Visits: 17

দশ তলা ফ্ল্যাটের আট তলায় থাকেন এক বিদেশী দম্পতি। অনেক দিন ভারতে থাকার ফলে তারা দুজনে ভালোই বাংলা বলতে পারেন। পরিবার বলতে মি. রিচার্ড, স্ত্রী এমিলি, চার বছরের ছোট ছেলে জনি আর ছোট্ট পমেরিয়ান কুকুর বাচ্ছা নাম কেটি। অপূর্ব দেখতে কুকুরটা, যেন একটা তুলোর বল। সাদা ধবধবে। ছোট ছোট কালো চোখ, মাঝে মাঝে ছোট্ট লাল জিভটা বের করে। মিসেস এমিলি আবার গলায় লাল রিবন বেঁধে দিয়েছেন।কি অপূর্ব যে লাগে দেখতে সে কি বলবো। সেই দেখে টুক করে কোলে তুলে নেয়।
এক ফুট সাইজের কুকুরটা খুব প্রিয়। সারা দিন রাত জনির সঙ্গে লেপটে থাকে। এক সঙ্গে খাবে, এক সঙ্গে শোবে। জনির কোনো বন্ধু নেই, একমাত্র কেটি।  স্কুল পর্যন্ত দিয়ে আসে নিয়ে আসে। যতক্ষণ জনি স্কুলে থাকে ততক্ষন কেটি মিসেস এমিলির সাথে থাকে। এমিলি ছাদে জামা কাপড় শুকনো করতে দিতে গেলে কেটিও পায়ে পায়ে যায় আর ছাদময় ঘুরে বেড়ায়। ছাদের পাঁচিলেও ওঠে মাঝে মাঝে।       
 এতো গেলো ৮ তলার কথা। এবার আসি ৭তলার কথায়, ওখানে এক পাঞ্জাবি পরিবার থাকে।  কর্তার নাম দুর্জয় সিং। ওনাদের একটা এলসিসিয়ান বড় কুকুর আছে, নাম টাইগার। দুর্জয় সিং-এর ছেলে রণবীর সিং, মাঝে মাঝে সেও কুকুর নিয়ে ছাদে আসে।
                                       
                                       একদিন ঘটল এক দুর্ঘটনা। মিসেস এমিলি কেটিকে নিয়ে ছাদে এসেছেন, স্বামী অফিসে আর জনি স্কুলে গেছে। কেটিকে স্নান করিয়ে এমিলি কেটির গা শুকনো করার জন্য ছাদে নিয়েগেছেন। উনি দেখতে পাননি যে টাইগার কে নিয়ে রণবীর  ছাদে। রণবীর টাইগারকে ছাদের এক পাইপের সাথে বেঁধে ওদিকে ফিরে ফোনে  কথা বলছে। এমিলি ছাদে কেটিকে ছেড়ে শুকনো কাপড় জামা তুলছেন। কেটি টাইগারকে খুব ভয় পেতো। টাইগারকে দেখে কেটি লাফিয়ে ছাদের পাঁচিলে উঠে পড়েছে। পাঁচিলে কেটিকে উঠতে দেখে টাইগার গর গর করতে করতে তেড়ে যায়। দু পা তুলে একদম কেটির সামনে। কেটি ভয়ে সরতে গিয়ে পাঁচিল টপকে পরে যায়  নীচে । এমিলি টাইগারের গড় গড় আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখেন কেটি  পড়ে যাচ্ছে।  চিৎকার করে ওঠেন “কেটি “। কোনো দিকে না তাকিয়ে এমিলি ছুটে লিফটের দিকে যান। উনার চিৎকারে রণবীর দেখে বাঁধন ছিঁড়ে পাঁচিলে দু পা তুলে দাঁড়িয়ে টাইগার। ছুটে গিয়ে টাইগারের গলার বেলটা চেপে ধরে। আর  নীচের দিকে তাকিয়ে দেখে কেটি  নীচে  পড়ে গেছে। অনেক লোক জড়ো হয়েছে সেও টাইগারকে নিয়ে লিফটের দিকে ছুটে যায়।

নিচে এসে এমিলি দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার মধ্যে চোখ বুজে কেটি শুয়ে আছে ,মাথাটা পড়েছে একটা ইটের ওপর কয়েকজন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে,তাদের মধ্যে দুজন সিকিউরিটিও উপস্থিত। তাদের উদ্দেশ্যে একটু জল আনতে বলে কেটিকে কোলে তুলে নিল এমিলি। ওরা জল আনতে ,একটু একটু করে জল দেয় ওর মুখের মধ্যে আর ডাকে, “কেটি”, “কেটি”।    কেটি একবার চোখ খুলে এমিলির দিকে তাকাল।  তারপর চারপাশে চোখ ঘোরাতে লাগলো। কাকে যেন খুঁজছে তারপর আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে ফেলল। একজন সিকিউরিটি বলল,”ম্যাডাম এই কাছেই একটা পশুর হাসপাতাল আছে।  নিয়ে যাবেন?”
