অর্তকীতে

Views: 14
অর্তকীতে:
হুগলী জেলার গুরাপ ষ্টেশন। কর্ড লাইনে পড়ে। পঞ্চপাণ্ডব মনে আছে আমাদের ‘পঞ্চপাণ্ডব’। মনে নেই, সূর্য, গোরা, তাপস, সজল, কাজল। এই পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে পঞ্চপাণ্ডব। তারা একবার বন্ধুর বিয়েতে গুরাপ গিয়েছিল। ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল। যখন ওরা গুরাপ ষ্টেশনে আসে তখন রাত সাড়ে দশটা বেজে গিয়েছিল। ষ্টেশনে এসে দেখে গাড়ি আসতে এখনো ৩০ মিনিট দেরী। প্ল্যাটর্ফম একদম ফাঁকা। শীতের রাত। শেডের নীচে দুএকজন লোক বসে আছে। ওরা যাবে ডাউনে অর্থাৎ শিয়ালদহ আপ প্ল্যাটর্ফমে তাও কিছু লোক আছে। যাই হোক, যা বলছিলাম; ওরা শেষের দিকে আছে। সূর্য একটু বাইরে গেছে। ওরা চার জন দাঁড়িয়ে আছে ওর প্রতিক্ষায়। আজ আবার বেশ ঠান্ডা। আজ শনিবার। একদিকে রেহাই কাল রবিবার। একটু রেষ্ট নেওয়া যাবে। আকাশে একটুও চাঁদ নেই। বোধ হয় আজ অমাবস্যা। উঃ সূর্য এখনো আসছে না কেন? হঠাৎ ওরা দেখে ডাউন লাইনে একটা মেলট্রেন আসছে। এখন তো কোনরকম ট্রেন আসার কথা নয়। যাই হোক, ট্রেনটা এসে প্ল্যাটর্ফমে থেমে গেল। হয়তো সিগন্যাল পায়নি। ট্রেন থেকে এক ভদ্রমহিলা নামলেন। কোলে একটা বাচ্চা। হাতে একটা বোতল। বোধহয় জল নিতে নেমেছেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে দুহাত দূরে একটা কল দেখে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু নাঃ কলে জল নেই। একিঃ ওরা দেখলো ট্রেনটা ছেড়ে দিয়েছে। ভদ্রমহিলাও দেখলেন ট্রেনটা ছেড়ে দিয়েছে। ভদ্রমহিলা হাত বাড়িয়ে ছুট দিলেন, দাঁড়াও…. দাঁড়াও… বলে। তারপর উঃ মাগো। সবাই চোখে হাত চাপা দেয়। গদাম করে একটা আওয়াজ। তারপর ট্রেনের নীচে লাইনে ভদ্রমহিলা আর বাচ্চাটা। ছুটে যায় ওরা দেখে, না ভদ্রমহিলা না বাচ্চা কারোর বডি নয়। ছুটে এসে দেখে সূর্য পড়ে গেছে। সবাই লাইনে নেবে, ওকে ধরে তোলে। সূর্য উঃ আঃ করছে হাঁটু চেপে ধরে।
তাপস বলল,
-‘‘আরে তুই এখানে কি করে এলি।’’
প্ল্যাটর্ফম থেকে দু চার জন লাফিয়ে নেমে এসেছেন হই হই করে। সূর্য হাত বাড়িয়ে বলল,
-‘‘আমায় ধরে তোল। তারপর বলল,
-”দেখলি না একটা মেল ট্রেন গেল।’’
সূর্যকে প্ল্যাটর্ফমে তুলে দিয়ে সবাই ওঠে। কাজল বলল,
-‘‘এই আমি যা দেখেছি তোরা তাই দেখেছিলিস্?’’
আপ প্ল্যাটর্ফমের লোকগুলো বলল,
-‘‘কি হল দাদা হঠাৎ লাইনে পড়ে গেলেন কেন? মাথা যদি ঘোরে তো ঐ শেডের নীচে গিয়ে সিটে শুয়ে পড়ুন। যান গিয়ে বসুন।’’
সূর্য বলল,
-‘‘না না দাদা ঠিক আছি,ঠিক বলেছেন, গিয়ে বসি।’’
আপের গাড়ির সিগন্যাল দিতে ওরা সব লাফিয়ে ডিঙিয়ে ওপারে চলে গেল। সূর্য একটু খোঁড়াতে লাগলো। সবাই চুপ। কারো মুখে কথা নেই। শেডের তলায় গিয়ে বসে দেখে সেখানে একটা দোকান খোলা আছে। সজল একটা জলের বোতল কেনে। দেখে দোকানের বৃদ্ধ লোকটি ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সজল বলে,
-‘‘কিছু বলবেন?’’
দোকানদার বৃদ্ধ লোকটি বললেন,
-‘‘ওখানে হই হই হচ্ছিল কেন? কি হয়েছে?’’
-‘‘না মানে, কিছু হয় নি। ঐ আমার একটা বন্ধু লাইনে পড়ে গিয়ে হাতে পায়ে লেগেছে এই আর কি।’’ আমতা আমতা করে বলল সজল।
বৃদ্ধ লোকটি বললেন,
-‘‘চলো দেখি তো।’’
বলে বৃদ্ধ লোকটি আস্তে আস্তে সূর্য যেখানে বসেছিল সেখানে এল। সূর্যের মাথায় হাত রেখে বললেন,
-‘‘খুব লেগেছে বাবা?’’
সূর্য তাড়াতাড়ি ওঠার চেষ্টা করে পারে না। হাঁটুতে বেশ লেগেছে। প্যান্টটাও ছিঁড়ে গেছে। বলল,
-‘‘না না দাদু সেরকম কিছু নয়।’’
-‘‘তুমি কি দেখলে একজন ভদ্রমহিলা বাচ্চা কোলে নিয়ে ট্রেনের দিকে গেল, আর চলতি ট্রেনে ধাক্কা লেগে পরে গেল তাই না।’’
বৃদ্ধ লোকটির মুখে হুবুহু ঘটনা শুনে সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। সত্যি তো বৃদ্ধ আবার বলেন সূর্যের পাশে বসতে বসতে।
-‘‘হ্যাঁ এই ঘটনা সত্যি ঘটেছিল, আজ থেকে প্রায় বছর ১০/১২ আগে। তখন আমার দোকান ওখানেই ছিল। আর আমার দোকানের পাশে কলটা ছিল।’’
একটু থামে বৃদ্ধ , তারপর দম নিয়ে আবার বলেন,
-“অর্তকীতে এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ায় উপস্থিত সবাই খুব মর্মাহত হয়েছিলাম কারুর কিছু করার ছিল না। চেন টেনে অন্যান্য সহযাত্রীরা ট্রেনটিকে থামায়। এরপর যখন ওই ভদ্রমহিলার স্বামী আর তার ছোট মেয়ে এলো, তখন সব শেষ। ততোবে পরে শুনেছিলাম বাচ্চাটার বেশি আঘাত লাগেনি। হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে বেঁচে যায়। কিন্তু ভদ্রমহিলাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শরীরে আর কিচ্ছু অবশিষ্ট ছিল না।’’
-‘‘ওঃ’’ বলে গোরা দু চোখ বোজে। বৃদ্ধ আবার বলে,
-‘‘শনিবারে অমাবস্যা পড়লেই ঠিক ওখানে যারা থাকে,তারা ওই একই দৃশ্য, একই সময় চোখের সামনে ঘটতে দেখে। তোমার মতন দু এক জন ঐ রকম ধরতে গিয়ে ঐ ট্রেনে আহত হয়েছে। তারাই আবার বলেছে কি যেন এক অদৃশ্য শক্তি ওদের কে আটকায়। তাই তারা আহত হয় কিন্তু মর্মান্তিক মৃত্যু হয় না।’’
-‘‘তারপর?’’ কাজল প্রশ্ন করে।
বৃদ্ধ বলে,
-‘‘তারপর ঐ ট্রেনটা তুলে দিল, না অন্য সময় পালটে দিল জানি না। তবে অমাবস্যাতে শনিবার পড়লে ঐ সময় ঐ ঘটনা আজও ঘটে। তাই ওদিকে কেউ দাঁড়ায় না।”
তাপস বলে,
-‘‘উঃএই দৃশ্যটা মনে পড়লেই এখনো গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।’’
বৃদ্ধ বলে,
-‘‘যাও তোমাদের ট্রেন আসছে। তুমি গিয়ে ডাক্তার দেখিও বাবা।”
বলে বৃদ্ধ আর দাঁড়ায় না চলে যায় তার দোকানে। ট্রেন ষ্টেশনে থামতে সবাই সূর্যকে ধরে ধরে গাড়িতে তোলে। গাড়িতে বসে সবাই চুপ। কারো মুখে কথা নেই। সবাই একই চিন্তা করছে।
Audio Story Starts From Here:
Story Info | Name |
---|---|
Writer | Kaberi Ghosh |
Intro & Ending | Debanshu Ghosh |
কথক | Olivia Das |
Characters | Name |
---|---|
তাপস | Suman Sadhukhan |
গোরা | Soumik Banerjee |
কাজল | Surajit Mukherjee |
সজল | Joydeep Lahiri |
সূর্য | Debanshu Ghosh |
বৃদ্ধ | Souradip Roy |
অন্যান্য চরিত্র | Suman Sadhukhan |
Find us on Facebook – click here