গুরুদেবের আশীর্বাদ

Views: 83
গুরুদেবের আশীর্বাদ:
শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের দুই শিষ্য,স্বামী ব্রক্ষানন্দ ও স্বামী তুর্জানন্দ। এই দুইজন শিষ্য গভীর তপস্যার জন্য হরিদ্বার যান। যখনকার কথা বলছি, তখন শ্রীরামকৃষ্ণদেব পরলোক গমন করেছেন। গুরুর আদেশেই শিষ্য দুজন এই তপস্যার সিদ্ধান্ত নেন। কৃচ্ছ সাধন না করলে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করা যায়না।
তাই ব্রক্ষানন্দ ও তুর্জানন্দ গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি কুটির করে থাকেন। সারাদিন মাধুকরি করে সন্ধ্যার কুটিরে ফিরে কাঠকুটো জ্বেলে ভাত ফুটিয়ে খান।কোনোদিন আধপেটা খেয়ে কোনো কোনো দিন আবার উপবাসেও থাকতে হয়। এই ভাবে দিন চলে যায়। একদিন মাধুকরি করতে গিয়ে কিছুই পেলেন না দুজনে। ক্ষুধার জ্বালায় কচুপাতা তুলে সিদ্ধ করে খেয়ে দুজনেরই গলা চুলকে, কাশতে কাশতে, গলা ফুলে গিয়ে কথা বন্ধ হয়ে গেল।
কি করা যায় ? স্বামী ব্রক্ষানন্দ কিছু টোটকা জানতেন। টক খেলে নাকি গলার এই ঘা ভালো হয়ে যায়। তক্ষুনি তিনি বেরিয়ে পড়লেন লেবুর সন্ধানে। কিন্তু হায় ! কোথাও লেবু পেলেন না। অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে গুরুদেব কে ডাকেন। সন্ধ্যা হয়ে আসে তাড়াতাড়ি কুটিরে ফিরছেন। চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। হঠাৎ দেখেন একজনের বাড়িতে বাইরের দিকে লেবু গাছে একটিই মাত্র লেবু হয়ে আছে। তখন স্বামী ব্রক্ষানন্দ বাড়ির মালিককে জানিয়ে লেবুটি তুলে নিয়ে আসেন। দুজন মিলে খেয়ে গলার ঘা এবং ব্যথা একটু ভালো হলো।
চুপ করে শুয়ে থাকতে থাকতে স্বামী তুর্জানন্দ হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে দেওয়ালে মাথা ঠুকতে থাকেন। ব্রক্ষানন্দ ছুটে আসেন এবং জিজ্ঞাসা করেন,
— “কি হলো?”
—“কিছু না”, বলে তুর্জানন্দ চোখ মুছে শুতে আসেন।
কিছুক্ষন পর তুর্জানন্দ বলেন,
—“আমার খুব খিচুড়ি আর চাটনি খেতে ইচ্ছে করছে।”
ব্রক্ষানন্দ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন তুর্জানন্দর দিকে।
হঠাৎ উঠে বসে তুর্জানন্দ বলেন,
—“কাল যদি এই একাদশী পালন করার সময় খিচুড়ি আর চাটনি না পাই খেতে তাহলে গুরুদেবকে আর মানব না। সাধন ভজন ছেড়ে দেবো।” বলেই আবার শুয়ে পড়েন।
ব্রক্ষানন্দ বলেন, —
“ছিঃ ছিঃ অমন করে বলতে নেই। বিশ্বাস রাখো। গুরুদেব নিশ্চই তোমার ইচ্ছা পূরণ করবেন।”
সকালে ঘুম থেকে উঠে দুজনে স্নান করতে যান গঙ্গায়, সামনেই গঙ্গার ঘাট। স্নান করে উঠেই দেখেন একজন বিহারী ভদ্রলোক কাকে যেন খুঁজছেন। হঠাৎ ওঁদের ওপর চোখ পড়তেই বলে ওঠে ,
—“বোম্বানন্দজিই , তুর্জানন্দজিই চলিয়ে জলদি জলদি। আপলোক কো ঢুন্ডতা হ্যায় জি।”
—“কা হে? আপ কোন হ্যায় জি ?” ব্রক্ষানন্দ বলেন।
—“ম্যায় রামজিকা সেবক হুঁ।”
তারপর উনি যা বললেন হিন্দিতে তার বাংলা তরজমা করলে হয় ,
— ” আমি কাল রাত্রে স্বপ্নে দেখেছি , রামজি আমায় বলছেন , ‘কাল গঙ্গার ঘাটে দুজন সেবক আসবে , তুমি আমায় কাল খিচুড়ি আর চাটনি সেবা দেবে। আর ওদের ডেকে সেই ভোগ সেবা করাবে। তাতেই আমি সন্তুষ্ট হবো। ওরা খুব ক্ষুধার্ত।’ তারপরই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো। আমি তাই খুব ভোরে উঠে স্নান সেরে রামজি কে পূজাপাট করে, ভোগ রেঁধে, সেবা করতে দিয়ে আপনাদেরকে ডাকতে এসেছি। আপনারা দয়া করে তাড়াতাড়ি চলুন।”
অবাক হয়ে যান ব্রক্ষানন্দ ও তুর্জানন্দ।
আরো বলেন ঐ বিহারী ভদ্রলোক,
—“এতদিন আমি রামজীর সেবা করি আর বলি, হে রামজি দেখা দাও। আজ উনি আমায় দেখা দিয়েছেন ।”
ব্রক্ষানন্দ ও তুর্জানন্দজি ঐ ভদ্রলোকের বাসায় যান। দেখেন, একটি ছোট্ট কুঁড়ে ঘর। ভিতরে একটু খানি জায়গা।তার এককোনে রামসীতা মায়ের মূর্তি। ওনারা দুজন রামসীতা মাকে গড় হয়ে প্রণাম করে মাথা তুলে দেখেন রামসীতা মায়ের মূর্তির পরিবর্তে শ্রীরামকৃষ্ণদেব ও সারদা মা। ওনারা দুজন আবার লুটিয়ে পড়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
— “হে গুরুদেব আমাদের ক্ষমা করুন, ক্ষমা করুন। আপনার মহিমা আপনি নিজে।”
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Narrator | Joydeep Lahiri |
Introduction | Olivia Das |
Characters | Name |
---|---|
Bramhananda | Joydeep Lahiri |
Turja Nanda | Debanshu Ghosh |
Others | Joydeep Lahir, Debanshu Ghosh |
https://www.facebook.com/srijoni
Joy guru. Khub sundor golpo