তোমায় ভালোবেসে

Views: 1

তোমায় ভালোবেসে:

রাত দশটা। অভীক তার কম্পিউটারের সামনে বসে থাকে। অফিসের কাজ শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ, কিন্তু বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। জানালার কাঁচে টুপটাপ শব্দ। 

 ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ একটা ছবি চোখে পড়ল। বিদিশা। তার প্রাক্তন প্রেমিকা। কারও সাথে বিয়ের ছবি পোস্ট করেছে। অভীকের বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল। দুই বছর আগের সেই দিনটা মনে পড়ল।

যেদিন বিদিশা বলেছিল, “আমি আর পারছি না অভীক। আমাদের পথ আলাদা।”

সেদিন থেকে অভীক নিজেকে শুধু কাজে ডুবিয়ে রেখেছে। একটা নামী সফটওয়্যার কোম্পানিতে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে। সন্ধ্যায় একটা ডিজাইন স্কুলে ক্লাস নেয়। কারও সাথে বেশি কথা বলে না। বন্ধুরা ডাকলেও আড্ডায় যায় না। 

“প্রেম? না বাবা, আর নয়।” – এই ছিল তার মন্ত্র।

সেদিন ক্লাসে একজন নতুন ছাত্রী এল। অনিন্দিতা। স্কুলে বাংলা শেখায়। খুব শান্ত, নম্র স্বভাবের। ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকে, ক্লাস করে চলে যায়। 

অভীকের কেমন যেন বিরক্তি লাগল। বিদিশার মতো উচ্ছল, প্রাণবন্ত মেয়েদের দেখে সে যেমন বিরক্ত হয়, এই ধরনের নীরব, একা একা থাকা মেয়েদের দেখেও তার বিরক্তি লাগে। মনে হয়, এরা হয় অহংকারী, নয়তো নিজের মধ্যে ডুবে থাকতে ভালোবাসে।

ক্লাসে যখন অন্য ছাত্রছাত্রীরা হৈচৈ করে, অনিন্দিতা তখন চুপচাপ বসে থাকে। প্রশ্ন করলে ধীরে ধীরে উত্তর দেয়।

অভীক ভাবে, “এত শান্ত স্বভাবের মানুষ কখনও ভালো শিল্পী হতে পারে? শিল্পীর মনে তো ঝড় থাকা দরকার।”

একদিন ক্লাস শেষে অনিন্দিতা অভীকের কাছে এগিয়ে এল।

“স্যার, আপনি কি আমার একটা প্রজেক্ট দেখবেন?”

অভীক বিরক্ত হয়েও দেখতে রাজি হল। অনিন্দিতা তার ল্যাপটপ খুলল। একটা ডিজিটাল আর্ট গ্যালারি। প্রতিটি ছবিতে একটা করে গান জুড়ে দেওয়া। নীল আকাশের ছবির সাথে রবীন্দ্রসঙ্গীত, বর্ষার ছবির সাথে বর্ষার গান।

“আমি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটা বানাচ্ছি। ওরা দেখবে, শুনবে, শিখবে।”

অভীক অবাক হয়ে গেল। এই নীরব মেয়েটির মধ্যে এত সৃজনশীলতা লুকিয়ে ছিল! 

“তুমি গান গাও?”

“হ্যাঁ। তবে খুব একটা ভালো না।”

“শুনতে পারি?”

অনিন্দিতা প্রথমে লজ্জা পেল। তারপর ধীরে ধীরে গাইল – “আমার ভেতর ও বাহিরে অন্তরে অন্তরে…”

অভীক স্তব্ধ হয়ে শুনল। কী অদ্ভুত সুরেলা কণ্ঠ! শান্ত, কিন্তু গভীর। ঠিক যেমন তার স্বভাব।

দিন যায়। অভীক লক্ষ্য করে, অনিন্দিতার প্রতিটি কাজে একটা গভীরতা আছে। সে কম কথা বলে বটে, কিন্তু যা বলে তা অর্থপূর্ণ। তার প্রতিটি ডিজাইনে একটা গল্প লুকিয়ে থাকে।

একদিন অনিন্দিতা তার স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে অভীকের স্টুডিওতে এল। বাচ্চারা অবাক হয়ে দেখল কীভাবে কম্পিউটারে ছবি আঁকা হয়। অনিন্দিতা তাদের গান শেখাল, অভীক শেখাল ছবি আঁকা।

সেদিন প্রথম অভীক দেখল অনিন্দিতার হাসি। কী সুন্দর, নির্মল হাসি! 

রাতে বাড়ি ফিরে অভীক ভাবল, কতদিন সে কারও দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকেনি। বিদিশার পর থেকে তার হৃদয়ের দরজা বন্ধ ছিল। কিন্তু আজ কেন যেন সেই দরজায় একটা আলোর রেখা দেখা দিয়েছে।

অনিন্দিতার দিকে যত তাকায়, অভীক তত বোঝে – এই মেয়েটি আলাদা। বিদিশার মতো উচ্ছ্বসিত নয়, কিন্তু তার মধ্যে এমন কিছু আছে যা মানুষকে টানে। 

কিন্তু ভয়ও হয়। আবার কি কাউকে ভালোবেসে ব্যথা পাবে? আবার কি হৃদয় ভাঙবে?

একদিন অনিন্দিতা বলল, “স্যার, আপনি খুব একা থাকেন, তাই না?”

অভীক চমকে উঠল। “কেন এমন মনে হল?”

“আপনার চোখে দেখি। কেউ আপনার খুব কাছের মানুষ ছিল, তাই না? তারপর চলে গেছে?”

অভীক নীরব রইল। অনিন্দিতা আস্তে আস্তে বলল, “জানেন, আমিও খুব একা ছিলাম। বাবা-মা মারা গেছেন ছোটবেলায়। মামার বাড়িতে মানুষ। সবাই ভাবত আমি নীরব, অহংকারী। কিন্তু আসলে আমি শুধু নিজের জগতে থাকতে ভালোবাসতাম। গান গাইতাম, ছবি আঁকতাম।”

সেদিন থেকে অভীক আর অনিন্দিতা আস্তে আস্তে কাছে এল। দুজনেই একা, দুজনেই নিজের জগতে থাকতে ভালোবাসে। কিন্তু দুজনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অফুরন্ত ভালোবাসা।

একদিন বৃষ্টির সন্ধ্যায় অনিন্দিতা হঠাৎ বলল, “আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”

অভীক স্তব্ধ হয়ে গেল। 

“জানি, আপনি ভয় পান। কেউ আপনাকে আঘাত করেছে। কিন্তু আমি আপনাকে কখনও আঘাত করব না। আমি শুধু আপনার পাশে থাকতে চাই। নীরবে, শান্তভাবে।”

অভীকের চোখ ছলছল করে উঠল। কতদিন পর কেউ তার হৃদয়ের কথা এভাবে বুঝল!

ধীরে ধীরে অভীকের হৃদয়ের দরজা খুলে গেল। অনিন্দিতার ভালোবাসায় সে খুঁজে পেল নতুন জীবন। 

এখন তারা একসাথে কাজ করে। অনিন্দিতার গানের সাথে অভীকের ছবি মিলে তৈরি হয় অসাধারণ শিল্পকর্ম। স্কুলের বাচ্চারা মুগ্ধ হয়ে দেখে। 

অভীক আর ভয় পায় না। কারণ সে জানে, অনিন্দিতার ভালোবাসা অটল। যেমন শান্ত, তেমনি গভীর।

এক বছর পর তারা বিয়ে করল। ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান। কিন্তু সবার চোখে জল। অনিন্দিতা গাইল – “তোমায় গান শোনাব…” অভীক আঁকল তাদের প্রথম দেখার ছবি।

এখন তাদের সংসার আনন্দে ভরা। অনিন্দিতা স্কুলে পড়ায়, গান শেখায়। অভীক তার স্টুডিওতে কাজ করে। সন্ধ্যায় দুজনে মিলে নতুন নতুন প্রজেক্ট করে।

তাদের বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো আছে অভীকের আঁকা ছবি। প্রতিটি ছবির সাথে জড়িয়ে আছে অনিন্দিতার গাওয়া একটি করে গান। প্রতিটি ছবি, প্রতিটি সুর তাদের প্রেমের সাক্ষী।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterOlivia Das
Intro & EndingDebanshu Ghosh
KathokOlivia Das
CharactersName
AnanditaSumana Das
BidhisaSusmita Ghosh Das
AvikJoydeep Lahiri

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *