নিয়তির খেলা

Views: 22

নিয়তির খেলা:

একবার ভগবান দেবদূতকে বললেন,
-” তুমি মর্ত্যে যাও, সেখানে গিয়ে একজন মায়ের প্রাণ নিয়ে এসো। তার সময় হয়ে গেছে।”
দেবদূত মর্ত্যে এসে দেখে একজন মা, তার আবার চার বাচ্ছা, স্বামী নেই। কোলের বাচ্চাটা একদম ছোট্ট। বড়ো মায়া হলো দেবদূতের, সে ভাবলো এই ছোট্ট ছোট্ট বাচ্ছাদের বাবা নেই। তারপর ওদের মাকেও যদি নিয়ে চলে যায় তো বাচ্ছারা এক অনাথ হয়ে যাবে তাই দেবদূত মায়ের আত্মা না নিয়ে ফিরে গেলো স্বর্গ রাজ্যে।

দেবদূতকে একা আসতে দেখে ভগবান খুব রেগে গেলেন। বললেন,
-” কি হলো? আত্মা কই?
দেবদূত বলে,
-” হে ঈশ্বর আমার খুব মায়া হলো যে……..।”
ভগবান দেবদূতের কথা শেষ করতে না দিয়ে, কোনো একজনকে পাঠালেন মর্ত্যে। আর দেবদূতকে অভিশাপ দিলেন,
-” যাও তবে মর্ত্যে এক গরীব মুচির ঘরে কর্মচারী হয়ে থাকো।”
দেবদূত কেঁদে ভগবানের পায়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
-“হে ঈশ্বর আবার কবে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো?”
ভগবান বললেন,
– “যবে তুমি নিজের দোষ বুঝে নিজের প্রকৃতি বুঝে তিনবার হাসবে সেদিন তুমি মুক্ত হবে আবার এই স্বর্গ রাজ্যে ফিরে আসবে। “

দেবদূত কাঁদতে কাঁদতে মর্ত্যের দিকে চলল। তারপর এক শীত প্রধান রাজ্যে এসে পড়লো। দেবদূত দেখলো বেশ শীত। পাহাড়ি অঞ্চল। ওর গায়ে তেমন কোনো জামা ছিল না। পথের ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদে। সেই পথ দিয়ে এক মধ্যবিত্ত লোক আসছিলো। সে একজন মুচি। শহরে যাচ্ছিলো চামড়া ও অন্যান্য কিছু কেনার জন্য। পথের ধারে দেবদূতকে কাঁদতে দেখে বড়ো মায়া হলো।

সে বললো,

-” ও ভাই তুমি কে? এখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছো কেন? কি হয়েছে?” 

দেবদূত বললো,

-” দেখুন না আমার থাকা খাওয়ার কোনো সংস্থা নেই। কোথায় যাবো, কি খাবো, কিছুই জানিনা।

মুচি বললো,

-” আমি মুচি।  আমার বাড়ি চলো। আমি নতোমায় কাজ শিখিয়ে দেব। আমার কাছে কাজ করবে আর থাকবে।”

বলে মুচি দেবদূতকে নিয়ে বাড়ি এলো। মনে মনে দেবদূত ভাবলো ভালোই হলো, একটা আশ্রয় পাওয়া গেলো। বাড়িতে মুচি দেবদূতকে গরমের জামা দিলো পড়তে।


বৌকে ডেকে বললো,


-” ওকে কিছু খেতে দাও। ও খুব দরিদ্র।”


মুচির বৌ দেখে শুনে রেগে টং।

বললো,

-” তুমি শহরে যাচ্ছিলে; ভালো ভালো জিনিস আনার জন্য। তা না কোথা থেকে একটা উটকো লোককে এনে আমাদের খরচ বাড়ালো।”

বলে রেগে ভিতরে চলে গেল।তখন দেবদূত একবার হাসলো; মনে মনে বললো,


-” আমি দেবদূত। আমায় কেউ চিনতে পারলো না। বুঝতেও পারলো না ওদের বাড়িতে দেবদূত এসে কত মঙ্গল করলো।”

ওখানে থেকে দেবদূত ভালো ভালো জুতো তৈরী করে। কিছুদিনের মধ্যে ওর খুব নাম ডাক হলো। মুচিও আস্তে আস্তে ধনী হতে লাগল। একদিন রাজার বাড়ি থেকে সিপাই এলো এবং বলে গেলো রাজার জুতো তৈরী করে দিতে হবে
দু-দিনের মধ্যে। দেবদূত ভুলে রাজার জুতো তৈরী না করে চটি তৈরী করে ফেললো। এতে মুচি খুব রেগে গেলো।

বললো,


-“তুমি একই করলে? রাজা এবার আমার গর্দান নেবে।”


দেবদূত বললো,


-“না না আপনি দেখুন না রাজার লোক এস এই চটি খুব পছন্দ করবে,আর নিয়েও যাবে। এবার দ্বিতীয়বার হাসলো দেবদূত।”

মনে মনে বললো,


-“আমি দেবদূত আমি তো ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।”এদিকে মুচি মাথা চাপড়াছে আর বলছে,


-“কালই রাজার লোক এসে রাজার জুতো নিয়ে যাবে বলেছে, আর এসে যদি দেখে জুতো নয় চটি হয়েছে তাহলে আমার আর মাথা থাকবে না।”


মুচির বউও কাঁদতে কাঁদতে বলছে,


-“তুমি ভালো জুতো তৈরী করো তোমার অহংকার হয়েচ্ছে না? আমাদের খেয়ে আমাদের পরে আমাদেরই ক্ষতি করলে।”

এখন হয়েছে কি, রাজার লোক এসে রাজার জুতো তৈরী করার হুকুম তো দিয়ে গেলো, কিন্তু সে রাজ বাড়িতে গিয়ে দেখে রাজা মোর গেছে। এখন সে রাজ্যের নিয়ম ছিল; রাজা মরে গেলে মৃতদেহের সাথে চটি দেয়।

পরের দিন রাজার লোক এসে মুচিকে বললো,

-” রাজামশাই মারা গেছেন, জুতো নো চটি দাও। “

মুচি তো অবাক। রাজার লোককে চটি দিয়ে দিলো। রাজার লোক মুচিকে দ্বিগুন টাকা দিলো এবং খুব প্রশংসা করলো। রাজার লোক চলে যেতে মুচু তখন দেবদূতকে ভালো ভালো কথা বলে খুব খাতির করলো। বললো,


-” চলো আমরা আজকে এক নিমন্ত্রণ বাড়ি যাই।”


-” নিমন্ত্রণ কিসের?” দেবদূত প্রশ্ন করে।

মুচি বললো।

-“এক বৃদ্ধা তার কেউ ছিল না। একদিন হটাৎ দেখেন তার পাশের বাড়ির মানে তাঁর এক প্রতিবেশীর স্বামী ছিল না  কিন্তু তার চারটি সন্তান ছিল। হটাৎ প্রতিবেশী মহিলা মারা যান ওই ছোট ছোট চারটি সন্তান রেখে। দয়াপরবশতঃ হয়ে এই বৃদ্ধা ঐ চার শিশু সন্তানদের দত্তক নেন এবং নিজের কাছে রাখেন। ঐ বৃদ্ধার প্রচুর ধন – সম্পদ আছে। এখন সেই বৃদ্ধার খুব শরীর খারাপ। তাই তিনি একটা খানাপিনার আয়োজন করে সবাইকে নিমন্ত্রণ করেছেন। সবার সামনে তিনি তাঁর সব ধন সম্পদ উইল করে ঐ চার কন্যাকে দিয়ে যেতে চান।”

নিমন্ত্রণ বাড়িতে গিয়ে দেবদূত তিনবারের জন্য হাসলো। কারণ, প্রথমবার ভগবান দেবদূতকে যে মহিলার প্রাণ নিয়ে আসতে বলেছিলেন, দেবদূত পিতৃহীন অসহায় ছোট ছোট চার শিশুর মায়ের প্রাণ নিয়ে যায়নি। তার জন্য ভগবান দেবদূতকে অভিশাপ দিয়ে মর্ত্যে পাঠালেন। এ সেই চার কন্যা সন্তান। আজ তারা কত বোরো হয়ে গেছে। কত সম্পত্তির মালিক হয়েছে। তাদের মা বেঁচে থাকলে এসব হত না। তাই দেবদূত ভাবলো ঐশ্বর্যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন। সেই নিমন্ত্রণ বাড়িতেই ভগবান এসে দেবদূতকে সঙ্গে নিয়ে স্বর্গে চলে গেলেন।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterKaberi Ghosh
NarratorOlivia Das
Intro & EndingPriyanka Dutta
Story InfoName
Bhogoban(GOD)Suman Sadhukhan
DebdutDebanshu Ghosh
MuchiSuman Sadhukhan
Muchir BouPriyanka Dutta
Others voiceDebanshu Ghosh

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

 

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *