লীলাময়
Views: 22
লীলাময়:
পুরীতে তো অনেকেই গেছেন। কিন্তু জানেন কি ? জগন্নাথ দেবকে আহারের পর পান সুপারী দেওয়া হয়। অনেক আগে দেওয়া হত না। এখন হয়। কিন্তু মন্দিরের পান্ডাগণ একদম পান সুপারী খান না। আগেও খেতেন না এখনও খান না। জগন্নাথ দেবকে কেন খেতে দেয় তার একটা প্রচলিত গল্প আছে। সেটাই বলি, – জগন্নাথ মন্দিরে ঠাকুরের এক ভক্ত থাকেন। তাঁর নাম বলরাম দাস। তিনি প্রতিদিন রাত্রে ঠাকুরকে শয়ন করাবার পর তিনি মন্দিরের বাইরে গান গেয়ে ঠাকুরকে ঘুম পাড়াতেন। ঠাকুরকে গান শোনাতেন। গান গাইতে গাইতে অনেক রাত হয়ে যেত। মন্দিরের একটু দূরে প্রভুরাম বলে আর এক ভক্তের কুটির। তিনি রোজ সকালে এসে মন্দিরের কাজকর্ম করে ঠাকুরের৫৬ রকমের ভোগ দরশন করে ঘরে ফিরতেন। একদিন প্রভুরামের মনে হল,
– “প্রভু এত রকম সুস্বাদু ভোজন গ্রহণ করার শেষে যদি একটি সুগন্ধ পান খেতেন তাহলে ভোজন ঠিকঠাক সম্পূর্ণ হত। আমার পানকে সবাই ভাল বলে। তবে যদি প্রভুকে একদিন দিতে পারতাম তা হলে বেশ হত।’’
কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় এখানে কেউই পান সুপারী খান না। তবে?? মনের ইচ্ছা মনেই রেখে দিয়ে কুটিরে চলে যান।
এদিকে বলরাম দাস একদিন দেখেন মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। যে যার মত কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গেল। এক এক জন বলরামকে জিজ্ঞেস করে,
‘‘কি হে বলরাম আর কত রাত অবধি গান করবে?’’
বলরাম কোন দিকে কান দেয় না। ওর যতক্ষণ ইচ্ছা গান গেয়েই যাবে। তারপর ক্লান্ত হলে তবে থামবে। ইচ্ছা হলে ওর ঘরে যাবে; না হয় ঐ মন্দিরের দরজার পাশে শুয়ে পড়বে। হঠাৎ বলরাম দেখেন মন্দিরের পিছন থেকে দুই কিশোর আসছে। পড়নে ধুতি, গায়ে চাদর, হাঁটতে হাঁটতে সামনে দিয়ে দুরে চলে গেল। একজনের মাথা খালি আর একজনের মাথায় শিখি পাখা। চোখের ভুল ভেবে বলরাম ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন রাতে আবার সেই দুই কিশোর মন্দিরের পিছন থেকে বেরিয়ে আসে আর যথারীতি হেঁটে দূরে চলে যায়। আজ বলরাম ভাবেন কে এই দুই কিশোর, কোথায় যায়? আর কখনই বা ফিরে আসে দেখতে হবে।
পরের দিন যথারীতি বলরাম গান গেয়ে মন্দিরের পাশের চত্বরে ঘুমের ভান করে পড়ে ছিলেন। ঠিক সময়ে কিশোর দুজন বেরুতেই বলরাম ওদের পিছু নেয়। কোথায় যায় ও দুজন? কিছুক্ষণ যাওয়ার পর কিশোর দুটি একটি কুটিরের সামনে দাঁড়াল তারপর কুটিরের দরজায় টোকা দিতে দরজা খুলে গেল। ওরা দুজনে ভেতরে ঢুকে গেল। একটুক্ষণ পরেই বেরিয়ে এল। আর হেঁটে হেঁটে কিছু চিবোতে চিবোতে মন্দিরের পিছনে চলে গেল। বলরাম বুঝলেন যার কুটিরে কিশোর দুটি গিয়ে ছিল, সেটা হচ্ছে প্রভুরামের পানের দোকান। ওরা দুজনে পান খেতে গিয়েছিল। পরের দিন সকালে বলরাম প্রভুরামের কুটিরে হাজির। প্রভুরাম তো খুব খুশী প্রভু জগন্নাথের বড় ভক্ত গায়ক তাঁর কুটিরে এসেছেন। প্রভুরাম আসন পেতে বলরাম দাসকে বলল,
– ‘‘আসুন আসুন। আপনি বসুন, কি আজ্ঞা হয়। আমায় তো স্মরণ করতে পারতেন আমি নিজে হাজির হতাম।’’
বলরাম দাস চুপ করে কথাগুলো শুনলেন তিনি। তারপর আসনে বসে একটুক্ষণ কি চিন্তা করে বললেন,
– ‘‘আচ্ছা প্রভুরাম, তোমার পানের দোকান কেমন চলছে?’’
– ‘‘আজ্ঞে আপনাদের দয়ায় আর প্রভু জগন্নাথদেবের কৃপায় আমার ব্যবসা মোটামুটি ভালই চলছে।’’
হাত জোড় করে বলে প্রভুরাম। বলরাম দাস বলেন,
– ‘‘তোমার তৈরী পানের খুব সুখ্যাতি চারিদিকে।’’
বলরাম দাসের কথা শেষ হবার আগেই প্রভুরাম বলেন,
– ‘‘হ্যাঁ দাদা, আমারও খুব ইচ্ছা, সবই এত ভাল বলে, এত প্রশংসা করে সবাই প্রভুর কৃপায় একদিন একটা পান প্রভু জগন্নাথ দেবকে দিই । তাঁর আহারের পরে। কিন্তু ভয় হয়। কেউ তো মন্দিরের পান খান না। তা ই মনের ইচ্ছা মনেই রাখি।’’
বলরাম দাস এবার আসল কথায় আসেন।
– ‘‘আচ্ছা প্রভুরাম রোজ রাত্রে দুজন বালক তোমার কুটিরে আসে কেন? কি দরকার?’’
– ‘‘আজ্ঞে ওরা পান খেতে আসে।’’ বলে প্রভুরাম
-“অত রাত্রে চুপিচুপি?” প্রশ্ন করেন বলরাম।
– ‘‘আজ্ঞে বড়দের ভয়ে।’’ প্রভুরাম বলে হেসে।
– ‘‘তুমি ওদের কাছে পয়সা নাও?’’ আবার প্রশ্ন করেন বলরাম।
– ‘‘না দাদা আমি পয়সার কথা তুলি নি। আর ওরাও দেয়না।’’
ইতস্তত ভাবে বলে প্রভুরাম।
একটু চিন্তা করে বলরাম দাস বলেন,
– ‘‘কাল আসলে তুমি পয়সা চাইবে। যদি দিতে না পারে। তাহলে বলবে ওদের গায়ের চাদর রেখে যেতে|পরদিন পয়সা দিলে চাদর ফেরৎ দেবে।’’
বলেই বলরাম দাস চলে যান। যথারীতি পরের দিন রাত্রে কিশোর দুজন প্রভুরামের কুটিরে গেল পান খেতে। প্রভুরাম বলেন,
– ‘‘তোমরা রোজ পান খেয়ে যাও বিনামূল্যে। আজ কিন্তু তোমায় পানের মূল্য দিতে হবে।’’
কিশোর দুজন বলেন,
– ‘‘আমাদের কাছে তো কোন মূল্য নেই।’’
প্রভুরাম বলেন,
– ‘‘ঠিক আছে তোমাদের পানের মূল্যর বদলে তোমাদের গায়ের ঐ চাদর দুটি দিয়ে যাও। আগামী কাল আমায় পানের মূল্য দিয়ে চাদর জোড়া নিয়ে যাবে।’’
কিশোর দুজন চলে যায় চাদর জোড়া খুলে দিয়ে।
পরের দিন সকালে মন্দিরের সেবাইতরা মন্দির পরিষ্কার করতে এসে অবাক কান্ড! একি মহাপ্রভুর গায়ের চাদর কোথায় গেল? কে নিয়েছে? কার এত বড় সাহস হল যে মহাপ্রভুর গা থেকে চাদর খুলে নিয়ে যায়? সবাই-এর মাথায় হাত। ক্রমে ক্রমে কানে কথাটা গিয়ে পৌঁছালো। রাজা মশাই ছুটে এলেন। সত্যই তো সুভদ্রা মায়ের চাদর ঠিক আছে, কিন্তু বলরাম ও জগন্নাথ দেবেরই চাদর নেই। যে চুরি করবে, সে নিশ্চয়ই একজনকে বাদ দিয়ে চাদর নেবে না। সবাই ভেবে আকুল। বলরাম দাস প্রভুরামের কাছে গিয়ে বললেন,
– ‘‘প্রভুরাম, মন্দিরে জগন্নাথ আর বলরামজীর গায়ের চাদর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাজা মশাই খুব রেগে গেছে। প্রভুদের গায়ের চাদর কে চুরি করেছে।”
– ‘সে কি! বলরাম মশাই।’’ অবাক হয়ে যায় প্রভুরাম।
– ‘‘হ্যাঁ, তুমি চাদর নিয়ে যাও শীঘ্র। সব কথা রাজা মশাইকে খুলে বলবে। বলরামজী আর জগন্নাথজী তোমার দোকানের পান খেতে এসেছিলেন। তুমি বড় ভাগ্যবান প্রভুরাম। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।”
বলে বলরাম দাস ওখান থেকে চলে যান।
প্রভুরামের কাছ থেকে সব শুনে রাজা মশাই সেই দিন থেকে মহাপ্রভুর দুুপুরে ও রাত্রে ভোগের পর প্রভুরামের কাছ থেকে পান যায় মন্দিরে। আজ প্রভুরাম নেই তবে তার বংশধররা আছে তাদের দোকান থেকে মন্দিরে পান যায়, কিন্তু এখনো মন্দিরের পান্ডারা কেউই পান খান না।
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
Kathak | Olivia Das |
Characters | Name |
---|---|
Probhuram | Joydeep Lahiri |
Boloram | Narayan Dutta |
Other Characters | Debanshu Ghosh |
Find us on Facebook – click here