ক্লাব ঘরে ভূতের আড্ডা

0

Views: 0

ক্লাব ঘরে ভূতের আড্ডা :

মনে আছে সেই পাঁচ বন্ধুর কথা ,”মুনলাইট ভিলা”র সেই পাঁচ জন বন্ধু সূর্য, গোড়া, তাপস, সজল আর কাজল।এখন তারা বেশ খানকিটা বড় হয়েছে ,এখন ওদের সন্ধান একটা ক্লাব ঘর। সূর্য গোড়া দুজনেই চাকরি পেয়েছে ,তাপস একটা ব্যবসা শুরু করেছে,সজল বেশ কিছুদিন হলো একটা ট্রেনিং এর মধ্যে আছে, আর কাজল এখনও পড়াশোনা  চালিয়ে যাচ্ছে।

পাড়ার ক্লাবটার সামনে একটা শনি মন্দির করেছে ওখানকারই প্রোমোটারা। ভক্তিও হবে আবার ব্যবসাও হবে ওই আর  কি। যাইহোক-পাড়ার বয়স্ক ব্যক্তিরা ক্লাবঘর জুড়ে সর্বসময় কেউ না কেউ থাকেন, মধ্যবয়স্ক রা তাস বা ক্যারাম খেলার জন্য থাকেন, এমনকি মহিলারাও পুজোর জোগাড়ের জন্য ঘরটি ব্যবহার করেন,কাজেই ওদের জায়গা হয়না। ওদের ছুটি বলতে শনিবার আর রবিবার। সেই দুদিন একটু আড্ডার জন্যই ওরা ক্লাবঘর খুঁজছে, ওদের সাথে পাড়ার আরো দু চার জন আছে।

হঠাৎ একদিন সূর্য আর গোড়া পাড়ার মোর দাঁড়িয়ে কথা বলছে ,এমন সময় ওদের পাড়ারই একজন দাদা এসে দাঁড়ালো।  ওদের দিকে তাকিয়ে বললো -“হ্যাঁ রে তোরা একটা ঘর খুজঁছিলিস তো ?”  

সূর্য বলে -“হ্যাঁ গো ভোলা দা,সন্ধান আছে?”

ভোলাদা বলে -“আছে, তবে একটু দূরে।”

গোড়া – “কোথায় ?কত দূরে?”

ভোলাদা- “বেশি নয়। এই পাশে আমাদের চৌধুরী পাড়ায়।”

সূর্য – “চৌধুরী পাড়ায় ?কোথায় বলতো?”

ভোলাদা – ” আরে চৌধুরী পাড়ার শেষদিকে। আরে সোম চৌধুরীর বাগান বাড়িটা। “

গোড়া – “ও আচ্ছা কিন্তু ওতো বিক্রি হবে। এখনো দারোয়ান আছে গেটের কাছে একটা। ওরা কি ভাড়া দেবে?”

ভোলাদা – “আরে না না বাগানটা বিক্রি করবেনা। অতবড় আম কাঁঠালের বাগান তাই দারোয়ান পাহারা দেয়। বিক্রি করবে ওই ঘর দুটো। তার মধ্যে পিছনের ঘরটা  তো ভেঙেই গেছে।”

সূর্য – “ভাঙ্গা ঘরটা কে কিনবে বলো? তাছাড়া আমাদের অতো দরকার নেই,একটা ঘর হলেই হলো। “

ভোলাদা – ” আরে শোন্ না,সেইদিন সোমনাথ চৌধুরী এসেছিলো বাগান দেখতে।আমার সাথে দেখা হতে আমায় বললেন,

-“এই যে ভোলা,ঘর দুটোর ব্যবস্থা করে দাও তো।  কেউ তো বাগান ছাড়া কিনতেই চাইছেনা।” 

আমি বললাম,

– “কাকাবাবু সামনের ঘরটাই যা ভালো ,বাকি সব তো পরেই গেছে। এটাও কোনদিন পরে হবে।”

সোমনাথ চৌধুরী বললেন,

– “তবেই বলো কি করা যায়?”

আমি তখন বললাম,

– “আমাদের পাড়ার ওই অজয় জেঠুর ছেলেরা আরো  কয়েকজন একটা ক্লাবঘর খুঁজছে ,ওদের দিন না ব্যবহার করতে। তবু দু-চারটে ছেলে পিলে তো আসা যাওয়া করবে।”

সোমনাথ চৌধুরী বললেন,

– “তা বটে। ঠিক আছে বলো ওদের। তবে এও দেখো যদি কেউ কেনে।”

সূর্য – “তাই নাকি ?ঠিক আছে আজি দেখে আসি আমরা সবাই।” 

ভোলাদা – “হ্যাঁ চল আমিও যাবো তোদের সাথে।”

সূর্য – “তাহলে দুপুর ৩টের সময় সবাইকে ডেকে চলো যাই। “

ভোলাদা –  “ঠিক আছে। এখন যাই, ৩টের সময় সবাই এখানেই আসিস আমিও আসবো। “

বলে চলে গেলো ভোলা দা।

দুপুরে সবাই মিলে বাগান বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলো। বিরাট বড় লোহার গেট। গেটটা ভেতর থেকে বন্ধ। দারোয়ানকে ডাকে,-“ভোলা দা।”

ভোলা দা – “রাম দেও -এই রাম দেও। ” 

 একজন বছর ৪০ এর লম্বা চওড়া লোক, গায়ের রং চাপা, ইয়া বড় গোঁফ, হাতে একটা লাঠি নিয়ে বেরিয়ে এসে বললেন

সিকিউরিটি-“কৌন হে?”

ভোলা দা বলে – “এই তো আমরা, চিনতে পারছো না।”

সিকিউরিটি-  “হা হা পায়ছানা।আসেন আসেন।”

রাম দেও সহ সবাই ভেতরে ঢুকলো।

ভোলা দা বললো – “গত পরশুদিন চৌধুরী সাব বললো না তোমায় আমরা সবাই এখানে ক্লাব করবো। ওই খেলোধুলা,ব্যায়াম ও হবে আর কি।”

সিকিউরিটি – ” হাঁ হাঁ জী, বলেছেন। ঠিকআছে, আমিও বড় একা একা থাকি ভালোলাগেনা। “

সূর্য এগিয়ে এসে বলে,

– “আমাদের সবাই কে চিনে রাখো আমরা রোজ আসবো না, সবাই তো কাজ করি ওই শনি রবিবার আর ছুটির দিনগুলো ব্যাস। আর তুমি রোজ ঘর খুলে ঝাড় পোছ টা করে রেখো, তারজন্য তোমাকে আমরা কিছু টাকা ধরে দেবো। আরো কিছু টাকা দেবো সেটা দিয়ে চা, চিনি, দুধ, কেরোসিন এগুলো কিনে রেখো আমরা আসলে ওই স্টোভ এ একটু চা করে দিও। কেমন?”

“আর হ্যাঁ ” বলে কি একটা ভেবে সূর্য বললো – “তোমার কাছে ফোন আছে তোহ?”

সিকিউরিটি – “হা হ্যা জী। আছে। 

গোড়া এবার বলে – “তোমার  নাম্বার টা আমাদের সবাইকে দেবে। আর আমাদের সবার নাম্বার টা তুমি নিয়ে রাখবে। আমাদের দরকার পড়লে আমরা কল করব আর তোমার কোনো দরকার পড়লে তুমি করো। বুঝেছো?”

সিকিউরিটি -“হাঁ হাঁ জী। ঠিক বাত।”

লেকিন আমাকে কুছ টাকা করি দিতে লাগবো না। হামি সব কাম করিয়ে দিবো।

গোড়া এবং সূর্য একসাথে বলে ওঠে – ” নানা রাম দেও সে হয়না। “

এরপর বেশ খানিকক্ষন এই নিয়ে জুড়াজুড়ি হওয়ার পর, সব ব্যবস্থা করে সবাই আনন্দ সহকারে ফিরে এলো নিজেদের বাড়িতে।

আজ বুধবার সামনের শনিবারে ক্লাব উদ্বোধন হবে। তারই সমস্ত প্ল্যান চলছে -কত জন মেম্বার হলো, কে কত চাঁদা দেবে, ক্লাবে কি কি জিনিস রাখা হবে, কারা কারা রোজ আসবে এইসব।

পরেরদিন সন্ধ্যেবেলা পুরোনো ছাদে বসে সব লেখালিখি করছে সূর্য, গোড়া, তাপস আর সজল, কাজল। এমন সময় ভোলা দা এসে হাজির।

সূর্য বললো – “কিগো ভোলাদা এতো লেট?আমরা সেই কখন এসেছি, আর তুমি…?”

ভোলাদার মুখটা বেশ গম্ভীর ভারী ভারী।

তাপস বলে – “কি হলো গো?”

ভোলাদা -“সূর্য ওখানে ক্লাব করা বাদ দে।”

গোড়া -“কেন কিহলো আবার?

ভয়ে ভয়ে ভোলাদা বললো – “সবাই বারণ করছে,বাকিরা কেউ যাবেনা।”

সূর্য – ” আরে বাবা কি হলো কি সবার। কেন যাবে না কেন? এমন সস্তায় ঘর পাওয়া গেলো। “

ভোলাদা আমতা আমতা করে বললো – “বড়রা সবাই বলছে ও বাড়িতে নাকি ভুত আছে।

সজল -” অ্যা”

“আবার ভুত ” ঢোক গিলে বলে কাজল।

“আমিও যাচ্ছিনা। আমি চলি। ” বলেই চলে যায় ভোলাদা।

সূর্যরা সবাই বেশ কিছুক্ষন চুপ করে যায়।

তারপর সূর্য বলে,

-“যাহঃ সব বাজে কথা। কবে কোন জন্মে ছিল তার ঠিক নেই, সেই ভয়ে সব গেলো। আমরা যাবো। আলো জেলে একটু খেলাধুলা করবো, গল্প করবো, তারপর ঘন্টা দুয়েক পর চলে আসবো। তাতে কি হবে? “

তাপস বলে,

-“আর ভুত যদি থাকতো তবে কি রাম দেও থাকতো ওখানে। রাম দেও তোহ ওখানে একাই থাকে। তবে, যতসব ফালতু কথা। “

সজল কাজল ভেবে দেখে বলে,

-“ঠিকই তো। তাহলে কি রাম দেও একা থাকতে পারতো, haaa ওতো আজ কতদিন হলো একা একাই থাকে।”

ঠিক হলো কেউ না যাক, ওরাই পাঁচজনে যাবে।

শনিবার সকালে সবাই টিফিন করে ক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। বাগান বাড়িতে গিয়ে গেট খুলতেই রাম দেও বেরিয়ে এলো।

সিকিউরিটি -“আসেন বাবু আসেন।” একগাল হেসে রাম দেও অব্ভর্থনা জানালো।

ভেতরে গিয়ে নতুন ক্লাব ঘরে ঢুকলো সবাই। গেট থেকে ওই পাঁচ হাত ইট পাতা রাস্তা, তারপর কটা সিঁড়ি, তারপরেই ঘর। একটা বড় দরজা, দরজার দুপাশে দুটো জানলা, পাশাপাশি লাগোয়া ঘর, পেছনের ঘরের দেওয়াল এই ঘরেরই লাগোয়া পেছন দিকটা। সবাই ঘরে ঢুকলো, ঘরের ভিতর একটি মাদুর পাতা, একটা চৌকি, একটা টেবিল, একটা চেয়ার। বলা বাহুল্য চেয়ারের একটা হাতল ভাঙ্গা , চৌকির একটা পায়া ভাঙ্গা তা ইট দিয়ে বসানো, টেবিলটা টলমল করছে, এমনকি মাদুরটাও চারপাশ ছেঁড়া।

দেখে মনেহয় বসার ঘরের মতন।

গোড়া সব দেখে বলে,

-“বাহঃ বেশ ভালো। আপাততঃ এতেই চলবে। এখন একটা ক্যারাম আর এক বাক্স তাস কিনে চালাই তারপর পরের মাসে দেখা যাবে।”

