Visits: 37

ভাইফোঁটা part -1:

বাঁকুড়ার এক বধিষ্ণু গ্রাম।  নাম শিউলি বাড়ি। গ্রামে একটিই মেয়েদের স্কুল, স্কুলের পাশে টিচার্স কোয়াটার।  অর্পিতা ঐ স্কুলের টিচার কোয়াটারে থাকে। সেদিন স্কুল থেকে এসে বারান্দায় একটি চেয়ারে বসে বই পড়ছে। পাশের কোয়ার্টার থেকে বছর ষোলো একটি কিশোরী গেটের কাছে এসে ডাকলো – “অপুদি, -অপুদি-“

– “কী সীমা, কিছু বলছো,” অর্পিতা ঝুঁকে পড়ে বলে।  সীমা গেট খুলে কাছে এসে বলে,- “অপুদি আমি মা আর ভাই একটু দোকানে যাচ্ছি।  বাবা এখনো ফেরেনি আসলে এই চাবিটা দিয়ে দিও।” সীমা অর্পিতার হাতে চাবিটা দেয়। 

অর্পিতা চাবিটা নিয়ে বলে,- “কেন? সবাই মিলে দোকানে কি কিনতে ?”

সীমা যেতে যেতে বলে-“ভাইয়ের জন্য একটা জামা প্যান্ট কিনতে -। দুদিন পরেই তো ভাই ফোঁটা।”

– “ও শোন সীমা”- ডাকলো অর্পিতা। 

   সীমা আবার ফিরে আসে। দাঁড়ালো বারান্দার কোনে।  অর্পিতা ঘর থেকে টাকা নিয়ে এসে সীমার হাতে দিয়ে বললো -“এই সামনের ওষুধের দোকান থেকে মাথা যন্ত্রনার ওষুধ এনে দেবে? বড্ড মাথার যন্ত্রনা হচ্ছে।  তোমরা যখন আসবে তখন আনলেই হবে।”

সীমা হাত বাড়িয়ে টাকা নিয়ে ‘আচ্ছা’ বলে চলে যায়। 

   চেয়ারে আবার বসে পড়ে অর্পিতা।  শূন্য আকাশে তাকিয়ে থাকে। পড়ন্ত বিকেলের আকাশ লাল হয়ে আছে।  আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দুচোখে জল ভরে আসে। 

   -দুদিন পরে ভাইফোঁটা।  আজ সব দিদিরা, বোনেরা কত ব্যস্ত।  ভাইয়ের জামা চাই, প্যান্ট চাই, মিষ্টি চাই, কি কি খাওয়াবে, কি কি প্রেজেন্ট দেবে।  কত আনন্দ। 

   আনন্দ – আনন্দ।  তারও আনন্দ ছিল। ক’ বছর আগে। 

   মা যখন মারা যায়, আনন্দর তখন ছয় মাস বয়স। বাবা জুট মিলে কাজ করেন। অর্পিতার বয়স আর কত তখন মাত্র ১২ বছর। ঐ বয়সে অর্পিতা ভাইকে বুকে তুলে নিয়ে মায়ের শোক ভোলে। অতি কষ্টে নিজের পড়াশোনা বজায় রেখে ভাইকে মানুষ করে তোলে। 

   হাসি কান্নার মধ্যে দিয়ে গড়িয়ে গেল দশটা বছর। এরি মধ্যে অর্পিতা বি.এসসি পাশ করলো।  আনন্দ ক্লাস ফাইভ-এ ভর্তি হল। বাবাও রিটায়ার করলেন। অর্পিতার সখ টিচার ট্রেনিং নিয়ে শিক্ষকতা করবে। তার ছোট থেকে আশা। তাই বাবা রমণীমোহন বাবু একদিন বললেন -” হ্যাঁরে আপু, সুধাময়বাবু তাঁর মেয়ের জন্য টিচার ট্রেনিং-এ ফর্ম আনতে যাবেন শহর থেকে কালকে।  আমি তাঁকে একটা ফর্ম আনতে দিলাম।”

– “সে কি বাবা, দু বছরের ট্রেনিং। আমি চলে গেলে তোমাদেরকে কে দেখবে? আনন্দর পড়াশোনা কি হবে।”

– “না না অত চিন্তা করতে হবে না তোকে।” আমার তো এখন অঢেল সময়, কি করবো। আর আনন্দর জন্য বাড়িতে একজন মাস্টার মশাই রেখে দেবো। রোজ স্কুলে ওকে আমিই দিয়ে আসতে নিয়ে আসতে পারবো “- হেসে বলেন রমণীবাবু। 

– “কিন্তু বাবা -“। চিন্তিত ভাবে বাধা দে অর্পিতা। 

_ “না মা অত চিন্তা করিস না। পাঁচ বছর ধরে মানময়ী গার্লস স্কুলে তুই ফ্রি সার্ভিস করলি।আজ স্কুলটা সরকারি অনুমোদন  পেতে চলেছে। এখন তোর যদি একটা ট্রেনিং থাকে তাহলে ওরা তোকে চলে যেতে বলবে না।” খুব ভরসার সঙ্গে কথা গুলো বললেন রমণী মোহন বাবু।

অর্পিতার যেন দ্বিধা কাটে না, – “তবুও বাবা, তোমাদের ফেলে যেতে মন চাইছে না। আনন্দ তো আমায় ছাড়া কিছু জানে না। যাই দরকার পড়ুক, তোমাকে বলবে না – বলবে আমাকে। আমি চলে গেলে ওরই খুব অসুবিধা হবে।” 

– “কিন্তু মা।” রমণী মোহন বাবু একটু চিন্তার সঙ্গে বললেন – “আমি আর কদিন। তোর মা চলে যাবার পর সেই যে দেহ ভেঙ্গেছে আর তো জোরা লাগে না। আনন্দকে তো তুই দেখবি। রিটায়ার করার পর যে কটা টাকা পেয়েছি। সে তোর ভবিষ্যতের কথা ভেবে” বলতে বলতে রমণী মোহন বাবু দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ছুটে এসে অর্পিতা বাবাকে জড়িয়ে ধরে। 

– “না না বাবা ও কথা বলো না। তুমি ছাড়া আমাদের আর কে আছে।তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।” তাই করেছিল অর্পিতা, চলে গিয়েছিলো ট্রেনিং-এ। 

ট্রেনিং থেকে ফিরে কয়েক মাস পরে চাকরীও পেয়েছিলো অর্পিতা। তখন তার ছোট্ট ঘরে ছোট্ট সংসারে যে তার বাবা আর ছোট্ট আদরের ভাই-ও যে ভেসে যাবে তা ভাবতে পারে নি সে। 

         একদিন রমনী মোহন বাবু সাইকেলে করে আনন্দকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পিছন দিক থেকে আসে ধাক্কা মারল এক ঘাতক লরি। সেই ধাক্কায় ছিটকে পড়লেন রমনী মোহন বাবু আর আনন্দ। তাদের ওপর দিয়েই চলে যায় লরিটি। ধরতে পারেনি কেউ। এ দৃশ্য দেখে অর্পিতা পাথর হয়ে গিয়ে ছিল। সেদিনের পর থেকে অনেকদিন কথা বলতে পারেনি। কাঁদতেও যেন সে ভুলে গিয়েছিল। 

         কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না সে তার নিজের গতিতেই চলবে। ক্রমে ক্রমে তাই অর্পিতা উঠে ছিল,  দাঁড়িয়ে ছিল, সবই করেছিল। তবে দম দেওয়া পুতুলের মতন। আজও সে পুতুলই হয়ে আছে। তার মুখে হাসি নেই,আনন্দ নেই। চোখ দুটো তার শুন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। গড়িয়ে পড়ছে অঝোর ধারে জল।

ভাইফোঁটা (Part -1), ভাইফোঁটা – vaifota, golpo, chotto golpo, boro golpo, kaberi, kaberi ghosh, eti akti vai r didir vaifotar golpo.

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

4 thoughts on “ভাইফোঁটা (Part -1)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *