রানিকুঠীর বিভীষিকা

0

Visits: 37

রানিকুঠীর বিভীষিকা:

মানুষের জীবনে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে থাকে যা বাস্তব ভিত্তি কিংবা বৈজ্ঞানিক যুক্তির বাইরে। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে শহুরে আধুনিক মানুষেরা তাকে বলে,’coincidence’ কিংবা মনের ভুল।

আমার জীবনে এমনি একটা রাতের কথা আজ বলতে চলেছি। সেই ভয়ঙ্কর রাত। সবটা শুনে তোমরাই বিচার করো কারণ আমি নিজে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে আজও উপনীত হতে পারিনি। আর সত্যি বলতে কি সেটা র চাইও না। জীবনের জলছবির খাতার একটা ফেলে আসা অধ্যায় বলেই ধরে নিয়েছি।

বছর কুড়ি আগের কথা। সেবার জনাকয়েক বন্ধুমিলে ঠিক করা হল,ঘুরতে যাব। শ্রীরামপুর কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশনের পার চুকিয়ে zoology তে masters-এ ভর্তি হলাম বিদ্যাসাগর কলেজে। আমরা ৩ বন্ধু, যাকে বলে 3 Musketeers. অয়ন,দেবু(দেবজ্যোতি), আর আমি সৌর ঠিক করেছিলাম, গ্রাজুয়েশনের পর মাস্টার্সও একসাথেই পর্ব। কলেজের ক্লাস শুরু হতে তখন ২ সপ্তাহ বাকি। তাই আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেছিলাম ট্রেনের। ওদেরকে প্রথমে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাবটা আমিই দিয়েছিলাম। ঘাটের আড্ডায় একদিন বললাম,
-” ভাই একটা good news আছে।”
দেবু বললো,
-” বিয়ে করছিস? ভাই খাওয়া। “
অয়নও তাল মেলালো। আমি বললাম,

-“ধ্যুস। থামতো, পুরো মুডটাই চটকে দিলি। ওরে হতভাগা, বেড়াতে যাওয়ার প্লানটা ভুলে গেলি??”
বলেই পকেট থেকে ticket টা বের করে ওদের দেখালাম।
-” surprise ticket কেটে ফেলেছি। next friday আমাদের ট্রেন। “
অয়নই সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিল বরাবর, ও লাফিয়ে উঠে বললো,
-” জিও কাকা। সত্যি ভাই, trip টা finally হচ্ছে।”
আমি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লাম। দেবু বললো,
-” তা বেশ দারুন খবর, তা ভায়া যাচ্ছি কোথায়?”
আমি শান্ত হয়ে বসে রেলা মেরে একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম,
-” ঝাঁঝাঁ। “

দেবুর কাছে নামটা as usual  প্রথমবার বর্ণপরিচয় পড়ার মতোই লাগল। ব্যাটা ভুরু কুঁচকে রইলো। অয়ন দেখি হঠাৎ নামটা শুনে একটু অন্যমনস্ক হয়ে কি একটা ভাবতে শুরু করল। যেন কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করছে। 

-“কি আছেটা কি ওখানে?”
-“কি চাস বল না।  পাহাড়, টিলা, জঙ্গল, মরা নদীর বাঁক, আর  আরাম,  সবুজের সমারোহ, আর একটু freash air.”

অয়ন খুব খুশি হল। দেবু বললো,
-“গেলেই হল। আর কলেজ শুরু হয়ে গেলে সব গ্যারেজ,থোড় বড়ি খাড়া-খাড়া বড়ি থোড়।”

হাওড়া থেকে মোকামা প্যাসেঞ্জারে তিনজন চেপে পড়লাম দেখতে দেখতে শহরের ব্যস্ততা ও কোলাহল ছেড়ে চোখ জুড়ে শুধু বিস্তার করল সবুজের সমারোহ। ট্রেনে জার্নির সময় এই ইঁট-কংক্রিটের জঙ্গল থেকে সবুজের দুনিয়ায় প্রবেশের ট্রানজিশনটা বড়ই ভালো লাগে। আমাদের নামার কথা বিকেল চারটে। কিন্তু গন্ডগোলটা বাঁধলো আসানসোল জংসনে। ইঞ্জিনের কিছু টেকনিক্যাল ফলটের জন্য ঝারা আড়াই ঘন্টা লেট খেয়ে গেলাম। এবার দেবু অস্থির হয়ে বললো,
-“ভাই এমনিতেই লেট তার ওপর আকাশের অবস্থা ভালো ঠেকছে না রে। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে। আমাদের তো হোটেল বুকিং করার আছে।

অয়ন বললো,
-“হ্যাঁ রে সৌর হোটেলটা বুকিং করে রাখলে ভালো হতো না কি।”
আমি বললাম,

-“জায়গাটায় যেহেতু এখনো টুরিস্টদের নজরে আসেনি সেহেতু তেমনভাবে comercialized ও হয়নি। তাই ‘ভ্রমণসঙ্গী’ খুঁজেও কোন তথ্য পাইনি রে হোটেলের। তবে হ্যাঁ পেপার কাটিং-এ যেখানে এই জায়গার খোঁজ পেয়েছিলাম সেখানে বেশ কিছু ধাম/পুরানো জমিদার বাড়ির উল্লেখ রয়েছে। সেগুলো নাকি ভাড়া দেয় টুরিস্টদের। ও ঠিক একটা পেয়ে যাবো।”

ট্রেন লেট খেতে খেতে যখন মধুপুর শিমুলতলা পেরিয়ে ঝাঁঝা পৌছালাম,তখন ঘড়ির কাঁটা বলতে রাত পৌনে আটটা। সঙ্গে উপরি পাওনা মুষলধারে বৃষ্টি।  কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে হর্ন দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ট্রেন মিলিয়ে গেল বৃষ্টির কালো আগ্রাসনে। এতক্ষণ কিছুই বুঝতে পারিনি কিন্তু ট্রেনটা চলে যাওয়ার পর খেয়াল করলাম সারা প্লাটফর্মে আমরা শুধু তিনজন।দেবু বলল,
-“বৃষ্টি না থামা অব্দি ওয়েটিং রুমে থেকে যাওয়াই ভালো ডিসিশন হবে। “

-“হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস।  আমাদের কপালটা দেখ,একে নতুন জায়গা তারপর ট্রেন লেট, তার ওপর আবার বৃষ্টি।”
ওয়েটিং রুম বলতে কিছুই নেই খুঁজে একটা আধভাঙ্গা টিনের ছাউনি পাওয়া গেল। সেখানেই ঠাই নিলাম। সঙ্গে খাবার বলতে ছিল শুধু cake আর
biscuit;খিদে পেয়ে গেছিল খুব,তাই দিয়েই আহার সারলাম।
কিছুক্ষণ বসার পর ধীরে ধীরে মাথাটা শান্ত হতেই কয়েকটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। গোটা স্টেশনটায় আলো বলতে কিচ্ছু নেই, হালকা দূরে টিমটিম করে এল জ্বলছে একটা ঘরে। সম্ভবত ওটাই স্টেশন মাস্টারের ঘর।
স্টেশন চত্ত্বরের বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার, আমাদের সাথে সহযাত্রী দুজন রয়েছে। একজন আপাদ মস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে,দেখে মনে হল বাঙালি। কারণ শখের একটি চটের ব্যাগ দেখলাম যেটায় বাংলায় লেখা সাহা টেক্সটাইল। সম্ভবত তিনি ঘুমোচ্ছেন বা শুয়ে জেগে আছেন। আর একজন খুবই সন্দেহজনক দৃষ্টি দিয়ে শাল ঢাকা মুখের ফাঁক দিয়ে আমাদের আড়চোখে দেখছে। পরনে খদ্দরের শাল, সাদা ধুতি আর নাগরাই জুতো।
৩ জনই এবার একটু টেনশনে পরে গেলাম। অয়ন সাহস করে মুখ খুলল,

-“ভাইয়া ইধার নাজদিক ম্যায় আচ্ছা হোটেল অউর গেস্ট হাউস কাঁহা মিলেগা?”
কিছুক্ষণ সব চুপচাপ শুধু বাইরে একনাগারে বৃষ্টির শব্দ তারপর উল্টো দিক থেকে উত্তর এলো,
-“আপ বাঙ্গালি আছেন?”
আমি বললাম,
-“হ্যাঁ।”
-“ইধার তো কইভি হোটেল নেহি মিলেগা আপকো।” সহযাত্রী বলে উঠলো।
-“টুরিস্টরা ঘুরতে আসে অথচ থাকার কোন জায়গা নেই কি বলছেন কি মশাই আপনি। “
উত্তরে সে বলল,
-“সিবায় এক ছোরকার।”
আমি বললাম,
-“সেটা কি?”
-“রানীকুঠী। “
আমরা তিনজন পরস্পরের মুখ চাইলাম। তারপর বললাম,
-“সেটা কোথায়?”

-“ও ইখান থেকে এক ঘন্টার পথ আছে। পথ বহুত খারাপ আছে, ঘোড়ার গাড়ি ছোরকার অর কুছ নেহি যাতা উধার। আপ বোলেগা তো হাম হি  নিয়ে যেতে পারি।”
অয়ন এবার বলে বসলো,
-“আপনি কেন নিয়ে যাবেন?”
উত্তর এলো,
-“আমি নিজে সহিস আছি। স্টেশন কে বাহার মেরা বিজলি খাড়া হে আপ যায়েগা তো লে যা সাকতা হু।”
দেখলাম বাইরে বৃষ্টির বেশ কিছুটা কমেছে, নিজেরা কিছুক্ষণ আলোচনা করে স্থির করলাম এই দুর্যোগের রাতে সারারাত এখানে কাটানোর থেকে ওই রানীকুঠীতেই চলে যাওয়া ভালো। কারণ,
১) স্টেশনের বাইরে চত্বর এতটাই অন্ধকার যে খুঁজে ধাম বা গেস্ট হাউস বের করা দুষ্কর।
২) বৃষ্টি
৩) অচেনা জায়গায় সেখানকার লোকাল লোকেদের একটু ভরসা করে নিতে হয়। নিজেদের বিপদ উল্টে বেড়ে যায়।
তিন বন্ধু মিলে অচেনা ব্যক্তিকে যাবার সম্মতি জানাতেই সে বলল,
-“বহুৎ আচ্ছা আইয়ে।”

স্টেশনের বাইরে এসে দেখি, হাতে গোনা চার-পাঁচটা ছোটখাটো দোকান,সব বন্ধ।  জনমানবহীন চত্বর।
-“কি বিচ্ছিরি জায়গায় নিয়ে এলি রে সৌর।” বলল দেবু।
আমি বললাম,
-“দুর্যোগ,ট্রেন লেট সব একসাথে ঘটবে কি করে বুঝবো বল দেখি। “
সেই সহিস এবার এক্কা গাড়ি নিয়ে হাজির। বিজলি হলো তার ঘোড়ার নাম। আমরা লাগেজ নিয়ে একে একে উঠে পড়লাম গাড়িতে। দেবু বলল,
-“আপ কা নাম?”
উত্তর এলো,
-“বজরঙ্গি।”

-“বেশ বজরঙ্গি ভাই রাস্তে মে খানেকা দুকান মিল যায়ে  তো বোল দে না।” দেবু বলল।.

একটা হো হো হাসি হেসে উত্তর এলো,
-“বাবু ইধার তো আভি কুছ নেহি মিলেগা। রানীকুঠী চলুন, হয়তো উখানে  ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
তিনজন মুখ চাওয়া চাওই করে বিমর্ষ হয়ে পড়লাম। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখলাম চারপাশের দৃশ্য বদলাতে শুরু করেছে। বৃষ্টিটা বন্ধ হয়েছে,দূরে আকাশে এক ফালি চাঁদ মেঘের আকাল আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে। দুদিকে খোলা প্রান্তর তার মাঝে মাঝে প্রহরের মতো দাঁড়িয়ে এক একটি পাহাড়ি টিলা। কাঁকর বিছানো জনমানবহীন রাস্তায় শুধুই আমরা এগিয়ে চলেছি অজানা গন্তব্যের দিকে। কে জানে কি আছে কপালে।

এবার তিনজনই লক্ষ্য করলাম আমরা সমতল ছেড়ে একটা পাহাড় বা টিলার রাস্তা নিয়েছি। অয়ন জিজ্ঞাসা করল,
-“আচ্ছা বজরঙ্গি এই রানীকুঠী নাম টার কারণ কি?কোন বিশেষ কারণ আছে নাকি?”
-“আপ চালিয়ে না, খুদ হি পাতা চাল যায়েগা।”

রানীকুঠীর সামনে যখন পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে পৌছালাম,তখন রাত ৯:৩০ বেজে গেছে। দেখলাম আমরা একটা টিলার মাথায় এসে পৌঁছেছি। সামনে একটা আধভাঙ্গা রাজবাড়ির গেট। দাঁড়িয়ে রয়েছে একতলার বড় দালান বাড়ি।  একতলা হলে কি হবে রাতের নিকষ অন্ধকার যেটুকু বোঝা গেল, তাতে বোঝা যায় অবহেলা আর অনাদরে এক প্রাগৈতিহাসিক জীর্ণতাকে সাক্ষী রেখেছে এই রানীকুঠী। আমি এসব দেখতে দেখতে গাড়ির ভাড়া মেটানোর জন্য টাকাটা বজরঙ্গির দিকে বাড়িয়েছি, আমার সারা শরীরটা শিওরে উঠলো বরফের মতো ঠান্ডা হাত।

দেবু আমার ভাবভঙ্গি দেখে বলল,
-“কিরে কি হলো ওর?”
আমি বললাম,
-“না না কিছু না, চল।”
যাবার সময় বলে গেলো,
-“ইধার যো দেখভাল করে ওর নাম রতনলাল আছে,খুব ভালো লোক। ওকে ডাক দিন, চলে আসবে;আমি আসি।”
একটা বিশ্রী তির্যক হাসি হেসে বজরঙ্গি ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে দিল। আমি ব্যাপারটাকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম। লোহার গেট খুলে,
-“রতনলাল ও রতনলাল। ” বলে অয়ন হাঁক দিল। ও একাই গট গট করে এগিয়ে গেছে মূল ফটকের কাছে। সাহস ওর বরাবরই একটু বেশি। হঠাৎ দেখলাম একটা “ক্যাঁচ” শব্দ করে টিম টিমে হ্যারিকেন হাতে দরজার ফাঁক করে মুখ বাড়িয়েছে এক ষাঠোর্দ্ধ বৃদ্ধ। যেন এই রাতে আগন্তুকের আগমনটা একেবারেই মেনে নিতে পারেনি।

সে বেরিয়ে এসে অদ্ভুত স্বরে বলল,
-“বলেন বাবুরা এখানে কি ঘর খুঁজছেন?”
দেবু বলল,
-“হ্যাঁ আসলে ঝাঁঝা ঘুরতে এসেছি। ট্রেন লেট আর বহুৎ বারিশ সব মিলাকে দেরি হয়ে গেল, কোথাও ঘর পাইনি, শুনলাম এই রানীকুঠীতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, আর জায়গা ভি বহুত সুন্দর তো এখানে কি ঘর পাওয়া যাবে?” রতনলাল বলল,
-“থাকার মত ঘর একটাই আছে। লেকিন ইধার বিজলী নেহি মিলতা অউর খানেকা বন্দবস্ত নেহি, খানে কে লিয়ে আপকো টিলাকে নিচে যো গাঁও হ্যায় উধার যানা পড়েগা। “
আমি ঘড়ি দেখলাম, অলরেডি পৌনে ১০টা বাজতে চলেছে। বললাম,
-“অয়ন তুই লাগেজ রেখে ফ্রেস হয়ে নে আমরা জলদি কিছু কিনে নিয়ে আসি।”
নয়তো এই পরিস্থিতিতে সারারাত খিদে আর ঘুম তো যাবেই তার সাথে ভুতের ভয় আরো চেপে বসবে। অয়ন অভয় দিয়ে বললো,
-“পারফেক্ট। বেশ তোরা জলদি যা, নয় তো আর কিছুই পাবি না এরপর। আমি ঘরটায় দেখি লাগেজ নিয়ে ঢুকছি।”

আমি লক্ষ্য করলাম, রতনলাল আড়চোখে দরজার আড়ালে গিয়ে আমাদের সমস্ত কথোপকথন লক্ষ্য করছে। সারা শরীরটা শালের চাদরে ঢাকা শুধু চোখ দুটো যেন জ্বলছে।
সময় নষ্ট না করে দেবুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। নামতে নামতে দেবু একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে জিজ্ঞাসা করল,
-“কি ব্যাপার বলতো সবকিছু কেমন যেন একটু অদ্ভুত লাগছে না?”
আমি বললাম,
-“জায়গাটা এতটাই সুন্দর,রানীকুঠীর এত ভালো লোকেশন, কোথায় উপভোগ করব কিন্তু মনটা ঠিক ভালো ঠেকছে না রে। প্রথমে স্টেশনে যেচে আলাপ করে আমাদের রানীকুঠীর প্রলোভন দেখানো তারপর রতনলালের সন্দেহজনক দৃষ্টি, আর তারপর সর্বোপরি এই অন্ধকার।”
দেবু বললো,
-“ভাই আমিও তোকে ঠিক এইটাই বলবো ভাবছিলাম। ভাই আয়ানকে একা রেখে এসে কিছু ভুল করলাম না তো?”
আমি ভেবে দেখলাম তিন বন্ধু এতদিন পর বেরিয়েছি আমি as a team leader যদি দুর্বল হয়ে পড়ি তাহলে trip টাই মাটি হয়ে যাবে।  বজরঙ্গি ঠান্ডা হাতের কথাটাও চেপে গেলাম, বললাম,
-” না না ও ছাড় কিচ্ছু হবে না। “

টিলার নিচটায় নেমে একটা ছোট গেঁয়ো পাড়ায় এসে পোঁছলাম। এতক্ষনে কিছু বাড়ি, জনাকয়েক লোক দেখে মনে একটু সাহস পেলাম। একটা ঘুমটি দোকান দেখে সেদিকে এগিয়ে চললাম। দেখলাম সেখানে গ্রামেরই ৫-৬ জন রাতের আহার সারছে। বাঙ্গালী কিংবা টুরিস্ট বলেই হয়তো সবাই অবাক হয়ে আমাদের রীতিমত মাপছে।
-“ভাইয়া রুটি চাউয়াল কুছ মিলেগা?”বলল দেবু।
-“হাঁ মিলেগা। লেকিন সবজি খতাম হোগিয়া। সিরফ ডাল হোগা। “
 অগত্যা হতাশ হয়ে বললাম,
-‘দে দিজিয়ে তিন প্লেট প্যাক কর কে থোরা জলদি। “
দোকানদার বোধহয় বুঝতে পেরেছে আমরা টুরিস্ট। খাবার প্যাক করে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
-“বাঙালি আছেন?”
 আমি বললাম,
-“হ্যাঁ। “
পয়সা নিয়ে প্যাক করা খাবারটা দিতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
-“ইধার কোথায় উঠেছেন?”
আমি বললাম,
-“ওই যে রানিকুঠী। “
হঠাৎ দেখলাম দোকানের মালিকের হাত কাঁপতে শুরু করে পার্সেলটা পড়ে গেল হাত থেকে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম দোকানের বাকি প্রত্যেকটা লোকই একটা ভয়মিশ্রিত দৃষ্টি দিয়ে আমাদের দুজনকে দেখছে। দেবু বলল,
-“ক্যায়া হুয়া প্রবলেমটা কি দাদা বলুন তো? রানীকুঠীতে আছেটা কি এমন অবাক হচ্ছে কেন রে সবাই সৌর?”
আমি পার্সেলটা তুলে দোকানদারের কাঁধে একটা আশ্বস্তসূচক হাত রেখে জিজ্ঞাসা করলাম,
-“কুছ গরবর হ্যায়  ক্যায়া উধার? আপকো ডরনে কা জরুরাত নেহি, আপ বতাইয়ে।”
দোকানের মালিক আরো ভয় পেয়ে গেল বলল,
-“উধার একসময় বাঙালি জমিদার অউর রানিমা রহেতে থে। লেকিন…….. -“লেকিন ক্যায়া?” বলল দেবু।
লোকটি একটা ভয়মিশ্রিত দৃষ্টি রেখে চলেছে ওই টিলার উপরে। রানীকুঠীর দিকে। সেদিকে চোখ রেখেই বলল,
-“নে নে নেহি পাতা বাবু। মুঝে কুছ নেহি পাতা। বলেই সে পড়িমরি করে দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিল মুখের উপর। পাশে যে কজন কজন খাচ্ছিল তারা এদিক-ওদিক কোথায় সরে গেল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমি দেবুকে টেনে এনে হাঁটতে শুরু করলাম।

-“ধুর চলতো।  এখানে দেখছি সবাই উন্মাদ। ঠিকমতো কথা বলে না রেস্পন্সও করেনা। “

দেবু বোধহয় এবার একটু দুশ্চিন্তার মোড়কে আচ্ছন্ন হয়েছে। পা চালিয়ে রানীকুঠীতে যখন ফিরে এলাম তখন দেখি অয়ন বাইরে পায়চারি করছে, আর গুনগুন স্বরে একটা গান ধরেছে। আমরা ওকে দেখে কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করলাম। ও বলল,
-“চল, খুব খিদে পেয়েছে, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিই। ইতিমধ্যে সারা বাড়িটা সার্ভে করে ফেলেছি। খেয়ে চল,দেখাবো। রতনলালকে ডাক দিতেই সে বসার ঘরে খাবারটা বেড়ে দিয়ে বলল,

-“বাবু আমি বাইরের ঘরে গেলাম। কিছু দরকার পড়লে ডাকবেন। আশা করি আর আমাকে কখনো দরকার পরবেনা।”
বলে সে চলে গেল। এই কথাটা শুনে মনটা কেমন খচ করে উঠলো। যাইহোক হ্যারিকেনের টিমটিমে আলোয় ডিনার সেরে,আমরা বেড়োলাম বাড়ির চারপাশটা অয়নের সাথে ঘুরে দেখতে। হাজার হোক এমন একটা অচেনা প্রান্তর, সাপ-খোপের থেকে অনেক সময় বদমাশ ছিঁচকে চোর বা মানুষের উৎপাতের ভয় থাকে বেশি।

গোটা কুঠী বাড়িটায় মোট তিনটি ঘর। front এ সিঁড়ি দিয়ে ঢুকে একটা বসার ঘর, ঘরের পুরনো আসবাবপত্র এবং pattern দেখে মনে হয় এক এখানে ওই জমিদার মশাই হয়তো সান্ধ্য আড্ডায় মেতে উঠতেন। এ ঘর দিয়েই ঢুকে পাশাপাশি দুটো ঘর, ডানদিকে রয়েছি আমরা আর বাঁদিকের ঘরটায় তালাবন্ধ। কেন তা জানা নেই।আমরা যে ঘরটায় রয়েছি, সেখানে আসবাবপত্র বলতে রয়েছে, একটা বড় পালঙ্ক, একটা আধ ভাঙ্গা easy chair। যদিও সেটা এখন আর ব্যবহার করার মতো অবস্থায় নেই। একটা আলমারি আর উপরের করিকাঠ  থেকে ঝোলানো ছেঁড়া দড়ি। হয়তো সে সময় এই দড়ির সাথে পাখা বেঁধে বাতাস করা হতো জমিদারকে। অয়ন বললো,
-“আমার মনে হয়, জমিদার মশাই এই ঘরটা ব্যবহার করতেন, রানীমার ঘর হয়তো ওই পাশের তালা বন্ধ ঘরটা।  কারণ এ ঘরে কোনো ড্রেসিং টেবিল বা আয়না গোছের সেরকম কিছু দেখছি না তো? হয়তো ও ঘরে আছে। আর চুরি হয়ে গিয়ে থাকলে সেটা আলাদা ব্যাপার। “

অয়ন বলে চলল,
-“চল ছাদটা একবার যাই, কুঠীর most attractive place.”

পিছন দিকে ছোট উঠোন,আর তার এক পাশ দিয়ে ঘুরে ঘুরে পুরনো জং ধরা লোহার সিঁড়ি উঠে গেছে। ছাদে উঠে এক মুহূর্তে মনটা শান্ত হয়ে গেল। চারপাশে বিস্তীর্ণ প্রান্তর চাঁদের আলোয় ধুয়ে মুছে একাকার হয়ে গেছে। দূরে টিলা গুলো ঢেউয়ের মতো সারি দিয়ে ঝাঁঝার সৌন্দর্যকে উপবেষ্টন করছে। দেবু এতক্ষণে মুখ খুলল,
-“আচ্ছা! এই রানী কুঠি বা এই ঝাঁঝার এই দিকটা ঠিক ভালো ঠেকছে না রে।  সবকিছু কেমন যেন……”
ওর কথা থামিয়ে অয়ন বলল,
-“রাতটা কোনোরকমে কাটিয়ে নিয়ে চল। বিছানায় শুলেই ঘুমে কাদা হয়ে যাব। কাল বরং স্টেশনের দিক থেকে স্টেশন সংলগ্ন ভালো বাড়িতে উঠবো।”

এসব শুনতে শুনতে আমার চোখ আনমনা ভাবেই চলে গিয়েছিল, ছাদের একটা ছোট চিলেকোঠার ঘরের দিকে। চোখ পড়তে আমার সারা শরীর শিউরে উঠল। কাঁচের জানালার ওপাশে কে যেন দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে আমাদের ওপর নজর রাখছে। আমি অয়ন আর দেবুকে ডেকে ওদিকে ঘোরাতে মূর্তিটা অদৃশ্য হয়ে গেল। ওদের ব্যাপারটা বলতেই অয়ন অভয় দিল,
-“ধুর চল নিচে। দুর্বল হলে ভয় বেশি করে চেপে বসে। তাই এসব দেখছিস। কিচ্ছু নেই চল।”
ঘরে এসে তিন বন্ধু ঠিক করলাম সকালে Sunshine দেখব। সেইমতো ৫:৩০- এ অ্যালার্ম দিয়ে হ্যারিকেনের আলোটা কিছুটা কমিয়ে শুয়ে পড়লাম। এ কথা ও কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি সে খেয়াল নেই।

ঘুমটা ভাঙলো একটা শব্দে। wrist watch -এ দেখলাম রাত ২ টো। শব্দটা আসছে ঠিক আমাদের মাথার ওপর ছাদে, কেউ যেন হাঁটছে। হাঁটা বললে ভুল হবে, পায়চারি করছে। সেই সঙ্গে একটা লাঠির শব্দ, যেন কেউ লাঠি হাতে পায়চারি করছে। অয়নও দেখলাম উঠে পড়েছে, প্রথমে সবিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ, তারপর সাহস করে বললাম,
-“কে?কে উপরে?”
 অয়ন হঠাৎ চিৎকার করে হাঁক দিল,
-“রতনলাল? রতনলাল?”
 হাটার শব্দটা থেমে গেল। কয়েক মুহূর্ত শ্মশানের নিস্তব্ধতা, এর মধ্যে দেবুর ঘুম ভেঙেছে, পরিস্থিতি আঁচ করে ও আরও গুটিসুটি মেরে গেছে। অয়ন হঠাৎ খাটের থেকে লাফ দিয়ে নেমে টর্চটা হাতে নিয়ে বলল,
-“চল তো ভাই এ মনে হচ্ছে কেউ ভয় দেখাতে চাইছে, ছাদে যাই। “
বলে সে দরজার দিকে যেই পা বাড়াতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে একটা ঝড়ো হাওয়ায় দরজাটা দড়াম করে খুলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে নিভু নিভু জ্বলতে থাকা হ্যারিকেনটা দপ্  করে নিভে গেল। অয়ন রীতিমতো ছিটকে খাটে ফেরত এলো। শিরদাঁড়া বেয়ে রীতিমতো ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। হাওয়া বেশ কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে কমে আবার সব শান্ত, এবার পাশের ঘর থেকে ভেসে এলো আর একটা শব্দ। নূপুর পায়ে কেউ হেঁটে যেন এদিকেই আসছে। শব্দটা প্রথমে পাশের ঘর থেকে এলো বাইরের বারান্দার,ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো আমাদের ঘরের দরজার সামনে। দরজার সামনে এসে শব্দটা কয়েক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল।  এবার শব্দটা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল,ঘরের ভিতরটা এবার একটা সুন্দর গন্ধে ভরে উঠল। তীব্র কিন্তু স্নিগ্ধ, একটা মাদকতা রয়েছে। বাইরের চাঁদের আলোর সামান্য আভা এসে পড়েছে দরজার সামনে, সেই আলোয় যতটুকু বোঝা যায় দেখে মনে হল একজন অলংকার পরিহিত রমণী। বয়স বোঝার উপায় নেই, কিন্তু ইনি যে রানীকুঠীর সেই ‘রানীমা’ সে বিষয়ে সন্দেহ আর রইল না। আমরা তিনজনেই দম বন্ধ করে বসে আছি। যেন নিষ্পলক দৃষ্টি যন্ত্রের মত কোনো  রোমহর্ষক চিত্রনাট্য দেখছি আর পালানোর কথা ভুলে গিয়ে ঘটনার চরম পরিণতির জন্য অপেক্ষা করছি। হঠাৎ নুপুরের শব্দ এগিয়ে গেল ঘরের কোনে সেই ভাঙ্গা আলমারির দিকে এবং সেই সঙ্গে শুরু হলো এক ভয়ানক আর্তনাদ। যেকোনো অসহায় মহিলাকে কেউ বা কারা আক্রমণ করেছে।

দুই তিনবার আর্তনাদের পর সেটা বদলে গেল ‘গোঙানিতে’, অতঃপর আবার সব শান্ত। আমাদের অবস্থা সঙ্গীন,দেবু দেখি ইতিমধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, দেবুকে কোনোমতে টেনে অয়নকে নিয়ে ঘরের বাইরে বের হতে যাব, ফের থামতে হল, এবার সেই লাঠি সমেত পায়ে হাঁটার শব্দ। শব্দ দ্রুতগতিতে ঘরের সামনে থামল। আমি আর অয়ন একদম দেয়ালে সেটিয়ে গেছি, আমার কাঁধে দেবু। এবার বুঝতে পারলাম, আমার হাত পা অবশ হয়ে আসছে। সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে। রতনলাল বলে যে  চিৎকার করে ডাকবো সে শক্তিও নেই। আর ডাকলেও যে সে আসবে তার নিশ্চয়তা কোথায়।

ইজি চেয়ারটা তুলে তার ওপর মূর্তিটা এবার আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকলো। পরনে ধুতি পাঞ্জাবি হাতে লাঠি বুঝতে অসুবিধা হলো না ইনি সেই জমিদার। তারপর কিছুক্ষন থেমে হঠাৎ খাটের উপর উঠে, দড়িটা টেনে নিজের গলায় বেঁধে পড়ে নিল, সেই দড়ি যেটা আমরা হাওয়ায দেওয়ার জন্য লাগানো ছিল ভেবে ভুল করেছিলাম। এক মুহূর্তের মধ্যে মূর্তিটা ইজি চেয়ারটাকে খাটের থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দিতেই দেখলাম পা দুটো কিছুক্ষণ ছটফট ও আস্তে আস্তে থেমে গেল ছটফট করে আস্তে আস্তে থেমে গেল।

এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমি কোন মতে অয়নকে আর দেবুকে নিয়ে বাইরে এসে পড়েছি, এমন সময় হঠাৎ রতনলাল এর সাথে একদম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
-“বাবু কোথায় চললেন?”
বলেই অট্টহাসি শুরু করলো। জ্ঞান বুদ্ধি সব লোপ পেতে লাগলো আমার। জ্ঞান হারানোর ঠিক আগের মুহূর্তে শুনতে পেলাম, রানিকুঠীর বাতাসে একসাথে প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছে, জমিদার-রানীমা-রতনলাল সবার অট্টহাসি।

জ্ঞান যখন ফিরল,তখন দেখি আমার জনা ১০-২০ জন ঘিরে দাঁড়িয়ে। আমি শুয়ে আছি গতরাতের সেই খাবার হোটেলের এক বেঞ্চিতে। প্রথমে দেবু – অয়নের কথা মনে পড়তেই ধরমর করে উঠে বসে দেখলাম অয়নের জ্ঞান ফিরেছে, দেবু তখনও সংজ্ঞাহীন। হঠাৎ পাশে চোখ পরল একটা পরিচিত জিনিস, হ্যাঁ সেই ব্যাগটা গতকাল স্টেশনে এক সহযাত্রীর কাছে দেখেছিলাম। বাংলা হরফে লেখা। ভদ্রলোক আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে বললেন,
-“কি ভাগ্যিস কাল বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে গেছিলাম স্টেশনে। নয়তো আপনারা তিন মক্কেল যে এই বিপদে ফাঁসতে চলেছেন এ কথা কেউ টেরই পেত না।”
আমি বললাম,
-“ফাঁসতে চলেছেন মানে?”
ভদ্রলোক বললেন,
-“সব বলছি। আগে একটু গরম দুধ খান দেখি। “
বলে দোকানদারকে দিয়ে দুধ আনালেন।
ভদ্রলোক বলতে শুরু করলেন,
-“৭৬ এর মন্বন্তরের কথা তো শুনেছেন,বইতেও পড়েছেন। একেই মন্বন্তর, তার ওপর অর্থাভাব,ফলে বেড়ে গেল চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি-রাহাজানি। বাংলার বহু জমিদার সেসময় তাদের মূল্যবান ধন-সম্পত্তি অলংকার,সোনা-দানা সুরক্ষিত রাখতে সে সময় এদিকটায় চলে আসেন। এই ব্যাপারটা তখনকার স্থানীয়দেরও নজর এড়ায়নি, ফলস্বরূপ যা হয় আর কি সোনা দানা টাকা-পয়সার লোভ বড় সাংঘাতিক, সহজে কি যায়। জমিদার মশাই ব্যক্তিগত কিছু কাজের একবার কলকাতায় যান দিন দুয়েকের জন্য, রানীমার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান রতনলালকে। সেদিনই রাতে রানীকুঠীতে আক্রমণ করে এক দুষ্কৃতীর দল,সংখ্যায় তিনজন। প্রথমে রতনলালকে কুপিয়ে খুন করে,তারপর রানীমা কে খুন করার পর আলমারি থেকে সমস্ত কিছু লুট করে নিয়ে চম্পট দেয় তারা। পরদিনই খবর পেয়ে জমিদার ফেরত আসেন ঝাঁঝাতে। তার ঘোড়ার গাড়ির সহিস খবরটা দেয়। নাম বজরাঙ্গি।”

দেবু ইতিমধ্যে কখন যেন উঠে পড়েছে। আমদের বজরাঙ্গীর নাম শুনে প্রত্যেকের মুখ আবার ফ্যাকাসে হয়ে গেল।  ভদ্রলোক বলে চললেন,
-” তিনি রানী কুঠির সেই ঘরে ঢুকে নিজের স্ত্রীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন দেহ দেখে আর স্থির থাকতে পারেননি,সেখানে গলায় দড়ি দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। সেই সময় থেকে ওই রানীকুঠি হয়ে উঠেছে অভিশপ্ত বিভীষিকাময়। বছর পাঁচেক আগে তিন বন্ধু এসেছিলো ঘুরতে কলকাতা থেকে। তারা আর বেঁচে ফেরেনি। একই ঘটনা ঘটে বছরে দুয়েক আগে, সেবারও তিন ব্যাচেলার ছেলেই এসেছিল।  একজন ছাড়া বাকি দুজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। একজনকে ভিতরের ঘরে আর একজনকে টিলার পাথরে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। “
আমি বললাম,
-“তার মানে ছিনতাইবাজরা দলে ৩ জন ছিল বলে তিনজনের গ্রুপ এলেই জমিদারের প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে ওঠে আর তাতেই ঘটে এই ভৌতিক ব্যাপার। “
ভদ্রলোক বললেন,
-“হতে পারে। “
অয়ন বলল,
-“আপনি এসব জানলেন কি করে?”
-“এই ঘটনার পর বজরাঙ্গি একমাত্র বেঁচে ছিল বছর দুয়েক। তারপর সে ও ম্যালেরিয়ায় মারা যায়। suicide- এর দৃশ্যটা ঘটে তারই সামনে। বজরঙ্গির ছেলে আমার business partner. এখানে আমার একটা সারের ফ্যাক্টরি আছে। share-এ চালাই ওর মুখেই জানতে পারি।  
গ্রামের লোক ওই ঘটনার পর থেকে রানিকুঠীর ত্রিসীমানা মারায় না, এবং কুসংস্কারপ্রবন তাই কিছু ভয় মুখ খুলতে চায় না। “

সেদিনই আমরা স্থির করলাম ঝাঁঝায় আর থাকবো না। প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে শিমুলতলা চলে এলাম। ট্রেনে যাওয়ার সময় দূর থেকে টিলায় চোখ পরল, মন বলছে এখন গেলে হয়তো দেখা মিলবে সেই রতনলালের আর রানীমার এবং দেখবো গেটের সামনে লাঠি হাতে ধুতি পাঞ্জাবি পরনে আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে এসে দাঁড়িয়েছেন রানীকুঠীর জমিদার।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterSouradip Roy
NarratorSouradip Roy
Intro & EndingOlivia Das
CharactersName
Debu & SouroSouradip Roy
AyanJoydeep Lahiri
Others CharactersSouradip Roy

Find us on Facebook – click here  

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
2
+1
0
+1
1
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *