ধনী
Views: 57
বিল গিটস যখন একজন পৃথিবীর সেরা এক নম্বর ধনী হয়েছিলেন। তখন তাকে একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন,
“আচ্ছা আপনার থেকেও কি কোনো ধনী ব্যক্তি আছেন?”
একটু হেসে বিল গেটস বলেছিলেন,
-“একজন আছেন।”
সবাই অবাক হয়ে গেলো।
-“কে সেই ব্যক্তি?”
বিল গিটস বললেন,
-“একটা ঘটনার কথা বলছি শুনুন। আজ থেকে কয়েক বছর আগে আমি তখন দরিদ্র ছিলাম গাড়িতে যাতায়াত করার পয়সা ছিলনা। তাই হেঁটেই যাতায়াত করতাম। একদিন স্টেশনের পাশ দিয়ে আসছিলাম। ছোটোখাটো কাজের সন্ধানে ছিলাম। হটাৎ মনে হলো ‘কর্মসংস্থার’ কাগজ দেখি। কিন্তু কাগজ কেনার পয়সা নেই। একজন কাগজওয়ালা বসে কাগজ বিক্রি করছিলো। তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, ভাবলাম কাগজটা পড়ে আবার ফেরত দিয়ে দেবো। কাগজওয়ালা কি শুনবেন আমার কথা? নাঃ কিছুতেই বলতে পারলাম না যে কাগজ কিনবোনা পড়ে দিয়ে ফেরত দেবো। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।”
কাগজওয়ালা কয়েকবার আমার দিকে দেখে শুনে বললেন,
-“কি ব্যাপার তুমি কি কাগজ কিনবে?”
আমি মাথা নাড়লাম। আবার কাগজওয়ালা বললেন,
-“কি কাগজ দেখবে?”
আমি বললাম,
-“কর্মসংস্থা।”
আমার দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
-“নাও পড়ে দিয়ে দিও।”
আমি বললাম,
-“আমার কাছে পয়সা নেই।”
একটু হেসে কাগজওয়ালা বললেন,
-“আমার আজ অর্ধেক লাভ হয়েছে। এতে কিছু ক্ষতি হবে না।”
আমি হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিয়ে পড়ে ফেরত দিয়ে দিলাম। তারপর ধন্যবাদ জানিয়ে ওখান থেকে চলে গেলাম।
আবার কয়েকদিন পর ওখান দিয়ে আসছিলাম। দেখলাম কাগজওয়ালাটা সেখানে বসে রোজকার মতন কাগজ বিক্রি করছেন। পায়ে পায়ে আমি ওখানে গিয়ে দাঁড়ালাম। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। উনি তা লক্ষ্য করেছেন, কিন্তু কিছু বলছেন না। বা তাকাচ্ছেন না। আমি কি করবো বা কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলাম, নাঃ কাগজ পড়ে লাভ নেই। ফিরেই যাই। ভেবেই আমি ঘুরে দাঁড়াতে যাবো, ঠিক সেই সময় উনি আমায় ডেকে বললেন,
-“আজ তুমি একটা কাগজ নিয়ে যাও। তোমায় দিলাম। না না পড়ে ফেরত দিতে হবে না। তুমি নিয়ে যাও।”
আমি তো অবাক। তবুও বললাম,
-“না তা হয় না। আপনার লোকসান করতে চাই না।”
হা হা করে হেসে কাগজওয়ালা বললেন,
-“আরে না না, আজ আমার পুরো লাভ হয়েছে। সেই জন্যই তোমায় কাগজটা ফ্রি তে দিচ্ছি।”
আমার চোখে জল এসে গেলো। পরম কৃতজ্ঞতায় আমার মাথা নুয়ে এলো। পরে ওই কাগজের কর্মসংস্থার থেকেই আমি কাজ পাই। তারপর এই কয় বছরে আমি আজ এখানে।
একজন প্রশ্ন করে,
-“তার দেখা আর কোথাও পাননি?”
বিল বললেন,
-“আমি যখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ওনার খোঁজ করেছিলাম। যেখানে কাগজ বিক্রি করতেন সেখানেও গিয়েছি; কিন্তু না দেখা পায়নি। কাগজ বিক্রিও বোধহয় ছেড়ে দিয়েছেন। আমি ওনার খোঁজ বন্ধ করিনি, একদিন না একদিয়ান তার দেখা পাবই, তখন ওনাকে সেদিনের কাগজের দাম দেব।”
একজন বললো,
-“সেকি শুধু কাগজের দাম।”
বিল হেসে বললেন,
-“ওনাকে আর কিছু দেওয়া আমার ধৃষ্টতা। উনি কত বড়ো মনের মানুষ,ওনার মনের ঐশ্বর্য অপার সীমাহীন। কোথায় আমার এখনকার টাকা পয়সা। আমার থেকে অনেক অনেক গুণ ধনী ব্যক্তি কিন্তু কথা হচ্ছে এখনো পর্যন্ত তাঁর দেখা পাচ্ছি না। কোথায় গেলে যে তার দেখা পাবো জানিনা।”
যাদের কথাগুলো বললেন গিট্স তারা কতটা বুঝলো জানা গেলো না। তবে মাথা নাড়তে নাড়তে সরে গেলো।
বেশ কিছুদিন পর গিট্স কাগজওয়ালা যে জায়গাটায় বসে কাগজ বিক্রি করতেন সেখানে আবার এলেন দেখতে প্রায় আসেন উনি। কি জানি তার মন বলছে কাগজ বিক্রেতা ভদ্রলোকের দেখা পাবেনই। হটাৎ সেদিন গিয়ে উনি দেখেন, ঠিক ঐরকম দেখতে একটি ২২-২৩ বছরে ছেলে ঐখানে চুপ করে বসে আছে। মি. গিট্স পায়ে পায়ে গেলেন ওই ছেলেটির সামনে। ছেলেটি মুখ তুলে তাকালো। গিট্স দেখলেন ছেলেটির মুখটি বড়ো ম্লান। চোখ দুটি ছলোছলো।
মি.গিট্স আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলেন,
-“২৪-২৬ বছর আগে এইখানে তোমার মতন দেখতে এক ভদ্রলোক বসে কাগজ বিক্রি করতেন তিনি এখন কোথায় তুমি জানো? আমায় বলতে পারবে?”
ছেলেটি ছলছল চোখে মুখের দিকে তাকালো,খুব আস্তে আস্তে বললো,
-“আপনি?”
-“আমি বন্ধু স্থানীয়। আগে পরিচয় ছিল। তারপর কর্মসূত্রে বিদেশে যাই। ফিরে এসে আর দেখতে পাই না। তিনি সুস্থ আছেন তো?”
-“হ্যাঁ। সুস্থ, তবে গত তিন বছর আগে একটা দুর্ঘটনায় তিনি আজ পঙ্গু। ধরে ধরে হাঁটাচলা করেন।” বলে থেমে যায় তরুণটি।
-“তারপর?” চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করেন মি.গিট্স।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তরুণটি বলে,
-“আমি পড়াশোনায় ব্যস্ত ছিলাম সে সময় সামনে ফাইনাল পরীক্ষা,অগত্যা মা সংসারের হাল ধরেন। এই তিন বছর মা পরিশ্রম করে করে এখন মা শয্যা নিয়েছেন? গত ১৫ দিন মা অসুস্থ। তাই আমি কিছু কাজ না পেয়ে বাবার পুরোনো ব্যবসা নিয়ে বসেছি।”
তরুনটি একটু থেমে বোকা বোকা মুখ করে বলল মি.গিটসের দিকে চেয়ে,
-“কিন্তু জানেন স্যার এ ব্যবসার আমি কিছুই বুঝি না কিছুই জানিনা।”
মি. গিটস তরুণটির খুব কাছে সরে এসে পরপর স্নেহে মাথায় হাত রেখে বললেন,
-“কোনো ভয় নেই, আমি তো আছি। আচ্ছা আমাদের আলাপ হলো কথা হলো কিন্তু কেউ কারোর পরিচয় জানিনা।”
একটু হেসে তরুণটির হাত ধরে মি. গিটস বললেন,
-“আগে বলো তোমার নাম কি?”
-“আমার নাম জন।” আস্তে আস্তে বলে তরুণটি।
-“পড়াশোনা?” প্রশ্ন করেন গিটস।
-“আমি দু বছর আগে একাউন্ট-এ অনার্স নিয়ে বি.কম পাশ করেছি। এখন আর পড়াশোনা করি না, ছেড়ে দিয়েছি।”
-“আমি বিল গিটস তোমার বাবার বিশেষ পরিচিত। তোমার বাবা আমার থেকে বয়সে কিছু বড় কিন্তু তাঁকে আমি আমার বিশেষ বন্ধু ভাবি। একসময় তোমার বাবা আমার অনেক উপকার করেছিলেন।”
বিল গিটস চোখ থেকে নিজের চশমাটা খুলে ভালো করে মুছে চোখে পড়তে পড়তে বললেন,
-“ঠিক আছে তুমি এখন বাড়ী যাবে তো? চলো আমিও তোমার সাথে যাবো।”
জনের এতক্ষনে খেয়াল পড়লো বিল গিটসের ওপর। দেখে মনে হয় বেশ ধনী ব্যক্তি। পোশাকে, বেশ-ভূষায় কেতা দুরস্ত। দুজন লোক ওনার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
জন এবার একটু ইতস্তত করে, তাদের গরিব বাড়িতে নিয়ে যেতে। মি.গিটস বুঝতে পেরে হাত নেড়ে পিছনের লোকেদের সরে যেতে বলেন। তারপর একটা হাত জনের কাঁধে রেখে বলেন,
-“চলো যাই, তোমার বাবার সাথে আমার খুব দরকার আছে। অনেকদিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি।” স্নেহ ভরা চোখে তাকান মি. গিটস। অবাক হয়ে যায় জন। তার বাবার যে এমন একজন বন্ধু আছেন কোনদিন তো সে কথা বলেননি।
যাইহোক, জন এগিয়ে গিয়ে দোকান বন্ধ করে। মি. গিটস তার সাথে সাথে যান। একটু এগিয়ে গিয়ে গিটস বলেন ,
-“তোমার বাড়ি কতদূর?”
জন বলে,
-“এই দশ মিনিটের রাস্তা, হেঁটেই যাতায়াত করি। খুব তাড়া থাকলে বাসে যাই। আপনি……”
জনের কথা শেষ হবার আগেই গিটস বললেন,
-“বাহ বেশ চলো হেঁটেই যাই।”
বলেই তিনি জনের পাশে পাশে চললেন, নানান কথা বলতে বলতে। কথা বলার ফাঁকেও জন লক্ষ্য করে একটা বিরাট গাড়ি তাদের পিছু পিছু আস্তে আস্তে আসছে। বুঝতে পারে এই গাড়িটা বাবার বন্ধুর গাড়ি।
অবশেষে বাড়ি পৌঁছায় জন ও তার বাবার বন্ধু। বাড়িতে ঢুকে মি.গিটস দেখেন সামনে উঠানের মতো একটু ফাকা জায়গা। সেখানে বসে জনের বাবা মিস্টার রবার্ট। তার গায়ে একটা হাফ হাতা টি-শার্ট এবং তার চেহারা জীর্ণশীর্ণ।
তখন বিকেল বেলা, প্রায় ছুটে গিয়ে মি.গিটস বসে থাকা ওই শীর্ণ ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরেন। মি.রবার্ট হতচকিত হয়ে পড়েন। মি.গিটস তাঁর হাত দুটি ধরে বারবার বলেন,
-“ধন্যবাদ ধন্যবাদ মি.রবার্ট। কী করে যে আপনার ঋণ শোধ করবো তা জানি না।” দু-চোখে বিলের আনন্দ অশ্রু দেখা গেল।
এরপরের ঘটনা অতি সংক্ষিপ্ত। সেই ২২ বছরের বিল গিটস – এর হাতে জোর করে মি. রবার্টের “কর্মসংস্থান” – পত্রিকাটি বিনা পয়সায় দেওয়া আর চাকরী পাওয়া মনোবলকে বাড়িয়ে দেওয়া। তার পরের ঘটনা আর থেমে থাকেনি। মি. গিটস জয়ের আর সাফল্যের সিঁড়ি একের পর এক টপকে উপরে ওঠেন শীর্ষে।
আজ মনে হয় স্বয়ং যীশু তাঁর হাত ধরে সিঁড়ির প্রথম ধাপ তুলে দিয়েছিলেন মি. রবার্টের বেশে। মি. রবার্টকে মি. গিটস জড়িয়ে ধরেন পরম ভক্তিতে, পরম আবেগে পরম আত্মীয়তার সাথে। তিনি ধনী মানুষের কাছে আর মি. রবার্ট ধনী ঈস্বরের কাছে।
https://www.facebook.com/srijoni