Visits: 34

বন্ধু সখা:

নদীর ধারে এক কৃষ্ণ মন্দির। রাধাকৃষ্ণ নয় শুধু কৃষ্ণর মূর্তি। মুরুলী মোহন শ্যামসুন্দর। অপূর্ব মূর্তি। মন্দিরে অনেক ভক্ত সমাগম হয়। চার বেলা পূজা অর্চনা যাগযজ্ঞ সব হয়। এই মন্দিরে কৃষ্ণের এক পরম ভক্ত ছিল। তারও নাম ছিল মদন। সে এমনই ভক্ত যে কৃষ্ণ তাকে ‘বন্ধু’ বলে ভাবে আর মদনও কৃষ্ণকে বন্ধু বলে ডাকে।

একদিন ভক্ত মদন কৃষ্ণকে বলল,

– ‘‘হে বন্ধু, সারাদিন রাত তুমি মুরলী ধর হয়ে দাঁড়িয়ে থাক। তোমার ক্লান্ত লাগে না। তুমি এতুটুকু বিশ্রাম নাও না, কেন?’’

কৃষ্ণ বললো,

– ‘‘আমার কি বিশ্রাম নেবার সময় আছে। জগৎ সংসার আমার ইসারায় চলে। আমি বিশ্রাম  নিলে জগৎ সংসার অচল হয়ে যাবে।’’

ভক্ত মদন বলল,

– ‘‘তা হোক, তোমায় বিশ্রাম নিতেই হবে।’’
কৃষ্ণ বলল,

– “আমি বিশ্রাম নিলে আমার কাজের দায়িত্ব কাকে দিয়ে যাবো।’’

ভক্ত মদন বলে,

– ‘‘কেন আমায় দিয়ে যাবে।’’

মুচকী হেসে শ্রীকৃষ্ণ বলে,

– ‘‘বামন অবতারে বলি রাজা আমার একটা পায়ের ভার না নিতে পেরে পাতালে চলে গিয়েছি। আর তুমি নেবে জগৎ সাংসারের ভার।’’

মুখ কাচু মাচু করে ভক্ত মদন বলে,

– ‘‘একদিনের জন্য আপনি আমাকে আপনার মতন করে দিন। আমি দাঁড়িয়ে থাকি। আপনি বিশ্রাম করুন। জগৎ সংসারের ভার আপনারি থাক।’’

অবশেষে কৃষ্ণ হেসে বলে,

– ‘‘বেশ ঠিক আছে। তাই হবে। তবে একটা শর্তো আছে।’’

– ‘‘কি শর্ত বল। আমি তাই করবো।’’ বলে ভক্ত মদন।

– ‘‘তুমি একটাও কথা বলবে না। যে যাই করুক বা বলুক। তুমি একদম চুপ করে থাকবে। একটা কথাও বলবে না।’’

কৃষ্ণ এই কথাটা বলতে ভক্ত মদন একটু ভেবে বলে,

– ‘‘বেশ ঠিক আছে। তাই হবে। একদম কথা বলবো না।’’

দুজনা এক মন হয়ে ঠিক হল পরের দিন সকাল থেকে ভক্ত মদন কৃষ্ণর জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে আর কৃষ্ণ বিশ্রাম নেবে।
কৃষ্ণের মায়ায় ভক্ত মদন হয়ে গেল কৃষ্ণ। হুবহু কৃষেণর মতন বাঁশী ধরে একই বস্ত্রে একই ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে ভক্ত মদন। কৃষ্ণ হয়ে গেল ভক্ত মদন। সারাক্ষণ হরিনাম নাম জপ করছে। কেউ গুনাক্ষরে জানতে পারলো না। পরের দিন ভক্ত মদন দাঁড়িয়ে মনে মনে কৃষ্ণ নাম ভজনা করছে। একে একে সব ভক্তরা আসছে পুজো দিচ্ছে। নিজের মনের কামনা বাসনা জানাচ্ছে। ভক্ত মদন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে, শুনছে, আর মনে মনে হাসছে। ভাবছে। আমায় জানাচ্ছ, আমি কৃষ্ণ ঠাকুর নই। অনেক বার মুখ খুলতে গিয়েও মনে পড়ে যায় কৃষ্ণকে কথা দিয়েছে। যে সে কথা বলবে না। চুপ করেই থাকে। সকাল বেলায় এক ব্যক্তি আসে, এক ব্যাগ টাকা নিয়ে। ব্যাগটা পাশে রেখে ঠাকুরকে প্রণাম করে বলে,

– ‘‘ঠাকুর আমার আজ অনেক রোজগার হয়েছে। তোমায় অনেক ধন্যবাদ।’’

ভক্ত মদন মনে মনে বলে,

– ‘‘রোজগার হয়েছে তো ঠাকুরকে পুজো দে, ভোগ দে, তা না শুকনো ধন্যবাদ।’’

কিন্তু বলার উপায় নেই কৃষ্ণ বারণ করেছে। সেই লোকটি তাড়াহুড়ো করে টাকার ব্যাগ ফেলে রেখেই চলে যায়। তারপরই এক হত দরিদ্র লোক আসে, সে প্রণাম করে প্রণামী বাক্সে একটি টাকা ফেলে হাত জোড় করে বলে,

– ‘‘ঠাকুর, আর পারছিনা এই দরিদ্রতা সহ্য করতে আজ আমার শেষ সম্বল তোমায় দিলাম। একটু দয়া করো প্রভু।’’

বলে লোকটি পিছন ঘুরে চলে যেতেই দেখে দেয়ালের পাশে একটা ব্যাগ। খুলে দেখে ভর্তি টাকা। আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় লোকটি বলে,

– ‘‘এত দয়া করেছে ঠাকুর। তোমার দয়ার অন্ত নেই। কালই তোমায় ভোগ দেব।’’ বলে আনন্দে ব্যাগটা নিয়ে চলে গেল। ভক্ত মদন মনে মনে বলে,

– ‘‘সত্যি প্রভু তোমার দয়ার অন্ত নেই। ঐ দরিদ্র লোকটি টাকা দিয়ে ভালই করছে।’’

কিছুক্ষণ পর একটি ছেলে আসে। ঠাকুরকে প্রণাম করে বলে,

– ‘‘ঠাকুর অনেক কষ্টে একটা চাকরী পেয়েছি তোমার দয়ায়। তুমি না সহায় হলে হতো না চাকরীটা বিদেশে। কিন্তু পেলে যেতে হবে ভয় করছে। বাবা মাকে ছেড়ে যেতে হবে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। তুমি আমার বাবাকে মাকে দেখো ঠাকুর। চাকরীতে জয়েন করে আবার আসবো বাবাকে মাকে নিয়ে যেতে তখন তোমায় ভোগ দেবো, ঠাকুর ফুলের সাজ দেবো।’’

ছেলেটি এত কথা বলছে আর প্রণাম করছে। ঠিক সেই সময় প্রথম ব্যক্তি পুলিশ নিয়ে এসেছে। ভক্ত মদন অবাক হয়ে দেখছে। ১ম ব্যক্তি পুলিশকে বলে,

– ‘‘এই ছেলেটিই আমার টাকার ব্যাগ নিয়েছে ওকে গ্রেপ্তার করুন।’’
ছেলেটি ভ্যাবাচাকা খেয়ে বলে,

-‘‘আরে না না আমি টাকার ব্যাগ দেখি না।’’

ব্যক্তি আবারো বলে,

– ‘‘হ্যাঁ স্যার ঐ নিয়েছে।’’

পুলিশ কোন কথা না শুনেই ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে চলে যায়। তখন মদন কৃষ্ণকে উদ্দেশ্যে করে বলে,

– ‘‘একি প্রভু। যে নির্দোশ তাকে শাস্তি দিলে?’’

কৃষ্ণ বলে,

– ‘‘আমি তোমায় চুপ করে থাকতে বলেছি। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো।’’

ভক্ত মদন কপট অভিমান করে কৃষ্ণকে বলে,

– ‘‘না প্রভু আর তোমার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো না। আমি আর চুপ করে থাকতে পারছি না, এ অন্যায় সহ্য করতে পারছি না।’’

রাত হতে মন্দির বন্ধ হয়ে যায় কৃষ্ণ রূপী ভক্ত মদন। কৃষেণর কাছে এসে বলে,

– ‘‘তোমার ভার তুমি নাও।’’

কৃষ্ণ হাসি মুখে বলে,

– ‘‘আমি তো তোমায় বলেছিলাম তুমি পারবে না।’’

পরের দিন মন্দির খুলতে যেমন ছিল তেমন হল। কৃষেণর জায়গায় কষণ। আর ভক্ত মদনের জায়গায় ভক্ত মদন। পরের দিন সেই ১ম ব্যক্তি যার টাকা চুরি গিয়েছিল সে মন্দিরে এসে বলে,

– ‘‘ঠাকুর একি করলে, যে ভাবে হোক আমার রোজগারের টাকা, আমি আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ঐ ধনী ব্যক্তিকে ঠকিয়ে টাকাটা আমি পেয়েছিলাম। আর সেটা চুরি হয়ে গেল। হায় হায় আমি এখন মেয়ের বিয়ে দেবো কি করে?’’

ঠিক সেই সময় পুলিশ সেই ছেলেটি আর ঐ দরিদ্র ব্যক্তি এসে হাজির। পুলিশ বলে,

– ‘‘এই যে আপনি। এখানে আপনাকে পাবো বলে এইখানে এলাম। আপনার টাকা চুরি যায় নি। আর এই ছেলেটিও নেয়নি।”

অবাক হয়ে ১ম ব্যক্তি তাকিয়ে থাকে পুলিশের দিকে। আর ভক্ত মদনও চুপ করে শোনে ব্যাপারটা। পুলিশ আবার বলে,

– ‘‘এই ছেলে বিদেশে যাবে বলে জাহাজের টিকিট কাটছিল। ঠিক তখন আপনি টাকা শুদ্ধ ব্যাগ ফেলে চলে যান। এই দরিদ্র ব্যাক্তি পায় এই মন্দির থেকে। প্রথমে আনন্দ হলেও পরে উনি টাকাটা থানায় আসে জমা দিতে। এই নিন আপনার টাকা।’’

বলে পুলিশ ফেরৎ দেয় ১ম ব্যক্তির টাকাটা। আর ছেলেটিকে বলে,

-‘‘কাল তুমি জেলে ছিলে বলে আপশোষ হচ্ছে চাকরীটা পেলে না। কিন্তু তুমি জানো কাল কি হয়েছে?’’

ছেলেটি মাথা নাড়ে।

-“ঈশ্বরের দয়ায় তুমি বেঁচে গেছো। কাল যে জাহাজটি যাবে বলে টিকিট কেটে ছিলে। সেই জাহাজটা ডুবে গেছে।’’ সবাই অবাক হয়ে যায়। পুলিশ আবার বলে,

-“আর এই ২য় লোকটি যিনি অত দরিদ্র হওয়া সত্বেও লোভ সামলে টাকাটা থানায় এসেছিল। আপনার সততার জন্য আপনাকে আমি সিকিউরিটির একটা চাকরী দিলাম। কাল থেকে জয়েন্ট করুন।’’

বলে সবাই ঠাকুরকে প্রণাম করে চলে যায়। ভক্ত মদন ছুটে এসে বলে,

– ‘‘ওঃ বন্ধু তোমার কি দয়া। ঐ ছেলেটিকেও বাঁচিয়ে দিলে। দরিদ্র লোকটিকেও কাজ দিলে। আর ১ম ব্যক্তিটিকেও মেয়ের বিয়ের টাকাটা পাইয়েও দিলে।’’

গড় হয়ে প্রণাম করে ভক্তমদন আবার বলে,

– ‘‘বন্ধু সত্যি তুমি দীনবন্ধু।”

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterKaberi Ghosh
IntroductionDebanshu Ghosh
NarratorOlivia Das
CharactersName
KrishnaJoydeep Lahiri
MadanDebanshu Ghosh
PoliceSuman Sadhukhan

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *