Visits: 72

নবীন গত বছর ডাক্তারি পাশ করেছে। তার দাদুর ইচ্ছা ছিল যে নবীন ডাক্তারি পড়ে গ্রামের ওই দুঃখী মানুষ গুলোর সেবা করবে। তাই দাদু গত হওয়ার পর নবীন সিদ্ধান্ত নেয় যে সে গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ।নবীন এর বন্ধু অমর কে চিঠি তে লিখে সে জানায় যে সে ওদের গ্রামে ডাক্তারি করতে আসবে।কলেজে পড়ার সময়ে নবীন শুনেছিল অমরদের গ্রামের অনেক মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।যদিও বা ডাক্তার আসে ওদের গ্রামে সে বেশিদিন টিকতে চায় না। অমর এর বাবা মারা যাবার পর অমর ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দেয়। সে পরিবারের বড় ছেলে বলে তাকে সব ভার নিতে হয়েছিলো। অমর যখন জানতে পারলো নবীন ওই গ্রামে আসবে সে খুব খুশি হয়ে গ্রামের মোড়োলকে সে কথা জানালো। গ্রামের মোড়ল জানতে পেরে তার পরিচিত একজন এর বাড়িতে নবীন এর থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র টিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য লোক নিযুক্ত করলেন। নবীন চিঠির উত্তর পেয়ে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে তার বন্ধুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল কিন্তু সমস্যাটা হল মোহনপুর স্টেশন এর কাছে । একটি লাইন হঠাৎ বিগড়ে যাওয়ায় ট্রেনটা থেমে গেলো প্রায় এক ঘণ্টার মত। নবীন জানতো যে ট্রেনটা তাকে বিকেলের মধ্যেই মোহনপুর পৌঁছে দেবে l

যাই হোক যখন ট্রেন থেকে নামলো তখন সন্ধে সাতটা l সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো স্টেশনে তেমন লোক নেই। সে একজন কে জিজ্ঞাসা করে একটা রিকশা নিয়ে নিলো আর বলে দিলো বকুলতলা ঠাকুর বাড়ির সামনে নামাতে। অমর চিঠিতে সেই ঠিকানাই বলেছিলো। কদম তলার বিরাট মাঠটা পাশে ফেলে রিকশাটা বেশ জোরে চলতে শুরু করলো।

নবীন জিজ্ঞাসা করলো,

-” আচ্ছা ভাই ঠাকুর বাড়িটা কত দূর? আমি এখানে আজ প্রথম এলাম তাই কিছু চিনি না।”

লোকটি হেসে বললো,

-“আজ্ঞে কর্তা কুড়ি মিনিট লাগে। আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে বসেন আপনি আপনাকে ঠিক পৌঁছে দেবো।” নবীন আবার জিজ্ঞাসা করলো,

-“তোমার নাম কি ভাই?”

লোকটা উত্তর দিলো,

-“আজ্ঞে হরেন।”

নবীন আবার বললো,

-“তোমার বাড়িতে আর কে কে আছে হরেন ?”

হরেন বললো,

-“কেউ নেই কর্তা। আমার একটা টুকটুকে বউ ছিল। বড় ভালোবাসতাম। সেও আমাকে খুব ভালোবাসত। গত বছর ওর শরীর খারাপ করলো। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলাম। কত ডাক্তার দেখালাম। একবার সদর হাসপাতালেও নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না কর্তা। সদর হাসপাতাল এখান থেকে প্রায় পাঁচ মাইল পথ। সেদিন নিয়ে পৌঁছানোর আগেই সে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। জানেন কর্তা গ্রামের পঞ্চায়েতে অনেকবার বলেছিলাম এখানে ভালো ডাক্তার আনতে। কেউ শোনে নি। কত মানুষ এখানে বিনে চিকিৎসায় মরে যায় তা কেউ জানে না। চাঁপা যেদিন চলে গেলো সেদিন ভেবে ছিলাম সবাইকে শিক্ষা দেবো কিন্তু পারি নি। তাই মনের দুঃখে নিজেকে চাঁপার কাছে পাঠিয়ে দিলাম।”

শেষ কথা টা শুনে নবীন একটু চমকে উঠলো।

সে অবাক হয়ে বলে উঠলো,

-“পাঠিয়ে দিলাম মানে? তুমি তাহলে জীবিত মানুষ নও?”

হরেন হাসতে হাসতে বললো,

-“কর্তা ঠাকুর বাড়ি এসে গেছে। আমি এবার আসি। এই গ্রামের মানুষ গুলো খুব ভালো কর্তা। মরে গেছি কিন্তু গ্রামের মায়া ছাড়তে পারিনি। ওই পুরনো ভাঙা বাড়িতে আমি এখনও রয়ে গেছি। শুনেছিলাম গ্রামে কোনো নামী ডাক্তার আসছে তাই গেছিলাম দেখা করতে। আপনাকে দেখে বুঝেছিলাম আপনি সেই মানুষ যে এসেছেন আমাদের গ্রামে চিকিৎসা করতে।তাই ভাবলাম আপনার সাথে কথা বললে হয়তো আমার মুক্তি হবে। আপনি নিশ্চই খুব বড় ডাক্তার হবেন। দেখবেন কর্তা আমার চাঁপার মত আর যেনো কাউকে মরতে না হয়। আপনি ভালো থাকবেন আর ভগবান আপনার মঙ্গল করুক। আমি চলি কর্তা। এবার আমার ছুটি হয়ে গিয়েছে।”

নবীন তার অজান্তেই বেরিয়ে আসা চোখের জল মুছে হরেনকে বললো,

-“তুমি চিন্তা করো না হরেন। আমি তোমাকে কথা দিলাম আমি এই গ্রামের কাউকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেবো না। আমি কালই গ্রামের পঞ্চায়েতে গিয়ে কথা বলব।”

হঠাৎ একটা প্রচণ্ড হাওয়া এসে যেনো হরেনকে মিলিয়ে দিলো শূন্যে। পেছন থেকে একটা ডাকে সম্বিৎ ফিরল নবীন এর। দেখলো অমর আসছে। সে কাছে এগিয়ে এসে বলল,

-“কি রে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? চল চল. মুকুল তোকে এখানে দেখে আমাকে গিয়ে খবর দিলো বলল,

-“শহরের বাবু মনে হয় রাস্তাটা বুঝতে পারেনি তাই ঠাকুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।”

নবীন শুনে যাচ্ছিল পুতুল এর মত কারন তার কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে। সেই রাতে নবীন এর খুব জ্বর আসে এবং সে যেনো দেখতে পায় হরেন তাকে বার বার বলছে,

-“যে কথা দিলেন তা রাখবেন তো ?” 

নবীন সুস্থ হওয়ার কিছু দিন পর গ্রামে হাসপাতাল তৈরীর কাজ শুরু হয়। নবীন নিজে থেকে কথা বলে সব ব্যবস্থা করেছিলো। আজ তার উদ্বোধন।

নবীন মনে মনে তৃপ্তির হাসি হেসে বলল,

-“তোমাকে দেওয়া কথা আমি রেখেছি হরেন। তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো।”

Audio Story Starts From Here:

Story InfoName
WriterTrisha Laha
NarratorOlivia Das
IntroductionOlivia Das
CharactersName
Rickshaw ChalokDebanshu Ghosh
DoctorJoydeep Lahiri
Others CharactersDebanshu Ghosh

https://www.facebook.com/srijoni

আরো পড়ুন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
1
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *