিয়ে এঘরে হাজির।
মিতার কথা তাঁর কানে যায় বলেন,
–“পোড়া কপাল আমার শুভর আবার বিয়ে, ও একটা মেয়েও পছন্দ করতে পারলো না।”
বলতে বলতে সুপ্রিয়া দেবী ঘরে এসে একটা সোফায় বসে পড়েন।
এদিকে ভাজাদাও সবার জন্য চা নিয়ে হাজির। রিমা কপালে হাত দিয়ে বলে,
–“দেখ কান্ড এ ঘরটা একটু ঝার পোছ করতে এলাম,আর সবাই এসে হাজির।”
সুপ্রিয়া দেবী বলেন,
–“আর কি করবি মা একটু সবুর কর।”
তারপর নিজের ফোন থেকে মনোহর বাবুকে ফোন করেন, সব কথা আগেই বলে রেখেছিলেন, তাই আজ তুলিকে নিয়ে বিকেলে আসতে বললেন, আর বৌদিকেও আসতে বললেন। তারপর ফোন রেখে মিতাকে বললেন,
–“তোর বাবাকে আর কাকা বাবুকে আসতে বল এখানে।”
রিমা হই হই করে ওঠে,
–“না জেঠিমা তোমরা ভিতরের ঘরে যাও বা ও বাড়ীর দালানে বস। আমি এঘর পরিষ্কার না করলে ওবেলা সব আসবে বিচ্ছিরী থাকবে।”
-” ঠিক আছে সবাই যাচ্ছি।”
বলে শুভ আগে উঠে সুপ্রিয়া দেবীকে নিয়ে বাইরে গেল।
মিতাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে দেবু বলে,
–“কি হল বিয়ে কথা শুনে মন খারাপ হল। আরে তোর বিয়েটা আগে দিলে ভাল হত না?”
চেঁচিয়ে ওঠে মিতা,
-“ভাল হবে না বলছি দেবুদা।”
দেবু ছুটে পালিয়ে যায়। মিতা রাগে গর গর করতে করতে সেও চলে যায়। রিমা হেসে কাজে মন দেয় ৷
যথারীতি বিকালে মনোহর বাবু, ওনার স্ত্রী ও মেয়ে তুলি আসে; পিসির বাড়িতে। প্রবাল, ওর মা সুধাময়ী দেবী, কাকা প্রভাত বাবু ও কাকিমা অমলা দেবীও আসেন। একমাত্র ভাইপো তাই কাকার না আসাটা ভাল দেখায় না। কাকার একটু অভিমান হয়েছে যে ভাইপো নিজের সম্বন্ধ নিজেই করেছে। যাই হোক এদিকে এক কান্ড সুপ্রিয়াদেবী ও সুধাময়ী দেবী পরস্পর পরিচিত। দুই বাল্য সখী। মনোহর বাবুও চেনেন সুধাময়ীকে কারণ সুধাময়ীর মামাকে মনোহর বাবু কাকা বলে ডাকতেন পাড়া সুবাদে।ব্যাস সব পছন্দ হয়েই গেল। এমন কি পাকা কথাও হয়ে গেল।
এর পরের ঘটনা স্বাভাবিক। এক মাসের মধ্যে বিয়ে পাকাপাকি হয়ে বিয়ে হয়ে গেল। মনোহর বাবু জামাইকে যৌতুক হিসাবে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিলেন বালিগঞ্জে। বিয়ের পর কাকার বাড়ি ছেড়ে প্রবাল ফ্ল্যাটে এসে উঠল মাকে নিয়ে। কিন্তু বিপদ হল বৌভাতের পরদিন। সকালে ঘরদোর পরিষ্কার করে রিমা দালান পরিষ্কার করে সিঁড়ির কাছে পিছন ঘুরে ময়লা তুলছিল। আর শুভ ছাদের সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে বা হোঁচট খেয়ে যা হোক করে পরে রিমার ঘাড়ে। আর সেই ধাক্কায় রিমা দোতলার দালানের সিঁড়ি থেকে গড়াতে গড়াতে পড়ে একদম নীচে । পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারায় রিমা। মাথায় খুব চোট লাগে খুব। রক্তারক্তি কান্ড। হই হই ব্যাপার সঙ্গে সঙ্গে রিমাকে নাসিং হোমে নিয়ে যেতে হয়।
বেনী মাধব চিৎকার করছেন,
-“কেন রিমা একা কাজ করছিল? কাজের বৌ সোনার মা কোথায় ছিল?”
উত্তর এল
–“ওরা দুজনা মিলে কাজ করছিল। সঙ্গে মিতাও ছিল।
সর্বানন্দ বাবু প্রশ্ন করছেন,
-“শুভ কি করছিল ওখানে? ও কেন ছাদে গিয়েছিল? শুভ কি করে হোচট খেলো।”
উত্তর এল,
–“জানিনা শুভই উত্তর দিতে পারবে?
সুপ্রিয়াদেবী কাঁদছেন আর ঠাকুরকে ডাকছেন। ওনার প্রশ্নে উত্তর দেবার কেউ নেই। শুভ,মিতা, প্রবাল মনোহর বাবু সবাই নাসিং হোমে। মনোহর বাবু স্ত্রী মীরা দেবী শুধু এবাড়ি আর ওবাড়ি করছেন। ভজাদা রান্না ঘরে রাঁধুনিকে সামলাচ্ছে। কে খাবে,কে খাবে না,কি রান্না হবে,আর কি হবে না। সেই নিয়ে ব্যস্ত সব যেন নিমেষে লন্ড ভন্ড হয়ে গেল। দুপুরে দেবু আর মিতা এল বাড়িতে। প্রবাল চলে গেছে ওর বাড়িতে মনোহর বাবু আর শুভ নার্সিং হোমে থেকে গেলেন। দেবু ও মিতা আসতে সবাই ছুটে এল। ভজাদা সুপ্রিয়া দেবীকে ধরে ধরে নিয়ে এল।
দেবুই প্রথম কথা বলে,
-“এখন ভাল আছে। জ্ঞান ফিরেছে। মাথায় ব্যান্ডেজ হয়েছে। ডান পা ভেঙ্গে গেছে প্ল্যাস্টার হবে। মামা বাবু এখনি আসবে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে। শুভদাকে আজকে ওখানে থাকতে হবে।” বলে চুপ করলো দেবু।
সর্বানন্দ বাবু কাঁদছেন, বেনীমাধব বাবু সামলাচ্ছেন। মিতা কাঁদছে। সুপ্রিয়াদেবী কাঁদছেন। মীরা দেবী বোঝাচ্ছেন।
একটু পরেই মনোহর বাবু এলেন। বললেন,
–“অত কান্নার কিছু হয়নি। মাথাটা ফেটেছে। ওটার একটা স্ক্যান হবে। আর পাটা ভেঙ্গেছে ওটার একটা এক্স-রে হবে। দু’চার দিন নার্সিং হোমে থাকতে হবে। চলো সব খাওয়া দাওয়া সারো।” বলে ভেতরে গেলেন স্নানের জন্য ।
২/৪ দিন নয় ৭ দিনের মাথায় রিমা বাড়ি এল। গাড়ী থেকে নামাতে দেবু বলল,
–“চল্ দিদি ভাই তোকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাই ।”
হেসে রিমা বলে,
–“ধ্যুৎ, ইয়ার্কি করিস্ না। আমার একটা হাত ধর আমি ঠিক যেতে পারবো।”
যেদিন থেকে রীমা নার্সিং হোমে যায় সেদিন থেকে শুভ দিন রাত রিমার পাশে পাশে থেকেছে। হাতে হাতে সব যুগিয়ে দিয়েছে। এখন যখন দেখলো রিমা দেবুর কাঁধে হাত দিয়ে যেতে পারছে না, তখন শুভ সবার সামনে কোলে তুলে কোন দিকে না তাকিয়ে ভেতরে চলে গেল। রিমা বাধা দেবার সুযোগই পেল না। সুপ্রিয়াদেবী মনে মনে মুচকী হাসলেন। আর দেবু আর চোখে মিতাকে দেখল। মিতাও তার দিকে দেখছে।
রিমাকে ঘরের বিছানায় শুইয়ে দিল শুভ। ভাঙ্গা পায়ের তলায় বালিশ দিয়ে বলল,
–“চুপ করে শুয়ে থাকবি। অনেক কাজ দেখিয়েছিস্ আর না। ক্ষ্যামা দে এবার।”
হেসে ফেলে রিমা। এখন ও বুকের ভিতরটা গুড় গুড় করছে শুভর কোলে চেপে। ছি ছি কি লজ্জা সবার সামনে। ঘরে একে একে দেবু,মিতা,সর্বানন্দা বাবু বেনীমাধব বাবু,মনোহর বাবু,মীরা দেবী, ভজা, সুপ্রিয়া দেবীকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। মীরা দেবী রিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
–“হ্যাঁরে কবে ব্যান্ডেজ খুললো ?”
রিমা বলে,
–“গতকাল। সেলাই কেটেছে।”
–“ব্যাথা আছে? ড্রেসিং করতে হবে তো ?”
রিমা বলার আগে শুভ বলে,
-“হ্যাঁ ডাক্তার বলেছেন কিছুবার ড্রেসিং করতে লাগবে।”
সুপ্রিয়া দেবী বলে,
–“তা একটা নার্সকে আসতে বলেছিস্ তো ড্রেসিং করার জন্য।”
–“না না ও আমিই করে দেবো।”
শুভ কথাটা বলতে সবাই অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকায়। আমতা আমতা করে শুভ বলে,
-“সবাই তাকাচ্ছ কেন ওভাবে। ডাক্তার বাবু শিখিয়ে দিয়েছেন। তাই বলছি।”
দেবু বলে,
“তুমি বলেছো বলেই….”
দেবু কথা শেষ হবার আগেই শুভ বলে,
–“আরে বাবাই তো বলেছেন, তোর জন্য ওর এই অবস্থা ওর সেবা তোকেই করতে হবে। তাই তো।”
সবাই একযোগে হা হা করে হেসে ওঠে।
অসুধ খাওয়ানো, মাথায় ড্রেসিং করা, ফল বা অন্যান্য সব খাওয়ানো সব শুভ করে। রিমার কথাতেই মিতা রিমাকে নিয়ে হাঁটা ফেরা করে, সে জন্য শুভর সাহায্য নেয় না। তার জন্য শুভ আপত্তি করে নি। কারণ একবার রিমাকে গাড়ী থেকে ওপরে তুলে আনতে কোলে তুলেছিল। তার শিহরন এখনও সারা শরীরে ছড়িয়ে আছে। রিমার সেবা করতে শুভর বড় তৃপ্তি হয়। রিমার কাছ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। যেন মনে হয় কোন অতল জলে তলিয়ে যাচ্ছে। কেন এমন হয়, কি এই অনুভূতির নাম, ভেবে কুল কিনারা পায় না ৷ আচ্ছা রিমারও কি এই অনুভূতি হয়। এই রকম ভাল লাগে। জিজ্ঞাসা করবো। নাঃ নাঃ সে ভারি খারাপ দেখায়। এদিকে রিমাও ভাবে। কি হল শুভদার। আগের মতন ছেলেমানুষের মত চেঁচায় না হুটোপাটি করে না। এর পিছনে ওর পিছনে লাগে না এখন কেমন যেন শান্ত হয়ে গেছে। গম্ভীর হয়ে গেছে। সব সময় যেন কি ভাবছে। কি হল শুভদার। প্রেমে পড়েছে ? কার?
বিয়ের পরে তুলি এসেছিলো কয়েকদিনের জন্য সবাই কত আনন্দ করলো। রিমা তাতে যোগ দিতে পারলো না। ওরা একবার করে রিমার সাথে দেখা করে গেল শুধু। কিন্তু শুভ ঠিক ওর দায়িত্ব করে গেছে। মাঝে মাঝে মজার মজার গল্প বলেছে, হাসিয়েছে। আর খুনশুটি করে রাগিয়েও দিয়েছে।
দু একদিন পর মনোহর বাবু মীরাদেবী আর তুলি এসে বলল,
– “প্রবাল বেড়াতে যাবার পাস পেয়েছে। তাই আমি, তোর মামীমা, তুলি, তুলি শ্বাশুরী সবাই মিলে আগামী কাল হরিদ্বার যাচ্ছি কাশী হয়ে এই বাড়ীতেই ফিরে আসবো। ততদিন তুই একটু আরাম বিশ্রাম কর। আমরা তোকে বিরক্ত করতে আসবো না।” বলে হাসতে লাগলেন।
রিমা কপট রাগে ভান করে বলে,
– “ঠিক হচ্ছে না মামাবাবু।”
তারপর হাসতে হাসতে বলে,
“ভালো ভালোয় ফিরে আসুন। ততদিনে আমার পাও ঠিক হয়ে যাবে। সাবধানে থাকবেন।”
পরের দিন সবাই চলে গেল। কেউ গেল বেড়াতে কেউ গেল স্টেশনে গাড়ীতে তুলতে। কিন্তু শুভ যায়নি, ও ঠিক ওর ডিউটি করে যাচ্ছে।
দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে গেল। রিমার পায়ের প্লাস্টার কাটার সময় হয়ে গেল। যে দিন কাটতে হল তার আগের দিন মনোহর বাবুরা ফিরে এলেন তীর্থ সেরে। শুধু সুধাময়ী দেবী ফ্ল্যাটে গেলেন। বসার ঘরে সবাই বসে আলোচনা হচ্ছে রিমার অসুস্থতায় কার কতটা ক্ষতি হয়েছে।
এমন সময়…….
প্রথমে শুভ বলে,
“হ্যাঁরে দেবু প্রোপোজ কেমন ভাবে করে রে। মিতা তুই জানিস্ ।”
“শুভদা খুব খারাপ হচ্ছে। আমায় কেন প্রশ্ন করছো?” রেগে বলে মিতা
দেবু বলে,
– “মুসকিলে ফেল্লে। এখনো কাউকে প্রোপোজ করিনি তবে সিনেমায় দেখো নি। একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে, হাঁটু গেড়ে বসে….।”
দেবুর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই শুভ জামার ভেতর থেকে একটা গোলাপ ফুল বার করে বলে,
–“তুই করে দেখাত। তাড়াতাড়ি, আমার অনেক সময় নষ্ট হল। আর না আজি ওকে বলতে যাবো।”
রিমা বসে একটা বই পড়ছিল, শুভর কথায় অবাক হল ব্যথাও পেল। কিছু বোঝার আগে দেবু ফুলটা নিয়ে দৌড়ে মিতার কাছে গিয়ে বলল,
-“I love you”
মিতা হতমত খেয়ে বলল,
-“মানে”?
দেবু বলল,
-“ঐ শুভদাকে সিনটা বোঝাচ্ছি”
তারপর আস্তে আস্তে বলে,
–“ফুলটা ছাড় কথাটা সত্যি।”
জোরে বলে,
“এমন কটমট করে তাকাচ্ছিস কেন? শুভদা এইনাও তোমার ফুল। এবার তুমি করো।”
শুভও ফুলটা নিয়ে রিমার কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
–“ রিমা I love You।”
তারপর দেবুর দিকে তাকিয়ে বলে, –“কিরে হয়েছে?”
ঘরে উপস্থিত সবাই কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। এরা দুজনে কি করছে ? রিমাকে একটা লাঠি দেওয়া হয়েছিল আস্তে আস্তে ধরেধরে হাঁটার জন্য, রিমা বুঝলো শুভদা অন্য মেয়েকে ভালোবাসে। চোখে জল আসলেও হাসি মুখে লাঠি ধরে আস্তে আস্তে বাইরে চলে গেল।
শুভ চেঁচিয়ে বলে গেলো,
-“আমি ক্লাবে যাচ্ছি।”
মনোহর বাবু হাসছেন ভাগ্নের কান্ড দেখে। তুলি চেঁচিয়ে বলে,
– “ব্যাস শুভদার কনে পছন্দ হয়ে গেছে। এবার লাগিয়ে দাও বিয়ে পিসিমনি ।”
প্রবাল ও দেবু কি কথা নিয়ে আলোচনা করছে।
মীরা দেবী স্বামীকে বলছেন,
–“কালকে বর্ধমান যাবো তো! সব গোছাতে হবে তো?”
শুভ বাইরে বেরিয়ে, আবার ঘুরে ও বাড়ীর বাগান দিয়ে ভেতরে ঢোকে। জানে রিমা এই সময় কোথায়, ওর মনে কষ্ট হলে দালানের শেষ প্রান্তে গিয়ে কাঁদবে। শুভ ঘুরে গিয়ে দালানে উঠলো। ঠিক তাই রিমা দালানের প্রান্তে দাঁড়িয়ে। শুভ চুপি চুপি পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। বুঝতে পারলো রিমা কাঁদছে। শুভ দু হাত দিয়ে রিমাকে সামনে ফিরিয়ে মুখটাকে তুলে বলে,
-“দূর বোকা মেয়ে। আমি তো তোমায় বলেছি I love you আমি তো তোমায় ভালোবাসি। একটু ইয়ার্কী করছিলাম।”
রিমা একটু হেসে শুভর বুকে মাথা রাখে। শুভ জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আমি বুঝতে চাইছিলাম তুমি আমায় চাও কি না”
বুকের মধ্যে মুখ গুজে রিমা বলে,
–“তুমি কাঁচকলা বোঝো।”
শুভ দুহাতে রিমার মুখটা তুলে কপালে আলতো একটা চুমু খেয়ে বলে,
-“এবার যাই হাটে হাঁড়ি ভাঙি।”
হাসতে হাসতে চলে যায়।
বাড়ি ঘুরে আবার ও বসার ঘরে ঢোকে। দেখে সব উঠবো উঠবো করছে। শুভ ঘরে ঢুকে বলে,
-“হ্যালো হ্যালো আমার একটা কথা আছে। সবাই বসো।”
প্রবাল দেবু কথা বন্ধ করে তাকায়। মিতা ও ছবি আঁকা বন্ধ করে।সুপ্রিয়া দেবী বলে,
–“আবার কি কথা” ।
মনোহরবাবু হাসতে হাসতে বলেন,
–‘কি ভাগ্নে রিমার ডুপ্লিকেট পেয়ে গেছো? তাকেই ভালোবাসা জানাতে গিয়েছিলে। তাহলে এবার সানাই বাজাই ?”
শুভ বলে,
–“তুলি কোথায় গেল?”
মিতা বলে,
–“আচ্ছা আমি ডেকে আনছি”।
শুভ বলে ,
– “তুলিকে ডেকে, তোরা দুজন রিমাকে নিয়ে আয়।”
মিতা ছুটল। কিছুক্ষণ পরে তুলি আর মিতা রিমাকে ধরে আনে।
মিতা বলে,
– “রিমা দি কিছুতেই আসতে চাইছিলনা।”
সুপ্রিয়া দেবী দেখেন রিমার মুখ চোখ সব লজ্জায় লাল হয়ে আছে। রিমা আসতে শুভ রিমার হাত ধরে মামাকে প্রণাম করে বলে,
-“না মামা ডুপ্লিকেট নয় একদম অরিজিনালকে ধরেছি। এবার সানাই বাজাও।”
সুপ্রিয়া দেবীকে প্রণাম করতেই। তিনি বলেন,
“উঃ ঈশ্বর আমার এতদিনের সাধ পূরণ করেছেন।”
সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। সেই সময় বেনীমাধব বাবু ঘরে এসে বললেন,
-“দেখ শুভ আজ একটা অর্ডার পেয়েছি। তোমায় এক সপ্তাহের মধ্যে সিঙ্গাপুর যেতে হবে।”
তাঁর পিছনে সর্বানন্দ বাবু বললেন,
–“কি ব্যাপার এত হাসি কিসের?”]
বেনীমাধব বাবু বলেন,
–“এত বড় অর্ডার পাওয়ার আনন্দে খেয়াল করিনি।”
সুপ্রিয়া দেবী বলেন,
–“ও সিঙ্গাপুর যাবে বিয়ের পর।”
-“তার মানে/;কে কাকে বিয়ে করছে।” সর্বানন্দ বাবু বলেন।
শুভ আর রিমা বাবাকে প্রণাম করে। তারপর বেনীমাধব বাবুকে প্রণাম করে।
মনোহর বাবু বলে,
-“আরে শুভ রিমাকে বিয়ে করবে।”
বেনীমাধব বাবু হা হা করে হেসে উঠে বলেন,
–“তাই বল। আমার ঘরে লক্ষী প্রবেশ করলো বলেই এত বড় অর্ডার পেলাম।”
তারপর সর্বানন্দবাবুর দিকে এগিয়ে দুহাত ধরে বলেন,
–“আজ থেকে আমরা বেয়াই হলাম। হা-হা-হা।”
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
Characters | Name |
---|---|
Kathak | Priyanka Dutta |
Suvo & voja da | Debanshu Ghosh |
Rima & Sudhamoyi debi | Olivia Das |
Debu | Soumik Banerjee |
Mita | Susmita Ghosh |
Probal & Monohar babu | Souradip Roy |
Supriya debi & Tuli | Priyanka Dutta |
Mira debi | Soumi Sarkar |
Sarbananda babu | Joydeep Lahiri |
Benimadhab babu | Suman Sadhukhan |
Find us on Facebook – click here