 সেদিন চা আর সিঙ্গারা সহযোগে ক্লাব উদ্বোধন হলো। রাম দেও খুব খুশি ওকে আর একা একা থাকতে হবেনা। হঠাৎ কাজল রাম দেও কে জিজ্ঞেস করলো,

-” আচ্ছা রাম দেও এখানে ভুত আছে না? সবাই বলে। “

হঠাৎ এই প্রশ্নে রাম দেও হকচকিয়ে বলে,

-“না মানে হাঁ মানে আগে ছিল এখন নেই। “

কাজল – “মানে মানে করছো কেন? আর আগে ছিল এখন নেই, তার মানেই বা কি?”

কিছুক্ষন চুপ করে থেকে রাম দেও বলে,

– ” হাঁ জী আগে আমার সামনে এক দু বার এসেছিলো ভুত বাবাজি লেকিন ” বলতে বলতে হা হা  করে হেসে ওঠে রাম দেও।

তাপস বলে,

-” হাসছো কেন? কোথায় গেলো ভুত?

হাসতে হাসতে রাম দেও, হাতের মাসেল ফুলিয়ে লাঠি ঠুকে বলে,

– ” রাম দেও থাকিতে অপলোগ কো কুছু ডর নেহি। মারের চোটে ভুত বাবাজি পালাইছে। ভুত হামকো ডর করে। “বলে নিজেই হাসতে থাকে।

যাইহোক, সবার মনে একটা সংশয় থেকেই গেলো। কি করবে? ঘর ছেড়ে দেবে নাকি রাম দেও এর উপর ভরসা করবে?

শেষে সজল বলে ওঠে,

-” ধুর ছাড় ওসব। যা হয় দেখা যাবে, রাম দেও তোহ এতদিন একা একা আছে নাকি।

সবাই বলে,

–  ” হ্যাঁ ছাড়ওসব, যা হবে দেখা যাবে। “

শুধু কাজলের মুখটাই কাচুমাচু হয়ে থাকে।

নাঃ নির্বিঘ্নে মাস খানেক কাটলো। ততদিনে সবার মধ্যে থেকে ভুতের ভয় ভুতের চিন্তা সবই চলে গেছে। সেইদিন শনিবার চৈত্র মাস। হঠাৎ আকাশ ঘন কালো করে এসে ঝড় উঠলো। তারপর নামলো বৃষ্টি। সে কি বৃষ্টি, কোথায় ছিল এত জল? বাপরে বাপ্, চারিদিক জলে থই থই করছে। রাস্তায় বড়মানুষের এক হাটু জল জমে আছে। এবার কি হবে? কি করে বেরোবে সবাই?তাহলে কি শনিবার টা যে যার ঘরে বসেই কাটবে?

সূর্য সবার সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। গোড়াকে ফোনে পায়।

সূর্য -“কিরে ভাই আজ কি করবি? এ বৃষ্টি তো থামার নাম নেই।”

গোড়া -“আমি হাফপ্যান্ট আর ওয়াটারপ্রুফ পরে বেরোচ্ছি। হেঁটেই যাবো। “

সূর্য – “ঠিক আছে। তুই বেরো, আমি তাপস আর সজল কাজলকে ফোন করে দেখি।”

গোড়া – “সজল কাজল আমায় আগেই ফোন করে বলেছে ওরা আজ যাবেনা। আর তাপস বললো ও যাবে তবে একটু দেরি হবে।

বলছি শোন্ না আমি যাই রাম দেও কে চা করতে বলি, তুই মুড়ি,সিঙ্গারা বা তেলেভাজা যা পাবি নিয়ে আসিস। আমার মনেহচ্ছে বৃষ্টি থামলে হয়তো সজল কাজল আসবে।”

সূর্য – “ঠিক আছে। রাখছি “

গোড়া হেঁটে হেঁটে ৭টা নাগাদ ক্লাবে পৌছালো। রাম দেও ছাতা মাথায় এসে গেট খুলে দিলো।

সিকিউরিটি – “আসেন গোড়া বাবু। হামি ভাবলাম আপলোগ নাহি আসবেন।”

গোড়া -” না না সবাই আসবে বৃষ্টির জন্য দেরি হয়ে গেল। ” ঘরের দোরগোড়ায় উঠে ওয়াটারপ্রুফ খুলতে খুলতে বলে ” তুমি চা কর রাম দেও। ” 

সিকিউরিটি -“হামি চায়ের জল চাপিয়েছি গোড়াবাবু। আপ বাইঠিয়ে ঘরে গিয়ে।” গোড়া ঘরে এসে আলো জেলে আরাম করে চৌকিতে বসে।

যাহঃ আলো চলে গেলো। কি রে বাবা, লোড সেডিং, নাকি ঝড়ে তার ছিঁড়ে গেলো। কি হবে? এখন মোমবাতি কোথায় পাই। তাপস একটা এনে রেখেছিলো বটে তবে কোথায় রেখেছে।

সূর্যও এখনো এলোনা।

হঠাৎ একটা আলোর শিখা দেখে চমকে ওঠে গোড়া। না না ভয়ের কিছুনা রাম দেও একটা লম্ফো নিয়ে ঘরে এলো।

-“বাবু এই ছোট্ট বাতি হামার ঘরে ছিল, লিজিয়ে।”

এই লম্ফোর আলোয় অন্ধকার তো কাটেনা উল্টে আলোছায়া এক ভৌতিক পরিবেশ তৈরী করে। যাইহোক গোড়া ঘরে বসে অপেক্ষা করে। হঠাৎ দোরগোড়ায় লম্বা ছায়া পরে, গোড়া বুঝতে পারেনা কে এলো। সে একটু ভয় মিশ্রিত গলায় বলে,

– “কে? কে দোরগোড়ায়?

“আরে আমি তাপস ” বলে ছায়ামূর্তি।

গোড়া -“ও তাপস। এতো দেরি করলি কেন? আর তোর গলা টা এমন লাগছে কেন?

ছায়ামূর্তি বলে -” দূর জলে ভিজে ঠান্ডা লেগে গেছে। তা তুই একা? “

গোড়া – “হ্যাঁ সবাই আসছে ” বলে গোড়া ফোন নিয়ে কাকে কল করে।

ছায়ামূর্তি বলে -” আমি যাই জামাটা ছাড়ি পাশের ঘরে গিয়ে।

গোড়া কাকে ফোন করছিলো তাকে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,

-“ধর বাবা সূর্য কখন আসবে, ভালোলাগেনা। দেখি এরা কি করছে।চা হলো নাকি ……..”

গোড়া অন্ধকারে আস্তে আস্তে খাবার ঘরেরদিকে গেলো ,উঁকি মেরে দেখতেই গোড়ার মাথার চুল খাড়া হয়ে গেলো ,গোটা শরীর ভয়ে শিরশির করছে। রান্না ঘরের লাগোয়া খাবার ঘরের টেবিলে ,৩টে চেয়ার দখল করে সজল কাজল আর তাপসের রূপ ধরে বসে ৩ ৩টে কঙ্কাল। দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে ওরা সজল কাজল বা তাপস কোনোটাই নয়। ৩কাপ চা নিয়ে বসে খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। গোড়া ভয়ে কি করবে ভেবে না পেয়ে চুপিচুপি ঘরের ভেতর দিয়ে এসে রাম দেও এর ঘরের দিকে এলো।  

গোড়া রাম দেও এর ঘরে এসে দেখে রাম দেও নতুন করে চায়ের জল গরম করছে ,

-“তবে কি রাম দেও কিছুই জানে না ?” 

গোড়াকে দেখে রাম দেও বলে,

-” আরে গোড়াবাবু আপনি….”

ওর কথা শেষ করতে দেয়না গোড়া। ঠোঁটে আঙ্গুল  দিয়ে বলে,

-” চুপ। ” রাম দেও অবাক হয়ে যায়। গোড়া ওর কানের কাছে মুখ এনে বলে ,-“খাবার ঘরে সব ভুতেরা বসে আছে,আমার খুব ভয় করছে। “

সিকিউরিটি -” আচ্ছা জী। আপনি একটা লাঠি নিন, হামিও একটা লাঠি নিই।  তার আগে আপনি আমার ঘরে শান্ত সে কুছ দেড় বসেন ,হামি কয়েকজন কে বুলাকে আনছি। তারপর হবে আচ্ছা সে পিটানো ”  

রাম দেও যাবার উপক্রম করতেই গোড়া বলে “না রাম দেও আমি একা থাকতে পারবোনা। চলো আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে লাঠি নিয়ে।

সিকিউরিটি -“তবে চালিয়ে খাবার ঘরে যাই “বলে রাম দেও একটা বিরাট হুংকার ছাড়লো,

-” ইয়াই কে রে ? আজ মারের চোটে ভুত কে সুধারবো।  আয় দিখি কোন আছিস কত বড় ভুত আছিস ” বলতে বলতে ছুটে গেলো খাবার ঘরের দিকে , পেছন পেছন গোড়াও গেলো। রাম দেও ঘরে ঢুকে এলো পাথাড়ি লাঠি ঘোরাতে লাগলো। গোড়াও দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে লাঠি ঘোরাতে লাগলো।

ঘরের ভেতরে যারা ছিল,

-“ওঁরে বাবা রে মেরে ফেললো রে ওঁরে বাবা রে আমাদের মেরে ফেললো রে। পালা পালা  ” বলতে বলতে তারা অদৃশ্য হয়ে গেলো।গোড়ার মনে একটু সাহস হলো। রাম দেওকে থামিয়ে বললো -“চলো এবার ক্লাব ঘরে, দেখি ওখানে লুকিয়েছে কিনা।”

সিকিউরিটি -“চলেন দেকি।”

এবার ওরা ক্লাব ঘরের দিকে এগোয়। গোড়ার হাতের মোমবাতির ক্ষীণ আলোয় দেখা যায় ঘরের কোনে চার জন ছায়ামূর্তি গুঁটি শুটি মেরে বসে আছে।

দেখেই গোড়া চেঁচিয়ে বললো,

-“ওই দেখো রাম দেও ঐখানে ওরা লুকিয়ে আছে।”

রাম দেও লাঠি উঁচিয়ে চিৎকার করলো,

-” ও তুরা এখানে। মার্ বেটাকে। ”

বলে যেই না লাঠিটা মাথার ওপর তুলেছে ,ঘরের কোনের চারজন চিৎকার করে উঠলো,

-” ওরে না না,মারিস না। আমরা মানুষ। আমরা তাপস,সূর্য,সজল ,কাজল।”

তারপর সঙ্গে সঙ্গে আলো জলে উঠলো,সেই আলোয় গোড়া আর রাম দেও দেখলো সত্যিই ওরা,ভিজে অবস্থায় এক কোনে বসে আছে। আর সূর্যর হাতে একটা খাবারের পোটলাও আছে। রাম দেও তাড়াতাড়ি হাত থেকে লাঠি টা ফেলে দিয়ে বলে,

-“আরে সাচমুচ আপলোগ হা “

গোড়া – ” তাহলে এই অন্ধকারে গুঁটিসুটি মেরে বসে ছিলি কেন ?”

কাজল একটু ঘোরের মধ্যে ছিল,ওকে চৌকিতে শুইয়ে দিয়ে তাপস বললো,

– ” আরে না আসলে তো ফাইন হবে বলেছিলো সূর্য। তাই আমি সজল কাজল ডেকে একটা রিক্সাকে ডবল ভাড়া দিয়ে এলাম। ঘরে ঢুকতেই দেখি অন্ধকার তারপর কি করি কি করি ভাবছি তখন সজল বললো খাবার ঘরটা দেখি চল।”

কথা শেষ করার আগেই তাপস এর ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। 

তখন সজল বললো,

-“ঘরে উঁকি দিতেই দেখি, ঠিক আমাদেরই মতন জামা প্যান্ট পড়া, ঠিক ঠিক আমাদের মতোই গলা হা…দেখি ৪টে কঙ্কাল নিজেদের  মধ্যেই কথা বলছে নাঁকি সুরে । আর এই দেখেই কাজল জ্ঞান হারায়। ” বলেই সজল মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে। 

 তাপস বলে,

-” তারপরই দেখি তুই আর রাম দেও চিৎকার করতে করতে লাঠি নিয়ে ওদের মারতে লাগলি। সেই সময় এ সূর্যকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে, ওকে টেনে নিয়ে এই ক্লাব ঘরের কোনায় এসে বসি।”  ওদের সব কথা শুনে গোড়া আর রাম দেও মাটিতে বসে পড়লো।

সেই সময় কাজলের ঘোর কাটে ,উঠে বসে কাজল,

-“আমি কোথায় ?”

বাইরে একটা গাড়ির শব্দ শোনা যায়। রাম দেও তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে যায়।,দেখে চৌধুরীবাবু গাড়ি থেকে নেমে ঘরের দিকে আসছেন। ঘরে ঢুকতেই বলেন,

– ” রাম দেও তুমি ঠিক আছো ? এত ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে ,তোমার টালির ঘর না ভেঙে যায় একা একা থাকো ,এই ভয়ে তোমায় নিতে এলাম। চলো আমার সাথে। “

তারপর বাকিদের দিকে চোখ পরতে বলেন,

-“একি তোমরা ?কি ব্যাপার ? কিছু হয়েছে নাকি। …চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন ?”  

তখন রাম দেও সবিস্তারে সবটা চৌধুরী বাবুকে বললো। চৌধুরীবাবু শুনে স্তম্ভিত। বসে পরলেন চৌকির কোনে। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন -“এ বাড়ি নিয়ে আমি কি করবো?এতো বিক্রি করা অসম্ভব। এ বাড়ি তো কেউ কিনবেনা। “

সূর্য বললো  -“একটা কথা বলি জেঠু ,আমাদের পক্ষেও আর এখানে আসা সম্ভবনা। ” 

রাম দেও কেঁদে ওঠে -” হাম কাহাকো যায়েগা চৌধুরী বাবু,হামার তো কুথাও নকরি মিলবে না। “

সজল বলে -” আমি কি একটা প্রস্তাব দেব ?”

চৌধুরী বাবু- “বলো বাবা। “

সজল বলে,

-” এই বাড়ি টা ভেঙে নতুন করে তৈরী করুন। একদিকে বৃদ্ধাশ্রম আর একদিকে অনাথাশ্রম খুলুন। আর তারমধ্যে আমাদের একটা ঘর দেবেন ওখানে আমরা ক্লাব করবো সাথে দেখাশোনাও করবো আর রাম দেও যেমন আছে তেমনই থাকবে। “

গোড়া বলে – “দুটো আশ্রম কেন?”

 চৌধুরী বাবু-” ঠিক দুটো আশ্রম কেন?” 

কাজল বলে,

-” অনাথ শিশুরা দাদুদিদা পাবে আর বয়স্ক মানুষগুলো নাতিনাতনি পাবেন।সবার মনে আনন্দ থাকবে, সব সময় হই হই হবে আর ভূতেরা ভয়ে পালাবে। ” 

 সবাই হা হা করে হেসে ওঠে।

শেষে চৌধুরীবাবু বললেন,

-“ঠিক আছে তাই হবে।  অনেক রাত হলো,বৃষ্টিও থামার নাম নেই। চলো সবাই তোমাদেরকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে, রাম দেও কে নিয়ে এবার বাড়ি ফিরবো।” 

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterKaberi Ghosh
Intro & EndingOlivia Das
কথকPriyanka Dutta
CharactersName
তাপসJoydeep Lahiri
সূর্যDebanshu Ghosh
সজলSoumik Benarjee
গোড়াSuman Sadhukhan
কাজলSurajit mukherjee
ভোলা দা ও দারোয়ানSouradip Roy
চৌধুরী বাবুNarayan Dutta

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
1
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *