Visits: 3

গানের ওপারে:

এই Truth নিবি নাকি Dare নিবি বল?” সুদেষ্ণা অর্ককে জিজ্ঞাসা করল। সুদেষ্ণা,অর্ক, দেবপ্রিয়া আর কুশল, চার বন্ধু। ওরা Music-এর ওপর Masters করছে R.B.U. থেকে। এখন ওরা চারজন Final year-এ পড়ে। খুব ভালো বন্ধু চারজনে; University-র প্রথম দিন থেকে। যাই হোক, আজকে ওদের class off,  তাই কাছেই যেহেতু কুশলের Flat সেখানে আড্ডা দিতে বসেছে। বহুদিন ওদের এমন আড্ডাই দেওয়া হয় না। আজকে সুদেষ্ণাই বলল Truth and dare খেলবে। সেই শুনে সবাই রাজি। জলের বোতল ঘুরে গিয়ে  অর্কর মুখোমুখি, বোতলের মুখ যেহেতু সুদেষ্ণার দিকে, তাই নিয়মমতো সুদেষ্ণাই অর্ককে প্রশ্ন করবে। অর্ক বলল, 

– “Truth নেব। বল কী জানতে চাস?”

-” বাবা, কী ব্যাপার রে অর্ক? এতো সত্যি কথা বলতে চাইছিস যে?”

-” আমার ইচ্ছা, এই শোন তোরা কিন্তু আমার ইচ্ছাগুলোতে  হস্তক্ষেপ করছিস, জলদি প্রশ্ন কর।”


-” ঠিকাছে ঠিকাছে, খুব কথা  শিখেছিস। আচ্ছা বলে ফেল তাহলে  তোর সেইই মনের মানুষটির নাম, যাকে তুই শয়নে,  স্বপনে, জাগরণে দেখতে পাস।”

হঠাৎই একটা রবীন্দ্রসংগীত ধরে অর্ক,

“তোমায় দেখেছি শারদ-প্রাতে, তোমায় দেখেছি ‘মাধবী রাতে, 

তোমায় দেখেছি……..

হৃদি- মাঝারে ওগো বিদেশিনী।”

কুশল হঠাৎই বলে ওঠে,

-“এই অর্ক’ ভাই থাম এবার, নামটা বল ভাই, তুই তো পুরো গানটাই শোনাবি মনে হচ্ছে।”

-“আরে ধুর! তোরা না, বেশ একটা  আবহাওয়া তৈরী করছিলাম,
যাক গে, নামটা বলেই ফেলি।”

দেবপ্রিয়া এতক্ষণ তা চুপ করে হাসছিলো।দেবপ্রিয়া শান্ত স্বভাবের মেয়ে। ওরা চারজনই খুব ভালো গান করে। দেবপ্রিয়ার রবীন্দ্রসঙ্গীতের গলা খুব সুন্দর। একটু অস্বস্তির সঙ্গেই বলল দেবপ্রিয়া,

– “এই অনেক দেরী হল রে, তোরা বোস, আমি এইবার উঠি।” 

হঠাৎই অর্ক দেবপ্রিয়ার  ওড়নাটা টেনে ধরে, আর বলে,

-“বিদেশিনীর নামটা শুনে যাবি না প্রিয়া?”

দেবপ্রিয়া স্বলজ্জভাবে বলল,

-“না আমার দরকার নেই, দেরী হয়ে যাচ্ছে। ওড়নাটা ছাড় অর্ক |”

 এইবার সুদেষ্ণা মুচকি হেসে বলে,

-“এই দেবপ্রিয়া বোস না বাবা একটু, অর্কই নয় তোকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে, এই অর্ক বল না নামটা।”

– “বিদেশিনীর নাম হল দেবপ্রিয়া, আমার প্রিয়া।”

কুশল বললো,

-“যাক বাবা ,এতদিনে যে তুই মনের কথাটা বলতে পেরেছিস, এতেই আমি খুশি, আর বিরক্ত করব না তোদের।”

সুদেষ্ণা বললো, 

-“হ্যাঁ বসে বসে তোমরা প্রেমালাম করো,আমরা দুজনে যাই। এই কুশ চল ছাদে  যাই। ওদের একটু একা থাকতে দে।”

এইবার দেবপ্রিয়া লাজুক ভাবে বলে,

-“এই না না ধ্যাত্! কাউকে কোথাও যেতে হবে না, বোস না তোরা।”

অর্ক বললো,

“এই নারে তোরা বরঞ্চ ঘরে বোস আমরা একটু ছাদে যাই। প্রিয়া চল, না একটু ছাদে যাই।” বলেই দেবপ্রিয়ার হাত ধরে নিয়ে যায় ছাদে অর্ক।

সুদেষ্ণা আর কুশল ঘরেই থাকে।কুশল সুদেষ্ণাকে পছন্দ করে, সেটা সুদেষ্ণা জানে। কারণটা কিছুই না; কুশল এমন ক্যাবলা সবার সামনে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে,সুদেষ্ণাও মনে মনে চায় কুশকে। সুদেষ্ণা আর কুশল দুজনেরই পারিবারিক অবস্থা বেশ ভালো। কিন্তু কুশলটা এমন ভীতু যে সাহস করে ওর মনের কথা বলতেই পারেনি। কিন্তু আজকে যখন সুদেষ্ণাকে এতটা কাছে পেয়েছে কুশল, তখন আজকে মনের কথাটা বলেই দেবে। সুদেষ্ণা Facebook Scroll করছিল। কুশল সুদেষ্ণার পাশে বসে ওর হাতের ওপর হাতটা রাখল, সুদেষ্ণা চমকে উঠে কুশলের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“কিরে কী করছিস? হাতটা ধরলি কেন?”

-“আজকে আমাকে বলতেই হবে, আজকে আমি না বললে কোনোদিনও বলার সুযোগ পাবো না হয়ত….”

“কী কথা বলবি? যে আর বলার সুযোগই পাবি না?”

-“ইয়ে মানে সুদেষ্ণা….সুদেষ্ণা love you,সেই university র প্রথম দিন থেকে, বিশ্বাস কর,”

-“জানি,”

-” জানিস? কী করে জানলি?”

-“হাঁদারাম তো তুই, সেই প্রথম দিন থেকেই তো হা করে দেখতিস; তুই আমার দিকে, যে কেউই  বুঝে যাবে তোর এই কান্ড দেখে, বুঝলি।”

-“আচ্ছা, বুঝলাম, কিন্তু তুই আমাকে খারাপ ভাবিস না সুদেষ্ণা।”

-“ কিসের জন্য?”

-“এই যে আমি তোকে Propose করলাম”

 -“সব বুঝিস আর এটাই বুঝিস না সে,আমিও তোকে…..”

সুদেষ্ণার কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল কুশল বলল,

 -‘সত্যি? সত্যি বলছিস?’

-“হ্যাঁ !সত্যি নয় তো কি মিথ্যে?”

ওদিকে ছাদে এসে অর্ক আর দেবপ্রিয়া গল্প জুড়েছে। কথায় কথায় অর্ক-দেবপ্রিয়াকে বলল,

-“প্রিয়া একটা গান শোনাবি?”

“-কি গান?’

-“ওই গানটা, যেটা তোর গলায় শোনার জন্য শুধু আমি নয়,  আমাদের Class-এর সবাই উৎসুক হয়ে থাকে।’

“দেবপ্রিয়া গানটা শুরু করে,

গান (কতবার ভেবেছিনু)

“কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া

তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া।

চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি

গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।”

ওরা দুজনে আজ খুব খুশি। দেবপ্রিয়া তো আজকের দিনটার জন্যই অপেক্ষাতে ছিল। দেবপ্রিয়া আর অর্ক দুজনেরই পরিবার মধ্যবিত্ত।দেবপ্রিয়া তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, অর্কও তাই। কিন্তু অর্কর বাবা নেই। অর্ক যখন উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে তখন ওর বাবা মারা যায়। অর্কর মা গানের টিউশনি করে অর্ককে নিজের স্বপ্ন পূরণের দিকে অগ্রসর করেছেন। অর্কর গানের শিক্ষা ওর মায়ের কাছেই।

আজ অর্কও খুব খুশি। অর্ক দেবপ্রিয়াকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,

-“প্রিয়া, এই সময়টা থেমে থাকুক, আর যেন কোনদিন শেষ না হয় এই সময়, তুই  এভাবেই আমার হয়ে থেকে যা প্রিয়া।”

-” অর্ক তুই আমাকে এত ভালোবাসিস! চল না অর্ক তুই আর আমি কোথাও চলে যাই।”

-কোথায়??

-“এমন এক জায়গায়, যেখানে তুই আর আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না। সেখানে সবুজ গাছ, নীল আকাশ, খোলা মাঠ, আর একটা ছোট ঘর, যেখানে আমরা দুজনে থাকব।”

-“আচ্ছা তাই হবে, প্রিয়তমা, এখন চল নিচে গিয়ে দেখি ওরা একা বসে আছে।”

-“হ্যাঁ তাই চল,”

ওরা দুজনে নীচে গিয়ে দেখে সুদেষ্ণা আর কুশল বসে গল্প করছে।

অর্ক বলল,

-“কী রে তোরা তো দেখছি বেশ কপোত-কপোতীর মতো বসে আছিস?”

দেবপ্রিয়াও তাল মেলালো,

“কি ব্যাপার রে কুশল, দেখে তো মনে হচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস নেই, বেশ রোদ ঝলমলে হাসি সুদেষ্ণার মুখে। সব তাহলে কুশল মঙ্গল…….
তাই না সুদেষ্ণা।”

কথাটা বলেই, চার বন্ধু মিলে খুব হাসতে থাকে। এভাবেই শুরু হয় ওদের জীবনের এক নতুন অধ্যায়।

গান (জল ফড়িং)

“তুই চিরদিন তোর দরজা খুলে থাকিস

অবাধ আনাগোনার হিসেব কেন রাখিস ?

সাক্ষাৎ আলাদিন তোর প্রদীপ ভরা জিনে

কেন খুঁজতে যাস আমায় সাজানো ম্যাগাজিনে ?

ভেজা রেলগাড়ি হয়তো সবুজ ছুঁয়ে ফেলে

আর সারাটা পথ ভীষণ খামখেয়ালে চলে,

তারপর বেরোয় মেঘ 

আর তারায় ভরা স্টেশন

একটু থামতে চায় প্রেমিকের ইন্সপিরেশন।

তোর এ সকাল ঘুম ভেঙে দিতে পারি

তোর এ বিকেল ঘুড়ি ছিঁড়ে দিতে পারি,

তোকে আলোর আলপিন দিতে পারি

তোকে বসন্তের দিন দিতে পারি,

আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং।”

এরপর প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেছে সুদেষ্ণা, কুশল, অর্ক, দেবপ্রিয়া চারজনই ভালোভাবে পাশ করেছে। তারপর যে যার মতো করে লড়াই করে সাবলম্বী হবার চেষ্টা করেছে। সুদেষ্ণা আর কুশল, ওদের একটা লোকসঙ্গীতের দল আছে, তা নিয়েই ওরা এখন ব্যস্ত থাকে। বেশ নামডাকও হয়েছে ওদের। ভালোই আছে দুজনে। দেশ বিদেশে অনুষ্ঠান করে বেড়ায়। এই তো সামনের বছরেই ওরা বিয়েটা সেরে নেবে বলে; দেবপ্রিয়া আর অর্ককে জানিয়েছে| এখন আর চারজনের বসে আড্ডাই দেওয়া হয়না, যা কথাবার্তা ওই ফোনেই হয়, আর দেখা-সাক্ষাৎ- এর ইচ্ছা হলে Video Callই- ভরসা। যাই হোক এতো গেল সুদেষ্ণা আর কুশলের কথা, এবার আসা যাক দেবপ্রিয়া আর অর্কর কথায়।

University শেষ হবার পর অর্ক দেবপ্রিয়া,তাদের সম্পর্কের কথা জানায়নি ওদের পরিবারকে। ইচ্ছে ছিল এটাই, যে ওরা দুজনে দুজনের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটাবে। নিজেদের সময় দিয়ে বুঝবে,চিনবে। তাই আর কি…… কিন্তু সব কি আর আমাদের মতো চলে। হঠাৎ অর্কর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার গানের যত ছাত্র-ছাত্রী ছিল, আস্তে আস্তে তারা চলে যায়, ফলে সংসারে অভাব কি তা অর্কর বুঝতে খুব বেশি সময় লাগে না। তাই বাধ্য হয়ে অর্ক মায়ের গানের টিউশানিগুলো নিয়ে গান শেখাতে থাকে। অর্ক দিনরাত পরিশ্রম করে তার মাকে সুস্থ করে তোলার জন্য। তাই যা হয়,দেবপ্রিয়াকে বেশী সময় দিতে পারে না। দেবপ্রিয়া কিন্তু এই নিয়ে কোন অভিযোগ করে না, কোনদিনও। মাঝে মধ্যে যখন দুজন দেখা করে, অর্কর চিন্তিত, ক্লান্ত মুখ দেখে শুধু বলে,

– ‘‘অর্ক, তুই কেন এত ভাবিস বলতো? সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

অর্ক অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

– ‘প্রিয়া তোর রাগ হয় না?’’

– ‘‘কেন রাগ হবে কি কারণে?’’

– ‘‘এই যে, তুই এমন একটা ছেলেকে ভালবাসলি, যে তোকে… যে তোকে না একটু সময় দেয়, না দুটো হেসে কথা বলে, না তোকে একটু ঘুরতে নিয়ে যায়,নিদেনপক্ষে একটা ফুলও কিনে দেয় না। যখনই দেখা করে শুধু চিন্তা আর সমস্যা নিয়ে আসে।’

– ‘তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেন এসব বলিস।শোন বাহ্যিক চাকচিক্য দেখিয়ে কী হবে? অন্তরের ভালোবাসাই আসল বুঝলি? বুদ্ধু একটা।’

– ‘কিন্তু প্রিয়া এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আমার সাথে জড়িয়ে তুইও নিজের ব্রাইট ফিউচার টা নষ্ট করছিস।’

– ‘নষ্ট আবার কোথায় করলাম রে? বেশ আছি আমি।’

– নষ্ট করছিস না? তোর কী শুধু ছোট্ট একটা গানের স্কুলে  গান শেখানোর কথা ছিল?

– উফ্ তুই থামবি এবার। এই বেশ ভাল আছি রে অর্ক।” 

অর্কর কাধে মাথা রেখে একটা গান ধরে দেবপ্রিয়া। অর্কও সেই গানে গলা মেলায়। খোলা, ময়দানে ওদের দুজনের গনে মেতে ওঠে চারিদিকের পরিবেশ। গানটা ওদের দুজনরই খুব প্রিয়…….

গান (যদি তারে নাই চিনি গো সেকি)

যদি তারে নাই চিনি গো
সে কি নেবে আমায় চিনে
এই নব ফাল্গুনের দিনে
জানি নে জানি নে।।

সে কি আমার কুড়ির কানে
কবে কথা গানে গানে
পরাণ তাহার নিবে কিনে
এই নব ফাল্গুনের দিনে
জানি নে জানি নে ।।

সে কি আপন রঙে ফুল রাঙাবে
সে কি মর্মে এসে ঘুম ভাঙাবে।
ঘোমটা আমার নতুন পাতার
হঠাৎ দোলা পাবে কি তার।
গোপন কথা নেবে জেনে
এই নব ফাল্গুনের দিনে?
জানি নে জানি নে ।।

 অর্কর মায়ের অবস্থার আরও অবনতি ঘটছে। শরীর ভীষণ দুর্বল। হাটতে পারেন না ভালো করে। সুগার, প্রেসার সবই অছেন। অর্ক যতটা পারে সবটা করে।আজ কালকার দিনে নার্স বা আয়া রাখা খুবই খরচসাপেক্ষ, কিন্তু শত কষ্টেও অর্ক একজন আয়া রেখেছে, যে তার মায়ের খেয়াল রাখে।

এদিকে দেবপ্রিয়ার বাড়িতে আরেক কান্ড। দেবপ্রিয়া বিবাহযোগ্যা, তাই তার বাড়ি থেকে বিয়ের সম্বন্ধ দেখা শোনা শুরু হয় । দেবপ্রিয়া এ খবরটা অর্ককে দিতে চায় কিন্তু অর্কর ফোনে পায় না।

বেশ কয়েকদিন ধরেই দেবপ্রিয়া এটা লক্ষ্য করছে, অর্ক যে কেমন অন্যমনস্ক, সারাক্ষণ কিছু একটা চিন্তা করেই যাচ্ছে। অর্ক যে  চিন্তায় থাকে না, তা নয়। কিন্তু এ যেন অন্য চিন্তা। দেবপ্রিয়া জিজ্ঞাসা করেছিল,

– “এই কি হয়েছে বল তো তোর, কি ব্যাপার! এত অন্যমনস্ক কেন রে? কি হয়েছে? কি নিয়ে এত ভাবছিস? বলবি আমায়?”

হকচকিয়ে অর্ক বলে,

– ‘কো-কোথায়? কী আবার হবে। উফ্ তুই না প্রিয়া। জানিস না, গায়করা, কবিরা, লেখকরা, একটু অমন হয়।” বলেই হাহা করে হাসতে থাকে।

এটাই ওদের শেষ কথা ছিল। আজ এক মাস হয়ে গেল অর্কর সাথে দেবপ্রিয়ার দেখাও হয়নি , কথাও হয়নি। অর্কর ফোনে সুইচ ওফ। দেবপ্রিয়া ওর বাড়ি গিয়ে জানতে পারে, আয়ার দায়িত্বে তার মাকে রেখে অর্ক কোথায় যেন কাজে গেছে। কিন্তু  কোথায় যে গেছে, তা কেউ সঠিক বলতে পারে না। কি করবে বুঝতে না পেরে ওদের সম্পর্কের কথা দেবপ্রিয়া ওর নিজের বাবাকে জানায়। দেবপ্রিয়ার বাবা ভালো মানুষ। মেয়ের আত্মবিশ্বাস দেখে বলেন যে অর্ক যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, তবে তিনি মেয়েকে, তার সাথে বিবাহ দেবেন। এই কথাটা জানাবে বলেই দেবপ্রিয়া অর্ককে ফোন করতে চাইছে। দেখা করতে চাইছে। কিন্তু অর্কটা কি যে করে। কোথায় যে কাজের জন্য গেছে! একবার বলে যেতে পারল না? 

কিন্তু অর্কও যে চেষ্টা করছে, তার নিজের মতো করে। সেও তো চায় তার প্রিয়াকে একেবারে নিজের করে নিতে। তাকে বিয়ে করতে। আর মায়ের চিকিৎসা করাতে যে অনেক টাকার প্রয়োজন, আর সেই টাকার জন্যই আজ অর্ক এখানে। এখানে অর্থাৎ একটা গানের রিয়ালিটি শো-র ক্যানডিডেট। যেখানে অর্ক সিলেক্ট হয়ে টপ টেন-এ পৌঁছেছে। একমাসের এর Grooming Session এর পর আজ সে এই স্থানে। এতদিন ইচ্ছা করেই সে ফোন বন্ধ করে রেখেছিল। যাতে, সে গানের ওপর পুরো Focus করতে পারে। বেশ কয়েকটা এপিসোড হয়ে গেছে, যেখানে অর্ক দুর্দান্ত গেয়েছে। এই এপিসোড-এর টেলিকাস্ট পরে দেখানো হবে। কিন্তু আর না, এবার অর্ক প্রিয়াকে জানাবে যে সে কেন এতদিন তার থেকে দূরে ছিল। তাই আজ নিজে ফোন করেছিল দেবপ্রিয়াকে –

– ‘হ্যালো?’

– অর্ক! তুই কোথায়? কি ভেবেছিস কি তুই??

– ‘আরে দাঁড়া, শোন আমার কথা।’ আজ বিকেলে দেখা করবি?’

– ‘না! একদম দেখা করব না। তুই যা খুশি কর। তোর মর্জি মতো সব হবে নাকি?’

– ‘প্লিজ প্রিয়া রাগ করিস না। আমি সব বলব বলেই তো তোকে ডাকছি। আয় না আজ একটা সাইপ্রাইজ আছে।’

অনেকদিন পর দেবপ্রিয়া অর্কর এমন গলা শুনতে পেল। ভালো লাগছে দেবপ্রিয়ার অর্কর এই প্রাণোচ্ছল স্বর শুনে, তাই আর না করল না। বলল,

– ‘ঠিক আছে, যাব, ময়দান, পাঁচটার সময়। দেরী করবি না।’

– ‘একদম’ – বলেই ফোনটা রেখে দিল।

বিকেলে দেবপ্রিয়া ময়দানে অর্কর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু কোথায় অর্ক?’ 

-“ধ্যুৎ ভাল লাগে না। সবেতে ওর দেরী; সময় মতো কখনও আসতে পারে না।’

– হঠাৎ দেবপ্রিয়া শুনতে পায় অর্কর গানের গলা 

গান (এই শোনো)

“এই শোনো তুমি শুনতে পাচ্ছো কি?

রাতের তারাগুলো গুনতে পারছ কি?

এই তোমার আমার এক মলাটের রাত

আর শিশির ভেজা ছুঁয়ে দিলে হাত

যে পথে হেঁটে যাও

কখনো থেমে যাও

আসলে ভুলে যাও

কি পেতে চাও

তুমিও আমাকে

যে কোনো পোশাকে

ভালোবেসে ফেলেও

মুখ লুকাও

যদি রেখে দিতে পারো

থেকে যেতে পারি

ফিরে যেতে দিও না

যদি রেখে দিতে পারো

থেকে যেতে পারি

ফিরে যেতে দিও না।”

পিছন ঘুরে দেখে রজনীগন্ধার স্টিক হাতে অর্ক দাঁড়িয়ে আছে। দেবপ্রিয়া দেখে অবাক। বলল,

– ‘কি রে কি ব্যাপার তোর? এতদিন কোথায় ছিলিস? কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করিস না তাই না। আমার কথা নয় ছেড়েই দিলাম। জানিস কাকিমা তোকে কতবার দেখতে চেয়েছে? তার জন্যও একবারও মনে হল না যে জানাই কিছু।’

– ‘আমি জানতাম তো তুই মায়ের খেয়াল রাখবি। আমি তো তোকে চিনি প্রিয়া।’ তাইতো…?’

– ‘তাই তো কী?’

– ‘আরে শুধু রাগই করবি নাকি ফুলটা নিবি আর আমার কথাগুলো শুনবি।’

– ‘বল তাড়াতাড়ি। আমারও কিছু বলার আছে।’

সব কথা বলে দেবপ্রিয়াকে অর্ক।

দেবপ্রিয়া শুনে বলে,

– ‘তা এটা আমাকে জানালে আমি কী তোকে যেতে দিতাম না?’

– ‘না রে বাবা, তোর বিয়ের কথা যখন শুনলাম,আর কাকুও যখন বলেছেন আমি সাবলম্বী হলে তোর সাথে বিয়ে দেবেন। তখন আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট করিনি। সুযোগটাও এসে গেলো; তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছি।’

– ‘বিয়ের কথা শুনলাম মানে? তুই কী ভাবে জানলি। আমি তো এই কথাটাই জানাবো বলে তোর সাথে যোগাযোগ ……’

কথাটা শেষ হল না। হঠাৎই আরও দুটো চেনা কন্ঠস্বর শুনতে পেল দেবপ্রিয়া।

(একসাথে)

– ‘আমরা বলেছি রে। আমরা?

দেবপ্রিয়া তাকিয়ে দেখে কুশল আর সুদেষ্ণা ।. কখন যে এসেছে, খেয়ালই করেনি। দুজনে হাসিমুখে এগিয়ে এল। দেবপ্রিয়া সুদেষ্ণাকে বলেছিল বিয়ের সম্বন্ধ দেখার কথা, আর সেটাই কুশল জানতে পেরে অর্ককে জানায়। অর্কর রিয়েলিটি শো-তে অডিশন এর খবরটা কুশলই ওকে দেয়। এরপর সুদেষ্ণা বলল,

– ‘‘আরেকটু দেরী করে এলে দেবপ্রিয়া কিন্তু ভ্যাঁ, করে কেঁদেই ফেলত।’

– কুশল বলল,

– এই দেবপ্রিয়া ইউনিভারসিটিতে যেমন কাঁদাতিস, কথায় কথায় কাঁদবি নাকি এখন। দেখ কেঁদে নে, এরপর কিন্তু শুধু হাসবি। কারণ আমরা আবার ৪ জন একসাথে, সো নো কান্নাকাটি। 

দেবপ্রিয়া বলল হাসতে হাসতে,

– উফ্ বাবা তোরা পারিসও বটে।তাহলে এইসবের মাস্টারমাইন্ড তোরা দুজনে।

-‘একদম’ (একসাথে)

– “আর অর্ক তুই কী রে? আমাকে একবার বলবি তো? বললে কী এমন ক্ষতি হত শুনি?’

-“বলে দিলে কি তুই আর SURPRISED হতিস এইভাবে? তারপর হটাৎই অর্ক গান ধরে।”

 তারপর হঠাৎই অর্ক গান ধরে –

গান “হয়তো তোমারি জন্য………….”

“আমি যে দুরন্ত,
দু’চোখে অনন্ত |
ঝড়ের দিগন্ত জুড়েই,
স্বপ্ন চড়াই।
তুমি তো বলনি মন্দ
তবু কেন প্রতিবন্ধ?
তুমি তো বলনি মন্দ
তবু কেন প্রতিবন্ধ?
রেখোনা মনের দ্বন্দ্ব
সব ছেড়ে চল যাই।

হয়তো তোমারি জন্য
হয়েছি প্রেমে যে বন্য,
জানি তুমি অনন্য
আশার হাত বাড়াই,
যদি কখনো একান্তে
চেয়েছি তোমায় জানতে,
শুরু থেকে শেষ প্রান্তে
ছুটে ছুটে গেছি তাই।”

এতদিন পর ওরা চারজন আবার হাসতে থাকে। ওরা আবার যেন ওদের পুরোনো দিনে ফিরে গেছে। এরপর আর অর্কর ভাগ্যের চাকা থেমে থাকেনি। এমনকি দেবপ্রিয়ারও নয়। সেও তার গানের পরিসরকে আরও পৌঁছেছে বাড়িয়ে নিজেকে উন্নতির শিখরে রিয়েলিটি শো-এ থাকাকালীন অর্করও পরিচিতি বাড়ে, এবং সেই পরিচিতি এবং নিজের প্রতিভার জোড়ে অর্ক একজন নামকরা সংগীত শিল্পী। অর্কর মা এখন অনেক সুস্থ।

এখন চার বন্ধু সেই পুরোনো দিনের মতো আড্ডা দেয়। চার বন্ধু এখন গানকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলেছে সুদূর ভবিষ্যতের দিকে।

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterOlivia Das
Intro & EndingPriyanka Dutta
KathakSourodeep Roy
CharactersName
অর্কSourodeep Roy
দেবপ্রিয়াOlivia Das
কুশলDebanshu Ghosh
সুদেস্নাSusmita Das Ghosh

Find us on Facebook – click here

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
1
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *