সদানন্দের ঘটকগিরী

Views: 0
সদানন্দের ঘটকগিরী:
সদানন্দ শেষকালে ব্যবসা ধরল চাকরী আর পেল না। চাকরীর আশা ছেড়ে। অগত্যা ব্যবসা ধরল। তাও যাতা ব্যবসা নয়। ঘটকালির ব্যবসা।
পাড়ার লোকে বলে, – ‘‘আর ব্যবসা পেলে না শেষে কিনা ঘটকালী হি-হি-হি।’’
সদানন্দ ও বলে, ‘‘হি-হি করনের কিছু নাই। এ ব্যবসায় টাকাও আছে ক্ষাটোনো আছে বুঝলা। আমার লগে যাইও দেখো, কেমন ক্ষ্যাটোন্ হয়।’’ সবাই চুপ করে যায়।
একদিন সদানন্দ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে কান খাড়া করে, আর চোখ যেন লাট্টুর মতন ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ কানে এলো এক ভদ্রলোক আর এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করছে – ‘‘এই যে রমনীবাবু কোথায়?’
উক্ত রমনী বাবু বলেন, – ‘‘এই কাগজের অফিসে যাচ্ছি। একটা বিজ্ঞাপন দিতে।’’
ভদ্রলোক – ‘‘এখনও কিছু হলো না? আমিও চেষ্টা করছি। দেখি কতদূর গড়ায়।’’ সদানন্দ কান খাড়া করে ওদের কথা শুনছিল। ঐ ১ম ভদ্রলোক চলে যেতেই সদানন্দ ছুটে গিয়ে রমনী বাবুর কাছে গেল, – ‘‘এ্যাই যে রমনী রঞ্জন বাবু। কোথায় যাইতোচ্ছেন?’’
রমনী বাবু – ‘‘কে মশাই আপনি?’’
সদানন্দ – ‘‘আইজ্ঞা আমি হলাম, গিয়া ঘটক চ‚ড়ামনি সদানন্দ দাস।’’
রমনী বাবু – ‘‘আমি রমনী রঞ্জন নই। রমনী মোহন।
সদানন্দ – ঐ হইল গিয়া। কোথায় যান?’’
রমনী বাবু – ‘‘এই খবরের কাগজ অফিসে, বিজ্ঞাপন দিতে।’’
সদানন্দ – ‘‘কার লিগা বিজ্ঞাপন?’’
রমনী বাবু – ‘‘আমার মেয়ের বিয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে।’’
সদানন্দ – ‘‘আরে রামশ্ চন্দ্রঃ কাগজে বিজ্ঞাপন মানুষে দেয়। একদম ভুলে ভরা আউর ছাপ্পাই ওঠে না।’’
রমনী বাবু – ‘‘তার মানে কি বলছেন?’’
সদানন্দ – ‘‘হ সত্য কথা কই। ঐ বৈষব পাড়ার রামবাবু কাগজে বিজ্ঞাপন দিবার লিগে ভুল ছাপ্পাই হল। কি বিজ্ঞাপন হুলো জানেন।
রমনী বাবু – ‘‘কি হলো।’’
সদানন্দ – ‘‘উনি লিখেন, নাতি দীর্ঘ লম্বা – ছাপ্পাই ভুল হইয়া হুলো। – হাতি দীর্ঘ লম্বা। অতি উজ্জ্বলা কন্যা লিখতে ছাপ্পাই হইল – অতি কালা কন্যা। ছাঃ ছাঃ এই তো বিজ্ঞাপন।
রমনী বাবু – ‘‘তাই নাকিক তাহলে উপায়?’’
সদানন্দ – ‘‘অত ভাইবেন না। আমি আছি না আপনার লগে ঘটক চ‚ড়ামনি সদানন্দ। আপনার বাবা তো আমায় পরশু দিন কইলেন। বাবা সদানন্দ, আমার নাতনীর জন্য একটি ভালো পাত্র দেইখা দ্যেও।
রমনী বাবু – ‘‘এ্যাঁ, আমার বাবা আপনাকে বলেছেন?’’
সদানন্দ – ‘‘হ, গত পরশু দিন সন্ধ্যা বেলায়।
রমনী বাবু – ‘‘গত পরশু দিন সন্ধ্যা বেলায়?’’
সদানন্দ – ‘‘হ, তাই কইলেন তো।’’
রমনী বাবু – ‘‘দূর মশাই। গুল মারবার জায়গা পান নি।’’
সদানন্দ – ‘‘গুল মারছি। তার মাইনে আমি গুলবাজ। ছিঃ ছি।’’
রমনী বাবু – ‘‘তা নয় তো কি। আমার বাবা আজ পাঁচ বছর হলো মারা গেছেন। আর আপনি কিনা….।’’
সদানন্দ – ‘‘আপনার বাবা মারা গেসেন গিয়া। হায় রে মানুষ। আপনি বুসতে পাইলেন না, তাঁর আত্মা আমারে দেইখা দিয়া তাঁর নাতনীর বিয়ার কথা কইতে ছিলেন।’’
রমনী বাবু – ‘‘অ্যাঁ, তাই নাকি।’’
সদানন্দ – ‘‘ঐ লিগাই তো আপানার মাইয়ার লিগা পাত্র খুঁইজিয়া রাখছিলাম।
রমনী বাবু – ‘‘আমার মেয়ের পাত্র যোগাড় করেছেন। আঃ শুনেও শান্তি। বলুন বলুন কেমন পাত্র? কবে দেখাবেন বলুন। আর তর সইছে না।’’
সদানন্দ – ‘‘প্রথম পাত্র দেখাইতাম কিন্তু অহন হইবো না। কিঞ্চিৎ বাধা আইয়া পড়ছে।’’
রমনী বাবু – ‘‘কিরকম বাধা?’’
সদানন্দ – ‘‘পাত্র অহন জেলে।’’
রমনী বাবু – ‘‘অ্যাঁ, পাত্র চোর নাকি?’’
সদানন্দ – না না – চোর ছ্যাঁচোর নয় ভাল পাত্র।’’
রমনী বাবু – ‘‘তবে? জেলে কেন? তবে কি ডাকাত? ছিনতাইবাজ?’’
সদানন্দ – ‘‘আরে বাপ্ ঐসব কুছুই না। অবস্থার চাইপে জেলে গেছে গিয়া।’’
রমনী বাবু – ‘‘অবস্থার চাপে? সে আবার কিরকম?’’
সদানন্দ – ‘‘আরে মশাই, বাজার থিকা দুটা কাঁচা বেল কিইনা, পাকা হইবার লিগে চট্ জরাইয়া দড়ি বাঁইধা বাজার থিকা আনতে ছিলো। ব্যস্ পুলিশ দেইখাই তো রে-রে কইরা জাপটিয়া ধইরা ফেলায়। বলে বোমা-বোমা। সেই লিগা পাত্র হাজতে। অহন বোমা বিশেষজ্ঞ আইবো। পরীক্ষা করবো। তবে না।’’
রমনী বাবু – ‘‘তা বেশ দু একদিনেই চলে আসবে?’’
সদানন্দ – ‘‘তারও কি ঠিক আছে। একদিনও হইতে পারে আবার এক সপ্তাহ হইতে পারে। তবে আর একখান পাত্র আছে।’’
রমনী বাবু – ‘‘কোথায – কোথায় আজ কি কাল দেখানো যাবে?’’
সদানন্দ – ‘‘আরে মশায় খাঁড়ান। আগু আমায় দেখতে ঐবো কবে মিটিং মিছিল ঐবো কিনা।’’
রমনী বাবু – ‘‘কেন কেন মিটিং মিছিল-এ কি হয়েছে? পাত্র কি নেতা নাকি?’’
সদানন্দ – আরে না না। হইছি কিনা, গত মাসে শ্যামবাবুর মিয়ার বিয়া ঠিক ঐলো, ভালো পাত্ররগনে কিন্তু বিয়ার দিন পাত্র, আসে – আসে কইরা, বাড়ির আইল না। লগ্ন চইলা যায় দেইখা মাইয়ার বাড়ির ড্রাইভার ওদের স্বজাতি আছিল ঐ ড্রাইভারের লগে বিয়া দিয়া দিলাম ঐ মাইয়ার সাথে। পাত্র যখন আইল তখন জানতে পাইলাম মিটিং-র লাগি মিছিল আইকিয়া ছিল। সেই মিছিলের লাগি পাত্রর গাড়িও আইটকা ছিলো। তাই সময় মত বিয়া হইল না।’’
রমনী বাবু – ‘‘অ্যাঁ, সেকি। তাহলে?’’
সদানন্দ – ‘‘না না ভাইবেন না। পাত্র আছে। তবে কিনা…..’’
রমনী বাবু – ‘‘তবে কি?’’
সদানন্দ – ‘‘ না-না চিন্তার কারণ নাই। পাত্র মাঝে মাঝে মদ খায়।’’
রমনী বাবু – ‘‘কি বলছেন মদ খায়।’’
সদানন্দ – ‘‘না-না রোজ খায় না। যে দিন বড় খাসি খায় সেই দিন খায়।’’
রমনী বাবু – ‘‘ও খাসি খায়।’’
সদানন্দ – ‘‘ছোট খাসি না বড় খাসি যেদিন খায় আর কি।’’
রমনী বাবু – ‘‘বড় খাসি মানে।’’
সদানন্দ – ‘‘বড় খাসি মানে অইল শুয়ার-গরু আর কি।’’
রমনী বাবু – ‘‘এ রাম-রাম। পাত্র শুয়ার গরু খায়।’’
সদানন্দ – ‘‘না না রোজ খায় না যখন ইয়ার বকসিদের লিঘা বাড়ি পার্টি বসায়, সেদিন।’’
রমনী বাবু – ‘‘আবার বাড়িতে ইয়ার বকসিদের আড্ডা হয়?’’
সদানন্দ – ‘‘না-না রোজ হয় না, যে দিন মনে দুঃখ হয় সেদিন আড্ডায় বসে।’’
রমনী বাবু – ‘‘কেন কেন দুঃখ হয় কেন?’’
সদানন্দ – ‘‘আইজ্ঞা সন্তানাদি হয় নাই তো সে লিগা।’’
রমনী বাবু – ‘‘সন্তানাদি মানে পাত্রর আগে বিয়ে করা বউ আছে?’’
সদানন্দ – ‘‘হ – একটা না দুইটা বিয়া আছে। এই বার তৃতীয় বিয়ার লাগি পাত্রী খুঁজতাছে।’’
রমনী বাবু – ‘‘মানে – দু’দুটো বিয়ে পাত্রের বয়স কত?’’
সদানন্দ – ‘‘হুঁ, তা ৫০ বছর হইবো।’’
রমনী বাবু – ‘‘অ্যাঁ, আমার মেয়ের বয়স ২০/২১ আর তোমার পাত্র ৫০ বছর মানে বুড়ো। হতভাগা মরকোট। তোমার ঘটকগিরি ছোটাচ্ছি। তোমায় ধরে বেশ ঘা কতক দিলেই। ঘটকগিরি ছুটে যাবে।’’
সদানন্দ – ‘‘এই মরছে। ক্ষেপচুরিয়া হইলেন ক্যান। না বাবা পালাই। মারবা কিনা কে জানে।’’
বলেই সদানন্দ সাপটে কাগড় ধরে দে ছুট। একদম বাড়িতে এসে তবে রেহাই। বাড়ি এসে দেখে সদানন্দ একজন পাত্রীর বাবা মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বসে আছেন।
সদানন্দ কে দেখে বলে, – ‘‘এই যে বাবা সদা। সেদিন তুমি আমায় আসতে বলে ছিলে। আমি একদম মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই এসেছি। ফোটো দেখে কি হবে তাই ভাবলাম, সামনা সামনি দেখে নাও। বলো ভালো করি নি?’’
সদানন্দ হাঁপাতে হাঁপাতে একটা চেয়ারে বসে পড়ে। সামনে এক গ্লাস জল দেখে ঢক্ ঢক্ করে খেয়ে ফেলে।
একটু হাঁফ নিয়ে সদানন্দ বলে, – ‘‘ঠিক করছেন যদু বাবু। এটাই কামের কাম হইছে। তবে কিনা….. ‘‘চুপ করে যায় সদানন্দ। যদুবাবু বলে, – ‘‘কি হল সদানন্দ চুপ করে গেল কেন? পাত্র হাতে নেই?’’
সদানন্দ একটু হেসে বলে, – ‘‘হেঁ-হেঁ না-না সেকি কথা কন। ল²ীর ঝুলি কি খালি থাকে।’’
যদু – ‘‘তবে? বল বল।’’
সদানন্দ – ‘‘পাত্র এক আসে। তবে পাত্র টো-টো কোম্পানিতেত কাম করে।’’
যদু – ‘‘টো-টো কোম্পানিতে – সে কি কোম্পানি সদা?’’
সদানন্দ – ‘‘বুইলেন না। টোটো কোম্পানি মানে ঘুরে ঘুরে কাম করে।’’
যদু – ‘‘ও বুঝেছি-বুঝেছি। কোম্পানির কাজে বাইরে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।’’
সদানন্দ – ‘আইজ্ঞা না সে কাম নয়।’’
যদু – ‘‘তাহলে?’’
সদানন্দ – ‘‘আঃ মুসকিলে ফেল্লেন। কি কমু। আরে ঘুইরা ঘুইরা কাম বলতে। জিনিস লইয়া ফেরি করে।’’
যদু – ‘‘জিনিস নিয়ে ফেরি করে। কি জিনিস?’’
সদানন্দ – ‘‘হ, আইজ্ঞা বেলুন। বেলুনে হাওয়া ভরে আর….। যদু বাবু মেয়ে মালতি – ‘‘থাক্ কাকা তোমায় আর বোঝাতে লাগবে না। বেলুনওয়ালা। তাই তো?’’
সদানন্দ – ‘‘হ, ঠিক কইছো।’’
মালতী – ‘‘বাবা তোমায় আর আমার জন্য পাত্র দেখতে হবে না। আমি চললাম। ও পাড়ার মিষ্টির দোকানের পুঁটে দাকে আমি বিয়ে করবো। পুঁটে দা আমায় ভালোবাসে। তবু সে আমায় মিষ্টি খাওয়াবে। বেলুনের হাওয়া খাওয়াবে না। আমি রেজিস্ট্রি ককরতে চল্লাম।সদানন্দ – ‘‘আরে মালতী শোনো। খাড়ো-খাড়ো ঘটকগিরি তে কিছু পাইলাম না। তোমার লগে গিয়া রেজিস্টারী বিয়াতে সাক্ষী দিবার লাইগা তো কিছু পামু। আমি তোমার লগে যাইমু।’’
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
Kathak | Debanshu Ghosh |
Characters | Name |
---|---|
Sodananda | Suman Sadhukhan |
Others | Joydeep Lahiri, Susmita Ghosh Das, Suman Sadhukhan |
Find us on Facebook – click here