 মিসেস এমিলি বললেন,
“কিন্তু গাড়ি! আমার গাড়ি তো আমার স্বামী নিয়ে গেছেন।”-“ঠিক আছে ম্যাডাম আমি একটা গাড়ি ডেকে আনছি। “
 বলে সিকিউরিটি ভদ্রলোক ছুটে চলে গেলেন গাড়িডাকতে।
 নিচের তলার একজন ভদ্রমহিলা,  বললেন’
“চলুন আমিও যাই।” এমিলির সাথে পরিচয় আছে ভদ্রমহিলার। অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে এমিলি বললেন,”বেশ চলুন। “
ঘন্টা দুয়েক পরে মিসেস এমিলি আর ওই ভদ্রমহিলা ফ্ল্যাটে ফিরে এলেন।  ইতিমধ্যে তার স্বামী মিস্টার রিচার্ডকে ফোন করা হয়েছিল, তিনিও চলে এলেন। তাদের এত সাধের কুকুরের এই পরিণতি তিনি ভাবতে পারছেন না। সবচেয়ে বড় কথা তারা জনির মুখোমুখি কি করে হবেন? ফ্ল্যাটের পিছন দিকে কিছু পতিত জমি পড়েছিল। সেখানে সিকিউরিটির সাহায্যে কেটিকে পুঁতে দিয়ে এলেন মিসেস রিচার্ড আর এমিলি দেবী। হঠাৎ খেয়াল হল ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে, সময় কখন পেরিয়ে গেছে। পড়িমড়ি করে ছুটলেন মিস্টার রিচার্ড। 
স্কুলে জনিকে কেটি দিয়েও আসে আবার নিয়েও আসে। কিন্তু আজ মিস্টার রিচার্ড ১০ মিনিট লেটে পৌঁছালেন। জনি বাবাকে দেখে প্রশ্ন করল,
-“লেট কেন হল ড্যাডি?”
 কি বলবেন রিচার্ড কোনরকমে আমতা আমতা করে বললেন,
-“রাস্তায় খুব জ্যাম ছিল সোনা।”
 গাড়িতে উঠে জনি কেটিকে দেখতে না পেয়ে বলল,
-” ড্যাডি কেটি কোথায়? আসেনি?”মিস্টার রিচার্জ বললেন,
-“আরে কেটি আজকে ঘুমিয়ে পড়েছে।  কি হয়েছে কেটি আসেনি তো?” বলে গাড়ি চালাতে শুরু করলেন। গাড়ির ভিতরে জনি মুখ ভার করে বসে রইলো।
মিসেস এমিলি ঘর বার করছেন। জনি আসলে কিভাবে সামলাবেন তাকে কিভাবে বলবেন আর কি বা বলবেন। লিফ্ট থেকে নেমে জনি ছুটে এসে ঘরে ঢুকেই বলল,
-“মম কেটি কোথায়? ঘুমোচ্ছে? চলতো দেখি।”
পারলে না সামলাতে নিজেকে এমিলি। তিনিও খুব ভালোবাসতেন কেটিকে। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। জনি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মায়ের দিকে। মিস্টার রিচার্ড বাধা দিলেন না। উনি বুঝতে পারলেন এমিলির মনের অবস্থা। তার চেয়ে কেঁদে একটু হালকা হোক। আর জনিও সত্যি কথা জানুক। কতদিন লুকিয়ে রাখা যায়? মিস্টার রিচার্ডজনি কে কাছে টেনে নিয়ে পরম স্নেহে ছেলেকে বোঝাতে লাগলেন, যে কেটি মারা গেছে। সে আর কোনদিনও ফিরবে না। কোনদিন তাকে দেখা যাবে না। কেটি তার সাথে আর খেলবে না। চিরদিনের মত তার ভাঙ্গা পুতুলের মত হারিয়ে গেছে। তাকে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। চুপচাপ শুনলো জনি। শুধু ড্যাডিকে জিজ্ঞাসা করলো কেটিকে কোথায় পুঁতে রাখা হয়েছে? তাকে যেন একবার দেখতে নিয়ে যায়। মিস্টার রিচার্ড ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারলেন না।উনি মিসেস এমিলি ও জনিকে নিয়ে গেলেন, যেখানে কেটিকে কবর দিয়েছেন। সেখানে গিয়ে জনি কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ খোঁড়া মাটির উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। সে বুঝেছে মরে যাওয়া কাকে বলে? মরে গেলে তারপর কি হয়।  ওর চিৎকার করে কান্না দেখে আশেপাশে অনেক লোক জড়ো হল। প্রত্যেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারল না। একটা শিশু তার ভালোবাসার সাথীকে ছেড়ে চলে যাওয়ার বেদনা সহ্য করতে পারছে না। জনির চিৎকার করে মাটিতে শুয়ে পড়ে কান্নায়, মিস্টার রিচার্ড আর এমিলি হতবাক হয়ে পড়েছিল। তারপর অতি কষ্টে ছেলেকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চারিদিকে ঝাপসা ঝাপসা অন্ধকার।
ফ্ল্যাটে এসেও জনি শুয়ে শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদেই যাচ্ছিল। মা ছেলেকে সামলাতে ব্যস্ত। কোনো রকমে জামা প্যান্ট বদল করে দেন। ছেলেকে কিছু খাওয়াতে পারছেন না। অনেক ভুলিয়ে এককাপ দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘরের কাজের দিকে মন দিলেন। মিস্টার রিচার্ডও নিজের অফিসার কাজে মনোনিবেশ করলেন। রাতে খাবার আগে এমিলি ছেলে জনিকে দেখতে এলেন তার ঘরে।  জনি তখন ঘুমাচ্ছে। কপালে চুলগুলো সরাতে গিয়ে দেখেন গায়ে বেশ জ্বর। চমকে উঠে স্বামীকে ডাকেন। রিচার্ড তড়িঘড়ি করে কাজ ফেলে ছেলের ঘরে আসেন। এমিলি বললেন,-“থার্মোমিটার নিয়ে এসো তো। জনির গা যে জ্বরে পড়ে যাচ্ছে। “
এমিলির কথা শুনে ভ্রু কুচকে রিচার্ড তাড়াতাড়ি ওষুধের বাক্সটা নিয়ে আসেন। থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর থেকে অবাক হয়ে যান স্বামী-স্ত্রী। তাড়াতাড়ি ওষুধ খাইয়ে কপালে জলপট্টি দেন। সারারাত ছেলের জ্বর ছাড়েনি। জ্বর কমে তো আবার ঘন্টা দুয়েক পরে জ্বর আসে।  আর জ্বরের মধ্যে মাঝে মাঝে বলতে শোনা যায় বারবার কেটির নাম ধরে ডাকছে। 
সকাল হতেই  তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে কল করেন রিচার্ড। ডাক্তার দেখে বললেন, -“মিস্টার রিচার্ড আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন একটি কেটির মতো কুকুর নিয়ে আসুন। প্রচণ্ড শক থেকেই জনির এই জ্বর এসেছে, ওষুধে কোন কাজ হবে না।
মিস্টার রিচার্ড বললেন,
-“হ্যাঁ আমি চেষ্টা করছি। অবিকল ঐরকম কুকুর আনার জন্য কিন্তু পাচ্ছি না একজনকে অর্ডার দিয়েছি। “
ডাক্তার গম্ভীর মুখে শুধু বললেন,
“হুঁ। “
ডাক্তার চলে গেলেন চিন্তিত মুখে। এমিলি ছেলে ঘুমোচ্ছে দেখে, ঘরের কাজ করতে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ এমিলি শুনতে পেল, জনি হাসছে, কার সাথে যেন কথাও বলছে। এদিকে রিচার্ড অফিস বেরিয়ে গেছে তাহলে এই জ্বর অবস্থায় কার সাথে জনি হাসছে ,কথা বলছে। ছুট্টে গেলেন এমিলি। দেখেন ঘরের মধ্যে জনি দৌড়াদৌড়ি করছে, যেন কেউ ওকে ধরতে যাচ্ছে আর না হয় ও কাউকে ধরতে যাচ্ছে  .অবাক হয়ে যান এমিলি। ব্যাপারটা কি হলো? কাছে গিয়ে জনির গায়ে হাত দিয়ে দেখেন জ্বর একদম নেই। বরঞ্চ ঘাম হচ্ছে। হঠাৎ কানে এলো জনি বলছে,
-“ধর আমায় কেটি , ধর ধর। “
আবার পরমুহূর্তে কাকে যেন কোলে নিয়ে বলছে,
-“দূর বোকা ধরতে পারে না। “
আবার তাকে আদর করছে। কি হল ছেলেটার ভেবে পাচ্ছে না এমিলি। অত্যধিক জ্বরে কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো কেটির জন্য। ছেলের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“হ্যাঁ রে কার সাথে কথা বলছিস অত। তোর শরীর ঠিক নেই। চলো শোবে চলো জনি।”
 হঠাৎই  জনি হাসতে হাসতে বললো,
“ওহ mom তুমি দেখতে পাচ্ছ না আমি কেটির সাথে কথা বলছি,খেলছি। তুমি দেখতে পাচ্ছো না দেখো দেখো। “
বলেই কোলে ধরা অদৃশ্য কাকে এমিলির কোলের মধ্যে দেয়। এমিলি অনুভব করে সত্যিই তুলতুলে নরম নরম যেন কি! চমকে ওঠে এমিলি। চোখ বড় বড় করে হাঁপাতে থাকেন। কি? এ যেন কেটির শরীরের মতন। ভয়ে কাঁপতে থাকেন এমিলি। হঠাৎ দেখেন জনি দৌড়ে গিয়ে অদৃশ্য সেই বস্তুকে কোলে নিলো। আর এমিলিকে বললো,
-“কিগো মম কেটিকে ফেলে দিলে কেন? দেখো দেখো কিরকম রাগ করেছে, চলে যাচ্ছে।”
হঠাৎ এমিলি দেখেন জনির কোলে দুধ সাদা রিবন গলায় বাঁধা কেটি। মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে এমিলির। গোটা শরীরে যেন একটা শিহরণ অনুভব করলো এমিলি। বসে পড়ে এমিলি। ভাবতে পারছেন না কি করবেন? কাকে কি বলবেন? এদিকে জনির সুস্থ শরীর আর মুখের উজ্জ্বল হাসি দেখে থমকে যান। বেশ কিছুক্ষন ধাতস্ত হতে সময় লাগে তার। তারপর আস্তে আস্তে উঠে ছেলের কাছে গিয়ে আদর করে বলেন,
-“শুধু খেলা করলেই হবে।  খেতে হবে তো? আর তাছাড়া কেটিরও তো খিদে পেয়েছে।”
জনি চট করে আনন্দের সাথে বললো,
-“হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছো। আমিও খাবো, কেটিও খাবে।”
মিসেস এমিলি খাবার টেবিলে জনিকে খেতে দিলেন ,দুটো স্যান্ডউইচ আর এক গ্লাস দুধ। টেবিলে খেতে বসে জনি বলে,
-” মম  আমায় খেতে দিলে কেটিকে দিলে না? কেটি আমার সাথেই খাবে। ওরও খুব খিদে পেয়েছে। এমিলি বললো,
-“হ্যাঁ হ্যাঁ দিচ্ছি।”
বলে আস্তে আস্তে রান্না ঘরে গিয়ে কেটি যে বাটিতে দুধ খেত সেই বাটিটা ধুয়ে আনলেন। কারণ দুদিন বাটিটা উপুড় হয়ে পরে আছে। তাবলী বাটিটা  রেখে তাতে দুধ ঢেলে দিলেন। মনে মনে ভাবছেন।
-“কেটির আত্মা কি খাবে। সন্দেহ হচ্ছে। একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন এমিলি হটাৎ নজরে পরে কেটির দুধের বাটি র দিকে। ছোট্ট একটা লাল জিভ দুধটা চাটছে  আর একটু ওপরে দুটো কালো চোখ জ্বলজ্বল করে এমিলির দিকে চেয়ে আছে। এমিলির ভয়ে সারা শরীর কেঁপে উঠলো। কষ্টে ছেলের মুখের দিকে চেয়ে একটু শান্ত হলো এমিলি। রান্না ঘরে গিয়ে এমিলি মি. রিচার্ডকে ফোন করলেন। ফোনে সব কথা বললেন। মি. রিচার্ড ফোনে এমিলিকে চুপচাপ শান্ত হয়ে থাকতে বললেন আর লক্ষ রাখতে বললেন।

সন্ধে বেলায় মি.রিচার্ড ফ্ল্যাটে ফিরে  এলেন। ঘরে বসে চা-জলখাবার খেতে খেতে লক্ষ্য করলেন। এমিলি যা বলেছেন সব ঠিক। আগে যেমন কেটির সাথে খেলতো শুয়ে শুয়ে কেটিকে নিয়ে আদর করতো তেমন। সব ঠিকঠাক আছে কিন্তু…..এই কিন্তু সমাধান কিছু পাচ্ছেন না। এতো বেশি দিন চলতে দেওয়া যায় না। দরজায় বেল বাজতেই এমিলি গিয়ে দরজা খুলে দিলেন,দেখলেন থার্ড ফ্লোর এর বাসিন্দা মিলন বাবু ও ওনার স্ত্রী ইলা দেবী দাঁড়িয়ে। মিলন বাবুর সাথে মিস্টার রিচার্জের বেশ একটু ভাব বা মেলামেশা আছে।
-“আরে মিলন বাবু; বৌদি যে আসুন আসুন।”- বলে রিচার্ড অভ্যর্থনা করলেন।
-“জনি কেমন আছে দেখতে এলাম। শুনলাম খুব জ্বর  হয়েছে। আবার আজকে বিকালেই  গ্রাউন্ডফ্লোরের মাঠে খেলতে দেখলাম।”- হেসে বললেন ইলা দেবী।
-“হ্যাঁ, বসুন। আমি চা নিয়ে আসি।” বলে এমিলি রান্না ঘরে চলে গেলেন।
রিচার্ডের সাথে মিলানবাবুর অফিসিয়াল কথাবার্তার মধ্যে এমিলি চা নিয়ে এসে টেবিলে রেখে তিনিও বসলেন। মিলন বাবু এমিলির দিকে তাকিয়ে বললেন,-“জনি আজ নিচে খেলতে গিয়েছিল?ওর শরীর একদম সুস্থ তো?”
মিসেস এমিলি ম্লান হেসে বললেন,
-“হ্যাঁ ওই আর কি দুর্বলতা এখন একটু আছে। তবে দুরন্ত ছেলে তো কিছুতেই ঘরে বসিয়ে রাখা যায় না। “
মিলন বাবু বললেন,
-” আমি মানে কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন তো? ও কি এখনো কেটির জন্য মন খারাপ বা কান্নাকাটি করছে?”
রিচার্ড বললেন,
-“না না he is ok.”
ইলা দেবী বললেন,
-“ok টা কিসের দ্বারা হয়েছে সেটা আশা করি লক্ষ্য করেছেন?”
মিলন বাবু বললেন,
-“আমার শরীরটা আজ খারাপ হওয়াতে অফিস যায়নি। বিকালে গ্রাউন্ডের চেয়ারে বসে কাগজ পড়ছিলাম। হটাৎ ইলা আমার দৃষ্টিগোচর করলো। দেখি জনি হাওয়ার সাথে খেলছে, কথা বলছে, কাকে যেন কোলে তুলে নিয়ে হাসছে।”
হাসতে হাসতে রিচার্ড বললেন,
-” তাতে কি আছে। আমার ছেলে তো সুস্থ হয়ে গেছে। তাছাড়া নতুন একটা পমেরিয়ান কিনতে গেলে আমার কড়কড়ে নগদ টাকা বেরিয়ে যেত।”
ধমক দিয়ে উঠলেন মিলানবাবু, -“রাখো তো তোমার টাকা, ব্যাপারটা কতখানি সিরিয়াস তুমি বুঝতে পারছো না। আর সব চেয়ে বোরো কথা আমরা দেখিনি কিন্তু সিকিউরিটি পার্থ দাস যে কেটিকে খুব ভালোবাসতো, সে ফ্ল্যাটের পিছনের মাঠে পুঁতে দিলো সে সচক্ষে দেখেছে জনির সাথে কেটি খেলা করছে।”
-“তাতে কি হয়েছে?” বললো রিচার্ড।
এমিলি একদম চুপ।
এবার ইলা দেবী বললেন,
-“আরো দু-একজনের চোখে পড়লে? ইটা সত্যি ভয়ের ব্যাপার।”
মিলন বাবু ভয়ে ভয়ে বললেন,
-“মানুষের প্রেতাত্মা হয় কিন্তু কুকুরের প্রেতাত্মা এতো কেউ কোনো দিন দেখেনি বা শোনেনি!”
 ইলা দেবী এতক্ষন এমিলিকে লক্ষ করছিলেন। বললেন,
-“এমিলি তুমি চুপ কেন কিছু বলো। “
এমিলি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
-“আমার এখনো  গা-হাত-পা কাঁপছে ভয়ে। প্রথম যখন কেটিকে দেখলাম, তখন অত বুঝিনি কিন্তু যখন ওর বাটিতে দুধ দিয়ে খেতে দিলাম, তখন শুধু দেখলাম ওর জিভ আর চোখ দুটো! কি ভয়ানক জ্বলজ্বল করছে। উঃ মাগো।” বলেই এমিলি দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকলো।

রিচার্ড এমিলির কথা শুনে বললো,
-“তাই তুমি আমায় কিছু  বলোনি তো?”
মিলন বাবু বললেন,
-“দেখো রিচার্ড মানুষের প্রেতাত্মাই হোক আর পশুরই হোক, তা খুব খারাপ। উভয়েই ক্ষতি করে। এখন ভাবছো জনি তো কেটিকে দেখছে , খেলছে। ভালোই আছে। জনি শিশু, ওর বোধগম্য হয়নি। ওর আনন্দই লাগছে। জনি যেমন কেটিকে ভালোবাসতো কেটিও তেমন জনিকে ভালোবাসতো। কাজেই কেটি জনিকে নিজের কাছে নিতে চাইবে। অর্থাৎ জনিকে মারতে পারে। “
ইলা দেবী বললেন,
-“প্রথমে পার্থ দেখে বুঝতে পারেনি। তারপর ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। ওর চিৎকারে আমি তাকিয়ে দেখি পার্থর চোখে মুখে কি আতঙ্ক। তখন আমি বুঝতে পেরে মুখে আঙুল দিয়ে ইশারায় চুপ করে থাকতে বলি।”
-“তাহলে কি করা যায়?”, বেশ চিন্তার সাথে বলেন রিচার্ড।
এরই ফাঁকে এমিলি উঠে গিয়ে দেখেন, জনি ঘুমিয়ে পড়েছে। এমিলি ডাকেন,
-“জনি ওঠো কিছু খেয়ে নাও।”
হটাৎই দেখেন কেটি যেখানে ঘুমাতো সেখানে বসে আছে তার ছোট্ট জিভটা বের করে এবং তার  দিকেই তাকিয়ে আছে। যেন সেই জিভটা কিছু খাবারের জন্য লকলক করছে। ভয়ে চোখ বুজলেন এমিলি, তারপর যখন চোখ খুললেন আর দেখতে পেলেন না কেটিকে। এমিলি তাড়াতাড়ি বাইরে চলে আসেন। তখনি শুনতে পান মিলন বাবু বলছেন,
-“একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”
এমিলি তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,
-“হ্যাঁ মিলন বাবু এখুনি কিছু ব্যবস্থা করুন। “এমিলির দিকে তাকিয়ে মিলনবাবু সব বুঝতে পারেন। হাতঘড়ি দেখেন,তখন ঘড়িতে ৮:৩০ মিনিট একটু চিন্তা করে মিলনবাবু কাকে যেন ফোন করে বললেন,
-“অসুবিধা যদি না থাকে তবে এক্ষুনি একবার আসতে পারবেন? ঠিক আছে আপনি আসুন। নিচে এসে একবার আমায় ফোন করবেন। “
ফোন রাখতেই ইলা দেবী বললেন,
-‘কাকে ফোন করলে?”
মিলনবাবু বললেন,
“আমাদের জ্যোতিষাচার্য্যকে ডাকলাম তার কাছে বিধান নেবো বলে।”
মিঃ রিচার্ড বললেন,
-“উনি কি করবেন? আমার জনির কোনো ক্ষতি হবে না তো?
মিলনবাবু বললেন,
-“অরে না না কিছু হবে না।”
কিছুক্ষন পরেই মিলনবাবুর ফোন বেজে উঠলো। মিলন বাবু দেখেই বলেন,
-“ওই যে উনি এসে গেছেন। আমি নিয়ে আসি এখানে। “
কথাটা বলেই চলে গেলেন মিলন বাবু এবং কিছুক্ষন পর একজন ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলেন। সবার সঙ্গে ভদ্রলোকটির পরিচয় করিয়ে দিলেন মিলন বাবু।
-” ইনি জ্যোতিষাচার্য্য দিগন্ত সেন। আমার বিশেষ পরিচিত ব্যক্তি।”
রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে মিলন বাবু বললেন,
-” এনাকে জনির ব্যাপারে সব বলেছি আসতে আসতে, এবার উনি যা পরামর্শ দেবেন আমরা তাই করবো।” বলেই দুজনে বসলেন। রাত নটা বাজে। মিসেস এমিলি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন “আপনারা কথা বলুন। আমি জনিকে খাইয়ে আসছি। তার আগে আর একপ্রস্থ চায়ের ব্যবস্থা করি?”হটাৎ জ্যোতিষাচার্য বলে উঠলেন,
-“আগে জনিকে খাইয়ে নিন। তারপর চায়ের ব্যবস্থা করবেন। জনিকে খাওয়াতে গিয়ে যদি অস্বাভাবিক কিছু ঘটে তবে আগে এসে জানাবেন। প্লিজ আসুন।”
এমিলি চলে যায়। ঘরে গিয়ে দেখে বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে। ওরই স্কুলের বই। এমিলিকে দেখে জনি বললো,
-“আমি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর কেটি তারমধ্যেই কোথায় চলে গেছে। এখনো আসছে না।”
এমিলি ছেলেকে বললো,
-“ও নিচে গেছে কারুর সঙ্গে খেলতে,খাবার সময় ঠিক এসে যাবে। তুমি একটু খেয়ে তোমার ক্লাস ফ্রেন্ড আয়ুশের সঙ্গে গিয়ে খেলা করো।” বলে এমিলি ছেলেকে খেতে দেয়। জনি খাবার খেয়ে এমিলিকে বলে,
-“তুমি কেটিকে খেতে দাও। আমি ওকে ডাকছি, বলেই,
-“কেটি, কেটি”; করে ডাকতেই শোনা গেলো ভৌ ভৌ করে একটা কুকুরের ডাক। এমিলি কাউকেই দেখতে পায়নি কিন্তু যা দেখতে পেলেন  তা দেখে তার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। এমিলি দেখলো জনি হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে কাকে যেন বলছে,
“কোথায় গিয়েছিলিস?চল খাবি চল।”
কাঁপা হাতে কেটির বাটিতে খাবার দিয়েই ছুট্টে বাইরে চলে আসে এমিলি। বাইরে এসে হাপাতে থাকে। এমিলিকে এমন অবস্থায় দেখে তৎক্ষণাৎ দিগন্তবাবু ছুট্টে চলে যান যেখানে জনি খাচ্ছিলো সেই ঘরে। পরক্ষনেই তিনি জনিকে কোলে নিয়ে এবং জনির খাবারের বাটিটা হাতে নিয়ে; বাইরের ঘরে যেখানে সবাই  বসে আছে সেখানে জনিকে বসিয়ে দিয়ে বললেন,
-“তুমি এখানে বসে  খাও জনি।”
জনি দিগন্তবাবুর মুখের দিকে চেয়ে থাকে কারণ তাকে জনি চেনে না। তারপর দিগন্তের দিকে চেয়ে জনি তার ড্যাডিকে বললো,
-“কিন্তু আমি না থাকলে কেটির খাওয়া হবে না।”
উত্তরটা দিগন্তবাবু দিলেন,
-“তুমি বাইরে বসে তাড়াতাড়ি করে খেয়ে ঘরে গিয়ে কেটিকে সারপ্রাইজ দেবে যে তুমি কত বেশি ফার্স্ট খাও। “কিন্তু তার কথা শেষ হতে না হতেই দেখলো। একটা প্লাস্টিকের বাটি হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে ওনারা যেখানে বসে আছেন সেখান থেকে দুহাত দূরে মাটিতে বাটিটা টক করে পরে গেলো। শুধু মিস্টার রিচার্ড  দেখতে পেলেন ছোট্ট টুকটুকে পাতলা জিভ আর জ্বল জ্বলে দুটি চোখ।-“উফ” বলে মিস্টার রিচার্ড চোখ বুজলেন। জনি কেটিকে দেখে হাসছে। সবাই রিচার্ডের দিকে তাকালো, চোখ বুজে রিচার্ড বসে আছেন।
-“হুম। ” বলে দিগন্ত সেন চেয়ারে বসে কিছু ভাবলেন। তারপর বললেন,
-“জনি কে দূর করা যাবে না বরঞ্চ কেটিকে জনির কাছ থেকে দূরে করতে হবে।” মিলন বাবুর দিকে চেয়ে বললেন,
-“কালকেই একজন পুরোহিত জোগাড় করে কেটির নামে একটা শ্রাদ্ধ ও পিণ্ড দান করতে হবে তারপর কাজ হয়ে গেলে জনিকে নিয়ে কয়েক দিনের জন্য বাইরে কোথাও ঘুরে আসতে হবে;তাহলেই মনে হয় কাজ হবে।”
পরদিন মিলন বাবু আর মিস্টার রিচার্ড সব ব্যবস্থা করে ফেললেন।  শুধু পুরোহিত একটু ইতস্তত করলেন কারণ কুকুরের শ্রাদ্ধ তিনি কোনদিন শোনেননি। যাইহোক পয়সা থাকলে সবারই শ্রাদ্ধ হয়।
পরের দিন ছাদে কেটির ছবি দিয়ে শ্রাদ্ধের কাজ আরম্ভ হল। শ্রাদ্ধের কাজ হতে হতে সাত তলার রণবীর সিং টাইগারকে নিয়ে উপরে এসে ওইসব দেখে একটু বিষন্ন মুখে দাঁড়িয়ে পড়লেন। টাইগার হঠাৎ কুঁই কুঁই করে কাঁদতে থাকে। সামনে দু’পা ছড়িয়ে বসে পড়ে আর মনে মনে বলে,-“কেটি তোকে মারতে চাইনি কিন্তু তুই ছোট ছাদের পাঁচিলে উঠেছিলিস;পড়ে যাবি তাই একটু বকছিলাম, ধমক দিচ্ছিলাম, তুই যে সত্যি ভয় পেয়ে পড়ে যাবি বুঝতে পারিনি। তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। 
হঠাৎ জনি বলে ওঠে,
-“মম মম দেখো কেটি পাঁচিলের ওপর; ওতো পড়ে যাবে। এমিলি ছেলেকে বুকের মধ্যে চেপে ধরেন। সত্যি কেটি সবাইকে দেখা দিয়ে দূরে কোথাও যেন মিলিয়ে গেল। আর কেউ দেখতে পায়নি তাকে। জনিও পরে ঘুরে এসে নতুন আরেকটা কুকুর কিনেছিল। তারও নাম রেখেছে কেটি।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterKaberi Ghosh
NarratorOlivia Das
Intro & EndingPriyanka Dutta
CharactersName
Joni & Diganto SenJoydeep Lahiri
Ameli & Ela DebiPriyanka Dutta
Mr. RichardDebanshu Ghosh
Milon BabuSuman Sadhukhan

https://www.facebook.com/srijoni.co.in

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *